Universal common ancestor ( সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ)
বিবর্তনবাদ
সূচনাঃ
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো জীবনের প্রথম রুপ হিসেবে আমরা ব্যাকটেরিয়া কে চিনি। তবে ব্যাকটেরিয়া সবচেয়ে প্রাচীন রুপ নয় জীবনের। ব্যাকটেরিয়ার পূর্বপুরুষরা ছিল এককোষী অণুজীব (microbes) যা প্রায় ৪ বিলিয়ন (১) বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত জীবনের প্রথম রূপ ছিল ।প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর ধরে, বেশিরভাগ জীবই ছিল আণুবীক্ষণিক, এবং ব্যাকটেরিয়া এবং আর্কিয়া ছিল জীবনের প্রভাবশালী রূপ। এসকল ব্যাকটেরিয়ার ফসিল বর্তমানে পাওয়া গেলেও এর স্বতন্ত্র কাঠামোগত রুপের অনুপস্থিতির জন্য ব্যাকটেরিয়ার ইতিহাস নিয়ে ততটা সঠিকভাবে গবেষণা করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। (২) (৩)
আমরা পৃথিবীতে সকল প্রাণীর সাথেই একের সাথে অন্যের সাদৃশ্য দেখতে পাই কোথাও রঙে, কোথাও বাহ্যিক গঠনে কিংবা বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে মলিকুলার লেভেলেও এক জীবের সাথে অন্য জীবের সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয়। বিবর্তনীয় চিন্তাধারার ইতিহাস থেকে আমরা জানি, এসকল সাদৃশ্যকে ডারউইন পূর্ব বিজ্ঞানীরা সাধারণ নকশা ” কমন ডিজাইন ” হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন অর্থাৎ স্রষ্টা চেয়েছেন বলেই এসকল জীবদের মধ্যে সাদৃশ্য রেখে সৃষ্টি করেছেন। পরবর্তীতে শিল্পবিপ্লবের সময়কালে যখন চার্চ কে স্টেট থেকে আলাদা করা শুরু হয় অর্থাৎ বাইবেলের ব্যাখ্যা আর গ্রহণ না করে জাগতিক ব্যাখ্যার দিকে মানুষ প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয় সেই সময়কালেই প্রাণের বৈচিত্র্যময় রুপের জাগতিক ব্যাখ্যাকারী হিসেবে আসেন চার্লস ডারউইন। তার বিবর্তন তত্ত্বের চিন্তাধারায় জীবজগতের এসকল মিল কে তিনি স্রষ্টার স্বাধীন ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা না করে জাগতিক ব্যাখ্যা খুজলেন, পরবর্তীতে বললেন এরা সবাই একই পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে বলেই এদের মধ্যে এই সকল সাদৃশ্যতা। তিনি তার ধারণা লিপিবদ্ধ করেন তার বইতে যাকে আমরা ট্রি অফ লাইফ ” জীবন বৃক্ষ” বলে জানি। ডারউইন বলেন,
” অতএব এসকল সাদৃশ্য থেকে অনুমান করা উচিত যে সম্ভবত এই পৃথিবীতে বসবাসকারী সমস্ত জৈব প্রাণীগুলি একটি আদিম রূপ থেকে এসেছে, যেখানে জীবন প্রথম শুরু হয়েছিলো ” (৪)
Universal common ancestor বা সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষ বলতে বোঝায় কোনো এককোষী ব্যাকটেরিয়া থেকে সম্পূর্ণ জীবনের উৎপত্তি। অর্থাৎ পৃথিবীতে বর্তমানে বিদ্যমান সকল জীব Archea, Eukaryotes, Bacteria র সমন্বিত একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত। এই universal common ancestor ম্যাক্রো ইভোলিউশন এর মূল ভিত্তি। পৃথিবীর সমস্ত বর্তমান জীবনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হচ্ছে এই UCA.
তবে ব্যাকটেরিয়া কিন্তু পৃথিবীর প্রথম প্রাণ নয় বরং বিদ্যমান সমস্ত জীবনের পূর্বপুরুষের সর্বশেষ রূপ। যাকে বলা হয় LUCA( Last Universal common ancestor)
Source: Wikipedia
তো যাইহোক আমরা Luca কে কখনো পর্যবেক্ষণ করতে পারব না কিংবা এর প্রকৃতি সম্পর্কেও জানতে পারব না কারণ LUCA আসলে ধরে নেয়া একটা হাইপোথিসিস। এর সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। LUCA র ন্যাচার সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে জীবিত সকল প্রাণীদের মধ্যকার সাদৃশ্যমূলক জিন গুলো তুলনা করে দেখেন। যেহেতু LUCA কে একেবারে সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়, কিন্তু সাদৃশ্যের ভিত্তিতে তারা সমস্ত জীবকুলকে একক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত বলে মনে করেন তাই তাদেরকে LUCA খুজে বের করতে হবে। বিজ্ঞানীদের দাবি ৩০ টি এই ধরনের জিন রয়েছে যা সবার মধ্যেই common. বিদ্যমান প্রানীর মধ্যকার মিল দেখে বিজ্ঞানীরা Last universal common ancestor এর রুপ অনুমান করে নেন। যার ফলে LUCA আজ ও কেবল হাইপোথিসিস। (৫)
hypothetical LUCA source: Genetics.
বর্তমানে LUCA র জন্য যে গবেষণাটা সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয় সেটা হচ্ছে ২০১০ এ করা বায়োকেমিস্ট ডগলাস থিওবোল্ড এর গবেষণা। তিনি ২০১০ এ ন্যাচারে ” A Formal test of the theory of Universal common ancestry ” শিরোনামে একটি নতুন রিসার্চ পেপার প্রকাশ করেন। তার গবেষণা নিয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো।
আমরা জানি যে জীবের মধ্যকার সাদৃশ্যের জাগতিক ব্যাখ্যায় বিবর্তনীয় বিজ্ঞানে সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণাটি অনুমান করে নেয়া হয়। তাছাড়া ম্যাক্রো ইভোলিউশন এর ফান্ডামেন্টাল ইস্যু হচ্ছে last universal common ancestor. যেহেতু এটা ধরে নেয়া হয়েছে যে সমস্ত জীব একক কোষ থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে সেক্ষেত্রে যেকোনো মূল্যে ইভোলুশনারি বায়োলজিস্টদের এই Universal common ancestry কে টিকিয়ে রাখতে হবে। বায়োকেমিস্ট Douglas Theobald এর গবেষণাপত্র A Formal test of the theory of common ancestry ” অনুযায়ী তিনি দেখিয়েছেন যে জীবনের তিনটি ডোমেইনের প্রায় সব প্রজাতিতে ২৩ টি প্রোটিন সার্বজনীনভাবে বিদ্যমান। যদিও ( আর্কিয়া, ব্যাকটেরিয়া, ইউক্যারিওটা) প্রোটিনের ডিএনএ সিকুয়েন্স এর বেইসে As, Cs, Gs এবং Ts- লেটার গুলো ভিন্ন ভাবে সজ্জিত। (৬) তাছাড়া বোল্ড এর এই গবেষণা মূলত পরিসংখ্যানগত অনুমানের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে তিনি তিনটি ডোমেইনের প্রাণীদের প্রোটিন এর সার্বজনীনতার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে LUCA র ন্যাচার এমন এবং এই তিন ডোমেইন LUCA থেকেই সম্ভবত বিবর্তিত হয়ে এসেছে। থিওবোল্ড এর এই গবেষণায় আরও একটি বিষয় ছিলো যা হচ্ছে null hypothesis. তিনি তার গবেষণায় null hypothesis ধরে নিয়ে কাজ করেছেন এবং ফলাফল ব্যক্ত করেছেন। null hypothesis হচ্ছে একটি দাবি যাতে বলা হয় হয় যে দুটি সেটের ডেটা বা ভেরিয়েবলের বিশ্লেষণের মধ্যে কোনো পার্থক্য বা সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ দুটো বিষয়ের উপর পরীক্ষামূলক কোনো পর্যবেক্ষণের মধ্যে ওই দুই বিষয় ছাড়া আর কোনো অন্তর্নিহিত কার্যকারণ নেই। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিড়াল কি দুধ বা মাছ পছন্দ করে? null hypothesis অনুযায়ী বিড়ালের আসলে এই দুইয়ের মধ্যে কোনো পছন্দ নেই বরং বিড়াল দুটোই পছন্দ করে। বিড়াল কিন্তু অন্য কিছুও পছন্দ করতে পারে তবে null hypothesis অনুযায়ী ধরে নেয়া দুটো খাবারের বাহিরে বিড়াল আর কিছুই পছন্দ করবেনা। জীবের মধ্যকার সাদৃশ্যের ব্যাখ্যাকে আগে থেকেই সাধারণ পূর্বপুরুষ ধরে নিয়েই তিনি কাজ করেছেন। (৭) সাদৃশ্যের ব্যাখ্যা যে অন্য কোনো কিছুও হতে পারে কিংবা সাধারণ নকশা হতে পারে এই বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। যাইহোক ডগলাস থিওবোল্ড কি Last Universal common ancestry প্রমাণ করেছেন? মূলত তা নয়। মজার বিষয় হচ্ছে থিওবোল্ড এর এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তাদের সাইটে একক কোষ থেকে সকল জীবনের উৎপত্তি বিষয়ক বেশ আকর্ষণীয় একটি আর্টিকেল লিখেছে। (৮) তাদের আর্টিকেলের মূল কথা হচ্ছে “All life on Earth evolved from a single-celled organism that lived roughly 3.5 billion years ago, a new study seems to confirm” অর্থাৎ গবেষণা প্রায় প্রমাণিত যে পৃথিবীর সমস্ত জীব কোনো এক কোষী প্রাণী থকে আজ থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়ে এসেছে।
অথচ, থিওবোল্ড এর সম্পূর্ণ গবেষণাটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল হাইপোথিসিস এর উপর সাজানো যেখানে সে null hypothesis ধরে নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এখানে প্রমাণের ছিটেফোঁটাও নেই। যাইহোক একই বছরে Takahiro Yonezawa ন্যাচার জার্নালে Was the Universal common ancestry proven? নামক একটি পেপার প্রকাশ করেন সেখানে তিনি বলেন, (৯)
partial abstract: পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ একটি একক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত কিনা সেই প্রশ্নটি ডারউইন থেকে আজকের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানের একটি কেন্দ্রীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পূর্বে UCA হাইপোথিসিস পরীক্ষা করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। Theobald সম্প্রতি একটি আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান পরীক্ষার মাধ্যমে এই সমস্যাটিকে চ্যালেঞ্জ করেছে, এবং উপসংহারে পৌঁছেছে যে UCA হাইপোথিসিস ধারণ করে। আমরা মনে করি Theobald এর পরীক্ষণ জীবনের বিকল্প উৎসকে রিজেক্ট করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।
অর্থাৎ এখানে তারা দাবি করছেন থিওবোল্ড এর গবেষণা অনুযায়ী সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা প্রমাণিত নয় এবং জীবনের উৎপত্তির বিকল্প উৎসকেও এই গবেষণা বাতিল করেনা। আরও চমৎকার বিষয় হচ্ছে পরবর্তীতে Theobald এই পেপারের রিপ্লাই এ শেষের দিকে লিখেন, (১০)
” এই যুক্তিগুলি মূলত পরিস্থিতিগত এবং অনানুষ্ঠানিক। আমি সমস্ত সম্ভাব্য প্রতিযোগীমূলক হাইপোথিসি পরীক্ষা করিনি, এবং আমার বিশ্লেষণ common ancestor এর জন্য শেষ শব্দ হবে না। এছাড়াও আমি জোর দিয়েছি যে আমি কোনো অর্থেই সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষের কোনো অকাট্য প্রমাণ প্রদান করিনি। ”
ন্যাচার জার্নালের ন্যাচার এডুকেশন সাইটে universal common ancestor নিয়ে বলা হয়েছে “যদিও এটি দেখা যাচ্ছে, সর্বজনীন সাধারণ বংশ আগে কখনও সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। পরিবর্তে, এটি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দ্বারা ব্যাপকভাবে সঠিক হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। ” (১১) ২০১০ সালের নভেম্বর এ দুজন গবেষক বায়োলজি ডাইরেক্ট জার্নালে ” The common ancestry of life” নামে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে আলোচনা অংশে তিনি বলেন,
” উপরে বর্ণিত পরীক্ষাগুলি দেখায় যে বর্তমানে বিদ্যমান জীবন ফর্মগুলির সর্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষের কোনও আনুষ্ঠানিক স্পষ্ট প্রমাণ নেই। এবং থিওবোল্ড এর দ্বারা কৃত গবেষণা এবং পরীক্ষণ ও কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ। ” (১২)
যেহেতু সার্বজনীন সাধারণ পূর্বপুরুষের পর্যবেক্ষণের কোনো সুযোগ নেই সেক্ষেত্রে কেবল অসংখ্য ধারণার উপর ভিত্তি করেই এ নিয়ে যাবতীয় গবেষণা পরিচালিত করতে হয়। ফলাফলস্বরুপ, আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী LUCA র প্রকৃতি সম্পর্কে একমত নন। কিংবা এ নিয়ে তেমন প্রমাণ ও উপস্থাপন করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনা। অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি ম্যাক্রো ইভোলিউশন এর ভিত্তি এখনো কেবল একটা অনুমান মাত্র।
রেফারেন্সঃ
1. Hall B (2008). Strickberger’s Evolution : the integration of genes, organisms and populations. Page: 4
2. Schopf JW (July 1994). “Disparate rates, differing fates: tempo and mode of evolution changed from the Precambrian to the Phanerozoic”. Proceedings of the National Academy of Sciences of the United States of America. 91 (15): 6735–42. Https//doi.org/10.1073/pnas.91.15.6735
3. Godoy-Vitorino F (July 2019). “Human microbial ecology and the rising new medicine”. Annals of Translational Medicine. 7 (14): 342. doi:10.21037/atm.2019.06.56
4. Darwin, Charles (1859). The Origin of Species by Means of Natural Selection. John Murray. pp. 484, 490
5.https://journals.plos.org/plosgenetics/article?id=10.1371/journal.pgen.1007518
6. Theobald, D. A formal test of the theory of universal common ancestry. Nature 465, 219–222 (2010). https://doi.org/10.1038/nature09014
7.https://doi.org/10.1016/B978-0-12-814022-2.00009-5
8.https://www.nationalgeographic.com/adventure/article/100513-science-evolution-darwin-single-ancestor
9. Yonezawa, T., Hasegawa, M. Was the universal common ancestry proved?. Nature 468, E9 (2010). https://doi.org/10.1038/nature09482
10. Theobald, D. Theobald reply. Nature 468, E10 (2010). https://doi.org/10.1038/nature09483
11.https://www.nature.com/scitable/blog/labcoat-life/common_ancestry_we_come_from/
12.Koonin, E.V., Wolf, Y.I. The common ancestry of life. Biol Direct 5, 64 (2010). https://doi.org/10.1186/1745-6150-5-64