The Fine-Tuning Argument
Fine-Tuning Argument / ফাইন টিউনিং আর্গুমেন্ট
আমাদের এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিশৈলী সুবিন্যাস্ত ও নিখুত। আর কোনো কিছু নিখুতভাবে বিন্যাস করার জন্য অবশ্যই একজন বিন্যাসকারী বা ডিজাইনার থাকা আবশ্যক।
ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক,
প্রতিদিনকার মতো শীতের সকালে আবির ও সাদিদ নামে দুই বন্ধু ফুটবল নিয়ে বের হলেন খেলার উদ্দেশ্যে। চারদিকে কুয়াশার ধূম্রজাল চিরে পুব আকাশে সূর্য নিজেকে জানান দেওয়ায় ব্যাস্ত হয়ে পরলো সবে মাত্র। সাদিদ ও আবির দুজনে তাদের স্কুল মাঠে খেলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। খেলা শেষে তারা মাঠের পাশেই মতিন মিয়ার দোকানে নাস্তা করতে গেল। আবির ও সাবিত দোকানে যাওয়া মাত্র টেবিলে দেখতে পেলো দুটো সেঁকা পাউরুটি ও তাদের পছন্দের গরুর মাংশ। দুজনের চোখমুখ বিস্ময়ে-আনন্দে ফেটে পড়লো।
পাশ থেকে মতিন মিয়ার দোকানের এক কর্মচারী সাদিদ ও আবির কে উদ্দেশ্য করে বললো “ভাইজান এই রুটি ও মাংশ এমনি এমনি এই টেবিলে চলে এসেছে!”
আবির ও সাদিদ দুজনে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো, এবং সাদিদি আবিরকে উদ্দেশ্য করে বললো, “ব্যাচারি মনে হয় রাতে ভালো ঘুমাতে পারেনি।”
সাদিদের এমন কথা বলাটা খুবই স্বাভাবিক। কেননা, একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই এ কথা বলবেনা যে, কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া বা কারণ ছাড়া এমনি এমনি খাবার গুলো টেবিলে চলে এসেছে। এমন তাজ্জব ঘটনার ব্যাক্ষা হিসেবে কেউ অবশ্যই উদ্দেশ্যহীন দৈবঘটনাকে দাঁড় করাবেনা, যদি-না সে পাগল হয়।
দেখুন, সামান্য এই ঘটনাটি উদ্দেশ্যহীণ বা কারণ ছাড়া ঘটেছে তা আমরা কেউ মেনে নিবোনা। হোক আস্তিক কি-বা নাস্তিক।
তাহলে এই বিশাল বিস্তীর্ণ ও রহস্যময় নিখুত মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কি এই সিদ্ধাতে আসা উচিত যে, মহাবিশ্ব এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে ? বা এই মহাবিশ্ব কোনো বুদ্ধিমান সত্তা’র পরিকল্পিত উদ্ভাবন নয় ?
একজন যুক্তিবাদী মানুষ মাত্রই স্বীকার করবে, কিছুতেই এমন সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয়।
এই মহাজগৎ অস্তিত্বে আসার পিছনে, এমন একজন মহাজ্ঞানি সত্তা’র হাত রয়েছে, যিনি এই মহাজগৎ সুনিপুণভাবে সৃষ্টি করেছেন।
একটা কম্পিউটার, গাড়ি কিংবা উড়োজাহাজের কথাই চিন্তা করুন, এগুলোর যন্ত্রপাতিগুলো সঠিকভাবে কাজ করার জন্য কেউ না কেউ সুন্দর একটি নকশা তৌরি করেছে।
একটা গাড়ি এমন নিখুঁতভাবে বানানোর চেষ্টা করা হয়-যাতে এতে চড়ে ভ্রমণ আরামদায়ক ও নিরাপদ হয়। আপনার ঘরের টেলিভিশন বা যে ডিভাইস দিয়ে এই লেখাটি পড়ছেন সেই ডিভাইসের কথাই চিন্তা করে দেখুন তো একবার, কত নিখুঁতভাবেই না এগুলো তৌরি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবুও অনেক ফাঁকফোকর থেকে যাচ্ছে।
শুধু কি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র ? আমাদের ব্যাবহার্য প্রতিটি জিনিসই খুবই সুক্ষ একটা পরিকল্পনার ফল। তবুও আমরা কোনো কিছু নিখুঁতভাবে তৌরি করতে পেরেছি বলতে পারিনা।
তাহলে বিশালবিস্তীর্ণ এই রহস্যময় মহাজগৎ কি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা’র পরিকল্পনা বিহীন এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে চলে আসতে পারে ?
আমাদের এই মহাবিশ্ব এবং এর মাঝে সবকিছুই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন। এখানে কোটি কোটি তারা আর ছায়া-পথ আছে। আগণিত সেই ছায়া পথে আরো অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। তারই মাঝে অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রহ হলো আমাদের এই পৃথিবী। পৃথিবীতে কোটি কোটি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। জ্যোতিমণ্ডলীয় বিভিন্ন বস্তু আর, প্রাকৃতিক নিয়মের নিখুত সুবিন্যাসের কারণে যদি এসব প্রাণের আভির্বাব ঘটে, তাহলে এগুলোর ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত “কোনোভাবেই এগুলো দৈবক্রমে বা এমনি এমনি আসেনি।” এগুলো পিছনে রয়েছে কোনো এক মহা পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনা।
পরিকল্পিত মহাজগৎ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনেও বলা আছে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন,
সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে সুনির্দিষ্ট হিসাব অনুযায়ী।
তারকা ও বৃক্ষ উভয়ে (আল্লাহকে) সাজদাহ করে।
তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন মানদন্ড
রেফারেন্সঃ সূরা আর-রাহমান; ৫৫ঃ ৫-৭
এই মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকে খুবই সুশৃংখলভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেখানে কি-না প্রাণ ধারণ করা যায়।প্রাণের অস্তিত্বের জন্য রয়েছে সুনিপুণ সব প্রাকৃতিক নিয়ম। মহাবিশ্বের নিয়মগুলো যদি সামান্য উনিশ-বিশ হয় তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের প্রিয় এই মহাবিশ্ব। যদি তাই হতো আজ আপনার এই আর্টিকেল পড়া হতো না! পড়াতো দূরে থাক, লেখার জন্য তো আমি নিজেই থাকতাম না!
মহাবিশ্বের এমন শৃঙ্খলা আমাদের ফাইন টিউনিং বা একজন বুদ্ধিমান সত্তা’র পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত দেয়।
পরিকল্পিত মহাজগতের পক্ষে চাইলে অনেকগুলো উদাহারণ দেওয়া যায়। তবে একটা আর্টিকেলে সব বিষয়ে আলোচনা করার অবকাশ নেই। তবে কিছু মৌলিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাক।
অভিকর্ষয তরণঃ
পৃথিবী ও অন্য যে কোন বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল তাকে অভিকর্ষ বল বলা হয়। অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। এটা ছাড়া বস্তুগুলোকে এক করার মতো কোনো শক্তি খুজে পাওয়া যেত না। যার ফলে কোনো তারকা বা গ্রহের অস্তিত্ব থাকতোনা। তারকা বা গ্রহের অস্তিত্ব না থাকলে কোনো প্রাণেরও অস্তিত্ব থাকতো না।
রেফারেন্সঃ কলিন্স, আর. (২০০৯) দ্যা থিওলজিকাল আর্গুমেন্ট। ক্রেগ, ডব্লিউ . এল এন্ড মোরল্যান্ড, জে.পি দ্যা ব্ল্যাকওয়েল কম্প্যানিয়ন টু ন্যাচরাল থিওলজি। ওয়েস্ট সাসেক্স: উইলি-ব্ল্যাকওয়েল, পৃষ্ঠা, ২১২।
জোয়ারভাটাঃ
পৃথিবীর উপর সূর্য অপেক্ষা চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তি বেশি। আবার পানি তরল বলে এর উপরও চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তি বেশি। স্থলভাগ অপেক্ষায় পানির উপর চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তি বেশি বলে পৃথিবীর যে অংশ চন্দ্রের ঠিক সম্মুখে আসে সেই স্থানে পানিরাশি ফুলে উঠে। যার ফলে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। চাঁদ এখন যেখানে আছে আদিতে তার চেয়ে কাছে ছিলো। কৌণিক ভর-বেগের কারণে যদি চাঁদ না সরতো তাহলে পৃথিবীর উপরিভাগ উত্তপ্ত অবস্থায় থাকতো। যার ফলে প্রাণের বিকাশে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হতো।
ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানি পিটার ওয়ার্ড বলেছেন,
“নিকটস্থ চাঁদ থেকে মহাসাগরীয় জোয়ার ভাটা ( এবং ভূত্বকীয় প্রসারণ ও সংকোচন ) হতো বিশাল। ভূত্বকের নমনীয়তা, সাথে ঘর্ষণজনিত কারণে পাথুরে উপরিতল সম্ভবত গলে যেত।
রেফারেন্সঃ ওয়ার্ড,পি. অ্যান্ড ব্রাউনলি, ডি (২০০৪) রেয়ার আর্থ: ওয়াই কমপ্লেক্স লাইফ ইজ আনকমন ইন দ্যা য়ুনিভার্স। নিয় ইয়র্ক: কোপার্নিকাস বুকস, পৃষ্ঠা, ৪।
তড়িৎ চুম্বক শক্তিঃ
মহাবিশ্বের সব কিছুতে তড়িৎ চুম্বক শক্তির প্রভাব আছে। তড়িৎ চুম্বক শক্তির প্রভাব ছাড়া পরমাণুর অস্তিত্ব সম্ভব হতোনা। কেননা, তখন ইলেক্ট্রন গুলোকে কেউ তাদের অক্ষে ধরে রাখতে পারতো না। আর পরমানু না থাকলে কোনো জীবনও থাকতো না।
ইনফিনিট মাইন্ডস: ‘আ ফিলোসফিকাল কসমলজি’ বইতে অধ্যাপক জন লেসলি লিখেছেন,
“তড়িৎ-চুম্বকীয় বলয়ের শক্তির দিক একটি। কিন্তু বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সচল করে এটা। কোটি কোটি বছর ধরে দৃঢ়ভাবে জ্বালিয়ে রাখে তারাগুলোকে। তারার মাঝে ঘটে কার্বন সংশ্লেষণ। লেপ্টন যেন কোয়ার্ককে বদলে না দেয়, সেটা নিশ্চিত করে। তা না হলে পরমাণু গঠিত হতে পারতো না। প্রোটন যেন খুব দ্রুত নিঃশেষ না হয়, বা একে অপরকে তাড়িয়ে না দেয়, তা নিশ্চিত করে এটা। এগুলো প্রতিটি প্রক্রিয়ার জন্য তো ভিন্ন ভিন্ন শক্তির প্রয়োজন কিন্তু এই একটা শক্তি কিভাবে একাধিন প্রক্রিয়াকে সচল রাখে?”
রেফারেন্সঃ জন লেসলি (২০০১) ইনফিনাইট মাইন্ডস: আ ফিলোসফিকাল কসমলজি। অক্সফোর্ড: ক্ল্যারন্ডেন প্রেস, পৃষ্ঠা,১৫০।
আমাদের গ্রহের অবস্থানঃ
পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী সূর্য থেকে এমন দূরত্বে অবস্থান করে, যেখানে কেন্দ্রীয় তারা থেকে আসা তাপ গ্রহের উপরিতলে এমন এক তাপমাত্রা দেয়, যাতে সাগরের পানি জমে বরফ হয় না, আবার উত্তপ্ত হয়ে ফোটেও না।
রেফারেন্সঃ ওয়ার্ড পি,ডি অ্যান্ড ব্রাউনলি, ডি (২০০৪) রেয়ার আর্থ: ওয়াই কমপ্লেক্স লাইফ ইজ আনকমন ইন দ্যা য়ুনিভার্স। নিয় ইয়র্ক: কোপার্নিকাস বুকস, পৃষ্ঠা,১৬
পৃথিবী যদি তার বর্তমান অবস্থান থেকে সূর্যের একটু কাছে থাকলে পৃথিবী অধিক উত্তপ্ত হতো; আবার সামান্য দূরে থাকলে পৃথিবী খুব ঠান্ডা হতো। যার ফলে প্রাণের বিকাশে ব্যাঘাত ঘটতো।
বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যাকর্ষণ বল
আমাদের সৌরজগতে যদি বৃহস্পতি গ্রহ না থাকতো তাহলে জীবন ধারণের ওপর মারাতবক প্রভাব পরতো।
ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞানি পিটার ওয়ার্ড বলেন,
“বৃহস্পতি ছাড়া পৃথিবীতে আজ প্রাণের অস্তিত্ব না থাকার যথেষ্ট শঙ্ঘখা ছিলো।
রেফারেন্সঃ ওয়ার্ড পি,ডি অ্যান্ড ব্রাউনলি, ডি (২০০৪) রেয়ার আর্থ: ওয়াই কমপ্লেক্স লাইফ ইজ আনকমন ইন দ্যা য়ুনিভার্স। নিয় ইয়র্ক: কোপার্নিকাস বুকস
মহাবিশ্বের এমন সুশৃংখল নিয়মাবলির সম্ভাব্য ব্যাক্ষা হতে পারে, দৈবঘটনা, প্রাকৃতিক অনিবার্যতা, বহুমহাজগত, পরিকল্পনা।
দৈবঘটনা
দৈবভাবে আমাদের মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার মানে হচ্ছে, প্রাকৃতিক নিয়ম এবং আমাদের এই মহাবিশ্ব কোনো প্রকার উদ্দেশ্য ছাড়াই হয়ে গেছে।
আমাদের জীবনের প্রতিদিনকার কাজ কর্মের বেলায় কখনোই কি আমরা দৈবঘটনাকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করায় ? অবশ্যই না!
আর্টিকেলের শুরুতে আবির ও সাদিদ নামের দুই বন্ধুর ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম। সেই গল্পে ফিরে যায় আরেকটু।
সাদিদের বাবা রাফিক সাহেব ও আবিরের বাবা শফিক সাহেব তাদের সন্তান, সাদিদ, ও আবির’কে সকালে ফুটবল খেলতে নিষেধ করেছিলেন।
আবিরের বাবা শফিক সাহেব একজন অবিশ্বাসী মানুষ। স্থানীয় বাম রাজনীতির সাথেও জড়িত আছেন তিনি । অন্যদিকে সাদিদের বাবা রফিক সাহেব একজন প্রবল বিশ্বাসী মানুষ।
একই এলাকায় থাকার ফলে মাঝে মধ্যে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয় আস্তিকতা ও নাস্তিকতা নিয়ে।
সেদিন সন্ধাবেলায় বাজারের চায়ের দোকানে দুজনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো আর ফাইন টিউনিং আর্গুমেন্ট নিয়ে আলোচনা করছিলো।
রফিক সাহেবঃ এই মহাজগৎ অস্তিত্বে আসার পিছনে, এমন একজন মহা জ্ঞানি সত্তার হাত রয়েছে, যিনি এই মহাজগৎ সুনিপুণ ভাবে সৃষ্টি করেছেন।
শফিক সাহেবঃ না কিছুতেই না! এই মহাজগৎ অস্তিত্বে আসার পিছনে,কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হাত নেই। বরং এটি কেবলই একটা দূর্ঘটনা।
শফিক সাহেবের এহেন উদ্ভট যুক্তির জবাবে রফিক সাহেব কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে ছিলো।
সকালে দুজনে হাঁটতে বের হতে না হতেই দেখলো তাদের ছেলে, সাদিদ ও আবির মাঠে ফুটবল খেলছে।
শফিক সাহেবঃ ছেলেদের এতো করে নিষেধ করার পরেও আমাদের ফাঁকি দিয়ে মাঠে খেলতে চলে এলো।
রফিক সাহেবঃ ফাঁকি দিয়ে আসেনি তো ! এটা কেবলই একটা দূর্ঘটনা !
শফিক সাহেবঃ পাগল হয়েছিস নাকি ?
রফিক সাহেবঃ পাগল হতে যাবো কেন? তুই নিজেই তো বললি, এই মহাজগৎ অস্তিত্বে আসার পিছনে,কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হাত নেই। বরং এটি কেবলই একটা দূর্ঘটনা।
বিশাল বিস্তীর্ণ এই রহস্যময় মহাবিশ্ব যদি একটা দূর্ঘটনার ফসল হতে পারে, তাহলে সাদিদ আর আবিরের ফুটবল খেলতে আসা কি দূর্ঘটনার ফসল হতে পারে না?
ব্যাচারি শফিক সাহেব, রফিক সাহেবের উত্তর শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে কেটে পড়লেন!
দৈবভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে নাস্তিকদের এহেন কথাবার্তা পাগলের প্রলাপের মতোই। উপরের দৃশ্যপটের কথাই চিন্তা করুন, অবিশ্বাসী শফিক সাহেব কিন্তু ঠিকই একটা মেনে নিচ্ছে যে মহাবিশ্ব একটা দূর্ঘটনার ফসল। কিন্তু যখনই তাদের সন্তানদের মাঠে খেলতে আসাকে দূর্ঘটনার ফসল বলা হচ্ছে তখন আর মেনে নিচ্ছেনা। মেনে না নেওয়ার যৌক্তিক কারণও আছে, আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিক জ্ঞান বলে কোনো কিছু দৈবভাবে অস্তিত্বে আসতে পারেনা।
দৈবঘটনার যুক্তি শুধুই কুযুক্তি নয়, বরং সুস্থ আলোচনার পথেও বাধা।
দৈবঘটনার অযুহাত তুলে আমি যদি কোনো নাস্তিক বন্ধুকে বলি তুমি যাকে মা বলে ডাকে তিনি তোমার মা নয়। তোমার মা হচ্ছে এক বিশাল গোলাপি হাতি।
আমার নাস্তিক বন্ধু নিশ্চয় আমাকে উন্মাদ বলবে।
কিন্তু আমি প্রতিউত্তরে বলতে পারি, এই বিশাল রহস্যময় মহাজগৎ অস্তিত্বে আসার পিছনে যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্তার হাত না থাকে, এটা যদি কেবল দূর্ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে কেন নাস্তিকের জন্ম গোলাপি হাতির পেট থেকে হতে পারবেনা?! এটাও একটা দূর্ঘটনা।
নাস্তিকরা ব্যাবহারিক জীবনে কোনো ক্ষেত্রেই দৈবঘটনাকে স্বীকার করবেনা, তবে আল্লাহর অস্তিত্বকে আড়াল করার জন্য এহেন অযৌক্তিক দাবী উপস্থাপন করে।
প্রাকৃতিক অনিবার্যতা
প্রাকৃতিন অনিবার্যতা মানে, প্রাকৃতিক নিয়ম যেমন আছে, তেমনই থাকার কথা।
কিন্তু এ দাবির পক্ষে কোনো জোরালো প্রমাণ নেই।
পদার্থবিদ পল ডেভিস বলেছেন,
“জড় মহাজগৎ যেমন আছে তেমন হওয়র দরকার ছিল না। এটা অন্য রকমও হতে পারতো।”
রেফারেন্সঃ ডেভিস, পি (১৯৯৩)। দা মাইন্ড অভ গড: সায়েন্স অ্যান্ড দা সার্চ ফর আল্টিমেইট মিনিং। লন্ডন: পেঙ্গুইন, পৃষ্ঠা, ১৬৯।
আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিফেন্ডেন্সি’ তে আমরা একটা উদাহারণ দিয়েছিলাম, “একটা চত্বরের সামনে কতগুলো ফুল দিয়ে সজ্জিত করে লেখা, আমি তোমাকে ভালোবাসি”।
ফুল দিয়ে সজ্জিত করা “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এটা দেখার পর কেউ যদি বলে এটা এভাবে হতেই হতো, এটা হওয়াটা অনিবার্য। এমন দাবি করাটা অযৌক্তিক। কারণ সেখানে ফুল গুলো ওভাবে সজ্জিত নাও হতে পারতো, কিংবা ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এ-কথার পরিবর্তে ‘আমি তোমাকে পছন্দ করি’ এভাবেও সজ্জিত করা যেত।
বহু মহাজগৎ
মহাজগৎ কিভাবে এতোটা সুশৃংখল বা নিখুত! এই প্রশ্নের জবাবে নাস্তিকরা সাধারণত বহু মহাজগতের প্রস্তাব করে সুশৃংখল মহাজগৎ এর ব্যাক্ষা করার ব্যার্থ চেষ্টা করে।
তাদের যুক্তি মতে, অসংখ্য মহাবিশ্ব থেকে একটা মহাবিশ্ব এতটা সুশৃংখল বা নিখুত হতেই পারে।
উপরে আমরা ফুলের যে উদাহারণটি দিয়েছে সেই দৃশ্যপটটি কল্পনা করুন,
চত্বরের সামনে অসংখ্য ফুল বার বার ছিটিয়ে দেওয়া শুরু করলে কি “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এভাবে সজ্জিত হতে পারবে ? নাকি কেউ একজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফুল ছিটিয়ে দিলেই “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এভাবে সজ্জিত হওয়া সম্ভব?
যুক্তিবাদী মানুষ মাত্রই স্বীকার করবে ফুলগুলো ওভাবে সজ্জিত করার জন্য কেউ একজনের পরিকল্পনা অনিবার্য।
আরেকটি পয়েন্ট চিন্তা করুন, অনেকগুলো মহাবিশ্ব থেকে একটা মহাবিশ্ব নিখুত হতেই পারে। এ কথার মানে মহাজগৎ সহ বাকি মহাজগৎ সৃষ্টির জন্য পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম আগে থেকেই থাকতে হতো। অর্থাৎ কোনো কারণ বা ব্যক্ষা ছাড়াই পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলো ভেলকিবাজির মতো নিজেদের প্রকাশ করেছে।
এই ভেলকিবাজিটা কিছু সময়ের জন্য মেনে নিলেও, আমাদের যৌক্তিক মন জিজ্ঞেসিত করবে যে “পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়মগুলো কোথা থেকে আসলো ?” এগুলো কি অসীম ? নাকি এগুলো নিজেদের নিজেরা সৃষ্টি করেছে ?
আরো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো,
প্রাণের বিকাশে উপযোগী মহাজগৎ সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলোকেই স্বয়ং ‘সুপরিকল্পিত’ হতে হবে।
রেফারেন্সঃ কলিন্স, আর. (২০০৯) দা টেলিওলজিকাল আর্গুমেন্ট, পৃষ্ঠা, ২৬২-২৬৫
নাস্তিকদের এই তত্বকে বাতিল করার জন্য আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা যাক,
অধ্যাপক রিচার্ড সোয়াইনবার্ন লিখেছে,
“যেখানে কেবল একটা সত্তা-কে মেনে নিলেই একটা মহাজগতের বৈশিষ্টকে ব্যাক্ষা করা সম্ভব, সেখানে এক লক্ষ কোটি মহাজগতের দাবি করা পাগলপনা।”
রেফারেন্সঃ দেয়ার ইজ এ গড, পৃষ্টা-১১৯
বহু মহাগতের কোনো প্রমাণ নেই। অধ্যাপক অ্যান্থনি ফ্লিউ বলেছেন,
“নিজস্ব প্রাকৃতিক নিয়ম-সংবলিত বহু মহাজগৎ যৌক্তিকভাবে সম্ভব বললেই ওরকম মহাজগৎ অস্তিত্বে চলে আসে না। বহু মহাজগতের পক্ষে বর্তমানে কোনো প্রমাণ নেই। এটা নিছক অনুমান।
রেফারেন্সঃ দেয়ার ইজ এ গড, পৃষ্টা-১১৯
বহু মহাজগৎ তত্ত্বটি শুধু প্রমাণহীন নয়, বরং অবৈজ্ঞানিকও।
সিডনি ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি’র ডক্টোরেইট ডিগ্রি পরবর্তী গবেষক লুক এ.বার্নস বলেছেন,
“বিজ্ঞানের ইতিহাস বারবার আমাদের শিখিয়েছে, গবেষণামূলক পরীক্ষা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বহু মহাজগৎ যে আসলেই আছে- সেই তত্ত্বপ্রকল্প কখনোই পরীক্ষা করা যাবেনা।
রেফারেন্সঃ বার্নস, এল,এ. (২০১১) দা ফাইন-টিউনিং অভ দা ইয়ুনিভার্স ফর ইন্টেলিজেন্ট লাইফ। সিডনি ইন্সটিটিউট ফর অ্যাস্ট্রনমি। http://arxiv.org/PS_cache/arxiv/pdf/1112/1112.4647v1.pdf [ Accessed 5th october
মহাজগৎ অবশ্যই কোনো এক বুদ্ধিমান সত্তার পরিকল্পিত উদ্ভাবন!
দৈবঘটনা, প্রাকৃতিক অনিবার্যতা কিংবা বহু-মহাজগৎ দিয়ে মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়ম বা সুশৃঙ্খলাকে ব্যাক্ষা করা সম্ভব নয়। একজন বুদ্ধিমান সত্তাকে মেনে নিলেই কেবল মহাজগৎ সম্পর্কে যুক্তিসিদ্ধ এবং সংগতিপূর্ণ ব্যাক্ষা পাওয়া যায়।
মহাজগতের বেশির ভাগ তো অবাসযোগ্য! আল্লাহ কি ত্রুটিপূর্ণ মহাজগতের পরিকল্পনা করেছেন ?
পরিকল্পিত মহা-জগত বললেই নাস্তিকরা দাবি করে মহাবিশ্বের খুব সামান্য কিছু জায়গায় বসবাসের উপযোগ্য। তাহলে এটা কিভাবে পরিকল্পিত হতে পারে ?
নাস্তিকরা এখানে যে ভুল ধারণাটি করে তা হচ্ছে, ” পুরো মহাজগৎ বসবাসের উপযোগি হতে হবে!”
প্রথমত, নাস্তিকদের এই যুক্তি কিন্তু মহাজগৎ পরিকল্পিত হওয়াকে অস্বীকার করেনা।মূলত পরিকল্পনাকারীর সামর্থকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
দ্বিতীয়ত, পুরো মহাবিশ্ব কেন বসবাসের উপযোগি হতে হবে? যে সত্তা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে তার কি উদ্দেশ্য ছিলো পুরো মহাবিশ্বকে বসবাসের উপযোগি করা ? বরং আমরা বলতে পারি, মহাজগৎ সৃষ্টির অনেকগুলো উদ্দেশ্যের মাঝে একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে সামান্য অংশে প্রাণের বিকাশ অনুযায়ী গ্রহ সৃষ্টি করা। পুরো মহাজগৎ বসবাসের উপযোগি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
কুরাআন, বিজ্ঞান ও ফিলোসফি – Faith and Theology (faith-and-theology.com)