Homology সমসংস্থা
বিবর্তনবাদ
সূচনা
হোমোলজি শব্দটি প্রায় ১৬৫৬ সালে উদ্ভূত হয়েছে, গ্রীক শব্দ “ὁμόλογος” homologos থেকে। ὁμός homos ” মানে same” একই এবং λόγος লোগো মানে “সম্পর্ক”।
দুইটি ভিন্ন প্রজাতির দুইজন সদস্যের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠন এবং ফিচারে মিল রয়েছে। এই যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অ্যানাটমি এবং ফিচারের সাদৃশ্য থাকা এর নাম হোমোলজি। আর যেসব বৈশিষ্ট্যে সাদৃশ্য পাওয়া যায় সেগুলো হোমোলোগাস বৈশিষ্ট্য। তো এই হোমোলজি থেকে দুটো অনুসিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। দুইটি ভিন্ন প্রজাতি তাদের কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এই হোমোলোগাস বৈশিষ্ট্যগুলো লাভ করেছে। অথবা একজন স্রষ্টা তাদের সাদৃশ্যপূর্ণভাবে সৃষ্টি করেছেন। তবে ডারউইনিষ্টরা সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণাই আমলে নিয়ে একে সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। যেমন: মানুষ ও পাখির কিছু সাদৃশ্য আছে তাদের স্কেলেটনে, ফলে ধারণা করা যায় মানুষ ও পাখি সুদূর অতীতে কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়েছে। আবার মানুষ ও ক্যাঙ্গারুর হোমোলোগাস ট্রেইট হলো এদের চুল যা পাখির নেই। ফলে সহজে বোঝা যাচ্ছে মানুষ ও ক্যাঙ্গারুর সাধারণ পূর্বপুরুষের জন্ম হয়েছে পাখির বিবর্তনের ধারা এই তিনজনের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে। তবে পরবর্তীতে হমোলজির সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুটি প্রাণির মাঝে কোনো বৈশিষ্ট্যকে তখনই হোমোলগাস অর্থাৎ সাদৃশ্যপূর্ণ বলা হবে, যখন সেই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আসবে। এই বৈশিষ্ট্য হতে পারে গাঠনিক (morphological), শারীরবৃত্তীয় (physiological), আণবিক (molecular), কিংবা আচরণগত (behavioural)। (১) তবে সমস্যা হচ্ছে সাধারণ পূর্বপুরুষ ধরে নিয়ে হমোলজির সংজ্ঞা দিলে হমোলজিকে আর সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার ই করা যাবে না। কেননা এর পূর্বেই সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা প্রমাণ করতে হবে। যদি কেউ দাবি করে, বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী হোমোলজি সঠিক কারণ সবার সাধারণ পূর্বপুরুষ আছে। আবার সবার সাধারণ পূর্বপুরুষ আছে এটা সঠিক কারণ হোমোলজি সত্য। এখানে হমোলজি এবং সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা কোনোটাই স্বতন্ত্রভাবে প্রমাণিত নয় বরং একটা আরেকটার উপর নির্ভরশীল। এবং এই উপায়ে হমোলজিকে সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ্য করাটা হলো কুযুক্তি। যাকে দর্শনের ভাষায় বলা হয় সার্কুলার রিজনিং ফ্যালাসি। (২) এখন কেউ যদি হমোলজির ডায়াগ্রামে জিনগত মিল দেখিয়ে হমোলজিকে সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় তবে ডায়াগ্রাম টা হবে এমনঃ হোমোলোগাস বৈশিষ্ট্য শনাক্তকরণ→হোমোলজির ভিত্তিতে সাধারণ পূর্বপুরুষ অনুসারে সাজানো→জেনেটিক্সের ব্যবহার এবং ফলাফল যাচাই। সমস্যা হচ্ছে জিনগত সাদৃশ্য সাধারণ পূর্বপুরুষকে প্রমাণ করে এটা এখানে স্রেফ ধরে নেয়া হয়েছে, হমোলজির মতো জিনগত সাদৃশ্যও কেবল একটি ধারণা মাত্র।
হমোলজি সূত্রঃ ফ্রন্টিয়ারসিন
আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে মলিকুলার লেভেলেও এক জীবের সাথে অন্য জীবের সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হয়। বিবর্তনীয় চিন্তাধারার ইতিহাস থেকে আমরা জানি, এসকল সাদৃশ্যকে ডারউইন পূর্ব বিজ্ঞানীরা সাধারণ নকশা ” কমন ডিজাইন ” হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন অর্থাৎ স্রষ্টা চেয়েছেন বলেই এসকল জীবদের মধ্যে সাদৃশ্য রেখে সৃষ্টি করেছেন।কিন্তু ডারউইন এই ধারণা পছন্দ করেননি। ডারউইন অনুমান করেন, প্রাণের মাঝে থাকা গাঠনিক মিল হয়তো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তনের ফলে হয়েছে। (assumption of homology) সাধারণ পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সাধারণ পূর্বপুরুষ-এর অনুমানকে প্রাধান্য দেন তিনি। এর ভিত্তিতে তিনি জীবনের ইতিহাসের ছক কাটেন, যা Tree of life নামে পরিচিত। (৩)
তিনি আরও অনুমান করেন সমস্ত প্রাণ একটি প্রাণ থেকে জাগতিক প্রক্রিয়ায় পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হয়েছে (assumption of common origin)। ডারউইন ভেবেছিলেন জীবনবৃক্ষের ধারণা ঐশ্বরিক সৃষ্টিকে অপ্রমাণিত করবে। এজন্যই ডারউইনের তত্ত্ব নিয়ে এতো মাতামাতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই ধারণা ভুল! স্রেফ মিল ( জিনগত) দেখে সাধারণ-পূর্বপুরুষের নিশ্চিত প্রমাণ হয় না। কারণ স্রষ্টা চাইলেই একইরকম জিন দিয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রাণি তৈরি করতে পারেন। (৪)
হোমোপ্লেসি
একই গঠনের অঙ্গ যদি একই পূর্বপুরুষ না থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্ত হয়, তাহলে তাকে হোমোপ্লাসি বলে। ভাল উদাহরণ হল, ‘ক্যামেরা-আই’, যা কিনা মানুষ ও অক্টোপাস উভয়ের আছে। মাইকেল ল্যান্ড মন্তব্য করেছেন যে, মেরুদন্ডী প্রানীর চোখ সেফালোপড মলাস্কের চোখের সাথে অনুরূপ ডিজাইন ভাগাভাগি করেছে , বিবর্তন নয়। ডারউইনের বহু আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা সমসংস্থা নিয়ে অবগত ছিলেন, কিন্তু তখন সেগুলোকে কমন ডিজাইন বলা হত।
কিন্তু যেহেতু মানুষ ও অক্টোপাসের, সেহেতু সাধারণ পূর্বপুরুষ নেই, তাই সমসংস্থা বলার কোন উপায় থাকল না। বিবর্তনবাদীরা এবার বাচ্চাদের মগজ ধোলাইয়ের জন্য নতুন পরিভাষা আবিষ্কার করল, সেটা হল সমগঠন বা হোমোপ্লাসি। আর এধরনের বিবর্তনকে নাম দেয়া হল ‘অভিসারী বিবর্তন’। তেমন কিছুই না, শুধু বিবর্তন শব্দের সামনে ‘অভিসারী’ শব্দ যোগ করে দিয়ে, অবুঝ শিশুদের সাথে ‘মাইন্ড গেম’ খেলেছে তারা।
ব্রিটিশ যাদুঘরের সিনিয়র জীবাশ্মবিদ কলিন প্যাটারসন বিবর্তনকে anti-knowledge উৎপাদনকারী anti-theory বলে অভিহিত করে সারা দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছেলেন। তার মতে, anti-knowledge হল এমন ধারণা তা প্রচুর ব্যাখ্যামূলক পারিভাষিক শব্দে পূর্ণ, অথচ তা ব্যাখ্যা তো দূর করেই না, উল্টো সত্যের উপর মিথ্যাকে অঙ্কন করে দেয়।
হোমোপ্লাসির উদাহরণের শেষ নেই। যেমনঃ বাদুড় ও ডলফিন উভয়ের একোলোকেশন [শব্দ অবস্থান] ব্যবস্থা আছে। মারসুপিয়াল ও প্লাসেন্টাল সেবারটুথ টাইগার, নানা ধরণের ডানা ইত্যাদি। একেই বলা হয় হোমোপ্লেসি/কনভার্জেন্স (Homoplasy/Convergence)। এমন নমুনা প্রচুর পাওয়া যায়। সুতরাং মিল থাকা মানেই যে তা সাধারণ-পুর্বপুরুষ এর নিশ্চিত প্রমাণ—এমন ধারণাও অযৌক্তিক। অনেক বিজ্ঞানী ভাবলেন ভ্রূণের বিকাশের সময় হয়তো একইরকম কোষ থেকে সাদৃশ্যযুক্ত গঠন তৈরি হয়। এই অনুমানও প্রমাণের ভিত্তিতে ভুল প্রমাণিত হয়! ভিন্ন ভিন্ন কোষ থেকে সাদৃশ্যযুক্ত অঙ্গ এবং সাদৃশ্যযুক্ত কোষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ গঠিত হওয়ার অনেক নজির পাওয়া যায়। আবার একইরকম জিন থেকে ভিন্নরকম অঙ্গ, আবার ভিন্নরকম জিন থেকে সাদৃশ্যযুক্ত অঙ্গ আসার প্রমাণ পাওয়ায় তাই ভ্রূণবিদ্যার কিংবা জিনগত সাদৃশ্যের দিক থেকেও হোমোলজি সমস্যার কোন সমাধান নেই। ( ৫) ট্রি অফ লাইফ এর ফান্ডামেন্টাল ধারণাটি ( হমোলজি) সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ নয় আসলে।
রেফারেন্সঃ
1.Ernst Mayr (2002), What Evolution Is (Phoenix Books) p. 17-19
2.Ronald Brady (1985), On the Independence of Systematics. Cladistics, vol. 1, issue 2, p. 113-126
3. Peter J. Bowler (2003), Evolution: The History of an Idea (University of California Press. P. 229
4.https://journals.plos.org/plosgenetics/article?id=10.1371/journal.pgen.1005912
5. Inkpen, S.A., Doolittle, W.F. Molecular Phylogenetics and the Perennial Problem of Homology. J Mol Evol 83, 184–192 (2016). https://doi.org/10.1007/s00239-016-9766-4