গণিত এবং স্রষ্টা: আর্গুমেন্ট ফ্রম ম্যাথমেটিক্স
বিজ্ঞান
ম্যাথমেটিকস বা গণিত কেন কাজ করে? ম্যাথমেটিক্যাল এন্টিটি যেমন নাম্বার, সেট এবং ইকুয়েশন এগুলো নন ফিজিক্যাল এবস্ট্রাকট এন্টিটি এগুলো কজালি ক্যাপাবল না অর্থাৎ এসব নাম্বার, সেট, গানিতিক বিশ্লেষণ কোনো কিছু ‘করতে’ সক্ষম নয়। অবশ্য কিছু কারণে আমাদের এই ভৌত জগৎ গানিতিক নিয়মাবলি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যেমনটা গ্যালিলিও বলেছিলেন যে,
প্রকৃতির বইটি গণিতের ভাষায় লেখা হয়েছে।
বিজ্ঞান এবং গণিত
বিজ্ঞানীরা উপাত্তগুলোকে একত্রিত করতে গণিতকে ব্যবহার করেন না বরং তারা বিশ্বাস করে গাণিতিক সম্পর্ক আমাদের ভৌত জগতের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। বিজ্ঞানে এটি স্বীকার্য যে মহাবিশ্ব সুনির্দিষ্ট কিছু গাণিতিক সূত্রাবলী দ্বারা সজ্জিত। যার ফলে পদার্থবিজ্ঞানের সকল সূত্রকে আমরা গাণিতিকভাবে উল্লেখ করতে দেখতে পাই। জগতের সাথে গণিতের সম্পর্কের উপর প্রভাব টা লক্ষণীয়, বিজ্ঞানীরা গণিতকে কাজে লাগিয়ে নানা সমস্যার সমাধান করেছেন যেমন- আইজ্যাক নিউটন গ্র্যাভিটি আবিষ্কারের পর ম্যাথম্যাটিকাল ইকুয়েশনের মাধ্যমে তা তুলে ধরেন এবং এগুলো স্বীকৃত। এসবের ফলে আজ আমরা মহাকাশ গবেষণার সুযোগ পাচ্ছি, আবার এই গণিতের সাহায্যেই বিজ্ঞানীরা পূর্বে জানা ছিলো না এমন গ্রহের অবস্থান নির্ণয় করেছেন। ম্যাক্স ওয়েল আবার রেডিও তরঙ্গের প্রেডিকশন তৈরিতে গণিতকে ব্যবহার করেছেন। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে আইন্সটাইন প্রায় ৫০ বছর গবেষণা করে উত্থাপন করেছেন তার ‘General Theory of Relativity ‘ যা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম অংশ, আইন্সটাইনের ইকুয়েশন অনুযায়ী সূর্যগ্রহনের সময় দূরবর্তী নীহারিকা থেকে আসা আলো বেকে যায় তা পরবর্তীতে স্যার আর্থার এডিংটনের মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। [1]Dodwell, G. F., & Davidson, C. R. (1924). Determination of the deflection of light by the sun’s gravitational field from observations made at Cordillo Downs, South Australia, during the … Continue readingআবার পিটার হিগস পার্টিকেলের ভরের জন্য এলিমেন্টারি পার্টিকেল এর প্রেডিকশন করেন ম্যাথমেটিক্যাল ইকুয়েশনের মাধ্যমে। লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের বিলিয়ন ডলার এর গবেষণার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে হিগস বোসন কণা আবিষ্কৃত হয় যা সকল পার্টিকেলের ভরের জন্য দায়ী। [2]O’Luanaigh, C. (14 March 2013). “New results indicate that new particle is a Higgs boson” (Press release). CERN. Archived from the original on 20 October 2015. Retrieved 9 October … Continue reading
ভৌত জগতের উপর গণিতের এই চমৎকার প্রয়োগ কে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? ১৯৬০ এর দিকে নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ Eugene Wigner একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যা সাইন্টিফিক কমিউনিটিকে নাড়িয়ে দেয়। তার গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিলো ‘ The unreasonable effectiveness of mathematics in the natural science.’ [3]Wigner, E. P. (1990). The unreasonable effectiveness of mathematics in the natural sciences. In Mathematics and science (pp. 291-306).https://doi.org/10.1002/cpa.3160130102উইগনার তার পেপারের কনক্লুশনে বলেন
পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম প্রণয়নের জন্য গণিতের ভাষার উপযুক্ততার অলৌকিকতা একটি দুর্দান্ত উপহার যা আমরা বুঝতে পারি না বা এটি বোঝার যোগ্যও নয়।
ম্যাথমেটিকস কেন এতো ইফেক্টিভ? দার্শনিকদের জন্য এ নিয়ে দুটো মতবাদ আছে। তন্মধ্যে ন্যাচারালিস্টরা মনে করে যা কিছুর অস্তিত্ব আছে তা স্রেফ এই স্পেস টাইম এবং এই ভৌত জগতের মধ্যেই নিহিত, সকল প্রকার আধিভৌতিক বাস্তবতা তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। অন্যদিকে একদল রয়েছে থিইস্ট তারা বিশ্বাস করেন যে একজন ঈশ্বর মহাবিশ্ব কে সৃষ্টি করেছেন। ন্যাচারালিস্টরা আমাদের জগতের উপর গণিতের উপর এই প্রভাবকে ব্যাখ্যা করতে পারেনা। তারা হয়তো বলবে এটা স্রেফ একটা কাকতালীয় ঘটনা।
ন্যাচারালিস্টিক ব্যাখ্যা:
এক্ষেত্রে ন্যাচারালিস্টরা বলতে পারে গণিতকে মহাবিশ্বের উপর প্রয়োগ করা যায় এটা তেমন কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয় বরং এই মহাবিশ্ব এভাবেই গঠিত হয়েছে যার ফলে মহাবিশ্বের উপর গণিতকে প্রয়োগ বা ব্যবহার করা যায়।
এই এপ্রোচটির মূলত দুটো সমস্যা রয়েছে।
১. ম্যাথমেটিক্যাল এপিস্টেমিক ভ্যালুর তুলনায় মেটাফিজিক্যাল এপিস্টেমিক ভ্যালু বেশি। অর্থাৎ এমন কিছু ম্যাথমেটিকাল আইডিয়া রয়েছে যা মেটাফিজিক্যালি এবসার্ড যেমন ইমেজিনারি নাম্বার্স, ইনফিনিট ডাইমেনশনাল স্পেস (i.e হিলবার্ট স্পেস) এগুলো স্রেফ আইডিয়া কোনো স্ট্রাকচারাল ফর্ম দিয়ে এদের কে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
২. যেহেতু সকল ম্যাথমেটিকাল কন্সেপ্ট মেটাফিজিক্যালি এপ্লিকেবল নয় সেহেতু মহাবিশ্ব এভাবেই গাণিতিকভাবে গঠিত তাই মহাবিশ্বের মধ্যে গণিতকে প্রয়োগ করা যায় এটি ভুল উত্তর কেননা এই রেস্পন্স মহাবিশ্বের কেন মার্জিত, সুষ্ঠু গাণিতিক সূত্রাবলী দ্বারা সজ্জিত তাকে ব্যাখ্যা করেনা।
থিইস্টিক ব্যাখ্যা:
অন্যদিকে থিইস্টরা ব্যাখ্যা করেন যে মহাবিশ্বের উপর গণিত সুষ্ঠুভাবে কাজ করে বা মহাবিশ্ব সুষ্ঠু গাণিতিক সূত্রাবলী দ্বারা সজ্জিত কারণ একজন স্রষ্টা মহাবিশ্ব কে তার ইচ্ছে মতো তৈরি করেছেন। প্রথম দিকের একজন দার্শনিক Philo of Alexandria র এনালজি অনুযায়ী,
যখন কোনো রাজা একটি শহর তৈরি করার পরিকল্পনা নেন তখন শহরের কাঠামোর একটি মডেল তৈরি করা হয় দক্ষ কারিগর দ্বারা, এবং পরবর্তীতে শহর তৈরির কাজ করা হয় সেই মডেল অনুযায়ী, এবং শহর ওই পরিকল্পনা অনুসারে তৈরি করা হয়। আমাদের মহাবিশ্বকেও পরিকল্পনামাফিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে বা ডিজাইন করা হয়েছে। মহাবিশ্বের উপর গণিত সুষ্ঠুভাবে কাজ করে এর কারণ হচ্ছে একজন স্রষ্টা তার পরিকল্পনা ( গণিত) অনুযায়ী মহাবিশ্বকে তৈরি করে সাজিয়েছেন। যার ফলে আমরা মহাবিশ্বের এই গাণিতিক সূত্রাবলীর সুষ্ঠু সজ্জা দেখতে পাই।
সুতরাং,
১. যদি কোনো স্রষ্টা না থাকেন তবে, গণিতের প্রায়োগিকতা স্রেফ একটি কাকতালীয় ঘটনা।
২. মহাবিশ্বের উপর গণিতের প্রায়োগিকতা স্রেফ একটি কাকতালীয় ঘটনা নয়।
৩. সুতরাং, স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে।
References
↑1 | Dodwell, G. F., & Davidson, C. R. (1924). Determination of the deflection of light by the sun’s gravitational field from observations made at Cordillo Downs, South Australia, during the total eclipse of 1922 September 21. Monthly Notices of the Royal Astronomical Society, 84, 150.https://doi.org/10.1098/rsta.1920.0009 |
---|---|
↑2 | O’Luanaigh, C. (14 March 2013). “New results indicate that new particle is a Higgs boson” (Press release). CERN. Archived from the original on 20 October 2015. Retrieved 9 October 2013 |
↑3 | Wigner, E. P. (1990). The unreasonable effectiveness of mathematics in the natural sciences. In Mathematics and science (pp. 291-306).https://doi.org/10.1002/cpa.3160130102 |