ইসলামে কি কোনো নারী নবী ছিলো ?
নারী নবী
ইসলামে কি কোনো নারী নবী ছিলো?
নবীদের বৈশিষ্টগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, আল্লাহর তরফ থেকে ওহি আসে তাঁদের কাছে। মারিয়ামের কাছে যে আল্লাহর তরফ থেকে ওহি এসেছে, তাই মারিয়াম নবী ছিলেন! এমন উদ্ভট কিছু দাবী করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে অনেকে। এই দাবীর পক্ষে তারা বিভিন্ন আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে থাকে। তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। আসলেই কি ইসলামে কি কোনো নারী নবী ছিলো? এর উত্তর জানতে হলে আমাদের নবী-রাসুল এবং ওহি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা রাখতে হবে।
নবী ও রাসুলের পার্থক্য
নবী ও রাসুলের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হলো, একজন রাসুলের নিকট নতুন কোনো শরিয়ত আসে এবং তা তার কওমের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রধান করা হয়।
আর একজন নবীর নিকট পূর্ববর্তী রাসুলের শরী’আত দিয়ে মুমিন সম্প্রাদয়ের নিকট প্রেরণ করা হয়। সুতরাং প্রত্যেক নবী ও রসূলের নিকটই অহী এসেছে। কিন্তু নবীকে পাঠানো হয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের প্রতি পূর্বের শরী‘আতসহ। যেমন বনী ইসরাঈলের নবীদের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তাদের সকলকেই তাওরাতের শরী‘আত দিয়ে বনী ইসরাঈলদেরকে পরিচালনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর রসূলদেরকে পাঠানো হয়েছে কাফের সম্প্রদায়ের নিকট। তারা কাফেরদেরকে আল্লাহর তাওহীদের দিকে এবং তার ইবাদতের দিকে ডাকতেন।
শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন;
সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি হল, রাসুল হলেন একজন কাফের সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত এবং নবী হলেন সেই ব্যক্তি যাকে তার পূর্ববর্তী রসূলের শরী‘আত সহ মুমিন সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত করা হয়েছে। তাদের শিক্ষা দেওয়া এবং তাদের মধ্যে বিচার করা।
যেমনটি আল্লাহ বলেন;
নিশ্চয় আমি তাওরাত নাযিল করেছি, তাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ফয়সালা প্রদান করত অনুগত নবীগণ এবং রববানী ও ধর্মবিদগণ। কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল এর উপর সাক্ষী। সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে সামান্য মূল্য ক্রয় করো না। আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির। [1]সূরা আল মায়েদা; ৫ঃ৪৪
সুতরাং নবী ও রাসুলের পার্থক্য হচ্ছে, রাসুল কে নতুন শরী;আতসহ প্রেরণ করা হয় এবং নবীকে পূর্বের রাসুলের শরী’আতের উপর প্রেরণ করা হয়। এবং নবী-রাসুল উভয়ের কাজ মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা, বাণী পৌঁছে দিতে এবং মানুষের মধ্যে বিচার করতে।
ওহী
ব্যবহারিক ভাবে ওহী দ্বারা ইসলামে আল্লাহ কর্তৃক নবি-রাসূলদের প্রতি প্রেরিত বার্তা বোঝানো হয়।
নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবূর। [2]সূরা আন-নিসা; ৪ঃ১৬৩
ওহি দুই ধরনের, ১. পারিভাষিক ওহি ২. শাব্দিক ওহি। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা জিবরাইলের মাধ্যমে নবীদের কাছে যে ওহি প্রেরণ করেছেন, এটি হচ্ছে পারিভাষিক ওহি। এই ওহি যারা পেয়েছেন তাঁরা নবী।
ইসলামে কি কোনো নারী নবী ছিলো?
ইসলামে কোনো নারী নবী ছিলোনা সে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়ছেন। তিনি পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেন,
আর তোমার পূর্বে আমি পুরুষই পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠাতাম। সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান। [3]সূরা আনবিয়া; ২১ঃ৭
আর আমরা আপনার আগেও জনপদবাসীদের মধ্য থেকে পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে ওহী পাঠাতাম। [4]সূরা ইউসুফ; ১২ঃ১০৯
এ আয়াতগুলো থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ নবুওয়ত ও রিসালাতের জন্য শুধুমাত্র পুরুষদেরকেই মনোনীত করেছেন। নারীরা এটার যোগ্যতা রাখে না বলেই তাদের দেয়া হয়নি। সৃষ্টিগতভাবে এতবড় গুরু-দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা তাদের নেই। নবুওয়তের প্রচার-প্রসারের জন্য যে নিরলস সংগ্রাম দরকার হয় তা নারীরা কখনো করতে পারে না।
মারিয়াম (আঃ) এর কাছে ওহি এসেছে বলে তিনি নবী, এমন দাবী করা লোকেরা ওহির সংজ্ঞা সম্পর্কে অজ্ঞ। ওহি দুই ধরনের, ১. পারিভাষিক ওহি ২. শাব্দিক ওহি।
আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জিবরাইলের মাধ্যমে নবীদের কাছে যে ওহি প্রেরণ করেছেন তা পারিভাষিক ওহি। এমন ওহি কোনো নারী পায়নি। মারিয়াম (আঃ) এর নিকট যে ওহি এসেছে তার শাব্দিক ওহি। এই ওহির কারণে যদি মারিয়াম (আঃ) নবী হয়ে যায় তাহলে তো মৌমাছিকেও নবী বলতে হবে। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা বলেন,
আর তোমার রব মৌমাছিকে ইংগিতে জানিয়েছে যে, ‘তুমি পাহাড়ে ও গাছে এবং তারা যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে নিবাস বানাও।’ [5]সূরা আন-নাহল; ১৬ঃ৬৮
মৌমাছির কাছে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা যে ওহি প্রেরণ করেছিলেন, সেটি জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে পাঠাননি অথবা আলাদা বিধিবিধান দিয়ে এটি পাঠাননি। আল্লাহতায়ালা মৌমাছির মনে একটি ভাবধারা দিয়ে তার কাছে একটি বার্তা দিয়েছেন। ঠিক সেভাবেই বার্তাটি আল্লাহ রাব্বুলআলামিন মারিয়ামকে দিয়েছেন। নবীদের কাছে যে ওহি এসেছে, সেটি সুনির্দিষ্ট, বিধিবিধান সংবলিত এবং সেটা ফেরেশতাদের মাধ্যমে এসেছে। কিন্তু মারিয়াম (আঃ) এর কাছে কোনো বিধিবিধান আসেনি, কোনো শরিয়া আসেনি।
নারী নবী থাকার পক্ষে যেসকল দাবী উপস্থাপন করা হয় তার জবাব নিয়ে শায়েখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ এর islamqa.info সাইটে জবাব দেওয়া হয়েছে। সেটার অনুবাদ এখানে দিচ্ছি। মূল পোস্টঃ Why Were There No Female Prophets or Messengers? – Islam Question & Answer (islamqa.info)
প্রশ্ন নংঃ ১৫৮০৪৪
অনুবাদঃ সাজ্জাতুল মাওলা শান্ত
শাইখ উমর আল-আশকার (রহ:) বলেন,
আল্লাহ তায়ালা যে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন তার আরেকটি দিক হলো, তিনি মানুষের মধ্য থেকে যত রসূল পাঠিয়েছেন তাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন। তিনি নারীদের মধ্য থেকে কোনো রসূল পাঠাননি। এই বিশেষত্বটি সেই আয়াত দ্বারা নির্দেশিত যেখানে আল্লাহ বলেছেন, আর তোমার পূর্বে আমি পুরুষই পাঠিয়েছিলাম, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠাতাম। সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞাসা কর যদি তোমরা না জান। [6]সূরা আল-আম্বিয়া ২১ঃ৭
নবীরা নারী নয়, পুরুষ ছিলো, যে কারণে তাদের কাজের প্রকৃতি দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিলো।
১. নবীদের ভূমিকা পালনের জন্য অনেকগুলি কাজ করতে হয়: পুরুষ ও মহিলাদের সম্বোধন করা, গোপনে এবং প্রকাশ্যে লোকদের সাথে দেখা করা, সারা দেশে ঘুরে বেড়ানো, মিথ্যাবাদীদের মোকাবিলা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ স্থাপন করা এবং তাদের সাথে বিতর্ক করা, সেনাবাহিনী প্রস্তুত করা এবং নেতৃত্ব দেওয়া, এবং যুদ্ধের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে সব পুরুষদের জন্য উপযুক্ত কিন্তু মহিলাদের জন্য নয়।
২. নবীদের ভূমিকা দাবি করে যে নবীগণ তার অনুসরণকারীদের দায়িত্বে থাকা উচিত, তাই তিনি তার অনুসারীদের জন্য আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং তিনি তাদের মধ্যে শাসন ও বিচার করেন। যদি একজন মহিলাকে এই জাতীয় কাজের উপর অর্পণ করা হয় তবে সে সেগুলি সঠিকভাবে করতে সক্ষম হবে না এবং এমন লোক থাকবে যারা তাকে অনুসরণ করতে এবং মানতে অস্বীকার করবে।
৩. মহিলাদের এমন জিনিসগুলির সাথে মোকাবিলা করতে হয় যা তাদের অনেক কাজ করতে বাধা দেয়, যেমন ঋতুস্রাব, গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং নিফাস (প্রসবের পরে রক্তপাত), যা মানসিক চাপ এবং যন্ত্রণার সাথে থাকে, যা যত্নের জন্য প্রয়োজন। শিশু এই সমস্ত কিছুই তাকে বার্তাবাহকের ভূমিকা পালন করতে এবং তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে বাধা দেয়।” (আর-রুসুল ওয়াল-রিসালাত থেকে, পৃ. ৮৪-৮৫)
কোনো নারী নবী ছিলেন?
নবুওয়াত সম্পর্কে, কিছু আলেম – যেমন আবুল-হাসান আল-আশআরী, আল-কুরতুবি এবং ইবনে হাযম – মনে করেছিলেন যে কিছু মহিলা নবী ছিলেন! মরিয়ম বিনতে ইমরান সহ। তাদের প্রমাণ হল সেই আয়াত যেখানে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা মূসার মায়ের কাছে ওহী পাঠিয়েছিলেন। যেমন;
আর স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর’। সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ৪২
তারা যা বলে তা সঠিক মনে হয়না।
নারী নবী ছিলো এই দৃষ্টিভঙ্গি খন্ডন।
শাইখ উমর আল-আশকার (রহঃ) বলেন,
তারা যা বলে (নারী নবীর পক্ষে যে প্রমাণ উপস্থাপন করে) তা নারীর নবুওয়াতের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন কোণ থেকে খণ্ডন করা যেতে পারে;
১. আমরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি না যে নবীকে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার, শিক্ষা দেওয়ার এবং মানুষের সাথে মিশতে আদেশ করা হয়নি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, এ ব্যাপারে একজন নবী ও রসূলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই এবং পার্থক্য হল একজন নবী তার পূর্ববর্তী রসূলের বিধান দিয়ে প্রেরিত হয়েছেন।
২. মূসা ও আসিয়ার মা এই নারীদের কাছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী স্বপ্নের আকারে ঘটেছিল। আমরা জানি যে স্বপ্নগুলি ওহীর একটি অংশ এবং এটি নবী ছাড়া অন্য লোকেদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে।
৩. আমরা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করি না যে ফেরেশতাদের দ্বারা সম্বোধন করা প্রত্যেকেই একজন নবী। হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠালেন এক ব্যক্তির কাছে, যে তার এক ভাইয়ের সাথে অন্য শহরে বেড়াতে যাচ্ছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেন তিনি তার সাথে দেখা করছেন, এবং যখন তিনি বলেছিলেন যে তিনি তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসেন, তখন তিনি (ফেরেশতা) তাকে বলেছিলেন যে আল্লাহ তাকে পাঠিয়েছেন যে তিনি তাকে ভালোবাসেন। আর টাক, কুষ্ঠরোগী, অন্ধের গল্প তো সবারই জানা। জিবরীল (আঃ) সাহাবায়ে কেরামকে তাদের দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষা দিতে এসেছিলেন এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করেছিলেন এবং সাহাবাগণ তা প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং শুনেছিলেন। হাদিসটির রেফারেন্সঃ [7]Riyad as-Salihin; Hadith no; 379
৪.
‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর’। [8]সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ৪২
তারা (যারা নারী নবী আছে দাবী করে) এই আয়াতকে নারী নবী থাকার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেনা। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নবী ব্যাতিত অন্যলোকদেরও মনোনিত, নির্বাচিত করার কথা বলেছে। যেমন;
অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতিসাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহা অনুগ্রহ। [9]সূরা ফাতির; ৩৫ঃ৩২
তিনি (আল্লাহ) ইব্রাহিমের পরিবারকে এবং ইমরানের (মারইয়াম (আঃ) পরিবারকে মানবজাতি ও জিনদের উপর মনোনীত করেছেন এবং তাদের পরিবারের মধ্যে নিঃসন্দেহে এমন লোক রয়েছে যারা নবী নয়।
নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম, নূহ ও ইবরাহীমের পরিবারকে এবং ইমরানের পরিবারকে সৃষ্টিজগতের উপর মনোনীত করেছেন। [10]সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ৩৩
৫. হাদিসে উল্লেখিত পরিপূর্ণতা শব্দটি, যা তারা প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করেছে, এটি নবুওয়াতকে বোঝায় না, কারণ এটি কোনও কিছুর পূর্ণতা এবং কিছু ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ক্ষেত্রে বুঝানো হয়েছে। নারীদের জন্য প্রযোজ্য সমস্ত গুণাবলীতে পরিপূর্ণতা অর্জনকারী নারীদের বোঝানো হয়েছে: তাই এখানে পরিপূর্ণতা বলতে নবীদের পরিপূর্ণতা বুঝানো হয়নি।
৬. কিছু হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে খাদিজা ছিলেন একজন পরিপূর্ণ নারী। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে এখানে পরিপূর্ণতা নবুওয়াতের পরিপূর্ণতা নয়। [কারণ খাদিজা (রাঃ) তিনি নবী ছিলেন না, তবুও তার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতা নারী শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে]
৭. কিছু হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে ফাতিমা হবেন জান্নাতবাসী মহিলাদের নেত্রী, মরিয়ম ব্যতীত ইমরানের কন্যা। এটি মরিয়ম ব্যতীত অন্যান্য মহিলাদের নবুওয়াতকে বাতিল করে, যেমন মুসা এবং আসিয়ার মা, কারণ ফাতিমা অবশ্যই একজন নবী ছিলেন না। এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে বলে যে তিনি অন্যান্য মহিলাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং মুসা এবং আসিয়ার মা যদি নবী হতেন তবে তারা ফাতিমার চেয়েও শ্রেষ্ঠ হতেন।
৮. মরিয়মকে লালন-পালন এবং তার গুণাবলী বর্ণনা করার প্রেক্ষাপটে একজন সিদ্দিকা (সত্যবাদী) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা রসূল ছাড়া কিছুই ছিল না। তার পূর্বে আরো রসূল অতীত হয়ে গেছে, তার মা ছিল সত্যপন্থী মহিলা, তারা উভয়েই খাবার খেত; লক্ষ্য কর তাদের কাছে (সত্যের) নিদর্শনসমূহ কেমন সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছি আর এটাও লক্ষ্য কর যে, কীভাবে তারা (সত্য হতে) বিপরীত দিকে চলে যাচ্ছে। [11]সূরা; আল-মায়েদাহ 5:75
কোন উচ্চতর বর্ণনা (সত্যবাদীতার চাইতে উচ্চ কোনো কিছু হলে) থাকলে তা উল্লেখ করা হত, কিন্তু কুরআনে বা নবীর সহীহ হাদীসে কোন নারী নবী ছিলেন বলে উল্লেখ নেই।
আল-কাদি ‘ইয়াদ, একদল আলেম থেকে বর্ণনা করেছেন যে মরিয়ম নবী ছিলেন না। আন-নাওয়াবী আল-আধকারে বলেছেন যে, ইমাম আল-হারামাইন বর্ণনা করেছেন যে, মরিয়ম যে নবী ছিলেন না সে বিষয়ে ঐকমত্য ছিল। শরহ আল-মুহাদ্দাব-এ এটি একদল পণ্ডিতকে দায়ী করা হয়েছে এবং আল-হাসান আল-বসরিকে উদ্ধৃত করা হয়েছে যে নারী বা জিনদের মধ্যে কোনো নবী নেই।” (আর-রুসুল ওয়ার-রিসালাত থেকে, পৃষ্ঠা. 87-89)
এতটুকু ছিলো ইসলাকিয়া ইনফো ওয়েবসাইটে লিখিত জবাবের অনুবাদ।
এই অনুবাদের সার কথা হচ্ছে, নবীরা নারী নয় তা নবীদের কাজের প্রকৃতি দ্বারা বুঝা যায়। যেমন; পুরুষ ও মহিলাদের সম্বোধন করা, গোপনে এবং প্রকাশ্যে লোকদের সাথে দেখা করা, সারা দেশে ঘুরে বেড়ানো, মিথ্যাবাদীদের মোকাবিলা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ স্থাপন করা এবং তাদের সাথে বিতর্ক করা, সেনাবাহিনী প্রস্তুত করা এবং নেতৃত্ব দেওয়া, এবং যুদ্ধের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যে সব পুরুষদের জন্য উপযুক্ত কিন্তু মহিলাদের জন্য নয়। এছাড়া নাবীরা বিচার কার্য পরিচালনা করতে হয়। একটা নির্দিষ্ট সময়ে নারী শারারিকাভাবে অসুস্থতায় থাকায় নারীরা নবীর দায়িত্ব পালন করতে পরেনা।
যারা নারী নবীর পক্ষে কুরআনের কিছু আয়াতকে উপস্থাপন করে সেগুলো ত্রুটিযুক্ত। কারণ একজন নবী ও রাসুলের দায়িত্বের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। রাসুলের উপর নতুন শরী’আত অবতীর্ণ হয় এবং নবীর কাছে পূর্বের রাসুলের শরী’আত অবতির্ণ হয়। কিন্তু নারী নবীর পক্ষে যারা বলেন এবং যাদেরকে নবী হিসবে উপস্থাপন করেন তাদের নিকট কোনো শরী’আত আসেনি।
নারী নবী হিসেবে যাদেরকে উপস্থাপন করা হয় তাদের কাছে ওহী এসেছে স্বপ্নের মাধ্যমে। কিন্তু স্বপ্নের মাধ্যমে ওহী আসলেই তাদেরকে নবী দাবী করা যায়না।
“হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন” কুরআনের এই আয়াতে অংশটুতে মারইয়াম (আঃ) মনোনিত এবং নির্বাচিত করা হয়েছে বলে অনেকে তাকে নবী দাবী করে। কিন্তু মনোনিত এবং নির্বাচিত করা শব্দগুলো কুরআনের অন্য জায়গায় নবী ব্যতিত অন্য লোকদের জন্যও ব্যাবহার করেন।
এছাড়াও হাদিসে পূর্ণতা শব্দ দিয়ে নবুওতের পূর্ণতা বুঝানো হয়নি বরং গুণাবলির পূর্ণতা বুঝানো হয়েছে এবং মারইয়াম (আঃ) কুরআনে নবী হিসবে নয়, সত্যবাদী হিসেব সম্বোধন করা হয়েছে। সুতরাং নারী নবীর পক্ষে যেসব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় তা সত্য নয়।
আরো কিছু আপত্তি ও তার জবাব।
আপত্তি-১
আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। অবশ্যই আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। [12]সুরা-আল হজ্জ; ২২ঃ৭৫
এই আয়াত দেখিয়ে কিছু লোক দাবী করে আল্লাহ কুরআনে বলেছে মানুষের মধ্যে থেকে রাসূল মনোনীত করেন। যদি আল্লাহ কেবল পুরুষদে মধ্য থেকেই রাসূল নির্বাচন করতে তাহলে এখানে স্পষ্ট করে পুরুষ শব্দ ব্যাবহার না করে মানুষ শব্দটি কেন ব্যাবহার করা হয়েছে?
এর উত্তর হচ্ছে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন তারা সবাই পুরুষ ছিলো।
আর আমরা আপনার আগেও জনপদবাসীদের মধ্য থেকে পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে ওহী পাঠাতাম। [13]সূরা ইউসুফ; ১২ঃ১০৯
যেহেতু, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে আর কোনো নবী রাসুল আসবেনা সেহেতু নারী নবী থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।এবং আল্লাহ একটা জায়গায় স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন যে নবী-রাসুলগণ সবাই পুরুষ তাই অন্য আয়তে মানুষ শব্দ ব্যাবহার করলেও সেখানে মানুষ দ্বারা পুরুষকেই বুঝানো হবে।
একটা থট এক্সপেরিমেন্ট মাধ্যমে বুঝার চেষ্টা করুন।
আপনার স্কুলের গণিত স্যার প্রথম ঘন্টার ক্লাসে এসে বলে গিয়েছে যে চতুর্থ ঘন্টার ক্লাস শেষে ক্লাসের সকল ছেলে যাতে ওনার রুমে আসে। তো তৃতীয় ঘন্টার ক্লাস শেষে স্যার স্টুডেন্টদের রিমাইন্ডার দেওয়ার জন্য আবারো ক্লাসে এসে বলে গেলেন যে, এই যে স্টুডেন্ট তোমরা চতুর্থ ঘন্টার ক্লাস শেষে কিন্তু আমার রুমে আসার কথা ছিলো! মনে আছে তো?
আচ্ছা বলুন তো, গণিত স্যার তৃতীয় ঘন্টার ক্লাসের সময় যখন স্টুডেন্টদের রিমাইন্ডার দিয়েছিলো তখন কি ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বুঝিয়েছে নাকি শুধুমাত্র ছাত্রদের বুঝিয়েছে? অবশ্যই ছাত্রদের বুঝিয়েছে তাই তো! কিন্তু কেন? কারণ স্যার প্রথম ঘন্টার ক্লাসেই ছাত্রদের নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল যে শুধু মাত্র ছাত্ররাই চতুর্থ ক্লাস শেষে ওনার রুমে আসবে।
ঠিক এই উহারণটি কুরআনের সাথে মিলিয়ে দেখুন। আল্লাহ কুরানের এক জায়গায় স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যত নবী-রাসুল এসেছে সবাই ছিলো পুরুষ। এখন অন্য জায়গায় যদি আল্লাহ নবী-রাসুলের ক্ষত্রে মানুষ শব্দটি ব্যাবহার করে, সেই মানুষ শব্দ দিয়ে তো অবশ্যই পুরুষ মানুষকেই বুঝানো হবে।
এবার আসুন ব্যাকরণগত দিক থেকে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক।
ব্যকরণগত দিক থেকে এই আয়াতে মানুষ শব্দ দ্বারা পুরুষকে বুঝানো হয়েছে।
এই আয়াতে نَّاسِ (মানুষ) শব্দটি একটি পুংলিঙ্গ বহুবচন বিশেষ্য শব্দ। [masculine plural noun] সুতরাং এখানে পুরষকেই বুঝানো হয়েছে। [14]The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran
এছাড়াও نَّاس (মানুষ) শব্দ দিয়ে শুধু মাত্র মানবজাতী বা মানুষকে বুঝানো হয়না। এই শব্দ দিয়ে পুরুষকেও বুঝানো হয়। পবিত্র কুরআনে এই শব্দটি আরো বিভিন্ন জায়গায় পুরষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
যেমন; সূরা বাকারা; ২ঃ২৪ [15]সূরা বাকারা; ২ঃ ২৪
সূরা আনফাল; ৮ঃ২৬ [16] সূরা আনফাল; ৮ঃ২৬
সূরা ইউসূফ; ১২ঃ৪০[17] সূরা ইউসূফ; ১২ঃ৪০
সূরা ইব্রাহীম; ১৪ঃ৩৭ [18]সূরা ইব্রাহীম; ১৪ঃ৩৭
সূরা কাহাফ; ১৮ঃ৫৫ [19]সূরা কাহাফ; ১৮ঃ৫৫
সূরা রুম; ৩০ঃ৩০ [20]সূরা রুম; ৩০ঃ৩০
সূরা লুকমান; ৩১ঃ১৮ [21]সূরা লুকমান; ৩১ঃ১৮
সূরা ফাতির; ৩৫ঃ২৮ [22]সূরা ফাতির; ৩৫ঃ২৮
সূরা সাদ; ৩৮ঃ২৬ [23]সূরা সাদ; ৩৮ঃ২৬
সূরা কামার; ৫৪ঃ২০ [24]সূরা কামার; ৫৪ঃ২০
সূরা নাস; ১১৪;৬ [25]সূরা নাস; ১১৪;৬
সুতরাং, ব্যাকরণগত দিক থেকেও এটা প্রমাণিত যে উক্ত আয়াতে মানুষ বলতে পুরুষকেই বুঝানো হয়েছে।
আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে আপত্তিকারীরা তাদের অভিযোগে এটাও উল্লেখ করেছে যে কোনো নারী রসূল নেই, তবে নবী রয়েছে। আর উক্ত আয়াতে কিন্তু কোনো নবীকে মনোনীত করার কথা বলা হয়নি, বরং রাসূলকে মনোনীত করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এখানে নবীর কথা বলাই হয়নি, তাই তাদের অভিযোগেরও কোনো ভিত্তি নেই।
আপত্তি-২
আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের। সে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’!তারা বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’। [26]সূরা হুদ; ১১ঃ৭৩
সূরা হুদের এই তিনটা আয়াত দেখিয়ে কিছু লোক দাবী করে যে, এই আয়াত থেকে নারীর নবুয়ত প্রমাণিত হয়। কেননা, ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রীর নিকট ফেরেসতা এসে সন্তান লাভের বিষয়ে সুসংবাদ দিয়েছেন।
এর উত্তর হচ্ছে,
শাইখ উমর আল-আশকার (রহঃ) এর জবাব থেকে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে কারো কাছে ফেরেশতা আসলেই সে নবী হয়ে যায়না। এছাড়া, নবীদের উপর পূর্ববর্তী রাসূলের শরী’আত আসে। না ইবরাহীম (আঃ) এর স্ত্রীর নিকট কি কোনো শরী;আত অর্পণ করা হয়েছিলো! না তার দায়িত্ব ছিলো তার কওমের লোকের বিচার করা, আল্লাহর দিকে ডাকা, আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেওয়া! তাহলে কি করে ইবরাহীম (আঃ) এর স্ত্রী নবী হতে পারে?
References
↑1 | সূরা আল মায়েদা; ৫ঃ৪৪ |
---|---|
↑2 | সূরা আন-নিসা; ৪ঃ১৬৩ |
↑3 | সূরা আনবিয়া; ২১ঃ৭ |
↑4, ↑13 | সূরা ইউসুফ; ১২ঃ১০৯ |
↑5 | সূরা আন-নাহল; ১৬ঃ৬৮ |
↑6 | সূরা আল-আম্বিয়া ২১ঃ৭ |
↑7 | Riyad as-Salihin; Hadith no; 379 |
↑8 | সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ৪২ |
↑9 | সূরা ফাতির; ৩৫ঃ৩২ |
↑10 | সূরা আলে ইমরান; ৩ঃ৩৩ |
↑11 | সূরা; আল-মায়েদাহ 5:75 |
↑12 | সুরা-আল হজ্জ; ২২ঃ৭৫ |
↑14 | The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran |
↑15 | সূরা বাকারা; ২ঃ ২৪ |
↑16 | সূরা আনফাল; ৮ঃ২৬ |
↑17 | সূরা ইউসূফ; ১২ঃ৪০ |
↑18 | সূরা ইব্রাহীম; ১৪ঃ৩৭ |
↑19 | সূরা কাহাফ; ১৮ঃ৫৫ |
↑20 | সূরা রুম; ৩০ঃ৩০ |
↑21 | সূরা লুকমান; ৩১ঃ১৮ |
↑22 | সূরা ফাতির; ৩৫ঃ২৮ |
↑23 | সূরা সাদ; ৩৮ঃ২৬ |
↑24 | সূরা কামার; ৫৪ঃ২০ |
↑25 | সূরা নাস; ১১৪;৬ |
↑26 | সূরা হুদ; ১১ঃ৭৩ |