হোমিনিন ফসিল রেকর্ড
বিবর্তনবাদ
বাহ্যিকভাবে মানুষের সাথে শিম্পাঞ্জি বা গরিলার কিছু বিষয় মিলে এটা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। ক্যারোলাস লিনিয়াসের শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থায় বাহ্যিক কিছু মিলের কারণে মানুষ ও শিম্পাঞ্জিকে একই গোত্রভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি, ডারউইনের পরে প্রাণের শ্রেণিবিন্যাসকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা শুরু হয়। এদের উপর বিবর্তন সম্পর্ক আরোপ করা হয় এবং সে সময় থেকে খুঁজে-পাওয়া ফসিলগুলোকে বিবর্তনের চিন্তায় সাজানো হতে থাকে। অনেকে মনে করতে পারে ফসিল পেলেই সহজেই বোঝা যায় আসলে সেটা ঠিক কার বা কিসের ফসিল তবে আসলে তা কিন্তু হয়। মাইকেল কেন্ট বলেন,
“হোমিনিড পূর্বপুরুষদের থেকে আধুনিক মানবের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা বড়োই অনুমাননির্ভর। আমাদের বর্তমান জ্ঞানের অধিকাংশ খুবই অল্প প্রমাণের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কেবল হাজার কয়েক হোমিনিড আবিষ্কৃত হয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই অসম্পূর্ণ। কখনও এমন হয়েছে যে, বিস্তীর্ণ এলাকা-জুড়ে সংগ্রহ করা হাড়গোড়ের মধ্যে যেগুলো বাহ্যিকভাবে দেখতে একরকম লাগে, সেগুলোকে একই জনের বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। তবে সেগুলো আসলে অন্য কারও হতে পারে।” (১)
এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হোমিনিড ফসিল খুবই যৎসামান্য। তাছাড়া সকল প্রাণীর ফসিল সঠিক আকারে পাওয়াও কঠিন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফসিল পাওয়া যায়না। এছাড়াও শিম্পাঞ্জির ফসিল প্রমাণ একেবারে নেই। (২)
সাধারণত হোমিনিন গোত্রের পূর্বপুরুষ ধরা হয় অস্ট্রালোপিথেকাস ( লুসি) কে। এবং এর পূর্ববর্তী হোমিনিন ফসিলগুলোর সাথে মানুষের তেমন কোনো মিলই নেই। বরং অস্ট্রালোপিথেকাস এফারেনসিস থেকে আজকের আধুনিক মানুষ একই জেনাসের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ Homo জেনাস। অন্যদিকে অস্ট্রালোপিথেকাস এর পূর্বের ফসিল যেমন সাহেলানথ্রোপাস, ওরোনিন, আর্ডিপিথিকা ফসিলের সাথে হোমিনিডদের কোনো মিল নেই বরং এরা শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং প্যান গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। (৩) অর্থাৎ ফসিল অনুযায়ী অস্ট্রালোপিথেকাস হলো Homo genus এর পূর্বপুরুষ এবং অস্ট্রালোপিথেকাস এর পূর্বের ফসিল হলো Pan জেনাসের পূর্বপুরুষ। এদের মধ্যে সংযোগকারী কোনো পূর্বপুরুষের প্রমাণ ফসিল থেকে অন্তত পাওয়া যায় না।
আচ্ছা তাহলে মানব বিবর্তন এর স্টেজে থাকা বিভিন্ন ধাপ যেমন হোমো হ্যাবিলিস, হোমো ইরেকটাস এরা কি আলাদা কোনো প্রজাতি? মূলত এরা আসলে আলাদা কোনো স্বতন্ত্র প্রজাতি না বা জেনাসের অন্তর্ভুক্ত ও নয়। বরং বিভিন্ন সময়ে মাইগ্রেট করার ফলে একই প্রজাতির মধ্যে থেকেও এরা প্রজনন বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছে। যেমন সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণা থেকে জানা যায় হোমো রুডলফেনসিস ও হ্যাবিলিস এরা আসলে হোমো ইরেকটাস-এর অন্তর্ভুক্ত! ভিন্ন প্রজাতি নয়। (৪) আবার ডেনিসোভান এবং নিয়ান্ডারথাল এরাও হোমো সেপিয়েন্স এর সাথে সহাবস্থানে ছিলো তাই এরাও আলাদা কোনো প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয়। (৫) এর মানে দাঁড়ায় এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অস্ট্রালোপিথেকাস এবং হোমো আলাদা জেনাস এবং এর সংযোগকারী কোনো ফসিল আসলে নেই যা প্রমাণ করবে শিম্পাঞ্জির pan এবং মানুষের homo জেনাস হোমিনিন গোত্রের কোনো সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। ফসিলবিদ বার্নাড উড এক গবেষণাপত্রে বলেন, “গত পঞ্চাশ বছর ধরে সংগৃহীত ফসিল-প্রমাণ এবং বিশ্লেষণ-প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরও [অস্ট্রালোপিথ থেকে] কীভাবে হোমো আসলো—এই প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি।” (৬)
মূলত ফসিল রেকর্ড এও সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ অনুপস্থিত। এবং বিদ্যমান এসকল ফসিল রেকর্ড এর অন্যান্য ইন্টারপ্রেটেশন নিলে সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণা আর টিকবেই না।
রেফারেন্সঃ
1.Michal Kent (2000), Advanced Biology (Oxford: Oxford University Press) p. 458
2.Bernard Wood (2019), Human evolution: A Very Short Introduction (Oxford: Oxford University Press), p. 65
3.Bernard Wood (2019), Human evolution: A Very Short Introduction (Oxford: Oxford University Press), p.71
4.Sid Perkins (2013), Skull suggests three early human species were one. Nature | News, doi:10.1038/nature.2013.13972
5.Ko, K.H. Hominin interbreeding and the evolution of human variation. J of Biol Res-Thessaloniki 23, 17 (2016)
6.Bernard Wood (2014), Human evolution: Fifty years after Homo habilis. Nature 508:31-33