মানুষের বিবর্তন একটি বিশ্লেষণ

বিবর্তনবাদ

সম্পূর্ণ বিবর্তন তত্ত্বের আলোচনায় সবথেকে স্পর্শকাতর বিষয়টি হচ্ছে মানুষের বিবর্তন। এর সাথে জড়িয়ে আছে নানান ধরনের সমালোচনা কোনোটা হয়তো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভাবে কোনোটা আবার কেবল ধর্মীয় কারণে। তবে বিজ্ঞানসম্মত সমালোচনা যে হয়নি বা নেই তা কিন্তু নয়। মুসলিম ধর্মীয় বিশ্বাসীদের লালিত বিশ্বাস অনুযায়ী সম্মানিত নবী এবং আদিপিতা হযরত (আ) এবং মাতা হাওয়া (আ) থেকে সমগ্র মানবজাতির উৎপত্তি এবং আদিপিতা এবং মাতা পৃথিবীতে এসেছেন সরাসরি জান্নাত থেকে। অর্থাৎ হযরত আদম (আ) কোনো প্রোটোপ্লাজম নন বরং সম্পূর্ণ মানুষরুপেই তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন। অন্যদিকে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের লালিত বিশ্বাস অনুযায়ী Adam & Eve হচ্ছেন দুনিয়ার প্রথম মানুষ। যাইহোক এসকল বিষয়াদি বিজ্ঞানের জাগতিক ফ্রেমওয়ার্ক এ ব্যাখ্যা করা কিংবা প্রমাণ করার মতো কোনো বিষয় নয় বরং এগুলো হচ্ছে মেটাফিজিক্যাল ইস্যু যেগুলোকে নিয়ে ফিলোসোফিক্যালি ডিল করা যেতে পারে। আমরা বিজ্ঞানে ফিরে আসি।

বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী জীবিত সকল প্রাণী একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভুত। যা নিয়ে আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। মানুষের উৎপত্তির ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয় মানুষের জেনাস Homo এবং শিম্পাঞ্জির জেনাস Pan কাছাকাছি কোন সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে আলাদা হয়েছে। অর্থাৎ প্রাইমেট জাতীয় কোনো একক পূর্বপুরুষ (Human chimp common ancestor) থেকে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি আলাদা হয়েছে। তাই মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির মধ্যে এতো এতো মিল। জেনেটিক সিমিলারিটি দিয়েই শুরু করা যাক। নব্য ডারউইনবাদ অনুযায়ী মানব বিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রমাণটি হচ্ছে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনগত সাদৃশ্য। ১৯৭৫ সালে King and Wilson একটি এক্সপেরিমেন্ট করেন মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের ডিএনএ র উপর তখন থেকেই একটা আইডিয়া নাস্তিকদের মাঝে বেশ প্রসিদ্ধ। যে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে ৯৯% ডিএনএ সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সাধারণ পুর্বপুরুষ এক। (১) নাস্তিকদের অনেকে মনে করে যে King and Wilson হয়তো মানুষের শরীর থেকে একটি কোষ নিয়েছে অত:পর শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে একটি কোষ নিয়েছে। তারপর দুটি কোষের ভেতরে থাকা ডিএনএ র সেট অর্থাৎ ক্রোমোজম বের করে নিয়েছে এবং দুটি ক্রোমোজম কে স্ক্রল এর মতো খুলে জিনোম সিকুয়েন্স মিলিয়ে দেখেছে যে ৯৯% ডিএনএ মিল রয়েছে। মুলত তা নয়। King and Wilson 1.3 Billion letters of Dna ছাটাই করে বাকি 2.4 Billion letters কে মিলিয়ে তুলনা করে দেখেছে ৯৮.৭৭% ডিএনএ মিল রয়েছে। অর্থাৎ তারা শিম্পাঞ্জিদের 18% জিনোম কে এবং মানুষের 25% জিনোম কে বাদ দিয়ে তুলনা করেছেন। তাছাড়া ওনার সকল নন কোডিং জিন গুলো কেই বাতিল করেছেন। যা আমাদের ডিএনএ র অধিকাংশ অংশ ১৯৮০ সালের গবেষণা অনুযায়ী আমাদের ডিএনএ র মাত্র ১-২% হচ্ছে প্রকৃত জিন, মুলত এই ১% জিন গুলোই প্রোটিন তৈরি করার মাধ্যমে নির্ধারণ করে যে আমরা কি বা কে। অর্থাৎ আমাদের ডিএনএ র ৯৮% জিন সম্পর্কেই আমরা কিছুই জানিনা। মুলত এই কারণেই মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের ডিএনএ তুলনা করার সময় এই ৯৯% নন কোডিং জিন বাতিল করতে হয়। পরবর্তীতে মানুষের কোষে থাকা বাকি ১% ডিএনএ থেকেও ২৫% জিনোম বাদ দেওয়া হয়।

 

Source: Genome

Science এ প্রকাশিত পিয়ার রিভিউড জার্নাল Relative Differences : The Myth Of 1% (২) যেখানে জন কোহেন এবং অন্যান্য ইভুলুশ্যনারি বায়োলজিস্ট বলেন, মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের ডিএনএ র মধ্যে সাদৃশ্য ক্যালকুলেট করা অব্জেক্টেভলি সম্ভব নয়। নন কোডিং ডিএনএ ছাড়াও আরেকটি সমস্যা হচ্ছে Orphan Genes. যা প্রতিটি প্রজাতির ক্ষেত্রে ভিন্ন। শিম্পাঞ্জি এবং মানুষের Orphan gene এর মধ্যে সাদৃশ্য 0%. যদিও Orphan Gene অন্যান্য সাধারণ জিন এর মতো ডিএনএ র একটি ক্রোম যা প্রোটিন গঠনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী সংরক্ষণ করে। তবে এই Orphan Gene গুলোর কোনো দৃশ্যমান সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়না।

 

শিম্পাঞ্জী ও মানুষের জেনেটিক সিমিলারিটি ৯৮% নয় ব্যাখ্যা দিয়ে Leading primate evolutionist Todd Preuss, National Academy of Sciences of the United States of America-এর একটি রিভিউয়ে বলেন, “It is now clear that the genetic differences between humans and chimpanzees are far more extensive than previously thought; their genomes are not 98% or 99% identical. (৩)

 

অর্থাৎ আগে যেমনটা ভাবা হতো মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর জেনেটিক সিমিলারিটি ৯৮% অথবা ৯৯% আইডেন্টিক্যাল তা এখন পরিষ্কার যে, মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর জেনেটিক পার্থক্য অনেক বেশি। অন্য আরেকটা স্টাডি বলে, ‘মানুষ ও শিম্পাঞ্জীর জেনেটিক সিমিলারিটি ৯৮% নয় বরং ৮৭%। (৪) তাছাড়া মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির মধ্যে জিনগত পার্থক্য প্রায় ৫% অর্থাৎ দুই প্রাণীর নিউক্লিওটাইড এ পার্থক্য প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি! (৫) প্রচলিত ধারণায় DNA’র সংকেতই তো প্রোটিনে পরিণত হয়। কিন্তু মানুষ ও শিম্পাঞ্জি উভয়েরই আছে এমন ১২৭টি প্রোটিনের গঠন তুলনা করে দেখা গেছে ৮০% ক্ষেত্রে কোনো মিল নেই। (৬) তাছাড়া আমরা আগেও দেখেছি জিনগত সাদৃশ্য থাকলেও সাধারণ পূর্বপুরুষ প্রমাণ হয়না। পৃথিবীর অন্যতম বিবর্তনবাদী দার্শনিক এলিয়ট সোবার ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত তার বই Evidently and evolution: The logic behind the science’ বইতে বলেন,

“মানুষ আর শিম্পাঞ্জি অবশ্যই সাধারণ পুর্বপুরুষ থেকে এসেছে, কারণ তাদের মাঝে অনেক মিল… এমন ভাবনা স্রেফ শিশুতোষ চিন্তা। বিজ্ঞানের সম্ভাবনামূলক কাঠামোর মাঝে ‘নিশ্চিত’ বলে কিছু নেই।”(৭)

এছাড়াও মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির অঙ্গসাংস্থানিক সাদৃশ্য ব্যাবহার করেও সাধারণ পূর্বপুরুষের ধারণার জন্য প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করা হয় কিন্তু আমরা আগের অধ্যায় গুলো তে দেখেছি যে এগুলো আদোতে সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হতে পারে না। ভ্রুণতাত্ত্বিক সাদৃশ্য  এবং নিস্ক্রিয় অঙ্গাদিও (এপেন্ডিক্স)  সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে কাজ করেনা। সেক্ষেত্রে দুটো বিষয় মানব বিবর্তনের প্রমাণ এবং মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির সাধারণ পূর্বপুরুষের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এর মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে এন্ডোজেনাস রেট্রোভাইরাস এবং ফসিল রেকর্ড।

 

রেফারেন্সঃ

1.https://www.science.org/doi/10.1126/science.1090005

2.https://science.sciencemag.org/content/316/5833/1836.

3. https://doi.org/10.1073/pnas.1201894109

4. https://doi.org/10.1073/pnas.1230533100

5.https://www.pnas.org/doi/full/10.1073/pnas.172510699

6.Jeremy Taylor (2009), Not A Chimp: The Hunt to Find the Genes that Make Us Human (Oxford University Press), p. 73

7.Elliott Sober (2008), Evidence and Evolution: The Logic behind the Science (Cambridge University Press), p. 296-297

 

 

 

 

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button