এলোপেট্রিক প্রজাত্যায়ন
বিবর্তনবাদ
সূচনা
আমরা গত পর্বে Speciation: প্রজাত্যায়ন কি এ বিষয় এ জেনেছি। আজ আমরা প্রজাত্যায়ন এর ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার মোড গুলো নিয়ে আলোচনা করব। জিওগ্রাফিক্যালি প্রজাতির মোড গুলো প্রধানত দু ধরনের এলোপ্যাট্রিক আর সিমপ্যাট্রিক। আবার এই দুই ধরনের মোডের বিশেষ প্রকার হচ্ছে যথাক্রমে প্যারাপেট্রিক এবং প্যারিপেট্রিক। বিভক্ত হবার পর এই প্রজাতিকরণ ঘটাতে কাজ করে বিভিন্ন ধরনের বিবর্তনীয় মেকানিজম যেমন ন্যাচারাল সিলেকশন, সেক্সুয়াল সিলেকশন, মিউটেশন, জেনেটিক ড্রিফট, জিন ফ্লো, সিম্বায়োসিস এসব যা নিয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
Allopatric speciation:
গ্রীক (ἄλλος) Allo শব্দের অর্থ ভিন্ন, আর Patric (πατρίς) শব্দের অর্থ পৈত্রিক নিবাস। যেই প্রজাতিকরণ পদ্ধতিতে একটি প্রজাতির মাঝে কোনো ভৌগলিক বাধা তৈরি হওয়ায় তারা দুই দলে ভাগ হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে আর তাদের মধ্যে জিন ফ্লো বন্ধ হয়ে যায় অর্থাৎ তারা তারা প্রজননে অক্ষম হয়ে পরে এবং তাদের মধ্যে জিনের প্রবহণ বন্ধ হয়ে যায় তাকে এলোপ্যাট্রিক স্পিসিয়েশন বলে। জিন ফ্লো বন্ধ হয়ে গেলে দুই দলের জিনপুলের মধ্যকার মিউটেশনগুলো আদান-প্রদান হতে পারে না অর্থাৎ তাদেদ উপর ভিন্ন ভিনব মিউটেশন ঘটে, এবং তাদের ওপর ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনি চাপ কাজ করে, যার ফলে তারা ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ফিক্সেশনের শিকার হয়। দুই দল ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে এবং এভাবে একসময় তারা দুইটি নতুন প্রজতিতে রূপান্তরিত হয়। রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন এলোপ্যাট্রিক স্পিসিয়েশনের মৌলিক কারণ হিসেবে কাজ করে যা অ্যালোপ্যাট্রিতে জেনেটিক ডাইভারজেন্স চালনা করে। প্রজাতির উচিত ভৌগলিক বাধা নানান ধরনের হতে পারে। যেমন টেকটনিক প্লেটগুইলোর চলনের ফলে পাহাড়-পর্বত, আগ্নেয়গিরি, জলাশয়, দ্বীপ,গিরিখাদ প্রভৃতি সৃষ্টি কিংবা মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলেও দুইটি এলাকার মধ্যে সীমা তৈরি হয় ও একটি প্রজাতির দুইটি দল তৈরি হতে পারে। মূলত এই ভৌগলিক বাধা তৈরির ফলে তারা একদল অন্যদলের সাথে প্রজনন ঘটাতে পারে না। এই প্রজনন ঘটে না বলেই দুই দলের জিন পুল আলাদা হতে থাকে।
প্রকারভেদ
এলোপেট্রিক স্পিসিয়েশনের দুটো মডেল রয়েছে। যথা- ১. ভিকারিয়েন্স মডেল এবং ২. পেরিপেট্রিক মডেল।
ভিকারিয়েন্স মডেলঃ বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে লিওন ক্রোইজ্যাট দ্বারা ভিকারিয়েন্ট বিবর্তনের ধারণাটি প্রথম বিকশিত হয়। । ভিকারিয়েন্স তত্ত্ব, 1960-এর দশকে প্লেট টেকটোনিক্সের গ্রহণযোগ্যতার সাথে সুসংগতভাবে গড়ে ওঠে, এড়ি ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে এই ভেনিজুয়েলার উদ্ভিদবিদদের দ্বারা বিকশিত হয় , উদ্ভিদবিদগণ আমেরিকান এবং আফ্রিকার অনুরূপ (একই) উদ্ভিদের অস্তিত্বের একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছিলেন, তারা অনুমান করেন যে দুটি মহাদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার আগে তারা মূলত একক জনসংখ্যা ছিল। বর্তমানে, vicariance দ্বারা প্রজাতিকে ব্যাপকভাবে প্রজাতির সবচেয়ে সাধারণ রূপ হিসাবে গণ্য করা হয়। ভিকারিয়েন্স মডেল অনুযায়ী একটি প্রজাতির মাঝে যেকোনো ভৌগলিক কারণে জিন ফ্লো বন্ধ হয়ে যায়, ফলে তারা ধীরে ধীরে ভিন্ন প্রজাতিকরণের দিকে এগোতে থাকে। প্রজাতিতে যেকোনো ভৌগোলিক বাধার জন্য জনসংখ্যার জিন পুলে বিভিন্ন মিউটেশন দেখা দেয় , তারা বিভিন্ন নির্বাচনী চাপের শিকার হয় এবং/অথবা (গ) তারা স্বাধীনভাবে জিন প্রবাহের ( জেনেটিক ড্রিফট) মধ্য দিয়ে যায় । বহিরাগত বাধা দুটি জনসংখ্যার মধ্যে জেনেটিক তথ্যের আদান-প্রদানে বাধা দেয়, যা তারা অনুভব করে পরিবেশগতভাবে ভিন্ন বাসস্থানের এবং এই বাধার কারণে তারা সম্ভাব্য পার্থক্যের দিকে পরিচালিত হয় ; নির্বাচনী চাপ তখন অবিরামভাবে তাদের সম্পূর্ণ প্রজনন বিচ্ছিন্নতার দিকে নিয়ে যায় । এরপর তারা ধীরে ধীরে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং একসময় ভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত হয়ে যায়।
পেরিপেট্রিক মডেলঃ পেরিপেট্রিক প্রজাত্যায়ন হলো প্রজাতির একটি পদ্ধতি যেখানে একটি বিচ্ছিন্ন পেরিফেরাল জনসংখ্যা থেকে একটি নতুন প্রজাতি গঠিত হয়। যেহেতু পেরিপেট্রিক স্পেসিয়েশন এলোপ্যাট্রিক প্রজাতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ , তাই এক্ষেত্রেও এলোপেট্রিক স্পিসিয়েশনের মতোই জনসংখ্যাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং জিন আদান -প্রদান থেকে বিরত রাখা হয় , একই মেকানিজম হওয়ায় এলোপেট্রিক এবং পেরিপেট্রিক এর মধ্যে পার্থক্য করা প্রায়শই কঠিন হতে পারে। তবুও, পেরিপেট্রিক প্রজাতির প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা এলোপেট্রিক পপুলেশনের তুলনায় একটি তুলনায় অনেক ছোট পপুলেশন ধারণ করে।
রেফারেন্স
[1] Coyne, Jerry A.; Orr, H. Allen (2004). Speciation. Sinauer Associates. pp. 1–545
[2] Howard, Daniel J. (2003). “Speciation: Allopatric”. Encyclopedia of Life Sciences. eLS. doi:10.1038/npg.els.0001748