সিম্বায়োসিস
বিবর্তনবাদ
সূচনা
সিম্বায়োসিস শব্দের উৎপত্তি গ্রীক দুটি শব্দ থেকে, যার অর্থ দাঁড়ায় “একসাথে থাকা”।
এটা হলো দুইটা ভিন্ন প্রজাতি বা একই প্রজাতির দুইটি জীবের মধ্যে একটা অন্তরঙ্গ আর লং-টার্ম বায়োলজিকাল ইন্টার্যাকশন।
সিম্বায়োসিসে অংশগ্রহণকারী জীবদ্বয়কে বলে সিম্বায়োন্ট। অনেক ক্ষেত্রে সিম্বায়োন্টরা একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একসাথে বিবর্তিত হয়, এটাকে বলে কো-ইভোলুশন।
প্রকারভেদঃ
সিম্বায়োসিস তিন প্রকারের।
প্যারাসাইটিজম (Parasitism)
এ সহাবস্থানে একটি প্রজাতি অন্য প্রজাতির দেহে বা দেহাভ্যন্তরে অবস্থান করে নানা প্রকার সুবিধা লাভ করে। এক্ষেত্রে যে প্রজাতি সুযোগ সুবিধা লাভ করে তাকে প্যারাসাইট বলে। প্যারাসাইট যে প্রজাতির দেহে অবস্থান করে সুযোগ সুবিধা লাভ করে তাকে হোস্ট বলে। এক্ষেত্রে প্যারাসাইট নানা সুযোগ সুবিধা লাভ করলেও হোস্টের ক্ষতি হয়। কখনো কখনো প্যারাসাইট কর্তৃক অত্যাধিক ক্ষতির কারণে হোস্ট মারা যায়। হোস্টের মৃত্যুর পর প্যারাসাইট নতুন হোস্টের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। যদি নতুন হোস্ট না পায়, তবে প্যারাসাইট মারা যায়। উদাহরণস্বরূপ : কৃমি ও মানবদেহের সহাবস্থান প্যারাসাইটিজম। এক্ষেত্রে কৃমি প্যারাসাইট ও মানবদেহ হোস্ট। কৃমি মানবদেহ থেকে শক্তি শোষণ করে নিজে উপকৃত হলেও মানবদেহের ক্ষতি সাধন করে।
কমেনসেলিজম (Commensalism)
এ সহাবস্থানে একটি প্রজাতি অন্য প্রজাতির দেহে অবস্থান করে নানা প্রকার সুযোগ সুবিধা লাভ করলেও হোস্টের কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় সামুদ্রিক শার্ক ও রেমুরার মধ্যে বিদ্যমান সহাবস্থানের কথা। রেমুরা মাছ নিজেদেরকে তিমি বা হাংরের সাথে আটকে রাখে। পরে তিমি বা হাংরের উচ্ছিষ্ট খাবার খায় কিন্তু এতে তিমির কোনো ক্ষতি হয়না। এখানে রেমুরা উপকৃত হচ্ছে কিন্তু তিমির কোনো ক্ষতি বা লাভ হচ্ছে না।। এক্ষেত্রে যেহেতু শার্কের কোনো উপকার বা অপকার হয় না, তবে রেমুরার উপকার হয় তাই এ সহাবস্থানকে কমেনসেলিজম বলা হয়।
মিউচুয়ালিজম (Mutualism)
এ সহাবস্থানে উভয় প্রজাতিই একে অপর কর্তৃক উপকার লাভ করে ও কারোরই ক্ষতি হয় না। বরং এমন কিছু সহাবস্থান রয়েছে যারা আসলে একটি প্রজাতি হিসেবে কল্পনাই করা যায় না। উদাহরণ হিসেবে লাইকেনের কথাই আনা যাক। শৈবাল ও ছত্রাক নামের দুইটি ভিন্ন প্রজাতি একে অপরের সাথে সহাবস্থানে থাকে। এ সহাবস্থানে থাকাকালে শৈবাল ছত্রাক উভয়ে একে উপরের উপকার করে তবে কোনো প্রকার অপকার করে না। তাই লাইকেনের এ সহাবস্থানকে মিউচুয়ালিজম বলা হয়।. দুটি প্রাণিই একে অপরের কাছে থেকে উপকৃত হয়। আবার কুমির হা করে থাকে আর পাখি তার দাত থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খায়। আবার জেব্রার পিঠে উঠে পাখি তার চামড়ার ভিতর থেকে ছোটপোকা খায়। এটাও মিউচুয়ালিজমের উদাহরণ।
রেফারেন্সঃ
1. Douglas, Angela (2010), The Symbiotic Habit, New Jersey: Princeton University Press, p. 5-12