বিবর্তনের বেসিকঃ ডিএনএ, জিন, এলিল ফ্রিকোয়েন্সি
বিবর্তনবাদ
বিবর্তনের বেসিকঃ ডিএনএ, জিন, এলিল ফ্রিকোয়েন্সি
একটি কোষের ভেতরে থাকা সবচেয়ে ক্ষুদ্র জেনেটিক ইউনিট হচ্ছে একটি একক ডিএনএ নিউক্লিওটাইড। একটি ডিএনএ নিউক্লিওটাইড এর মধ্যে মোট তিনটি জিনিস থাকে।একটা sugar group , একটি phosphate group, এবং চারটি সম্ভাব্য nitrogenous base এর যেকোনো একটি। যেমন Adenine,Thymine, Guanine,Cytosine যেগুলো কে সংক্ষেপে ( A,T,G,C) বলা হয়। Suger group এ পাচটি কার্বন অনু ও একটি অক্সিজেন অনু থাকে। অন্যদিকে Phosphate group এর কেন্দ্রে একটি ফসফেট অনু থাকে এবং এর সাথে চারটি অক্সিজেন অনু সংযুক্ত থাকে।যেগুলো সবগুলোই নেগেটিভ চার্জড। DNA তে থাকা চারটি Nitrogenous base ও Suger group & phosphate group এর মতো একটি মলিকিউল। যেখানে একাধিক নাইট্রোজেন অণু থাকে। যা DNA তে base ( ক্ষার) হিসেবে কাজ করে। এই Nitrogenous base গুলোতে থাকা নাইট্রোজেন অণু গুলো অন্যান্য অনু যেমন কার্বন অনু, হাইড্রোজেন অনু, অক্সিজেন অনুর সাথে মিলিত হয়ে একটি চাকতির মতো কাঠামো তৈরি করে। চাকতির মতো এই কাঠামো গুলো একক এবং দ্বিপাক্ষিক ও হয়।
Thymine (T) & Cytosine (C) হচ্ছে Single ring structure.
Adenine (A) & Guanine (G) হচ্ছে Double ring structure.
জিন( gene)
Sugar & phosphate group ডিএনএ র কাঠামোর মেরুদণ্ড গঠন করে। যা প্রতিটি DNA নিউক্লিওটাইড কে একটি দীর্ঘ একক ডিএনএ সুত্রে শ্রেণিবদ্ধ ভাবে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে। আর DNA base গুলো নির্ধারণ করে ডিএনএ সিকুয়েন্স বা ডিএনএ বিন্যাস। DNA র কেমিক্যাল প্রোপার্টি ডিএনএ র বেইজ গুলোর মধ্যে অর্থাৎ A,T, G,C এর মধ্যে বন্ধন তৈরিতে সহায়তা করে, যাতে করে দ্বৈত সুত্র সৃষ্টি করা যায়। এরপর এই A, T, C, G পরস্পর বসে ইনফরমেশন এনকোড করবে এবং সেই ইনফরমেশন অনুযায়ী প্রোটিন উৎপন্ন হবে। জীবের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরির সঙ্কেত সঞ্চিত থাকে সেই অংশগুলিকে বলা হয় gene বা জিন। মানুষের নানান বৈশিষ্টের জন্য দায়ী এই জিন।
এলিল
অ্যালিল হচ্ছে একটি জিনের দুটি অলটারনেটিভ ভারশন (alternative version)। দুটি অলটারনেটিভ ভার্শন মানে পৃথক বৈশিষ্ট্যের দুটি জিন। অ্যালিল দুটি একইধর্মী (যেমন-TT) আবার বিপরীতধর্মী (যেমন-Tt) হতে পারে। একইধর্মী হলে অ্যালিল দুটি প্রকট। আর বিপরীতধর্মী হলে একটি প্রকট অ্যালীল (T) এবং অন্যটি প্রচ্ছন্ন অ্যালীল (t). এক্ষেত্রে প্রকট অ্যালিলটি প্রচ্ছন্ন অ্যালিলকে বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা দেয়।
মানুষের দেহে একই বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী জিনের জন্য দুইটা এলিল থাকে। যেহেতু মানুষ ডিপ্লয়েড জীব, সেক্ষেত্রে মা থেকে একটা আসে এবং বাবা থেকে একটা আসে। জোড়া তৈরি হয়, জোড়ায় একটা প্রকাশ পায়, অন্যটি প্রচ্ছন্ন থাকে। আবার জোড়ায় দুইটাই ডমিনেন্ট ( প্রকট) বা দুটোই রিসেসিভ ( প্রচ্ছন্ন) হতে পারে। আমার চুলের রঙ কালো। এখন চুলের রঙের জিন টি হচ্ছে MC1R। এবং চুলের কালো রঙের এলিল হচ্ছে B ( ডমিনেন্ট) আর বাদামীর জন্য এলিল হচ্ছে b ( রিসেসিভ)
আমরা ডমিনেন্ট এলিলকে ইংরেজি ক্যাপিটাল লেটারে প্রকাশ করব এবং রিসেসিভকে প্রকাশ করব একই এলফাবেটের স্মল লেটারে। আমার চুলের কালো রঙের এলিলকে “বি” ধরলাম এবং এটাকে ডমিনেন্ট ধরে নিলাম ( আসলেও B এলিল টা ডমিনেন্ট) আর, b কে রিসেসিভ ধরে নিলাম।
ডমিনেন্ট কালো এলিল B
রিসেসিভ বাদামী এলিল b
একই জিনের জন্য দুইটা এলিল জোড়া লাগবে
এই দুটো দিয়ে ৩ টা জোড়া বানানো যাবে।
BB, Bb, bb এখানে আমরা এলিলের গঠনে তিনটা সম্ভাব্য ঘটনা দেখতে পারি। এই তিনটাকে বলা হয় “জিনোটাইপ”। জিনোটাইপ দুই প্রকার। হোমোজাইগাস আর হেটেরোজাইগাস। হোমোজাইগাস মানে একই,হেটেরোজাইগাস মানে আলাদা। ত BB, bb হলো হোমোজাইগাস। কিন্তু এদের মধ্যে B এবং b এই দুটো জিনিস আলাদা, তাই এদেরকে যথাক্রমে হোমোজাইগাস ডমিনেন্ট ও হোমোজাইগাস রিসেসিভ বলা হবে। এবং Bb হবে হেটেরোজাইগাস। যাদের এলিল জোড়া হোমোজাইগাস,তাদের বলে হোমোজাইগোট। মানে,আমি যদি হোমোজাইগোট হই এর মানে মানে আমার দেহে একই এলিলের জোড়া আছে, BB অথবা bb।
আবার আমি যদি বলি আমি হেটেরোজাইগোট,মানে আমার দেহে এলিলের জোড়ায় দুইটা আলাদা এলিল, Bb আছে। জোড়ায় যদি ডমিনেন্ট এলিল থাকে, সেক্ষেত্রে রিসেসিভ এলিল প্রচ্ছন্ন থাকবে এবং ডমিনেন্ট এলিল প্রকাশ পাবে। তবে জোড়ায় ডমিনেন্ট এলিল না থাকলে রিসেসিভ এলিল ই প্রকাশ পাবে, কারণ সেখানে রিসেসিভ এলিল ছাড়া আর কোনো এলিল নেই।
আমরা জিনোটাইপ কি জেনে গিয়েছি। উপরে আলোচিত তিনটা জিনোটাইপের জন্য আমরা ফলাফল পেতে পারি দুইটা।
BB=Bb=ফর্সা
bb= কালো
এই দুটো হলো “ফিনোটাইপ” অর্থাৎ জিনোটাইপের বাহ্যিক ফলাফল হলো ফিনোটাইপ।
এবার আমার গায়ের রঙ কি হবে তা জানার জন্য দেখতে হবে আমার পিতা মাতার জিন কেমন। জানা গেল, আমার পিতার জিনোটাইপ হলো bb ,মানে আমার পিতার হোমোজাইগোট, হোমোজাইগাস রিসেসিভ ধারণ করে।ফলে, আমার পিতার প্রকাশিত ফিনোটাইপ হলো শ্যামলা।আর আমার মায়ের জিনোটাইপ হলো Bb, অর্থাৎ আমার মায়ের হেটেরোজাইগোট, তিনি হেটেরোজাইগাস ধারণ করেন। এইবার,আমার পিতা মাতার এলিল মিক্সড হয়ে আমার গায়ের রঙ উৎপাদন হবে। এলিল মিক্স হওয়ার সম্ভাবনাঃ
Bb X bb= Bb, Bb, bb, bb. অর্থাৎ এলিল মিক্সড হয়ে আমার হেটেরোজাইগোট হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% আর হোমোজাইগোট রিসেসিভ হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। হেটেরোজাইগোট মানেই ডমিনেন্ট এলিল প্রকাশ পাবে। সুতরাং আমার হেটেরোজাইগোট এলিল Dd প্রকাশ পাবে অর্থাৎ আমি হবো ফর্সা।
আমি এমনিতেও ফর্সা যাইহোক।
আমরা এতক্ষণ এলিল সম্পর্কিত যা কিছু দেখেছি তা মোটামুটি নির্দিষ্ট প্রাণী বা ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে বুঝানো সম্ভব হলেও এবার নির্দিষ্ট প্রাণীর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে চিন্তা করতে হবে। গণ্ডি থেকে বেরিয়ে পপুলেশন তথা গোষ্ঠী পর্যায়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক। সহজ কথায় পপুলেশন কী জিনিস?
কোনো প্রজাতির একটা অংশ যা কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থান করে এবং নিজেদের মধ্যে যৌনমিলনের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনে সক্ষম।
ধরি, কোনো একটি দ্বীপে ১০০০ জন মানুষ বাস করছেন বংশ পরম্পরায় । ঐ ১০০০ জন মানুষ নিয়ে একটি জাতিগোষ্ঠী বা পপুলেশন। তাদের গায়ের রঙের জন্য দায়ী জিনোটাইপ পরিমাপ করে জানা গেল
১) BB জিনোটাইপধারী মানুষ ৫০০ জন।
২) Bb জিনোটাইপ ধারী মানুষ ৫০০ জন।
তাহলে ঐ পপুলেশনে B অ্যালিলের ফ্রিকোয়েন্সি হবে ৫০০/১০০০= ০.৫ আবার t অ্যালিলের ফ্রিকোয়েন্সি হবে ৫০০/১০০= ০.৫
তাহলে মোট অ্যালিল ফ্রিকোয়েন্সি ০.৫+০.৫= ১ কোনো অ্যালিলের ফ্রিকোয়েন্সি নির্ণয় করলে আমরা সর্বদা তা ০ থেকে ১ এর মধ্যেই পাব।
রেফারেন্সঃ
১. Hartl, Daniel L.; Elizabeth W. Jones (2005). Essential genetics: A genomics perspective (4th ed.). Jones & Bartlett Publishers. p. 600
২.Allele. Genome.gov. Archived from the original on 28 June 2021. Retrieved 3 July 2021.