বিজ্ঞান বনাম বিশ্বাস
বিজ্ঞান বনাম বিশ্বাস
ইমতিয়াজ ভাইকে নিয়ে “জাতীয় দৈনিক আলোচিত কন্ঠ” এ আর্টিকেল পড়তেছিলাম। সেখানে তিনি খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন “বিজ্ঞান সত্য পোঁছানোর একটি মাধ্যম”।(১) এছাড়া তার সায়েন্স বনাম বিলিফ নিয়ে একটা ভিডিও ছিলো(যা এখন ইউটিউবে নেই কোনো এক কারণে) সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছেন বিজ্ঞান এবং বিশ্বাস সমতুল্য না। আর সায়েন্স আমাদের অবজেকটিভ সত্য প্রদান বা সাপ্লাই করে থাকে। তবে এখানে কিছু সমস্যা আছে। তার আগে বুঝতে হবে সায়েন্স কি? এবং সায়েন্টিজম কি?
সায়েন্স এর ডেফিনিশন নিয়ে এখনো ফিলোসোফিতে খুব কন্ট্রোভার্সি (২) তবে অনেক ফিলোসোফারদের মতে, সায়েন্স নিজেকে অন্য ডোমেইন অফ নলেজ থেকে পৃথক করে রেখেছে তা হচ্ছে সায়েন্টিফিক মেথড যা নন-সায়েন্স ডোমেইন অফ নলেজ এই মেথড employ করেনি।(৩) তবে বেসিক আইডিয়া হচ্ছে প্রকৃতির behaviour এর পিছনে ন্যাচারল এক্সপ্লেনেশন খোজা। যেমন ফোন মাটিতে ফেললে নিচে পড়ে। এর পিছনে ম্যাটেরিয়ালিস্টিক বা ন্যাচারালিস্টিক এক্সপ্লেনেশন খোজাই হচ্ছে সায়েন্সের কাজ যা করা হয় সায়েন্টিফি মেথড, অবজার্ভেশনাল ডাটা এবং এক্সপেরিমেন্টেশন এর মাধ্যমে।
অপরদিকে সায়েন্টিজম হচ্ছে ফিলোসোফিকাল পজিশন বা মেটাফিজিকাল পজিশন অন সায়েন্স এন্ড রিয়ালিটি ।(৪) সায়েন্টিজম মতাদর্শ সায়েন্স এর একটি narrow definition নিয়ে শুধু natural science কে কভার করলেও পাশাপাশি সোশাল সায়েন্সকেও কভার করে থাকে যা ১৯-২০ শতাব্দীতে কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট করে।(৫) এক কথায় এই মতাদর্শ অনুযায়ী সায়েন্স হচ্ছে বেস্ট উপায় সত্যের কাছে পৌছার জন্য এবং কোনো কিছু জানার জন্য।
এই প্রচার শুধু ইমতিয়াজ ভাই না; হকিং, পিটার, ক্রাউস প্রমুখদের মত বিজ্ঞানীরা প্রচার করেই যাচ্ছেন। হকিং এর মতে সায়েন্সের এতই এডভান্সমেন্ট ঘটেছে যে, সায়েন্স একদিন এক্সিস্টেনশিয়াল প্রশ্নগুলোরও উত্তর দিয়ে দিবে(৬) তাই তার মতে “ফিলোসোফি মৃত”। এছাড়া কেমিস্ট পিটার এর মতে, “সায়েন্সের কোনো লিমিটেশন নেই” ।(৭)
ইমতিয়াজ ভাই বা উনাদের মত যারা সায়েন্স প্রেমিক তারা কিছু ক্রাইটেরিয়া অফ সায়েন্টিজম এ পড়ে যান। যেমন “Academic internal scientism” অর্থাৎ লিটেরেচারে নন সায়েন্সকেও সায়েন্স হিসেবে প্রকাশ করা যেমন সায়েন্সে কিছু পস্টুলেশন আছে যা মেটাফিজিকাল হাইপোথেসিস কিন্তু চালিয়ে দেওয়া হয় এমপিরিকাল সায়েন্স হিসেবে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন গ্রুপে যেটা প্রকাশ পায় সেটা হচ্ছে অন্টোলোজিকাল সায়েন্টিজম অর্থাৎ বাস্তবতার ক্ষেত্রে সায়েন্সের এক্সেস আছে ; না থাকলে সেটা “pseudo science” ।(৮)
অন্টোলজিকাল সায়েন্টিজম এ আবার এপিস্টেমিক সায়েন্টিজম(আমরা যা যা ‘জানি’ বা ‘জানব’ এক কথায় নলেজ সেটার জন্য সায়েন্সের কাছে এক্সেস আছে) বায় ডিফোল্ট এসে পড়ে। যার ইমপ্লিকেশন দাঁড়ায় যে, সায়েন্স দিয়ে যেসব সত্তার স্টাডি সম্ভব তা-ই শুধু এক্সিস্ট করবে। অন্টোলোজিকাল সায়েন্টিজম প্রিসাপোজ করে নেয় যে, সেসব সত্তাই এক্সিস্ট করবে যা সায়েন্স স্টাডি করতে পারে বা সায়েন্স এর vocabulary তে ডিস্ক্রাইব করা সম্ভব কিন্তু এই প্রিসাপজিশন হচ্ছে ফিলোসফিকাল প্রিসাপজিশন; ইহা সায়েন্স নিজেই প্রুফ করতে পারবে না নাহলে এইটা সার্কুলার রিজনিং ফ্যালাসি হয়ে যাবে। সায়েন্স যেহেতু এমন সত্তাদের exclude করতে পারতেছে না যা by nature can’t be detected , সুতরাং সায়েন্স এর লিমিটেশন আছে যা কেমিস্ট পিটার এর মত এর সাথে মিলছে না এবং তা বাংলাদেশী “বিজ্ঞানবাদী” টাইপ অফ গ্রুপের সাথে মিলছে না।(৯)(১০)
মজার কথা হচ্ছে সায়েন্স কি আদৌ সত্য দিবে নাকি না এইটা সায়েন্স নিজেই উত্তর দিতে পারে না এইটার উত্তর দিতে হবে ফিলোসোফিকালি । সায়েন্স যে শুধু নিজের বাউন্ডারির উপর নির্ভর করে তা না, সায়েন্স নিজের বাউন্ডেরি কে এক্সপ্যান্ড করে শুধু scientific enterprise না philosophical premises এর উপরও নির্ভর করে।(১১) ইমতিয়াজ ভাই এর যে উক্তি সায়েন্স হচ্ছে সত্য পৌছনোর একটা মাধ্যম এইটা নিজেই একটি মেটাফিজিকাল স্ট্যাট্মেন্ট এবং মেটাফিজিকাল বিশ্বাস।(১২)
এছাড়া সায়েন্স ফিলোসোফির উপর নির্ভরশীলও বটে যেমন ডিডাক্টিভ, ইন্ডাক্টিভ আর্গুমেন্ট(এক্সপ্লেনেশন কে ডেভেলোপ করার জন্য)।
হকিং ফিলোসোফি কে ঘৃণা করলেও কসমোলোজিস্ট George Ellis এক্সেপ্ট করেন যে, ফিলোসোফি মারাত্মক রোল প্লে করে সায়েন্স এর জন্য। তাই সায়েন্সের থেকে ফিলোসোফি has much more fundamental consideration যার থেকে বুঝা যাচ্ছে সায়েন্স আসলে ফান্ডামেন্টাল না বাস্তবতাকে বুঝার জন্য।
তবে সায়েন্স কি আদৌ সত্য দিতে পারে? উত্তর হচ্ছে না। সায়েন্স এক জায়গায় স্থির থাকে না। নিত্যনতুন অব্জার্ভেশনাল ডাটা এসে চেইঞ্জ করে দেয় যাকে প্যারাডাইম শিফটও বলা যায় এবং ডেভিড হিউম এর মতে সায়েন্স ইন্ডাকশন প্রব্লেম ফেইস করে যা নিশ্চয়তা দিতে পারে না।(১৩)
এই জন্য বিজ্ঞান কে বিজ্ঞানবাদীর লেন্স থেকে না সুস্থ স্বাভাবিক মস্তিষ্ক দিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করি।
এছাড়া কিছু কথা না বললেই না। সায়েন্টিফিক অনুসন্ধান কিছু অনুমান এর উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যেমন আমাদের চিন্তা চেতনা বহির্ভূত যে জগত তা বাস্তব, অনুমান করা হয় এই মহাবিশ্ব কিছু ধারাবাহিকতা(regularities) অনুসরণ করে থাকে যা সায়েন্টিফিক সূত্র দিয়ে ধরা যেতে পারে, অনুমান করা হয় যে মানুষের বুদ্ধি এবং উপলব্ধি ফ্যাকাল্টি নির্ভরযোগ্য এই সূত্র বা ধারাবাহিকতা বুঝার জন্য বা আবিষ্কার বা মোড়ক খোলার জন্য,অনুমান করা হয় যে আমাদের ছাড়াও বাকি সত্তাদের মাইন্ড আছে ইত্যাদি।
সায়েন্টিফিক মেথড এইগুলোকে পূর্বেই অনুমান করে বলে সায়েন্স যে শুধু মাত্র একটা প্রমাণ করার বিষয় তা আর থাকছে না। কেননা সায়েন্স এগুলোকে প্রমাণ করতে পারবে না(যদি করে তাহলে সার্কুলার রিজনিং হবে) যেমন আপনি যদি নিজের ইন্দ্রিয় এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে বহির্জগত বাস্তব তাহলে প্রমাণ করতে হবে আপনার ইন্দ্রিয় ও বুদ্ধিমত্তা নির্ভরযোগ্য কিন্তু সেটা প্রমাণ করতে হলেও আপনার ইন্দ্রিয় এবং বুদ্ধিমত্তা দরকার। যা গোল গোল ঘুরার শামিল।(১৪)
একটা অফ টপিক প্রশ্ন আসতেই পারে। সায়েন্স ফিলোসোফি দরকারটা-ই বা কি? নাস্তিক দার্শনিক সামির ওকাশা অক্সফোর্ড প্রেস তিনি লিখেন “সায়েন্সকে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এইটা আমাদেরকে গভীরতর অনুসন্ধান করতে সাহায্য করে- অনুমানগুলোকে উম্মোচন করার জন্য যেগুলো উহ্যনীয় থাকে বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে, যা বিজ্ঞানীরা স্পষ্টভাবে বা বিশদভাবে উল্লেখ করেন না”(১৫)
আইনস্টাইন বলেন, “যে কারো ব্যক্তিকেন্দ্রিক অনুভূতির বাইরে বহির্জগতের যে আসলেই অস্তিত্ব আছে, এহেন বিশ্বাস সকল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি”(অর্থাৎ অপ্রমাণযোগ্য বিশ্বাস)…
সায়েন্সে অবজেক্টিভিটি বলতে গেলে নেই ।(১৭) একই কথা বলেছেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান-দার্শনিক কার্ল পপার, সাথে এমআইটি-র ফিলোসোফি অব ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন প্রফেসর ওয়ল্ফগ্যাঙ স্মিথ, যে “বিজ্ঞানে ‘ফ্যাক্ট’ আদতে অজানা সত্তা” ;(১৮) তিনি এ কথা বলেছেন ‘থিওরি-ল্যাডেন্নেস’-এর কারণে। অবজারভেশন মাত্রই সাবজেক্টিভ ইন্টারপ্রিটেশান, এছাড়াও এক ইন্টারপ্রিটেশানের উপর আরেক ইন্টারপ্রিটেশানকে প্রাধান্য দেওয়ার সুযোগ নেই ,(১৯) কোনো ইন্টারপ্রিটেশানের সপক্ষে যতই কোরোবোরেশন থাকুক না কেন। এছাড়াও প্যারাডাইম শিফটের অকারেন্স সায়েন্টিফিক রিয়ালিজমের জন্য কাউন্টার-ফ্যাকচুয়াল (Michela Massimi)।(২০) এছাড়াও সায়েন্টিফিক রিয়ালিস্ট হলেও কোনো বিজ্ঞান-দার্শনিক অ্যাবসিউলুট সত্যের দাবি করেন না (Alex Rosenberg, JP Moreland)।(২১)
তাই যেসব ক্ষেত্রে ‘থিওরি-ল্যাডেন্নেস’ খাঁটে সেসব ক্ষেত্রে অন্তত বিজ্ঞানে সত্য অফার করার প্রত্যয় নেই।
রেফারেন্সঃ
………………….
1. বিজ্ঞান হচ্ছে সত্য পৌছনোর একটি মাধ্যমঃ ইমতিয়াজ অর্নব(২০২২)।জাতীয় দৈনিক আলোচিত কন্ঠ
2. James Ladyman(2001),Understanding philosophy of science
3. Samir Okasha (2002), Philosophy of Science: A Very Short Introduction (Oxford University Press)
4. Stenmark(1997),What is scientism ,page 20
5. Friedrich A. Von Hayak, The counter revolution of science, page 15-16
6. Side note: একে রিডাম্পটিভ সায়েন্টিজম বলা যায়। Reference: Hawking(2012), The Grand Design.
7. Peter Atkins(2007),“Science as truth. History of the human sciences” , page 97-102
8. Stenmark(1997), What is scientism
9. George Gaylord Simpson. The Nonprevalence of Humanoids. 1964. Science, 143:769, Feb. 21.
10. Elliot Sober “Empiricism” in The Routledge Companion to Philosophy of Science. Edited by Stathis Psillos and Martin Curd. 2010, pp. 137-138.
11. Stenmark, Mikael. 2003. Scientism. In Encyclopedia of Science and Religion. 2nd ed., ed. van Huyssteen, J Wentzel Vrede. New York: Macmillan
12. Polkinghorne, John. 2011a. Science and Religion in Quest of Truth. New Haven: Yale University Press.
13. David Hume. An Enquiry Concerning Human Understanding, p. 108.
14. Edward Feser(2014) ,Scholastic Metaphysics
15. Samir Okasha (2002), Philosophy of Science: A Very Short Introduction (Oxford University Press)
16, The ten assumptions of science: Toward a new scientific worldview(2016), Glenn Borchardt
17. The Predicament of Belief: Science, Philosophy and Faith [Oxford University Press]
18. Theistic Evolution: Essays On Teilhardian Heresy
19. EVR Kojonen, Intelligent Design and the Temptation of Scientism
20. https://youtu.be/eAef_ojBYhc
21. Scaling the Secular City
To get a brief idea of scientism “https://youtu.be/G3d3akCRRTU“
One Comment