বিজ্ঞানের বন্দনা ও চরম নির্বুদ্ধিতা
বিজ্ঞানের বন্দনা ও চরম নির্বুদ্ধিতা
সেদিন বিকেলে সাদিদ,আমি আর অন্ত আসরের নামাজ পড়ে বাস স্ট্যান্ডে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
ঈদের ছুটির আমোজ এখনো কাটেনি শহরে। তাই খুববেশি মানুষ নেই রাস্তা-ঘাটে।
হুট করে কই থেকে যেন আদনান এসে হাজির!
“কিরে কেমন আছিস তোরা?” ঈদ কেমন কাটলো?
আদনানের সাথে অনেকদিন পর দেখা। আগে বিডিয়ার মাঠে একসাথে আড্ডা না দিলে মনে হয় পেটের ভাত হজম হতোনা। এখন খুব একটা দেখা যায়না! তাই রসিকতা করে বললাম,
- কিরে তুই কই থেকে বের হইছিস ? যেভাবে সবকিছু থেকে ইস্তফা দিয়ে বেখবর হয়ে গেলি আমি তো ভাবলাম আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলি বোধহয়।
সাদিদ আদনানকে উদ্দেশ্য করে বললো, কোনটার উত্তর দিবো? কেমন আছি নাকি ঈদ কেমন গেল ?
- আদনান হেসে বললো, “দুটোই দে, হা হা হা”
- সাদিদ বললো, আলহামদুল্লিলাহ আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছি, ঈদও ভালোই যাচ্ছে।
- তোর ঈদ কেমন গেল ?
- হুম বেশ ভালোই। তো খবর জানিস ?
- কি খবর? না বললে তো কিভাবে জানবো!
- আরে, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা মহাশূন্যের ১৩৫০ কোটি বছর আগের বিরল ছবি প্রকাশ করেছে নাসা! [1]NASA’s Webb Reveals Cosmic Cliffs, Glittering Landscape of Star Birth | NASA বিজ্ঞানই একমাত্র ভরসা বুঝলি !
- সাদিদ উত্তরে বললো, “বেশ ভালো খবর তো!”
- “বিস্মিত হলি মনে হয়? বিস্মিত হওয়ার মতো ব্যাপার বটে!” সাদিদের উদ্দেশ্যে আদনান।
সকাল থেকে ইচ্ছা ছিলো বিকেলে ঘুরতে যাবো। এখন সাদিদ আর আদনান যদি কথা বলা শুরু করে তাহলে আর আর ঘুরতে যাওয়া হবেনা। তাই ওদের কথার মাঝেই ইন্টারফেয়ার করে বললাম, সাগর পাড় যাবি?
- আমার কথা শুনে অন্তু বললো, হুম যাওয়া যায়! অনেক দিন তো যাওয়া হয়না।
আচ্ছা তোরা কি আর খেলাধুলা করবিনা নাকি? ফজরের নামাজের পর সাগড় পারে খেলার মুহূর্তগুলো খুব মিস করি!
অন্তুকে বললাম, আচ্ছা এখন চল ঘুরে আসি, খেলা নিয়ে পরে আলাপ করা যাবে।
সাদিদ তুই যাবিনা?
সাদিদ আমার কথায় কর্ণপাত না করে একটা অটো ডেকে নিলো! “এই মামা যাবেন?
- অটো চালক “কই যাবেন?
- সাগড় পাড় যাবো।
অটোতে করে ডিরেক্ট সাগড় পারে চলে এলাম। এখানে আমাদের খুব পছন্দের একটা জায়গা আছে। একপাশে খুব ছোট একটা সুইচ গেইট আছে। ওখানে বসে আমরা প্রায় সময় আড্ডা দেয়।
প্রচন্ড বাতাস বয়ে যাচ্ছে, আকাশের রক্তিম সূর্যটা জানান দিচ্ছে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সমুদ্র তীরের চোখধাঁধানো সূর্যাস্ত! রক্তিম আকাশ! এমন দৃশ্য ভালো না বাসার কি উপায় আছে?
সুইচ গেইটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে পরলাম সবাই।
- “ তুই কি যেন বলছিলি তখন ? মহাবিশ্বের কি ছবি নিয়ে!” আদনান কে উদ্দেশ্য করে সাদিদ।
- “হুম, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা মহাশূন্যের ১৩৫০ বছর আগের বিরল ছবি প্রকাশ করেছে নাসা!” চিন্তা করে দেখ বিজ্ঞান আজ কতদূর এগিয়ে গিয়েছে! এই বিজ্ঞানের উপর ভরসা না করে কি থাকা যায় ? বিজ্ঞানের কল্যাণেই আজ কত কি দেখতে পায় আমরা! বিজ্ঞান কত অসাধারণ আর প্রসংশনীয় !” আদনান বললো।
- সাদিদ হ্যা সূচক মাথা নেরে বললো, বিজ্ঞানের তারিফ করা যায়। তবে একটা সমস্যা আছে।
- কি সমস্যা? জানতে চাইলো আদনান।
- সাদিদ চুপ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো!
- কিরে কি সমস্যা বলছিস না যে! অন্তু জিজ্ঞেস করলো।
- এবার সাদিদ বলতে শুরু করলো। “ আচ্ছা অন্তু, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে তোলা মহাশূন্যের ছবি দেখে আমরা কত বিস্মিত হচ্ছি! বিজ্ঞানের কত প্রসংশা করছি। কিন্তু আমাদের এই মহাবিশ্ব কি বিজ্ঞনের তৈরি?
- আদনান ভ্রু কুঁচকিয়ে বলবো, বুঝলাম না তো! বিজ্ঞান না থাকলে তো আমরা কখনোই জানতে পারতাম না। তাই বিজ্ঞানেরই তো সব অবদান।
- হা হা হা, সাদিদ হেসে বললো, “ আচ্ছা, আদনান, আকাশের দিকে তাকাতো। দেখ সূর্যটা কেমন ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে। সূর্যটাকে চাইলে ক্যামেরা বন্দি করে নিতে পারিস!
- অন্তু তার মোবাইলটা বের করে ফটাফট কিছু ছবি তুলে নিলো।
- সাদিদ অন্তুর মোবাইলটা তার হাতে নিয়ে ছবিগুলো আমাদের দেখিয়ে বললো, বাহ বেশ চমৎকার ছবি তুলেছিস তো!
আচ্ছা সূর্যটাকে কি এই ছবির ফটোগ্রাফার (অন্তু) তৈরি করেছে?
সাদিদের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো!
- সাদিদ ও হেসে বললো, সূর্যটা যেমন অন্তু তৈরি করেনি তেমনি আমদের এই মহাবিশ্বও বিজ্ঞান তৈরি করেনি।বিজ্ঞান কোনো স্বাধীন ইচ্ছা আর বুদ্ধিমান সত্তা নয় যে এটা কিছু তৈরি করতে পারবে। বিজ্ঞান আমাদেরই তৈরি একটা শাস্ত্র। বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা কেবল বিশ্বজগতের কাঠামোর খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। এতটুকুতেই যদি বিজ্ঞান এতো প্রশংসার দাবিদার হয় তাহলে যে মহান সত্তা এই মহাজগত সৃষ্টি করেছে, তিনি কতটুকু প্রশংসার দাবিদার? সৃষ্টি জগতের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে বিজ্ঞানের বন্দনা করা এবং সৃষ্টিজগতের মহান নির্মাতার ব্যাপারে চিন্তা না করা চরম নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই না।
- সাদিদের যুক্তিতে আদনানের নিরব থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা!
- সাদিদকে উদ্দেশ্য করে অন্তু, সাদিদ তুই বেশ ভালো পয়েন্ট বলেছিস। সৃষ্টিজগতের সৌন্দর্যের পেছনে বিজ্ঞানের কোনো হাত নেই, বরং এই সৌন্দর্য কেবলই সৃষ্টিজগতের মহান নির্মাতার কারুকাজ তা মানুষ বোঝেই না। আর তাই মানুষ সৃষ্টিজগতের সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে প্রকৃতির বা বিজ্ঞানের বন্দনা করে আসছে যুগ যুগ ধরে।
মাগরিবের নমাজের সময় গনিয়ে আসলো। সুইচ গেইটের পাশে ছোট একটা পুকুর আছে। সবাই অযু করে সুইচ গেইটের উপর নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম।
References