ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অক্টোপাস ভিনগ্রহে!
ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অক্টোপাস ভিনগ্রহে!
লিখেছেনঃ সাব্বির আহমেদ সজীব
১৩ মার্চ ২০১৮, ৩৩ জন গবেষক “Progress in Biophysics & Molecular Biology” Peer Reviewed Journal-এ তাদের গবেষণায় ব্যাখ্যা করেন অক্টোপাস পৃথিবীর প্রাণী নয় অর্থাৎ অক্টোপাস ভিনগ্রহের প্রাণী। তাদের গবেষণায় উঠে আসা এমন তথ্যে বিস্মিত জীববিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, সেফালোপডা প্রজাতিগুলোর সব জীবই নিজেদের শরীরে নিজেরাই বদল আনতে সক্ষম। সেফালোপডদের এমন আশ্চর্যজনক সামর্থ্য ভাবাচ্ছে জীববিজ্ঞানীদের। কারণ, বিবর্তন তত্ত্বের সাথে এর কোন মিল নেই। তাই গবেষকরা মনে করছেন, শুধু অক্টোপাস নয়, সেফালোপডদের অন্য জীব যেমন- Skuid ও cattle fish এগুলিও হয়তো ভিনগ্রহের জীব।
গবেষকরা প্রত্যক্ষ করেন, সেফালোপডরা নিয়মিত তাদের RNA প্রতিনিয়ত বদল আনতে সক্ষম। এই RNA-তে আছে জেনেটিক কোড। সাম্প্রতিক RNA editing transcriptome-wide ডেটা সোমাটিক RNA বৈচিত্র্য ম্যাকানিজমের উপর যা সেফালোপডে বিশেষ করে অক্টোপাসে আচরণগত-ভাবে জটিল বা সূক্ষ্ম। এই তথ্যসমূহ প্রকাশ করে A-to-I mRNA editing sites-এ সেফালোপডা কলেওয়ডদের (বিশেষ করে অক্টোপাস) প্রায় প্রত্যেকটি প্রোটিন কোডিং জিন আচরণগত-ভাবে খুবই জটিল যা ব্যাপক বিবর্তনীয় পরিবর্তনে প্রোটেকটেড। অর্থাৎ প্রত্যেকটি প্রোটিন কোডিং জিন সূক্ষ্ম ও সংরক্ষিত। স্কুইড ও বিশেষ করে অক্টোপাসের প্রায় প্রত্যেকটি প্রোটিন কোডিং জিন বিবর্তন সংরক্ষিত A-to-I mRNA editing sites isoform রয়েছে, যার ফলে non-synonymous এমিনো এসিডের পরিবর্তন ঘটে। ইহা এমন একটি মসৃণ এবং ক্রমবর্ধমান বংশানুক্রমিক আণবিক জেনেটিক কৌশল একটি ভার্চুয়াল গুণগত পরিবর্তন, অর্থাৎ এক ধরণের আকস্মিক পরিবর্তন যাকে “great leap forward” বলা হয়েছে।
অক্টোপাসের DNA highly rearranged যেখানে অসংখ্য জিন রয়েছে যা লাফিয়ে স্থান পরিবর্তন করতে পারে আর এই জিনগুলোকে “jumping genes” বলা হয়। যতক্ষণ না স্কুইড বা অক্টোপাস বংশক্রমানুতে সব নতুন জিন সাধারণ মিউটেশন দ্বারা পূর্ব জিন থেকে প্রকাশিত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত স্কুইড অথবা অন্য জীব একই পরিবেশ শেয়ার করে নেয়। এখানে অবশ্যই এমন কোন উপায় নেই যার দ্বারা A-to-I mRNA editing-এর এই বৃহৎ গুণগত রূপান্তর ডারউইন বা নব্য-ডারউইন প্রক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
যদিও horizontal gene transfer ডারউইন বা নব্য-ডারউইনে অনুমতি দেয়া হয় (ডারউইন বা নব্য-ডারউইন horizontal gene transfer ব্যাখ্যা দিতে পারে না)। এর আগেও সেফালোপডদের ৫০০ মিলিয়ন বছরের একটি ইভল্যুশনারি হিস্ট্রি অঁকন করা হয়েছিল, যদিও তা খুবই বিশৃঙ্খল ও পরস্পরবিরোধী ছিল। অক্টোপাস, স্কুইড ও কাটলফিশে নটিলাস থেকে রূপান্তরিত প্রধান জিনগুলো পূর্বের জীবে সহজে পাওয়া যায় না। এইসব কারণে গবেষকরা দাবী করেন coleoid-রা এলিয়েন বা ভিনগ্রহের বাসিন্দা।
গবেষকরা মনে করেছেন, প্রায় ২৭০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী তৈরির সময় অনেক কিছু মহাকাশ থেকে ছিটকে পড়েছিল যার কিছু ছিল জীবন্ত। আর সেভাবে হয়তো অক্টোপাস অথবা স্কুইডের ডিম সমুদ্রে পড়েছিল যা পরে সমুদ্রের তাপমাত্রায় জীবন পেয়েছে।[1]https://www.sciencedirect.com/…/pii/S0079610718300798…
অক্টোপাসকে এলিয়েন বলার আরো কিছু কারণ রয়েছে নিচে তা ব্যাখ্যা করা হল— ১৩ আগস্ট ২০১৫-তেও ন্যাচার জার্নালে অক্টোপাসের একটি জেনেটিক নকশা তৈরি করা হয় যেখানে গবেষকরা অদ্ভুত ধরনের নকশা প্রত্যক্ষ করেন। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, যেখানে মানুষের জিন রয়েছে ২০ হাজার বা তার কিছু বেশি সেখানে অক্টোপাসের রয়েছে ৩৩ হাজার প্রোটিন কোডিং জিন। শুধু তাইই নয়, গবেষকরা লক্ষ্য করেন, এই জিনগুলোর অদ্ভুত ধরণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অক্টোপাসের দেহের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে প্রায় কয়েক’শ জিন পাওয়া যায় যা অন্য কোনো প্রাণীতে নেই। এই জিনগুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। অক্টোপাসের জটিল স্নায়ুতন্ত্রে বিবর্তনমূলক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। চারপাশে থাকা যেকোনো কিছুর মতো আকার ও রং ধারণ করতে পারে, যাকে বলা হয় “ইনস্ট্যান্ট কেমোফ্লেজ”।
অক্টোপাসে আরো রয়েছে, বৃহৎ মস্তিষ্ক, ক্যামেরাদ মত চোখ, নমনীয় দেহ। [2]The octopus genome and the evolution of cephalopod neural and morphological novelties | Nature
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডাঃ ক্লিফটন রাগডেল বলেন, ”প্রয়াত ব্রিটিশ প্রাণী বিজ্ঞানী মার্টিন ওয়েলস দাবী করেছিলেন, অক্টোপাস হলো এলিয়েন। তারপর আমাদের গবেষণাপত্রেও একটি এলিয়েন জিনোমের বর্ণনা দেয়া হয়েছে।” তিনি আরো বলেন, “অন্য যেকোনো প্রাণী থেকে অক্টোপাস একদমই আলাদা। কোন কিছুকে আঁকড়ে ধরার জন্য আছে আটটি বাহু, চিন্তা করার জন্য আছে বড় মস্তিষ্ক। শুধু তাই নয়, যেকোনো সমস্যা সমাধানেও অক্টোপাসের রয়েছে অদ্ভুত রকমের দক্ষতা।” [3]Octopus genetic code is so strange it could be an ALIEN, according to scientists – Mirror Online
পরিশেষে– অক্টোপাস কোনো এলিয়েন নয়, ডারউইন বা নব্য-ডারউইন দিয়ে এলিয়েনের এমন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করা যায় না। তাই বিজ্ঞানীরা নানানরকম দাবী ও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আদৌ এলিয়েন বলে কিছু আছে কি না, থাকলে তারা দেখতে কেমন, কেমন তাদের বুদ্ধিমত্তা-এ নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কল্পনার এই ভিনগ্রহী প্রাণী কি বাস্তবেও আছে-সেই কৌতূহলের শেষ নেই। এর মধ্যেই কেউ যদি বলেন, এই পৃথিবীতেই অবাধে বিচরণ করছে এলিয়েনরা। তাহলে চমকে ওঠাটাই স্বাভাবিক। অক্টোপাস এলিয়েন এর স্বপক্ষে তেমন কোনো পোক্ত কোনো এভিডেন্স নেই। শুধুমাত্র ডারউইন ইভল্যুশন দ্বারা এদের (Coleoid) ব্যাখ্যা দেয়া যায় না বিধায় এমন দাবী উত্থাপন করছেন গবেষকরা।
ডারউইনকে বাঁচাতে অক্টোপাস ভিনগ্রহে যাওয়া কারণ সমূহঃ
১. অরিজিন অফ স্পিসিসের ৬ষ্ঠ অধ্যায়েই ডারউইন লিখেছেন:
“যদি দেখানো যায় যে কোন জটিল প্রাণী আছে যার জটিল কোনো অঙ্গের ব্যাপারে একাধিক, ক্রমান্বয়ে হওয়া, হালকা পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় না, তবে আমার এ বিবর্তন তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হবে।”[4]ডারউইনের সমালোচকদের জবাব – বিজ্ঞানযাত্রা (bigganjatra.org)
আমরা উপরে অক্টোপাসের ক্ষেত্রে দেখেছি এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও গঠন সম্পূর্ণ ইউনিক। তাই তাদের একাধিক ক্রমান্বয়ে হওয়া হাল্কা পরিবর্তন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। অতএব ডারউইনের কথা অনুযায়ী তার বিবর্তন তত্ত্ব পুরোপুরিভাবে ভুল প্রমাণিত হয়।
২. অলৌকিক উপায়ে (বা জেনেটিক ধারা ভেঙ্গে) কোন প্রানীর ‘সৃষ্টি’ হওয়া পর্যবেক্ষণ করা গেলে। তুলনামূলক জেনেটিক্সের তথ্য থেকে একই উপসংহারে পৌঁছনো না গেলে। [5]বিবর্তন মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য নয় (azureedge.net)
উপরে আমরা যেমনটি দেখলাম। অক্টোপাসের জিন মানুষের চেয়েও বেশি যদিও মানুষের চেয়ে তাদের জিনোম ছোট অর্থাৎ অক্টোপাসের জিনোম অসংখ্য জিনে ভর্তি এবং কয়েক’শ জিন পাওয়া যায় যা অন্য প্রাণীতে নেই। অর্থাৎ অক্টোপাসের জিনোমে ‘জেনেটিক ধারা’ ভেঙে পড়ে ও জেনেটিক্স তথ্য থেকে একই উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
৩. যদি কোন প্রক্রিয়ার সন্ধান পাওয়া যায় যা পরিব্যক্তিকে পুঞ্জীভূত হতে বাঁধা দিবে। [6]বিবর্তন মিথ্যা-প্রতিপাদনযোগ্য নয় (azureedge.net)
উপরে আমরা যেমনটা দেখেছি, অক্টোপাসের প্রায় প্রত্যেকটি জিন evolutionary conserved যা বিবর্তনবাদী পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত। যার প্রতিটা জিন ইউনিক ও প্রয়োজনীয়। এই জিনের পরিবর্তন জীবের জন্য প্রাণঘাতী(lethal) হতে পারে। [7]Medical Definition of Gene, evolutionarily conserved (medicinenet.com)
তাই গবেষকরা বলছেন, ‘The complex sets of new genes in the Octopus may have not come solely from horizontal gene transfers or simple random mutations of existing genes or by simple duplicative expansions.
বিবর্তনবাদ সম্পর্কীত অন্যান্য লেখাঃ বিবর্তনবাদ – Faith and Theology (faith-and-theology.com
References