পুনর্জন্ম কি সম্ভব ?

পুনর্জন্ম কি সম্ভব ?

পুনজর্ন্ম বা জন্মান্তর বলে বাস্তবে কিছুই নেই। জন্মান্তরবাদ এর ইতিহাস পাঠকগণ পড়তে পারেন। [1]https://philpapers.org/rec/MAJAEO পুনজর্ন্ম নিয়ে বড় জোর কেবল দুটো প্রমাণই পেশ করা যেতে পারে। প্রথমটা হল আগের জন্মের কথা অনেকের মনে আছে – এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে আসলে কিছুই প্রমাণ হয় না! গবেষণায় দেখা গেছে এটা আসলে এক ধরণের অসুস্থতা, বিস্তারিত উত্তর এখানে পড়ে দেখতে পারেন । [2]https://www.scientificamerican.com/article/previous-life-memories-due-to-bad-memoryprevious-life-memories-due-to-bad-memory

যদি ধরেও নিই যে, কিছু জাতিস্মর পাওয়া যাবে যারা হুবহু সব আগের জন্মের কথা বলে দিয়েছে, তাতেও কিছুই প্রমাণ হয় না। এর কারণ সে কেবল অন্য ব্যক্তির স্মৃতি পেয়েছে মাত্র। 

আর এর মাধ্যমে আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) তাকে পরীক্ষা করে থাকতে পারেন, যেহেতু কোরআনে আল্লাহ (সৃষ্টিকর্তা) আমাদের জানাচ্ছেন যে, এই জীবনের সব কিছু আসলে আখিরাতের (পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের) জন্য কেবল একটা পরীক্ষা মাত্র!

ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْمَوْتَ وَٱلْحَيَوٰةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًاۚ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْغَفُورُ

“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য – কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” [3]আল-কোরআন, ৬৭:২

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِۗ وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةًۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ

“জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।” [4]আল-কোরআন, ২১:৩৫ 

এছাড়াও দেজা ভু ক্যাটাগরির দেজা সু অর্থ হলো আগে থেকে জানা। অর্থাৎ অতীত জীবনের কথা মনে পড়া, হুবুহপ্রেভিওউস-লিফে-মেমরিএস-দুএ-ত-বাদ-মেমর‍্য

1.Associative Déjà vu –   

সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ বেশিরভাগ সময় যে Déjà vu এর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয় তা হলো associative Déjà vu। এই অভিজ্ঞতার ফলে কোনো একটা ঘটনা অথবা কোনো কথা বা কোনো গন্ধ পেলে আপনার এমন অনুভূতির সৃষ্টি হবে যার ফলে আপনার মনে হবে এই ঘটনা আপনার সাথে আগে কখনো ঘটেছে, বা এই কথাগুলো আপনি আগেও কোথাও শুনেছেন। অর্থাৎ আপনি প্রশ্নে যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তা এই জাতীয় Déjà vu। গবেষকদের মতে, এই ধরনের Déjà vu memory-based experience এর প্রভাব। মানব মস্তিষ্কের যে অংশ স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে সেই অংশই এই ধরনের Déjà vu এর জন্য দায়ী।

2.Biological Déjà vu – Temporal lobe epilepsy

এর কারণে এই ধরনের Déjà vu তৈরি হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর অ্যাটাক আসার ঠিক আগের মুহূর্তে অর্থাৎ জ্ঞান হারানোর আগে তীব্র এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে এই পরিস্থিতি তিনি নিশ্চিত ভাবে আগেও প্রত্যক্ষ করেছেন। টিপিক্যাল Déjà vu এর সাথে এর যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং তা অনেক বেশি সময় স্থায়ী হওয়ার কারণে এর সম্পর্কে গবেষণা করা তুলনামূলক ভাবে সহজ।

এছাড়াও ডিপ্রেশন, anxiety অথবা schizophrenia এর মত মানসিক অসুস্থতা থাকলে Déjà vu এর অভিজ্ঞতা হতে পারে।

দেজা ভু কেন হয়? 

মানব মস্তিষ্কের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল হল মেডিয়াল টেম্পোরাল লোব যা আমাদের সচেতন স্মৃতি (concious memory) তৈরি করে। এই অংশে অবস্থিত আরও তিনটি অঞ্চল হল Parahippocampal gyrus, আম্যগদালা এবং rhinal cortex। ১৯৭৭ sale স্টান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক Dr. Gabrieli প্রথম আবিস্কার করেন যে আমাদের hippocampus সচেতন ভাবে কোনো কিছু মনে করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে parahippocampal gyrus আমাদের স্মৃতির নিরিখে কোনো ঘটনা বা কোনো জিনিস আমাদের কাছে পরিচিত না অপরিচিত তা নির্ধারণ করে।

বিজ্ঞানীদের মতে, মানব মস্তিষ্কের এই অংশগুলো Déjà vu এর মতন ঘটনার জন্য দায়ী।সম্পূর্ন পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে Déjà vu সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া যেতে পারে। প্রায় ৬০% মানুষের দাবী তারা Déjà vu প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এই সংখ্যাটা সর্বাধিক ১৫-২০ বছর বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই ঘটনা ধীরে ধীরে কমে যায়। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ও উচ্চ আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এবং পর্যটকদের ক্ষেত্রে Déjà vu এর ঘটনা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ মানুষ এবং যারা বহুসময় এবং বহুদিন পর্যন্ত স্বপ্ন মনে রাখতে পারেন তাদের ক্ষেত্রে Déjà vu এর ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং স্ট্রেস থেকে কিছু মানুষ যেমন Déjà vu প্রত্যক্ষ করেছেন, তেমনই রিলাক্সড এবং রিফ্রেশিং অবস্থায় অনেক মানুষ Déjà vu এর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। উল্লিখিত তথ্যের নিরিখে দেখা যাচ্ছে  দেজা ভু হচ্ছে এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল প্রব্লেম। যা আগে থেকে জানা,  শোনা  অনুভুতি অনেক কিছুর জন্ম দিতে পারে।  এবং যেহেতু পৃথিবীর প্রায় ৬০% মানুষের মধ্যেই দেজা ভু দেখা দেয় সেখানে  পুর্বের ঘটনার সাথে স্মৃতি মিলে যাওয়া,  অনুভুতি এক হওয়া এসব কেস বেশি আসতেই পারে।  তাই বলে যুক্তির অকাল পতন ঘটিয়ে তাকে জন্মান্তরবাদ এর মতো ভ্রান্ত অবৈজ্ঞানিক মিথ মেনে নেওয়া যায় না। 

উল্লেখ্য  অতীতের স্মৃতি বা past memory ও দেজা ভুর ক্যাটাগরি দেজা সু।  যদিও পেপার গুলো তে  তা একত্রে আলোচনা করা হয়েছে। [5]https://globalheart.nl/spiritualiteit/are-you-experiencing-past-life-memories-or-deja-vu/   

এছাড়াও Reincarnation বা জন্মান্তরবাদ এর সাথে রয়েছে অনেক মৌলিক ভুল যা প্রমাণ করে এটি একটি মিথ মাত্র। [6]https://www.psychologytoday.com/intl/blog/happiness-in-world/201210/the-problem-reincarnation?amp 

দ্বিতীয় যে প্রমাণটি পেশ করা হয়ে থাকে সেটি হল, এই জীবনের বর্তমান অবস্থার জন্য পূর্বের জন্মের কৃতকর্ম দায়ী। তাই কোনো ব্যক্তি ধনী, দরিদ্র, সুস্থ বা অসুস্থ ইত্যাদি অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে, অর্থাৎ সে নীচু বা উচু কূলে জন্মে থাকে। এতেও কিছুই প্রমাণ হয় না। কেননা আগেই বলেছি যে, এই জীবনের সব কিছুই প্রকৃতপক্ষে আখিরাতের (পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের) জন্য পরীক্ষা। কিন্তু এর পাশাপাশি পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের জন্য বর্তমান জীবনের অবস্থা দায়ী হলে, দরিদ্র ব্যক্তি তার পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের জন্য এই জন্মে দরিদ্র হয়েই থাকবে, কারণ এটাই হল তার যোগ্য কর্মফল। অথচ আমরা দেখি অনেক দরিদ্র ব্যক্তি রাতারাতি নিজের চেষ্টায় ধনীও হয়ে যায়। তাহলে এখানে তো তার ধনী হওয়ার কথা নয়! পূর্বের জন্মের কৃতকর্মের ফল ভোগ করার পরিবর্তে সে নিজেই নিজের নিয়তি পরিবর্তন করে দেওয়ার সামর্থ্য রাখছে??? এর মানে সে হিন্দু দর্শনের ঈশ্বরের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান!!!

হিন্দুরা জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্ম নাকি মনোবৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। রেফারেন্স হিসেবে “টেলিপ্যাথি”-কে টেনে আনে যেটা প্যারাসাইকোলোজির একটা অংশ। আর বাস্তবে প্রমাণ হিসেবে তারা যেটাকে দাঁড় করায় সেটা হলো, “ভারতের কোথায় যেন এক তিন বছরের বাচ্চা ছেলে তার পূর্বের জন্মের কথা বলে দিতে পারে যা হুবহু মিলে যায়। তারা বলে এটা কিভাবে সম্ভব যে ঠিকমতো কথাই বলতে পারে না সে এটা কিভাবে বললো। অনেক বিজ্ঞানী নাকি এটায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।”

জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্মকে যখন বিজ্ঞানের দোহায় দেওয়া হয় তখন কিছুটা সন্দেহ তো লাগেই। মূল কথা হচ্ছে কোন বিজ্ঞানী কীসে বিশ্বাস করবে, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার পোস্টে দেখুন আমি লিঙ্ক দিয়েছি যেখানে আগের জন্মের কথা বলতে পারে এমন ব্যক্তিদের ওপর সাইন্টিফিক রিসার্চ এর আলোচনা হয়েছে এবং  দেখা গেছে এটা আসলে একটা মানসিক অসুস্থতা। সুতরাং, জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্মক বলতে আসলে কিছু নেই।  

পুরো পেপার টি ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে। [7]drivesdk https://drive.google.com/file/d/1wmHFxQk4FNP8vo233UVb2gPIAto-VjkR/view?usp=drivesdk“The Grand Design” by Stephen Hawking and Leonard Mlodinow/Chapter 6:

যদি ধরেও নিই যে, এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া, তবে সেক্ষেত্রে তাদের গোড়াতে থাকা মূল দর্শনটা দেখুন। হিন্দু দর্শন অনুযায়ী সৃষ্টি অনন্ত কাল ধরে বিরাজমান। কেবল সৃষ্টির এক অংশ তৈরি হচ্ছে আবার সেটা ধ্বংস হচ্ছে। আবার সৃষ্টি হচ্ছে আবার ধ্বংস হচ্ছে এবং এভাবে চলতেই আছে। তারা সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি এই চারটে যুগের কথাও অনেকে বলে থাকে যে চারটে যুগ ক্রমান্বয়ে বার বার আসে; এর অর্থ হল এই যে, সৃষ্টি এবং ধ্বংস চক্রাকারে চলতেই থাকে এবং তাই এর কোনো শেষ নেই; অর্থাৎ প্রকৃতি অনন্তকাল ধরে বিরাজ করছে।

কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, প্রকৃতি অনন্তকাল ধরে ছিল না। স্টিফেন হকিং এর The Grand Design বইটা দেখতে পারেন, এর ইংরেজি, বাংলা দুটো ভার্সনের বই ইন্টারনেটে পিডিএফ আকারে পাবেন। এই বইয়েও রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে যে, আধুনিক বিজ্ঞানে আজ এটা প্রমাণিত – সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল না,[২] এর একটা চূড়ান্ত শুরু বা সূচনা আছে “বিগ ব্যাং” নামক প্রাকৃতিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একেবারে শূন্য হতে।[৩] তাহলে হিন্দু দর্শনের গোড়াটাই আসলে অবৈজ্ঞানিক!  

এখানে হিন্দু দর্শনে যেহেতু সৃষ্টি চক্রাকারে আসে এবং যায়, তাই কোনো একটি সৃষ্টির পূর্বের কাজের ফল এর প্রভাব পরবর্তী কালে প্রতীয়মান হয় বলে ধরা হয়। যেমন আমি এখন একটা মেসেজ লিখছি; এটা তখনই লিখছি যখন আমি আপনার মেসেজটা দেখলাম। তাই আমার মেসেজটা হল পূর্বে আপনার মেসেজটা দেখার ফল। একইভাবে হিন্দুদের যুক্তি হল, যেহেতু বর্তমানের কোনো বিষয় আসলে পূর্বের কোনো ঘটনার ফল, তাই বর্তমানের জীবনের অবস্থাও পূর্বের জীবনের কর্মের ফল। আর পূর্বের কাজ এবং ঘটনার স্মৃতি অবচেতনভাবে মনের মধ্যে থেকে যায় যার প্রভাব পড়ে পরবর্তী জন্মে। এটা তখনই সঠিক বলা যাবে, যখন এই বিষয়টিকে আমরা স্বীকার করব যে, সৃষ্টি অনন্তকাল ধরে ছিল। কারণ অনন্তকাল ধরে থাকলেই কেবল পূর্বের জন্মের কাজের ফলগুলো পরবর্তী জন্মে ক্রমশ সঞ্চারিত হতে থাকবে এবং এই প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে চলতেই থাকবে। অথচ মেটাফিজিক্যালি ইভেন মর্ডান কসমোলজি দ্বারা এটা প্রতিষ্ঠিত যে সাইক্লিক ইউনিভার্স সত্য নয়। তাই হিন্দুদের এই পুনর্জন্ম ভ্রান্ত দাবিগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক!!! এরা কেবল চটকদার কথা বলে লোকজনের চিন্তা অন্য দিকে নিতে চায়; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা কুফর এবং শির্কের পথে চলতে চলতে আজ মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট করছে। 

কি-ওয়ার্ডঃ পুনর্জন্ম কি সত্যি হয় , পুনর্জন্ম কি সত্য , পুনর্জন্ম নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতামত , পুনর্জন্ম কি সম্ভব

Home – Faith and Theolgy (faith-and-theology.com)

References

References
1 https://philpapers.org/rec/MAJAEO
2 https://www.scientificamerican.com/article/previous-life-memories-due-to-bad-memoryprevious-life-memories-due-to-bad-memory
3 আল-কোরআন, ৬৭:২
4 আল-কোরআন, ২১:৩৫
5 https://globalheart.nl/spiritualiteit/are-you-experiencing-past-life-memories-or-deja-vu/
6 https://www.psychologytoday.com/intl/blog/happiness-in-world/201210/the-problem-reincarnation?amp
7 drivesdk https://drive.google.com/file/d/1wmHFxQk4FNP8vo233UVb2gPIAto-VjkR/view?usp=drivesdk“The Grand Design” by Stephen Hawking and Leonard Mlodinow/Chapter 6:

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button