হাদিস কাকে বলে ?
হাদিস
হাদিস কাকে বলে? হাদিস কি ?
হাদিস একটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে, বাণী বা বার্তা। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কথা, কাজ, অনুমোদন ও মৌনসম্মতিকে হাদিস বলে।[1]বিষয়ভিত্তিক আয়াত ও হাদিস সংকলন; পৃষ্ঠা নংঃ ১৫। আই সি এস পাবলিকেশন
খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গির স্যারের লিখিত “হাদিসের নামে জালিয়াতি” বইতে হাদিসে সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন,
হাদিস বলতে সাধারণত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা, কর্ম বা অনুমোদনকে বুঝনো হয়। অর্থাৎ, ওহীর মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছেন, করেছেন বা অনুমোদন করেছেন তাকে হাদীস বলা হয়। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায়, “যে কথা, কর্ম, অনুমোদন বা বিবরণকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বলে প্রচার করা হয়েছে বা দাবী করা হয়েছে তাই হাদীস বলে পরিচিত।[2]খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর; হাদিসের নামে জালিয়াতি; পৃষ্ঠা নংঃ ২০
হাদিসের শ্রেণিবিভাগ
হাদিসকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. কাওলিঃ রাসুল (সাঃ) এর কথা সংবলিত হাদিসকে কাওলি হাদিস বলে।
২. ফেলিঃ রাসুল (সাঃ) এর বাস্তব জীবনের কর্মমূলক হাদিসকে ফেলি হাদিস বলে।
৩. তাকরিরিঃ সাহাবিগণের যেসব কথা ও কাজের প্রতি রাসুল (সাঃ) সমর্থন প্রদান করেছেন তাকে তাকরিরি হাদিস বলে।
বর্ণণাকারীদের সিলসিলা অনুযায়ী হাদিসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. মারফু হাদিসঃ যে হাদিসে বর্ণণাসূত্র রাসুল (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মারফু হাদিস বলে।
২. মাওকুফ হাদিসঃ যে হাদিসের বর্ণনাসূত্র সাহাবি পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মাওকুফ হাদিস বলে।
৩. মাকতু হাদিসঃ যে হাদিসের বর্ণনা সূত্র তাবেয়ি পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে মাকতু হাদিস বলে।
রাবির গুণ অনুযায়ী হাদিস তিন প্রকার।
১. সহীহ হাদিসঃ যে হাদিস মুত্তাসিল সনদ, রাবি ন্যায়পরায়ণ, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ স্মরণশক্তিসম্পন্ন এবং হাদিসটি শায ও মুয়াল্লাল নয় তাকে সহীহ হাদিস বলে। ( যে হাদিসের বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত কিন্তু তার চেয়ে অধিক রাবির বর্ণনার বিপরীত তাকে হাদিসে শায বলে। যে হাদিসে বর্ণনা সূত্রে এমন এক সূক্ষ্ম ত্রুটি থাকে, যা কেবল হাদিসশাস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাই বুঝতে পারেন।)
২. হাসান হাদিসঃ স্বচ্ছ স্মরণশক্তি ব্যতীত সহীহ হাদিসের সমস্ত বৈশিষ্ট যার মধ্যে বিদ্যমান তাকে হাসান হাদিস বলে।
৩. দঈফ হাদিসঃ যে হাদিস উপরোক্ত সকল কিংবা কোন একটার উল্লেক্ষযোগ্য ত্রুটি থাকে তাকে দঈফ হাদিস বলে।
বর্ণনাকারী বা বারির সংখ্যা অনুযায়ী হাদিস চার প্রকার।
১. মুতাওয়াতির হাদিসঃ যে হাদিস প্রত্যেক যুগে যার বর্ণনাকারীদের সংখ্যা এত বেশি যে, যাদের মিথ্যাচারে মতৈক্য হওয়া স্বাভাবিকভাবেই অসম্ভব।
২.মাশহুরঃ যে হাদিসের বর্ণনাকারী কোনো যুগেই বর্ণনাকারীর সংখ্যা তিনের কম ছিল না।
৩. আযীযঃ যার বর্ণণাকারীর সংখ্যা কোনো যোগেই দুই এর কম ছিল না।
৪. গরিবঃ যার বর্ণণাকারীর সংখ্যা কোনো কোনো যুগে একজনে পৌছেছে।
হাদিসের কিছু পরিভাষা
সাহাবীঃ যে ব্যক্তি রাসুল (সাঃ) এর সাহচর্য লাভ করেছেন, তার জীবদ্দশায় রাসুল (সাঃ) কে ঈমানের সাথে দেখেছেন এবং ঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন, তিনি সাহাবী।
তাবেয়িঃ যিনি বা যারা ঈমানের সাথে কোনো সাহাবীর সাহচর্য লাভ করেছেন এবং সাহাবীদের অনুকরণ অনুসরণ করেছেন এবং ঈমানের সাথে মারা গিয়েছেন তাদেরকে তাবেয়ি বলে।
তাবে তাবেয়িঃ যিনি বা যারা ঈমানের সাথে কোনো তাবেয়ির সাহচার্য লাভ করেছেন, তার নিকট ইসলামী জ্ঞান আহরণ করেছেন ও তার অনুকরণ অনুসরণ করেছেন এবং ঈমানের সাথে মারা গিয়েছে, তাদেরকে তাবে তাবেয়ি বলে।
রেওয়ায়াতঃ হাদিস বর্ণণার পদ্ধতিকে রেওয়ায়াত বলে।
রাবিঃ হাদিস বর্ণণাকে রাবি বলে।
দেরায়েতঃ হাদিস বাছাইয়ের পদ্ধতিকে দেরায়েত বলে।
সনদঃ হাদিস বর্ণনার ধারাবাহিকতাকে সনদ বলে।
মতনঃ হাদিসের মূল বক্তব্যকে মতন বলে।
হাদিস সম্পর্কে আরো জানতেঃ দারসুল হাদিস – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
Visit Our Facebook Page: Faith & Theology | Facebook
References