Trending

স্রষ্টার অস্তিত্বঃ স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণিত

ফিলোসোফি

স্রষ্টার অস্তিত্ব সহজাত নয় এ নিয়ে গবেষণালব্ধ তথ্যাদির বিশ্লেষণ।

মানুষ কেন ইশ্বরে বিশ্বাস করে তা নিয়ে একাডেমিয়াতে অনেক ধরনের গবেষণা আছে। তবে রিসেন্ট গবেষণা কে ব্যবহার করে নাস্তিকরা দেখানোর চেষ্টা করছে স্রষ্টায় বিশ্বাস সহজাত নয়।

যৌথ ভাবে Coventry University এবং Oxford University এর দার্শনিক, বিহেভিয়ারেল সায়েন্স এবং নিউয়োরোসায়েন্টিস্টরা গবেষণা করে পেয়েছেন ঈশ্বরে বিশ্বাস সহজাত নয় আসলেই কি তাই?

তাদের গবেষণা সাইন্টিফিক রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় মূলত দুইভাবে হয়েছে। একটি ছিল স্পেনের বিখ্যাত Camino de Santiago নামের জায়গার তীর্থ যাত্রীদের মধ্যে। আরেকটি ছিল Brain Stimulation experiment। এই দুটো পরীক্ষায় রিসার্চারেরা ইন্টুইটিভ / এনালাইটিক্যাল থিংকিং এবং কগ্নেটিভ ইনহেবিটেশান এর মধ্যে কোন সম্পর্ক খুঁজে পাননি। বরং তারা যেটা খুঁজে পেয়েছেন সেটা হচ্ছে মানুষের বেড়ে উঠার পদ্ধতি এবং সোশ্যাল- কালচারাল অবস্থান মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে বড় প্রভাব ফেলে।গবেষণা শুরু হয়েছিল নর্দান স্পেনের বিখ্যাত পিলগ্রিম রুট ( Camino de Santiago de Compostela) এ। গবেষকরা তীর্থযাত্রীদের তাদের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন তাদের বিশ্বাসের লেভেল এবং কত সময় তারা তীর্থে কাটান, এবং তাদের ইন্টুইটিভ থিংকিং পরীক্ষা করে ছিলেন বিভিন্ন প্রবাবিলিটি টাস্কের মাধ্যমে।

দ্বিতীয় পরীক্ষায় বিভিন্ন ম্যাথমেটিকাল পাজল দেওয়া হয়েছিল ইন্টুশান লেভেল বাড়ানোর জন্য, এতেও দেখা যায় সুপ্যারন্যাচারাল বিশ্বাসের সাথে ইন্টুইশানের কোন সম্পর্ক নেই।

তৃতীয় অংশে ব্রেইন স্টিমিউলেশানের মাধ্যমে তীর্থ যাত্রীদের কগ্নেনেটিভ ইনহেভিটেশান। এই কগ্নেটিভ ইনহেভিটেশান যেটা মূলত আমাদের এনালাইটিক্যাল মাইন্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে।

মূলত এই পরীক্ষায় দেখা যায় অবিশ্বাসীরা মস্তিষ্কের ঠিক যে অংশ ব্যবহার করে নানা সুপারন্যাচারাল অংশকে সারপ্রাস করে বিশ্বাসীরাও সেই অংশকে ব্যাবহার করছেন। পরীক্ষায় দেখা যায় যে মস্তিষ্কের মধ্যে কৃত্রিম ভাবে স্টিমিউলেশান তৈরির পরেও তা সুপারন্যাচারাল বিশ্বাসের লেভেল কে কোন ভাবেই পরিবর্তন করছে না । একারনেই ভাবা হচ্ছে মস্তিষ্কের কগ্নেটিভ ইনহেভিটেশান এবং সুপারন্যাচারাল বিশ্বাসের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই৷ এবং সম্ভবত ধর্মীয় বিশ্বাস কালচার এবং সংস্কৃতি থেকে উদ্ভুত।

স্টাডি ডিজাইনের ক্রিটিক

মূলত এই গবেষণার স্টাডি ডিজাইন দেখলেই বুঝতে পারবেন ফলাফলের কারণ কী। কগনিটিভ সাইন্স অফ রিলিজিয়ন এ ইন্টুইটিভ থিইস্ট বা বর্ন বিলিভার নিয়ে গত ২৫ বছরে যত গবেষণা হয়েছে অধিকাংশ গবেষণায় শিশুদের উপর গবেষণা করা হয়েছে কারণ তারা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মুক্ত। তাদের উপর কালচারাল এবং তার সোশ্যাল ইম্প্যাক্ট তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত কম অনেকাংশে নেই বললেই চলে। অন্যদিকে উক্ত গবেষণায় স্টাডি ভলান্টিয়ার দের বয়স হচ্ছে ১৮ থেকে ৬৭ বছরের মধ্যে! যেখানে মধ্যবয়স্ক এবং প্রবীণ ভলান্টিয়ার দের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। যেহেতু মধ্যবয়সী এবং প্রবীণদের মধ্যে কালচার এবং সংস্কৃতির একটা ভালো প্রভাব বিদ্যমান থাকে সেক্ষেত্রে তাদের উপর করা এক্সপেরিমেন্ট এ ফলাফল নেগেটিভ আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অপরদিকে এগ্নোষ্টিক দের ক্লেইম হচ্ছে এই স্টাডি পূর্ববর্তী ২০ বছরের গবেষণা কে চ্যালেঞ্জ করেছে মূলত সম্পূর্ণ গবেষণাপত্রে এমন কিছুই বলা হয়নি।

স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে প্রারম্ভিক গবেষণা

২০০৪ সালে প্রফেসর কেলেমেনের গবেষণা অনুযায়ী,

সাম্প্রতিক জ্ঞানীয় উন্নয়নমূলক গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা যায় যে প্রায় ৫ বছর বয়সের মধ্যে, শিশুরা প্রাকৃতিক বস্তুকে মানবসৃষ্ট নয় বলে বুঝতে পারে, অ-প্রাকৃতিক সম্পর্কে যুক্তি দিতে পারে।.. এই গবেষণার ফলাফলগুলি পরামর্শ দেয় যে শিশুদের ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতিকে সঠিকভাবে স্বজ্ঞাত ঈশ্বরবাদ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।” (২)

আবার একাডেমিক অলিভেরা পেট্রোভিচ মানুষের মনস্তত্ব এবং স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে কিছু গবেষণা পরিচালিত করেছেন। তিনি এই উপসংহারে এসেছেন যে একজন মানববৈশিষ্ট্যের উর্ধ্বে (Non-anthropomorphic) স্রষ্টায় বিশ্বাস হলো মানুষের প্রাকৃতিক অবস্থা। নাস্তিকতা একটি শেখা মনস্তত্ব। আস্তিকতা আমাদের প্রাকৃতিক অবস্থা। (৩)

অন্যদিকে ব্যারেটের ২০১২ সালের রিসার্চ ছিলো শিশুদের উপর গবেষণা শেষে তিনি বলেন,

” শিশুদের বিকাশমান মন এবং অতিপ্রাকৃত বিশ্বাসের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরামর্শ দেয় যে শিশুরা সাধারণত এবং দ্রুত অলৌকিক এজেন্টদের বিশ্বাস সহজতর ভাবে গ্রহণ করে। বিশেষ করে জন্মের পর প্রথম বছরে, শিশুরা এজেন্ট এবং নন-এজেন্টের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে।… শিশুরা জন্মগত ই স্রষ্টায় বিশ্বাসী হয়, আমরা যাকে বলি প্রাকৃতিক ধর্ম। ” (৪)

২০১৫ এর স্ট্যাবিলাইজ ডিজাইন বনাম ২০১৭ এর ভুল ডিজাইন

অন্যদিকে Elisa Järnefelt, Caitlin F. Canfield and

Deborah Kelemen এর রিসেন্ট ২০১৫ সালের গবেষণা অনুযায়ী,

❝মানুষের মধ্যে প্রকৃতিকে নকশা হিসেবে দেখার সহজাত প্রবণতা রয়েছে এবং মানুষ এটাও সহজাত ভাবে বিশ্বাস করে যে কেউ একজন উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন।❞ (৫)

উক্ত এই স্টাডি করা হয়েছে তিনটি মেথডে এবং ভলান্টিয়ার ছিলো ৬৫১ জন মানুষ ২০১৭ সালের সাইন্টিফিক রিপোর্ট এর গবেষণা আর এই গবেষণার স্টাডি ডিজাইন খেয়াল করতে দেখতে পাবেন এই গবেষণার স্টাডি ডিজাইন অন্যটার থেকে সমৃদ্ধ এবং বিস্তৃত।

মজার বিষয় হচ্ছে ২০২০ সালের আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী মাত্র ৩ মাস বয়সেই শিশুরা এজেন্ট আর নন এজেন্ট এর পার্থক্য বুঝতে পারে। সেক্ষেত্রে ইন্টুইটিভ থিইস্ট হওয়ার নির্ভেজাল সম্ভাবনা তাদের মধ্যে ব্যাপক। (৬)

২০২০ সালে conciseness & cognition জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী, মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে নকশাতাত্ত্বিক বিশ্বাস অন্তর্নিহিত থাকে অর্থাৎ সুপারন্যাচারাল এজেন্ট সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস সম্পুর্ন ইন্টুইটিভ। (৭)

২০১৭ সালে Journal of Experimental Child psychology জার্নালে আছে আরেকটি গবেষণাঅনুযায়ী, ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির সেক্যুলার এডাল্টরাও ( cognitively) সহজাত ভাবে প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে নকশাতাত্ত্বিক চিন্তাধারা লালন করে। (৮)  ওহ হো একটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছি, বাচ্চারা কোনটা ফিকশনাল কোনটা নন ফিকশনাল এর মধ্যে পার্থক্য ছোট থেকেই বুঝতে পারে। এ নিয়ে বিস্তর পরিসরে গবেষণা হয়েছে। (৯)

আবার Cognition জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী রিলিজিয়াস বিলিভ বাস্তবসম্মত এবং সজ্ঞাত বিশ্বাস, কাল্পনিক বা ফিকশনাল কোন কিছু নয়। (১০)

২০২১ এর রিসেন্ট গবেষণা 

থাক আর বেশি কিছু লিখবো না, এর আগে বলে নেই ২০২১ সালে ‘Cognitive Pathways to Belief in Karma and Belief in God ‘ নামে Cognitive Science জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুযায়ী গবেষকগণ প্রায় ৩৭৫৮ জন এর উপর গবেষণা চালিয়েছেন। যারা রিসার্চ মেথডলোজি সম্পর্কে জানেন তারা অবগত আছেন যে স্টাডি ডিজাইন শক্তিশালী হলে গবেষণার ফলাফল কতটা নির্ভুল হতে পারে। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের সাইন্টিফিক রিপোর্ট এর গবেষণার স্টাডি ডিজাইন এই গবেষণার তুলনায় কিছুই না। আচ্ছা যাইহোক যা বলছিলাম, তারা এতো সকল মানুষের উপর গবেষণা করে যা পেয়েছেন তা হচ্ছে স্রষ্টায় বিশ্বাস ইন্টুইটিভ থিংকিং স্টাইল দ্বারা গঠিত হয় এবং একেবারে সহজাত, যাকে আমরা ইন্টুইটিভ বিলিভ বলি বা সহজাত বিশ্বাস বলে জানি। (১১)

২০১৭ সালের গবেষণায় বর্ন বিলিভার বলে কিছু নেই দাবি করার পরেও একাডেমিয়াতে হাজারো গবেষণা হয়েছে এবং প্রমাণিত হয়েছে স্রষ্টায় বিশ্বাস ইন্টুইটিভ। আবার ও বলি একাডেমিয়াতে এটা স্বীকৃত যে স্রষ্টায় বিশ্বাস সহজাত এ নিয়ে আদোতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। দ্বন্দ্বমূলক ডেইটা থাকতেই পারে তবে এর ফলে অন্যান্য সকল স্টাডি বাতিল হয়ে যায় না। আসলে বিষয়টা কি এসব গবেষণাপত্র আমাদের বঙ্গদেশীয় নাস্তিকরা হাতে পায় প্রকাশের প্রায় ৩-৪ বছর পরে তাই এ নিয়ে তারা লাফালাফি করে অথচ এসব এর আদোতে কোনো ভ্যালুই থাকেনা। সুতরাং স্রষ্টায় বিশ্বাস সহজাত এটা সহজাত প্রমাণিতই রয়ে গেছে মধ্য থেকে কিছুদিন বঙ্গীয় কলাবিজ্ঞানীরা লম্ফঝম্প দিয়ে গেলো এখনো দিচ্ছে। এ নিয়ে আমার কাছে আরও শ কয়েক রেফারেন্স আছে সব নিয়ে আলোচনা করার সময় হবেনা।

নোটঃ এই  আর্টিকেলটি সহ কপি-পোস্ট করার অনুমতি নেই। কেবলমাত্র শেয়ার করতে পারেন।

 

রেফারেন্সঃ

1.https://www.nature.com/articles/s41598-017-14090-9

2.https://journals.sagepub.com/doi/10.1111/j.0956-7976.2004.00672.x

3.Key Psychological Issues in the Study of Religion. Olivera Petrovich. psihologija, 2007, Vol. 40 (3), str. 351-363

4.Barrett, J. L. (2012). Born Believers: The Science of Children’s Religious Belief.New York: Free Press, pp. 35-36.

5.https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0010027715000293

6.https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2966030/#!po=22.6190

7.https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S1053810019302272

8.https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0022096516303058

9.https://onlinelibrary.wiley.com/doi/full/10.1111/cogs.13054

10.https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/S0010027717300203

11.https://onlinelibrary.wiley.com/doi/full/10.1111/cogs.12935

Asief Mehedi

Assalamualaikum to all.My name is Asief Mehedi . I am an informal philosophy student. Let's talk about comparative theology, we work to suppress atheism. Help us to suppress atheism and come forward to establish peace.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button