সৃজনমূলক বিবর্তনবাদ কি?
বার্গসোঁর সৃজনমূলক বিবর্তনবাদ কি?
জগৎ সৃষ্টি সম্পর্কিত মতবাদ গুলোর মধ্যে একটি মতবাদ হচ্ছে বিবর্তনবাদ।
বিবর্তনবাদীদের মতে, জগতের সমস্ত জটিল বস্তুই সহজ ও সাধারণ অবস্থা থেকে শুরু করে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে।
যাইহোক, বিবর্তন নিয়ে যে কয়টি শাখা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি মতবাদ হচ্ছে সৃজনমূলক বিবর্তনবাদ।
ফরাসি দার্শনিক হেনরি বার্গসোঁর সৃজনমূলক বিবর্তনবাদের প্রবক্তা। তিনি মনে করেন, বিবর্তন প্রক্রিয়া এক অনিয়ন্ত্রিত ও সৃজনধর্মী প্রক্রিয়া। বিবর্তন উদ্দেশ্যমূলকও নয় আবার যান্ত্রিক ও নয়। বরং এটি স্বাধীন ও সৃজনধর্মী।
হেনরি বার্গসোঁর মতে, জগৎ মানেই পরিবর্তনশীল। বার্গোসো তার ‘Metlar and memory’ গ্রন্থে জড় ও চেতনাকে একই অনন্ত প্রবাহের দুটি দিক বলে উল্লেখ করেছেন।
বিবর্তনের ব্যক্ষা দিতে দিয়ে বার্গসো বলেন, যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ ও উদ্দেশ্যমূলক বিবর্তন বাদকোনো মতই বিবর্তনের যৌক্তিক ব্যক্ষা দিতে পারেনি। তার মতে যন্ত্রবাদ ও উদ্দেশ্যবাদ উভয়ে সমানভাবে অযৌক্তিক।
যন্ত্রবাদের অযৌক্তিকতা
যন্ত্রবাদ অনুসারে বিবর্তন প্রক্রিয়া প্রত্যেক পূর্বস্তর উত্তর স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে।
জড় থেকে যখন প্রাণ এবং প্রাণ থেকে যখন মনের উদ্ভব হয় তখন কোনো নতুন জিনিসের উদ্ভব হয়না। প্রাণ জড়ের জটিলতম রুপ হিসেবে পুনরাবিভূর্ত হয়। যন্ত্রবাদীদের মতে জড় প্রাণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং নিয়ন্ত্রণ এবং পুনরাবির্ভাব বিবর্তনের বৈশিষ্ট।
কিন্তু বার্গসোর মতে, বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হতে পারেনা। বিবর্তনে পুনারাবির্ভাবের কোনো স্থান নেই। সুতরাং যন্ত্রবাদ অযৌক্তিক।
উদ্দেশ্যবাদের অযৌক্তিকতা
উদ্দেশ্যবাদ যন্ত্রবাদের ঠিক উল্টো। যন্ত্রবাদ অনুযায়ী বিবর্তনবাদ প্রত্যেক পূর্বস্তর উত্তরস্তরকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ বর্তমান অতীতের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ। আর উদ্দেশ্যবাদের মতে, বিবর্তন প্রক্রিয়া কোনো না কোন উদ্দেশ্যের জন্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ, বর্তমান ভবিষ্যৎ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
একটা উদাহারণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে,
মনে করুন ক, খ, গ তিন জন ব্যক্তি।
বিবর্তন প্রক্রিয়ায় যদি আমরা ‘খ’কে বর্তমান ধরে নেই তাহলে ‘খ’ নিয়ন্ত্রিত ‘ক’ দ্বারা। এটাকে বলে যান্ত্রিক বিবর্তনবাদ।
আর ‘খ’ যদি ‘গ’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে তাকে বলে উদ্দেশ্যমূলক বিবর্তনবাদ।
সুতরাং উদ্দেশ্যবাদের বিপরীত হচ্ছে যান্ত্রিকবাদ।
যন্ত্রবাদকে যদি নিয়ন্ত্রণের দোষে বাদ দেওয়া যায় তাহলে একই দোষে উদ্দেশ্যমূলক বিবর্তনবাদকে বাদ দেওয়া যাবে। সুতরাং উভয় মত অযৌক্তিক।
হেনরি বার্গসোর মতে বিবর্তন সৃজনমূলক। নতুন নতুন কিছু সৃষ্টিকরাই এর বৈশিষ্ট্য। তার মতে গতিই জগতের একমাত্র মূল বৈশিষ্ট্য। এই গতিকে তিনি প্রাণ-প্রবাহ বলেছেন। প্রাণ-প্রবাহ বা গতির কাজ নতুন নতুন বস্তু সৃষ্টি করা। এই গতি অতীত বা ভবিষ্যৎ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
এই প্রাণ-প্রবাহকে তিনি আবার কাল-প্রবাহ বলেছেন। এই কাল-প্রবাহে কোনো অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যৎ বলতে কিছুই নেই। এই কাল প্রবাহ পরমতত্ত্ব বা অসীম। নতুন নতুন বস্তু সৃষ্টির পথে কাল প্রবাহ থেকে এক বিপরীত শক্তির সৃষ্টি হয়। এবং এই বিপরীত শক্তির জন্য জড়ের সৃষ্টি হয়। সুতরাং, প্রাণ হচ্ছে গতি আর জড় হচ্ছে বিপরীত শক্তি।
বিবর্তনবাদ – Faith and Theology (faith-and-theology.com)