লামার্কিজমের উদ্ভব
বিবর্তনবাদ
লামার্কিজমের উদ্ভব
অষ্টাদশ শতাব্দীতে, বুফন এবং অন্যান্য প্রকৃতিবিদরা এই ধারণাটি প্রবর্তন করতে শুরু করেছিলেন যে সৃষ্টির পর থেকে জীবন হয়তো স্থির ছিল না। ১৭ শতকের শেষের দিকে, জীবাশ্মবিদদের দ্বারা ইউরোপের জীবাশ্ম সংগ্রহগুলি ফুলে ফেপে উঠেছিলো এবং ১৮০১ সালে, Jean Baptiste Pierre Lamarck নামে একজন ফরাসি প্রকৃতিবিদ একটি পদক্ষেপ নেন এবং বিবর্তনের একটি পূর্ণ বিকাশ তত্ত্ব প্রস্তাব করেন।
ল্যামার্ক একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসাবে তার বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন শুরু করলেও ১৭৯৩ সালে তিনি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর বিশেষজ্ঞ হিসাবে Musee National d’Histoire Naturelle-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপকদের একজন হয়ে ওঠেন। কৃমি, মাকড়সা, মলাস্কা এবং অন্যান্য হাড়বিহীন প্রাণীদের শ্রেণীবিভাগ করার বিষয়ে তার কাজের মাধ্যমে তিনি তার সময়ে অন্যদের তুলনায় অনেক এগিয়ে ছিলেন।
ল্যামার্কবাদ
লামার্কের তত্ত্ব , যা লামার্কিজম নামে পরিচিত, এটি সাধারণত অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার তত্ত্ব হিসাবেও পরিচিত কারণ তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে কোনও প্রাণীর জীবনকালে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চলে যাবে। জিরাফের দীর্ঘ গলার মতো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি কীভাবে বিকশিত হয়েছিল সে সম্পর্কে লামার্ক এবং ডারউইনের খুব আলাদা ধারণা ছিল।
ল্যামার্কের সূত্রাবলী
1. পরিবেশের প্রভাব- পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে জীবের স্বভাব ও দেহেরও পরিবর্তন ঘটে ।
2. ব্যবহার ও অব্যবহার এর সূত্র :পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার উদ্দেশ্যে জীব দেহের কোন কোন অঙ্গের বেশি মাত্রায় ব্যবহার ঘটে এবং কোন কোন অঙ্গের কম ব্যবহার হয় ফলে বেশি ব্যবহারের ফলে কিছু অঙ্গ ক্রমশ সবল হয় আর অব্যবহৃত অঙ্গ গুলি দুর্বল ও অবলুপ্ত হয়। [1]Weber, A. S. (2000). Nineteenth-Century Science: An Anthology. Broadview Press. p.55
3. অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার সূত্র- পরিবেশের প্রভাবে জীবের জীবন কালে যেসব বৈশিষ্ট্য অর্জিত হয় তা পরবর্তী প্রজন্মের জীবের সঞ্চারিত হয়।
4. প্রজাতির উৎপত্তি – ল্যামার্কের তত্ত্ব অনুযায়ী অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরন এর ফলে এবং প্রতিটি জনু তে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য অর্জিত হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে একটি প্রজাতি থেকে আরেকটা নতুন প্রজাতি সৃষ্টি হয়।
ল্যামার্কের মতবাদ এর বিপক্ষে যুক্তি
(i) বিজ্ঞানী ভাইস ম্যান ৫ প্রজন্ম ধরে ৬৮ টি সাদা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে ল্যামার্কের মতবাদ কে নাকচ করেছেন তিনি একজোড়া দম্পতির লেজ কেটে দিয়ে তাদের প্রজনন ঘটালেন, লেজকাটা ইঁদুর দিয়ে তাদের প্রজনন ঘটাতে থাকলেও লেজবিহীন কোনোইঁদুর জন্ম নেয়নি এমনকি ক্রুটিযুক্ত লেজ কিংবা ছোট লেজ নিয়েও কোনো ইঁদুর জন্মায়নি। [2]Tollefsbol, Trygve (2017). Handbook of Epigenetics: The New Molecular and Medical Genetics. Elsevier Science. p. 234.
প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া দ্বারা বিবর্তন
ল্যামার্ক প্রস্তাব করেছিলেন যে জীবন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বর্তমান রূপ নিয়েছে, অলৌকিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়। ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদদের জন্য এটি ছিল আতঙ্কজনক। তারা বিশ্বাস করত যে প্রকৃতি ঈশ্বরের উপকারী নকশার প্রতিফলন। তাদের কাছে মনে হলো ল্যামার্ক দাবি করছেন যে এটি অন্ধ আদিশক্তির ফল। ল্যামার্কের ধারণা ধর্মীয় কারণে কেউ কেউ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং কুভিয়েরের মত বিজ্ঞানীরা ল্যামার্কের যুক্তিকে অনুমানমূলক ধারণা এবং প্রমাণের অভাবের জন্য বাতিল করে দিয়েছিলেন , ল্যামার্ক ১৮২৯ সালে দারিদ্র্যতায় মারা যান।
বিবর্তন নিয়ে অন্যান্য লেখাঃ বিবর্তনবাদ – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
ফেইসবুকঃ Faith & Theology | Facebook
References