মিউটেশন কি
মিউটেশন কি ।। বিবর্তনবাদ
মিউটেশন কি বা মিউটেশন কাকে বলে ?
কোষের DNA মলিকুলের ভাংগন বা স্থান পরিবর্তনকে মিউটেশন বলে। এই কারণেই DNA সিকোয়েন্স ভেংগে যায়।কোন কোন সময় এর নিঊক্লিওটাইডগুলো এক স্থান হতে অপরস্থানে সরে গিয়ে মিঊটেশন ঘটায়।এ ভাংগন মুলত বাহ্যিক কারন যেমন রেডিয়েশন অথবা রাসায়নিক কারনেই হয়ে থাকে।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন বেশিরভাগ মিউটেশনই প্রানীদেহের জন্য খারাপ। এটা বিজ্ঞানে একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে মিঊটেশন প্রানীদেহের ক্ষতিসাধন করে। এটা জিনের উপাদানে পরিবর্তন ঘটায়, অথবা জিনের কার্যক্রমে বাধাদান করে, অথবা কোন প্রতিক্রিয়াই ঘটে না। ড্রসোফিলা মাছিতে করা গবেষণার উপর প্রস্তাব করা হয়েছে যে, মিঊটেশনে যদি জিন কর্তৃক সৃষ্ট প্রোটিনে পরিবর্তন আসে, তবে তা ক্ষতিকারক হতে পারে, যেখানে উক্ত মিঊটেশনের ৭০ শতাংশেই ক্ষতিকারক প্রভাব থাকে, এবং বাকি অংশ নিরপেক্ষ বা সামান্য উপকারী হতে পারে। [1]Prevalence of positive selection among nearly neutral amino acid replacements in Drosophila | PNAS
মিউটেশন এর প্রকারভেদ
মিঊটেশন সাধারণত পাঁচ ধরনের হয়। যথা:
১. Insertion অন্তর্যোজন, Deletion/অপনোদন ( এখানে কোন ডিএনএ এর ভিতরে অন্য কোন নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্সের প্রবেশ ঘটে অথবা কোন নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স বাদ পড়ে যায়)
২. Duplication (এখানে কোন নিউক্লিওটাইড সিকুয়েন্সের অনুরূপ কপি তৈরি হয় এবং ডি এন এর সাথে জুড়ে যায়)
৩. Translocation বা পরা-স্হানান্তর: এখানে দুইটি ডিএনএ স্ট্যান্ড এর মধ্যে কোন নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্সের অংশ বিনিময় হয়।
৪. Inversion: এখানে একটি নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্স ভেঙে যায় এবং সে পূর্বে যে অবস্থায় ছিল ঠিক তার বিপরীত অবস্থায় পুনরায় ডি এন এ এর সাথে লেগে যায়।
৫. Nondisjunction: মিয়োসিস কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোম সমুহ যদি ঠিক ভাবে আলাদা হতে না পারে তখন এ ধরনের প্রকরণ দেখা যায়।
৬. ফ্রেমশিফট (Frameshift) : জীবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রোটিনের সাংকেতিক লিপি হল ‘জিন’ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিন ডিএনএ’তে অবস্থিত, কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে আরএনএ’তে); যা জীবের বংশগতির একর। একেকটি ‘জিন’ একেকটি প্রোটিনের সাংকেতিক লিপি। কয়েকটি ‘কোডন’ মিলে জিন গঠিত। কোডন হচ্ছে তিনটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈবক্ষার (hase)-এর মিলিত রূপ যেমন ACE কিংবা GCA একেকটি কোডন (উদাহরণস্বরূপ ACT কিংবা GCA) একেকটি অ্যামিনো অ্যাসিডের সাংকেতিক লিপি; আবার একাধিক কোডন দ্বারা একই অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। যাহোক, ডিএনএ অনুক্রমে সন্নিবেশন (Insertion) বা বিলোপন (Deletion) ঘটলে কোডনের গঠনে পরিবর্তন আসে, অ্যামিনো অ্যাসিডের পরিবর্তন হয় এবং এতে জিনের নির্দিষ্ট কার্যক্রমেরও বদল ঘটে।
মিউটেশনের কারণ
মিঊটেশন নানা কারণে হতে পারে, যেমন ডিএনএ তে ডুপ্লিকেশনের সময় একই ধরনের অন্য কপি তৈরি হতে পারে, আয়নাইজিং বিকিরণ যেমন গামা বিকিরণের ফলে মিউটেশন হতে পারে, আবার আল্ট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন এর ফলে ডিএনএ- তে দুটি নিউক্লিওটাইড থাকা সাইটোসিন এবং থাইমিন এর বেইস পরিবর্তিত হয়ে মিউটেশন হতে পারে। মিউটেশন মূলত ২ প্রকারের।
Chromosomal Mutation
ক্রোমোজোমাল মিউটেশনঃ ক্রোমোজোমাল অংশের পুনরাবৃত্তি বা ক্রোমোজোমের অতিরিক্ত অংশের উপস্থিতিতে একটি ক্রোমোজোমের ভাঙা টুকরো একটি হোমোলোগাস বা নন-হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের সাথে সংযুক্ত হতে পারে যাতে কিছু জিন সমস্ত ক্রোমোসোমাল অঞ্চলের একাধিক কপিতে থেকে যেতে পারে।
ইন্টারস্টিশিয়াল ডিলিশন: একটি ইন্ট্রা-ক্রোমোসোমাল ডিলিটেশন এখানে ক্রোমোজোম থেকে ডিএনএর একটি অংশকে সরিয়ে দেয়, যার ফলে পূর্বের দূরবর্তী জিনগুলিকে প্রকাশ পায়। ক্রোমোসোমাল ট্রান্সলোকেশন : এক্ষেত্রে ননহোমোলোগাস ক্রোমোজোম থেকে জেনেটিক অংশের আদান-প্রদান হয়।
Gene Mutation
জিন মিউটেশন– এখানে জিনের রূপ পরিবর্তন হয়। ফলে, জিনটা ভিন্ন প্রোটিন উৎপাদন করা শুরু করে। এটাও কয়েকভাবে হয়, সাবস্টিটিউশনে দুইটা ভুল বেস জোড়া লেগে যায়, ইনসার্শনের একটা অতিরিক্ত বেস চলে আসে আর ডিলেশনে একটা বেস বাদ হয়ে যায়। এভাবে জিনের মধ্যে ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে দিয়ে মিঊটেশন চলতে থাকে।
মিউটেশন প্রাণীদেহের দু জায়গায় হতে পারে। ১. জননকোষে ২. দেহকোষে
জননকোষে মিউটেশন
পিতা-মাতার গ্যামেট তৈরি হওয়ার সময় ( মিয়োসিস বিভাজনের সময়) হতে পারে। গ্যামেট মিলিত হওয়ার পর জাইগোটে ক্রোমোজোম জোড়া লাগবে, সেখানে মিউটেটেড ক্রোমোজোম বা জিন আছে,ফলে পরবর্তী যতগুলো কোষবিভাজন হবে,প্রত্যেক কোষে ওই মিউটেটেড ক্রোমোজোমের কপিই থাকবে। ফলে, সন্তান যখন আবার বংশবৃদ্ধি করবে, তার দেহ থেকে যে ক্রোমোজোমগুলো যাবে, সেখানে উক্ত মিউটেটেড ক্রোমোজোম চলে যাবে। আর মিউটেশনর ফলে যে ভিন্ন এলিল তৈরি হয়েছিলো, সেটা ডমিনেন্ট হলে সেই বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাবে। একে বলে জার্মলাইন মিউটেশন, যেটা জাইগোট তৈরির আগে হয়। এটার ফলে সাধারণত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়ে থাকে।
দেহকোষে মিউটেশন
দেহকোষে মিঊটেশন ঘটলে তাকে বলে সোমাটিক মিঊটেশন। এটা জাইগোট তৈরির পরে, দেহকোষে হয়। যেমন ক্যান্সার হলে প্রথমে একটা একটা কোষে হবে, তারপর সেই ডিএনএ নিজের কপি তৈরি করবে ও ক্যান্সার ছড়িয় দেবে। কিন্তু সারা দেহের সব কোষে যেহেতু এই মিউটেশন হয়নি তাই এই মিউটেটেড জিন বংশপরম্পরায় অন্য কারো কাছে চলে যাবেনা। মূল দেহকোষে আগে থেকেই ক্রোমোজোমে সব তথ্য রয়ে গেছে, সেখানে কিছু পরিবর্তন হয়নি। ফলে সন্তান উৎপাদনের সময় ক্যান্সারের তথ্যওয়ালা জিন গ্যামেটে যাবেনা।
রেফারেন্সঃ 2. mutation | Learn Science at Scitable”. Nature. Nature Education. Retrieved 24 September 2018.
বিবর্তন সম্পর্কে অন্যান্য লিখাগুলো পড়ুনঃ বিবর্তনবাদ – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
References