মানুষের বিবর্তনের সম্ভাবনা ( ওয়েটিং টাইম প্রবলেম)
বিবর্তনবাদ
মানুষের বিবর্তনের সম্ভাবনা
আমরা পূর্বে মিউটেশন নিয়ে জেনেছি। মিউটেশনের প্রকারভেদ এবং কোথায় ঘটে তা নিয়েও জেনেছি। মিউটেশন ঘটে সোমাটিক সেল এবং গেমেটিক সেলে। যেহেতু জার্মলাইন মিউটেশন প্রজন্মান্তরে পাস হয় সেক্ষেত্রে তা নিয়েই আলোচনা করব। জিন মিউটেশন প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে- পয়েন্ট মিউটেশন আর ফ্রেইমশিফট মিউটেশন।
পয়েন্ট মিউটেশন source: yourgenome
পয়েন্ট মিউটেশনঃ পয়েন্ট মিউটেশনে ডিএনএর বেস সিকোয়েন্সে পরিবর্তন আসে। এটি তিন ধরনের।
সাইলেন্ট মিউটেশনঃ এই ধরনের মিউটেশনে প্রোটিন তৈরিকারী জেনেটিক কোডের তিনটি বেসের একটি যদি পরিবর্তিত হয়েও যায়, তাহলেও কিছু ঘটে না। তাই সাইলেন্ট মিউটেশন হলো ফলাফল নিরপেক্ষ মিউটেশন।
মিসসেন্স মিউটেশনঃ এই মিউটেশনে জেনেটিক কোডের বেসে পরিবর্তন হয় এবং এর ফলে কোডটির যে প্রোটিন তৈরি করার কথা ছিল, তা না তৈরি করে সম্পূর্ণ আলাদা একটি প্রোটিন তৈরি করে।
ননসেন্স মিউটেশনঃ নামটা খুব মজার, তাই না? এই মিউটেশনে সংঘটিত কাণ্ডকারখানার সাথে নামের বেশ ভালোই মিল আছে। এক্ষেত্রে প্রোটিন উৎপাদনকারী কোনো জেনেটিক কোডের বেসে পরিবর্তনটা হয় বেকুবের মতোই। বেসে পরিবর্তন হয়ে ভিন্ন কোনো প্রোটিনের জন্ম দিলে তা-ও কথা ছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে বেসের পরিবর্তন তৈরি করে স্টপ কোডন।
ফ্রেইমশিফট মিউটেশনঃ
ফ্রেইমশিফট মিউটেশনে আস্ত একটা নিউক্লিওটাইড যোগ হয় বা বিলুপ্ত হয়। এটি দুই ধরনের।
Source: pair.com
ইনসার্শনঃ এই মিউটেশনে জিনে একটা বা দুইটা নিওক্লিওটাইড উড়ে এসে জুড়ে বসে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রোটিন ঠিকমতো তৈরি হতে পারে না।
ডিলিশনঃ এই মিউটেশনে জিন থেকে দু-একটা নিওক্লিওটাইড গায়েব হয়ে যায়। কখনো কখনো খোদ জিনটাই গায়েব হয়ে যেতে পারে।
তো যাইহোক বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে বড়-বিবর্তনের উদাহরণ হল: স্পঞ্জ-এর ক্ষেত্রে নিডোসাইট নামক কোষের আগমন, সরিসৃপে পাখার আগমন, মাছের পাখনা থেকে পা-এর আগমন ইত্যাদি। এগুলোকেই ম্যাক্রো বিবর্তন হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
Simpler pre existing form থেকে নতুন form of life ( নতুন কোনো কার্যকরী অঙ্গ) তৈরি করতে হলে আমাদের প্রয়োজন প্রোটিন, এবং সেই প্রোটিন এর প্রয়োজন ইনফরমেশন, তার কাঠামোর জন্য, যে ইনফরমেশন সংরক্ষিত থাকে ডিএনএ তে। অর্থাৎ জীবন সৃষ্টি মূলত ইনফরমেশন প্রব্লেম। আমাদের ইনফরমেশন প্রয়োজন জীবন গঠনের জন্য। বায়োলজিক্যাল কনটেক্সএ ইনফরমেশন বলতে কি বোঝায়? আমরা জানি ডিএনএ মুলত জীবনের সফটওয়্যার। জীববিজ্ঞানীদের মতে, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এবং বায়োলজিক্যাল ওয়ার্ল্ড প্রায় একই। কম্পিউটার এ যেমন বাইনারি কোড 0 এবং 1 ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনই ডিএনএ তে ব্যবহৃত হয় চারটি বেস (A T C G) যেখানে মানবজীবনের সব তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেন ” DNA is more advanced than any software ever created.
প্রোগ্রাম বা কোড অবশ্যই কোনো বুদ্ধিমত্তা দ্বারা লিখিত, কোড যত বেশি কমপ্লেক্স হবে এর অর্থ তত বেশি ইন্টেলিজেন্ট হবে। যদি ডিএনএ মানুষের তৈরি সকল সফটওয়্যার এর থেকে আরও বেশি কমপ্লেক্স হয় তাহলে এই কমপ্লেক্স কোড কোথা থেকে এলো?
বস্তুবাদী ইভোলুশনারি বায়োলজিস্টরা বলে, New Darwinism অনুযায়ী নতুন জেনেটিক্স ইনফরমেশন এর উদ্ভব হয় র্যান্ডম মিউটেশন এর মাধ্যমে। অর্থাৎ যখন ডিএনএ মলিকিউল কাঠামোর নিউক্লিওটাইড বেস এর এরেজমেন্ট এ কোনো র্যান্ডম পরিবর্তন হয়, বিবর্তনবাদীদের মতে যখন এই র্যান্ডম চেঞ্জ বা মিউটেশন গুলো উপকারী হয় তখন তা সংরক্ষিত থাকে। এবং এভাবে অসংখ্য মিউটেশন হয় তখন এই মিউটেশন গুলো একত্রিত ভাবে জীবদেহের বাহ্যিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটায় অর্থাৎ Morphological change.
সফটওয়্যার সম্পর্কে আমরা যা জানি যে সফটওয়্যার এর যেকোনো সেকশনের যেকোনো ফাংশনাল কোড অথবা ফাংশনাল ইনফরমেশন এ সামান্যতম র্যান্ডম পরিবর্তনও শুধুমাত্র অবনতিই ঘটাবে। একই বিষয় র্যান্ডম মিউটেশন এর জন্য। ডিএনএ তে সংরক্ষিত ইনফরমেশন গুলো মুলত টাইপোগ্রাফিক, বা ডিজিটাল কোড। আর এখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ লক্ষ গুন বেশি সঠিক হওয়ার থেকে। যে কিভাবে ডিএনএ র বেস গুলো সাজানো প্রয়োজন যাতে তা কার্যকরী হয় এবং কার্যকরী প্রোটিন তৈরি করতে পারে। এবং তাই যখন ডিএনএ তে র্যান্ডমলি চেঞ্জ ঘটবে তখন অপরিহার্য ভাবেই নন ফাংশনাল হয়ে পড়বে। ফান্ডামেন্টালি নতুন কিছু তৈরি করা তো দুরের কথা। এখন এটার সম্ভাবনা কতটুকু যে র্যান্ডম চেঞ্জ নতুন কিছু তৈরি করবে? বা কতটা অসম্ভব একটি ফাংশনাল প্রোটিন মেশিন তৈরি করা? এই সমস্যার সমাধানে র্যান্ডম মিউটেশন কে Combinatorial Problem এর মুখোমুখি হতে হবে। Combinatorial term টি নির্দেশ করে The number of possible ways. সম্ভাব্য সংখ্যক উপায়।
ধরুন একটি চোর একটি সাইকেল চুরি করার পায়তারা করছে। সাইকেল চুরির মধ্যে একমাত্র বাধা হচ্ছে সাইকেলটির চার ডায়াল বিশিষ্ট একটি লক। যার প্রতিটি ডায়াল ০ থেকে ৯ সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত। তবে লকটি একটি মাত্র সঠিক কম্বিনেশন দ্বারাই খুলবে। লকটিতে যে অসংখ্য নিউমেরিক ক্যারেক্টার আছে তা অসংখ্য ভাবে সাজানো যাবে যা বাইক টিকে ক্লোজড রাখবে। এখন সেই চোরটি যে সঠিক কম্বিনেশন টা জানে না সে শুধু অনুমান করতে পারবে। যে সঠিক কম্বিনেশন টি কি হতে পারে। অর্থাৎ 10×10×10×10 = 10000 combinations. এই দশ হাজার কম্বিনেশন এর মধ্যে মাত্র একটি সঠিক। আর চোরটিকে সেই একটি সঠিক কম্বিনেশনই খুজে বের করতে হবে। এবং এই দশ হাজার কম্বিনেশন যথেষ্ট একটা চোরকে হারানোর জন্য। তবে একটি উপায় আছে যদি চোরটি যথেষ্ট সময় পায় অনেক কম্বিনেশন ট্রায় করার জন্য তাহলে হয়তো সঠিক কম্বিনেশন টি খুজে পাবে By chance. উদাহরণস্বরুপ যদি প্রতিটি কম্বিনেশন ট্রায় করতে চোরটির ১০ সেকেন্ড সময় লাগে তাহলে সে ১৫ ঘন্টায় প্রায় ৫ হাজার কম্বিনেশন ট্রায় করতে পারবে সেক্ষেত্রে সে প্রায় অর্ধেক কম্বিনেশন ট্রায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ব্যার্থ হওয়ার তুলনায় ।
এখন কল্পনা করুন তার থেকেও অধিক কম্পলিকেটেড একটি লক যার ডায়াল সংখ্যা ১০। অর্থাৎ এখানে ১০০০০ হাজার কম্বিনেশন এর পরিবর্তে আছে 10^10 = 10 Billion combinations. এই ১০ বিলিয়ন সম্ভাবনার মধ্যে মাত্র একটি সঠিক কম্বিনেশন যা লকটি খুলতে সক্ষম। এখন যদি চোরটি অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে সারাজীবন এই লক খুলতেই থাকে তবুও এই সম্ভাবনা বেশি যে সে ব্যার্থ হবে কারণ ১০ বিলিয়ন সম্ভাবনা থেকে র্যান্ডমলি ১ টি কম্বিনেশন বের করা এই সীমিত সময়ের মধ্যে প্রায় অসম্ভব। ঠিক একই ভাবে এটা কতটা নির্ভরযোগ্য র্যান্ডম মিউটেশন ডিএনএর এমন নতুন সিকুয়েন্স তৈরি সক্ষম যা সঠিক নির্দেশনা দিতে পারবে নতুন কার্যকরী প্রোটিন তৈরিতে। এটাও মনে রাখা দরকার বিবর্তন এর প্রসেসিং এর সময় সীমিত এবং সম্ভাবনা অসংখ্য।
Douglas Axe, Phd in Chemical Engineering তিনি এবং তার সহযোগীরা ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটি তে প্রায় ১২ বছর এই বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং তারা প্রশ্নের একটা আনুমানিক জবাব দিতে সক্ষন হোন। এই এক্সপেরিমেন্ট অনুযায়ী এমন একটি ডিএনএ সিকুয়েন্স যা গড়ে ১৫০ টি এমিনো এসিডের ফাংশনাল প্রোটিন জেনারেট করতে পারে তার সম্ভাবনা ১০^৭৭।
অর্থাৎ প্রায় ১০^৭৭ এমিনো এসিডের একটি সেট রয়েছে যা ত্রিমাত্রিক প্রোটিন আকারে ভাজ হবে না। যা বায়োলজিক্যাল ফাংশান পারফর্ম করতে সক্ষম। প্রত্যেকটি 10^77 incorrect sequences এর জন্য রয়েছে মাত্র একটি correct sequence. অর্থাৎ এমন একটি লক কল্পনা করুন যাতে রয়েছে ৭৭ টি ডায়াল এবং প্রতিটি ডায়াল এ ১০ ডিজিট। এখন আপনাকে এই ৭৭ টি ডায়াল থেকে সঠিক কম্বিনেশনটি খুজে বের করতে হবে!! অর্থাৎ ৭৭ টি ডায়ালের প্রত্যেকটি ডায়ালে সঠিক ডিজিট টি সেট করতে হবে। তবেই লক টি খোলা যাবে। 10^77 সংখ্যাটি কত বড় তা অনুধাবন করতে জেনে নিন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মোট এটম এর সংখ্যা হচ্ছে আনুমানিক 10^65. এতো বিশাল সংখ্যক সম্ভাবনার মধ্যে সীমিত সময়ের মধ্যে র্যান্ডমলি কি একটি ফাংশনাল প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব? মনে রাখবেন Random search and time is limited. একটি প্রাণী তৈরী করতে হাজার হাজার ফাংশনাল প্রোটিন প্রয়োজন। আর ফাংশনাল প্রোটিন কত দুর্লভ তা আমরা উদাহরণ সহ দেখেছি। আরেকটু কল্পনা করুন একজন নভোচারী কে স্পেসে ছেড়ে দেওয়া হলো এবং বলা হলো যে গোটা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে যত এটম আছে তার মধ্যে সঠিক এটম টি তুলে আনতে হবে। একটি ফাংশনাল প্রোটিন এর থেকেও অনেক গুন বেশি জটিল এবং দুর্লভ। অথচ জটিল প্রাণ, উদ্ভিদ, অথবা প্রাণী, যেকোন প্রাণ গঠনে হাজার হাজার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রোটিন মেশিন প্রয়োজন। এর মধ্যে অনেক প্রোটিন আছে যা শুধুমাত্র ঐ জীবনের জন্যই ইউনিক। মুলত পুরো বিষয়টি improbable নয় বরং impossible. কারণ পৃথিবীতে প্রাণের ইতিহাস আনুমানিক ৩.৮৫ বিলিয়ন বছর। র্যান্ডম সার্চ এর জন্য এই সময় যথেষ্ট কম। মিউটেশন সিলেকশন মেকানিজম কোনো উপায় নয় যা নতুন বায়োলজিক্যাল ইনফরমেশন জেনারেট করতে পারে।
পপুলেশন জেনেটিক্সের পর্যায়ে কিছু গবেষণা আছে যা মাইক্রোইভলুশন থেকে ম্যাক্রোইভলুশন হওয়ার হার্ডলগুলোকে প্রকাশ করেছে। জিন ডুপ্লিকেশন হল নতুন ফাংশন যুক্ত জিন তৈরীর একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে। অর্থাৎ, একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯ (১)। অর্থাৎ, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া অন্য কোন প্রাণীতে এই ধরনের পরিবর্তন আসা প্রায় অসম্ভব।
ম্যালেরিয়া জীবানু Plasmodium-এ ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট হতে প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে মিউটেশন লাগে। মাইকেল বিহে তার বাই Edge of Evolution (২)-এ হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, একটি প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন (দুটি মিউটেশন একই সাথে) হতে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। ফলে, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। অর্থাৎ, র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাওয়া যাবে না। এন গজার এবং ডগলাস এক্স, পরীক্ষা করে দেখেছেন একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার কমপেক্ষে সাতটি বা ততোধিক একই সাথে সংঘটিত মিউটেশন (৩) মানব বিবর্তনের অন্যতম বিষয় হচ্ছে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি অর্থাৎ জেনাস homo এবং জেনাস pan কাছাকাছি গোত্র হোমিনিন থেকে আলাদা হয়ে দু ভাগে ভাগ হয়েছে। হোমিনিন গোত্রের একদল প্রাণী হয়েছে আজকের আধুনিক যুগের মানুষ। হোমিনিন গোত্রথেকে জেনাস homo শুরু হয়েছে australopithecus দ্বারা এবং একই গোত্র হোমিনিন থেকে শিম্পাঞ্জির জেনাস pan বিবর্তিত হয়েছে।
ম্যাক্রো ইভোলিউশন এর মাধ্যমে কোনো পপুলেশনের জেনাস চেইঞ্জ হতে হলে প্রয়োজন নতুন বডি প্ল্যান্টস। নতুন দৈহিক নকশা বা অঙ্গ তৈরি হতে হলে প্রয়োজন নতুন নতুন ফাংশনাল প্রোটিন। প্রোটিনের জন্য প্রয়োজন এমিনো এসিডের সুনির্দিষ্ট বিন্যাস যা কার্যকরী হবে এবং এর জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট ইনফরমেশন। মাইক্রো বিবর্তনীয় প্রক্রিয়াগুলোর দ্বারা এলিল ফ্রিকোয়েন্সির পরিবর্তন কিংবা জিনপুলে বৈচিত্র্য তৈরি হলেও এর দ্বারা নতুন কোনো তথ্য মানুষের জিনে যুক্ত হয়না। মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনোমের পার্থক্য প্রায় ৫% অর্থাৎ প্রায় ১৫০ মিলিয়ন নিউক্লিওটাইড আলাদা৷ এসকল নিউক্লিওটাইড এর পার্থক্য যদি ম্যাক্রো বিবর্তন এর মাধ্যমে এসে থাকে তবে এর জন্য ঠিক কতটা সময় প্রয়োজন? যেহেতু একেকটি নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং মানেই হচ্ছে নতুন জেনেটিক ইনফরমেশন সেক্ষেত্রে ম্যাক্রো বিবর্তন অনুযায়ী একক সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জি আলাদা হলে তাদের নিউক্লিওটাইড এর পার্থক্য হয়েছে মোটামুটি ৬ মিলিয়ন বছরের মধ্যেই। ( নিউ ডারউইনিজম অনুযায়ী)৷ কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব? ১৫০ মিলিয়ন নিউক্লিওটাইড প্রাকৃতিক নির্বাচন কিংবা মিউটেশনের মাধ্যমে শুন্য থেকে উদ্ভুত হতে পারে বলে পৃথিবীর কোনো জীববিজ্ঞানী মনে করেননা৷ বরং তারা হিসেব করেন পূর্বে বিদ্যমান জিন থেকে নতুন জিন উৎপন্ন হয়। যদি পূর্বে বিদ্যমান জিনে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন সংগঠিত হয় তবে পূর্বে বিদ্যমান জিন থেকে নতুন জিন উৎপন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে পপুলেশন জেনেটিক্স এ এই মিউটেশনের মাধ্যমে ইনফরমেশন জেনারেট হওয়ার বিষয়টিকে সিমুলেশনের মাধ্যমে হিসেব করা হয়, নিউক্লিওটাইড এর নাইট্রোজেন বেইস A, T, C, G এর ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন এর মাধ্যমেই কেবল নতুন নিউক্লিওটাইড যুক্ত হওয়ার মতো ইনফরমেশন আসতে পারে এক্ষেত্রে প্রয়োজন পয়েন্ট মিউটেশন। যদিও মানুষের মধ্যে নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হওয়ার মতো মিউটেশন অত্যন্ত কম প্রায় ১০ কোটিতে একটা মাত্র। ২০১৫ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করেছেন সেখানে তারা কেবলমাত্র ৬-৮ টি নিউক্লিওটাইড এর উৎপত্তির সময়কাল নিয়ে হিসেব নিকেশ করেছেন। তারা যা করেছেন তা হলো প্রতি প্রজন্মে মানুষের পয়েন্ট মিউটেশন রেট হিসেব করেছেন, ১০,০০০ মানুষের একটি জনসংখ্যা ধরে নিয়েছেন। নিউক্লিওটাইড এ মিউটেশন ঘটে সেখানে পুনরায় মিউটেশনের মাধ্যমে নিউক্লিওটাইড প্রতিস্থাপিত হয়ে ফিক্সড হলে এরপর নতুন কোনো নিউক্লিওটাইড তৈরি হয় আর এই প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন দুই বা ততোধিক কো অর্ডিনেট মিউটেশন। অন্যান্য গবেষণার হিসেবে দুটো কো অর্ডিনেট মিউটেশন হয়ে কোনো পপুলেশনে ফিক্সড হতে সময় লাগবে প্রায় ২১৬ মিলিয়ন বছর! তবে উক্ত গবেষণায় মিউটেশন এর হার সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করেও দুটো কো অর্ডিনেট মিউটেশনের জন্য বরাদ্দ সময় হলো ৮৪ মিলিয়ন বছর! যা মানব শিম্পাঞ্জির আলাদা হওয়া বা বিবর্তনের মাধ্যমে উদ্ভব হওয়ার সময়ের প্রায় দশগুণ! এবং এই মিউটেশনের মাধ্যমে সম্পুর্ন একটি নিউক্লিওটাইড পেতে সময় লাগবে ১০০ মিলিয়ন বছর! মাঝারি সাইজের ৮ টি নিউক্লিওটাইড স্ট্রিংয়ের উৎপত্তির জন্য সময় প্রয়োজন প্রায় ১৮০০ কোটি বছর! যা মহাবিশ্বের সময়সীমার থেকেও ৪০০ কোটি বছর বেশি। অথচ এইরকম একটা নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং এর জন্য গড়ে ১০২৪ টা মিউটেশন প্রয়োজন যার সময়সীমা কল্পনাতীত। যদি ধরেও নেই ১ টি নিউক্লিওটাইড ১০০ মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে আসতে পারে তবে ১৫০ মিলিয়ন নিউক্লিওটাইড এর পার্থক্য তৈরির জন্য সময় প্রয়োজন 10^16 বছর! অসম্ভব এর উপর অসম্ভব। যাইহোক অনেকে মনে করতে পারেন এই গবেষণায় অন্যান্য মেকানিজম কে কি আমলে নেয়া হয়নি? এটা বললে তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে, তারা মিউটেশন রেট বৃদ্ধি করে, পপুলেশন সাইজ বড় করে, ফিক্সেশন এর সময়কে হাতে নিয়ে চেষ্টা করেছেন সময় কে সংক্ষিপ্ত করতে তবুও তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টায় ফলাফল ৮৪ মিলিয়ন বছর। এখানে পয়েন্ট মিউটেশন নিয়ে কথা বলার কারণ হলো নিউক্লিওটাইড স্ট্রিং এর জন্য পয়েন্ট মিউটেশন ই প্রয়োজনীয় অন্যগুলো নয় তাই সেসব মিউটেশনের ফিক্সেশন কে নেয়া হয়নি সেগুলোকে গবেষণায় নেয়া হলে সময় আরও বৃদ্ধি পেতো। দ্বিতীয়ত, মাইক্রো বিবর্তন এর প্রক্রিয়াগুলো এই ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভুমিকা রাখে না তাই সিলেকশন প্রেসার, জেনেটিক শাফলিং কে এই রিসার্চ এ নেয়া হয়নি। সুতরাং অন্যান্য মেকানিজম না নিয়ে রিসার্চ করায় সময় এতো বেশি লেগেছে এমন কথা বলার সুযোগ নেই। (৪)
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ম্যাক্রো বিবর্তন এবং মানব বিবর্তন দুটোই বৈজ্ঞানিক প্রমাণের তুলনায় দর্শনের উপর বেশি ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। সাদৃশ্যতা সাধারণ পূর্বপুরুষকে প্রমাণ করে না। মাইক্রো বিবর্তনের প্রক্রিয়ার দ্বারা ম্যাক্রো বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করার কোনো উপায় নেই। নব্য ডারউইনবাদ ভেঙ্গে পড়েছে এবং মানব বিবর্তন অসম্ভব এর উপর অসম্ভব।
পরিশিষ্ট
জীবজগতের বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য আমাদের সবাইকে পুলকিত করে এবং জীবজগত সম্পর্কে আমাদের কৌতুহলী করে তোলে। আমরা জানতে চাই এবং জীবজগতের এই বৈচিত্র্য কে ব্যাখ্যায় বিবর্তন তত্ত্বের উৎপত্তি ঘটে। মাইক্রো বিবর্তন ঘটে এবং তা আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারি, ল্যাব এ এ নিয়ে কাজ ও করতে পারি। তবে মাইক্রো বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় অনুমিত ম্যাক্রো বিবর্তন ঘটতে পারে না। এছাড়াও সাদৃশ্য কেবল সাধারণ পূর্বপুরুষের জন্য ব্যবহার করা যায়না স্রষ্টা চাইলে একই জিন দ্বারা সবাইকে সৃষ্টি করতেই পারেন। তবুও কেন বিবর্তন এবং সাধারণ পূর্বপুরুষকেই ধরে নেয়া হয়? কারণ বিজ্ঞান বস্তুবাদ অনুযায়ী তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। অর্থাৎ সকল কিছুর ব্যাখ্যায় জাগতিক ব্যাখ্যা দিতে হবে সেটা যত ষ্টুপিড ই হোক না কেন। যেমন স্কট টড ন্যাচার জার্নালে বলেন “, সকল উপাত্তও যদি কোনো বুদ্ধিমত্তা-সম্পন্ন স্রষ্টার দিকে ইঙ্গিত করে, তারপরও এমন অনুকল্প বিজ্ঞান থেকে বাদ দেওয়া হবে। কারণ এই ব্যাখ্যা প্রকৃতিবাদী নয়।” (৫) সুতরাং আমাদের উচিত বিবর্তন কে সাইন্টিফিক ওয়ার্কিং মডেল হিসেবে গ্রহণ করা এটা নিয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হাইপ না তোলা। এবং এ বিষয়ে সঠিকটা জানা।
রেফারেন্সঃ
1.http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1110/ps.04802904/full
2.Behe, Michael. The Edge of Evolution; pp. 143
3.https://bio-complexity.org/ojs/index.php/main/article/viewArticle/BIO-C.2011.1
4. Sanford, J., Brewer, W., Smith, F. et al. The waiting time problem in a model hominin population. Theor Biol Med Model 12, 18 (2015). https://doi.org/10.1186/s12976-015-0016-z
5. Scott C. Todd (1999), A view from Kansas on that evolution debate; Nature, vol. 401, p. 423
ভুল তথ্যঃ “মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনোমের পার্থক্য প্রায় ৫%”
সঠিক তথ্যঃ মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির জিনোমের পার্থক্য প্রায় ১-২%
Software এর কোড এবং DNA এর কোড তুলনীয় নয়। “যখন ডিএনএ তে র্যান্ডমলি চেঞ্জ ঘটবে তখন অপরিহার্য ভাবেই নন ফাংশনাল হয়ে পড়বে” কথাটি সঠিক নয় কেননা DNA তে random change (mutation) এর মাধ্যমেই microevolution ঘটে যা Laboratory তে প্রমাণিত সত্য এবং এতে সেই DNA মোটেও “নন ফাংশনাল” হয়ে যায় না।
Evolution কোনো random process নয়। Mutation randomly ঘটলেও অন্যান্য process, যেমন Natural Selection, একটি Non-random process। এটি বিবেচনায় আনলে সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া আপনি যে হিসাবগুলো দেখালেন তা শুধুমাত্র Neo-darwinism এর উপর ভিত্তি করে করা। এতে সর্বোচ্চ Neo-darwinism কে ত্রুটিপূর্ণ বলা যেতে পারে, তবে এটিকে Macroevolution এর বিরুদ্ধে প্রচার করা নেহায়েত বোকামি।
পেপার আদৌ পড়ে দেখেছেন? ওয়েটিং টাইম ম্যাক্রোর বিরুদ্ধে না? Neo-darwinism এর বিরুদ্ধে? অভিজিৎ রায়ের বই থেকে বিবর্তন না শিখে আরেকটু পড়াশোনা করে কমেন্ট করুন।
//ভুল তথ্য মানুষএবং শিম্পাঞ্জির জিনোমের পার্থক্য ৫% //
খুবই নিম্নমানের অশিক্ষিত না হলে এটা বলার কথা না। আর্টিকেলে ক্লিয়ারলি বলে দেয়া হয়েছে এটা নিউক্লিওটাইড এর হিসাব, নন কোডিং ডিএনএ এর নয়। আর এই হিসেব সাইট করা রিসার্চ পেপারেই আছে। না পড়ে লাফান কেন?
এসব লেখা পড়ার আগে বেসিক শিখে আসবেন। ফোন হাতে পেলেই ক্যাপ্রা হির্কাস এর মতো a,b,c না জেনে কমেন্ট করে নিজেকে অশিক্ষিত প্রমাণ করা থেকে বিরত থাকুন। প্রেভিয়াস এক আর্টিকেলেও সেইম গাধামি করে এসেছেন।