বেদে অপচিকিৎসা
পবিত্র বেদে অপচিকিৎসা
অনেক হিন্দু ভাই বোনদের প্রায়ই বলতে শুনেছি যে বেদ নাকি বিজ্ঞানের সাগর। বিশেষ করে চিকিৎসাশাস্ত্রে বেদের গুরুত্ব অপরিসীম।তো তাদের ধারণাটি কতটা প্রামাণিক তাই প্রমাণ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
তাদের দাবী বেদ যে চিকিৎসার মহাষৌধ তার জীবন্ত একটি প্রমাণ আয়ুর্বেদ। তাদের দাবী মূলত অথর্ববেদ থেকেই আয়ুর্বেদ শব্দটি এসেছে এবং অথর্ববেদ থেকেই আয়ুর্বেদের উৎপত্তি।
আর এ থেকেই আয়ুর্বেদের আজ পর্যন্ত আসা।
এ দাবী আজকের নয়।অনেক পুরানো বস্তাপচা প্রমাণ এটা। এটা ভাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে আয়ুর্বেদ এর সাথে বেদ শব্দটি থাকা।
প্রথমে বলি অথর্ববেদ থেকে আয়ুর্বেদ এসেছে এর কোনো প্রমাণ ই নেই। এমনকি স্বয়ং অথর্ববেদে আয়ুর্বেদ শব্দটি পর্যন্ত নেই।
এ যুক্তিতে তো তাহলে ‘পিশাচ বেদ’, ‘ইতিহাস বেদ’ এবং ‘পুরাণ বেদ’ এগুলোও এসেছে বেদ থেকে। (গোপথ ব্রাহ্মণ 1/10),(শতপথ ব্রাহ্মণ 13/4/3)। এগুলোও এসেছে বেদ থেকে।
আয়ুর্বেদ’ সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে চরক লিখেছেন:
জ্ঞানের যে শাখাটি এমন জিনিসগুলিকে বলে যা জীবনের জন্য উপকারী এবং যা ক্ষতিকারক তাকে বলা হয় ‘আয়ুর্বেদ’। (চরক অধ্যায় 1, 1/40)।
আয়ুর্বেদ’-এর প্রাথমিক গ্রন্থগুলি হল চরক সংহিতা এবং সুশ্রুত সংহিতা।
‘আয়ুর্বেদ’ শব্দটি সম্ভবত সর্বপ্রথম চরক সংহিতায় ব্যবহৃত হয়েছিল যেখানে বলা হয়েছে:
ব্রহ্মা ছিলেন আয়ুর্বেদের প্রবর্তক। তিনি তা শিখিয়েছিলেন যমজ অশ্বনী কুমারদের। তারা ইন্দ্রকে তা শিখিয়েছিল।….
এটি অন্যান্য বেদের থেকে উচ্চতর ছিল, কারণ এই শাখাটি জীবন সম্পর্কে জ্ঞান সরবরাহ করেছিল যা সমস্ত আনন্দ, আনন্দ এবং ভাল কাজের ভিত্তি ছিল….. (চরক 1-1-42)
তো যাই হোক এবার যদি তাদের দাবী মেনেও নেয়া হয় যে অথর্ববেদ থেকে আয়ুর্বেদ এসেছে তাও তারা না নিজেরা টিকতে পারবে আর না বেদকে টিকাতে পারবে।
এবার আমরা দেখবো বিভিন্ন রোগ অনুযায়ী বেদের দেয়া একটি অতি সংক্ষিপ্ত পেস্ক্রিপশন।
🔶পুরুষত্বহীনতার প্রতিকার:
অথর্ববেদ ৪/৪/১
ভাবার্থ: এটি সেই ভেষজ উদ্ভিদ যা একজন চিকিত্সক দ্বারা মাটি থেকে খনন করা হয় যার শক্তি হারিয়েছে তার ব্যবহারের জন্য। আমরা সেই প্রতিকারকারী উদ্ভিদটিও খনন করি যা স্নায়ু এবং অঙ্গকে উদ্দীপিত করে। (আচার্য বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)
🔶কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য গান:
অথর্ববেদ ২/৩২/৩
ভাবার্থ: আমি এই জীবাণুগুলিকে এমনভাবে চূর্ণ করি যেভাবে গ্রাসকারী প্রাণী, তার শিকারকে খায়, কাণ্ব হিসাবে, পাখিরা কীটগুলিকে টুকরো টুকরো করে গিলে ফেলে, যেমন ধ্বংসাত্মক আগুন সবকিছুকে ছাই করে দেয়। আমি সূর্যের রশ্মির মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করি। ( আচার্য বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)
🔶একটি তাবিজ দীর্ঘ জীবন, স্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি এবং খ্যাতি নিশ্চিত করে।
অথর্ববেদ ১০/৩/৪
ভাষ্যকার : আচার্য বৈদ্যনাথ
ভাবার্থ: এই বরাণ উদ্ভিদ যে কারো দ্বারা তৈরি কৃত্রিম যন্ত্র দ্বারা সৃষ্ট প্রভাব এবং রোগকে ধ্বংস করবে এবং এটি আপনাকে রক্ষা করবে, হে মানুষ! যে কোনো মানুষের দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত ভয় থেকে. এটি আপনাকে সমস্ত যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে যা রোগের শাখা। ( আচার্য বৈদ্যনাথ শাস্ত্রী)
🔶কাশি নিরাময়ের জন্য প্রার্থনা।
অথর্ববেদ ৬/১০৫/১
পদার্থ-১ (যথা) যেমন (মন) মন (মানস্কেতাই) (মনসা বুদ্ধিবৃত্তি) বুদ্ধিমত্তার বস্তু নিয়ে, (আশুমৎ) (পরপততি) দূরে চলে যায় (ইভ) একইভাবে হে (কাসে) শ্লেষ্মা রোগ (ত্বাম) তু ( মনসঃ প্রদ্যম) ) লক্ষ্য করে (অনুপ প্রপাত) মনের প্রগতিশীল সময়কাল দ্রুত-বুদ্ধিসম্পন্ন গতিশীল হও, আবেগ নিয়ে এই লোকের কাছ থেকে বেরিয়ে পড় এবং দূর দেশে চলে যাও। (পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার)
ভাবার্থ :যেমন মন দ্রুত দূর দেশে চলে যায়, তেমনি এই কাশিও যেন আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
🔶হার্টের সমস্যার সমাধান।
Rigveda ১/৫০/১১-১২
ভাবার্থঃ হে বিদ্বান চিকিৎসক সূর্যের মত তেজস্বী ও কল্যাণময়, সকল বন্ধুদের দ্বারা পূজিত, যেভাবে প্রফুল্ল সূর্য দিনে উদিত হয় এবং আপন প্রতাপে সর্বোচ্চ স্বর্গে আরোহণ করে, একইভাবে সমস্ত অন্ধকার দূর করে আলোর সৃষ্টি করে। আমার হৃদয়ের সমস্ত রোগ এবং আমার শরীরের হলুদতা এবং আমার অজ্ঞতা ও অসুস্থতা দূর করে যা সমস্ত সুখ হরণ করে। ( আচার্য ধর্মদেব বিদ্যামার্ত্যন্ড্য)
আমার সম্মানিত ভাই-বোনেরা, আপনারা যদি কখনো অসুস্থ হোন তাহলে যেনো কখনোই সজ্ঞানে এই মহাষৌধগুলো ট্রায় করে দেখবেন না। আর যারা ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে আছেন তারা তো বুঝতেই পারছেন।
হিন্দু ধর্ম – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
(2) Faith & Theology | Facebook