প্রাকৃতিক নির্বাচনঃ ডায়রেকশনাল সিলেকশন
বিবর্তনবাদ
সূচনাঃ
প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো জনগোষ্ঠীতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এটি ডারউইনীয় বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। যেকোন জনগোষ্ঠীতেই প্রাকৃতিকভাবে প্রকরণ উৎপন্ন হয়, এর ফলে কিছু কিছু প্রাণী টিকে থাকতে সমর্থ হয় ও প্রজননে অপেক্ষাকৃত বেশি সফল হয়।
হাইপোথিটিক্যাল পপুলেশন
বিষয়টি বোঝার সুবিধার্তে আমরা একটি খরগোশের পপুলেশন কল্পনা করে নেই। ধরলাম পপুলেশনে দু রকমের খরগোশ আছে। B এলিলধারী খরগোশ হচ্ছে বাদামী রঙের এবং b এলিলধারী খরগোশ হচ্ছে সাদা রঙের খরগোশ। ধরলাম বাজপাখি সাধারণত সাদা খরগোশ বেশি পছন্দ করে তবে বাদামী রঙের খরগোশ পছন্দ করে না। সেক্ষেত্রে বাজপাখি সাদা খরগোশগুলোকে খেয়ে ফেলবে এবং বাদামী রঙের খরগোশ টিকে যাবে। ফলে বাদামী রঙের খরগোশ প্রজননে বেশি অংশ নিতে পারবে এবং B জিনোটাইপ ওয়ালা খরগোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ খরগোশের পপুলেশনে একটি পরিবর্তন ঘটবে সেটা কি? সেটা হচ্ছে উক্ত খরগোশের পপুলেশনে B এলিল ফ্রিকোয়েন্সির সর্বোচ্চভাবে ধারণ করবে।
যারা বিবর্তন নিয়ে খানিক পড়াশোনাও করেছেন তাদের নিশ্চয়ই পেপার মথ নিয়ে জানাশোনা আছে। ওইযে ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লবের সময় বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। দেখা গেল, সেসব এলাকায় সাদা পেপার মথের চেয়ে কালো পেপার মথের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। জীববিদ জেমস টাট প্রস্তাব করেন, দূষণের কারণে গাছের কাণ্ড কালো হয়ে যাওয়ায়—কালো পেপার মথগুলো শিকারি পাখির চোখ এড়িয়ে গেছে, সাদাগুলো বেশি মারা পড়েছে। এভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামে কালোরা প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে। এই অনুকল্পকে পরীক্ষায় রূপ দেন বার্নার্ড ক্যাটেলওয়েল, তিনি দূষণযুক্ত ও দূষণমুক্ত গাছের কাণ্ডে সাদা ও কালো পেপার মথ ছেড়ে দেন। পরে কিছু পোকা সংগ্রহ করে দেখেন, দূষণযুক্ত এলাকায় কালো পেপার মথের প্রাদুর্ভাব বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে এই পরীক্ষণ নিয়ে অনেকের একটা ভুল ধারণা রয়েছে, যে উক্ত ঘটনায় প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে , কিন্তু এই পরীক্ষায় নতুন কোনো প্রজাতি উদ্ভব হয়নি। স্রেফ বিরাজমান প্রজাতির মাঝে একজন সুবিধা পেয়েছে, যারা আগে থেকেই ওই এলাকায় ছিল। এ ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচনকে ডায়রেকশনাল সিলেকশন বলা হয়।