স্রষ্টা একজন আছে তবে প্রচলিত ধর্মগুলো মিথ্যা?

স্রষ্টা একজন আছে তবে প্রচলিত ধর্মগুলো মিথ্যা?

স্রষ্টা সম্পর্কে কিছু মানুষের ধারণা এমন যে, স্রষ্টা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করলেন এবং প্রাকৃতিক নিয়ম বেঁধে দিলেন যার ফলে এই জগৎ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জগৎ সৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক নিয়ম বেঁধে দেওয়ার পর তিনি জগতের বাহিরে চলে গেলেন এবং এই জগতে কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। জগৎ ঘড়ির কাঁটার মতো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অর্থাৎ, একজন ঘড়ি মেকার যেমন ঘড়ি তৈরি করে এটি সচল থাকার জন্য যাবতীয় সব কিছু করে এবং এর পর ঘড়ি নিজে নিজেই চলতে থাকে ঠিক তেমনি স্রষ্টা এই জগৎ সৃষ্টি করেন এবং এই জগৎ পরিচালিত হওয়ার জন্য যে-সব নিয়মের প্রয়োজন ছিল তা জগতের মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। তাই এই জগৎ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং যে স্রষ্টা কখনই মহাবিশ্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হবেন না, তিনি মানুষের জন্য কোন ঐশীবাণী  প্রেরণ করেনি। তাই তাকে এমন একজন ঈশ্বর হিসাবে উপস্থাপন করা হয় যিনি ‘দূরবর্তী’। এই মতবাদ অনুসারে জগৎ ও স্রষ্টা দুটি আলাদা সত্তা এবং উভয়ের মধ্যে কোন আন্তর সম্পর্ক নেই। তাই এই মতবাদকে বলা হয় অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ বা Desim. এই মতবাদের অনুসারীরা প্রচলিত ধর্মের ধারণাগুলিকে প্রত্যাখ্যান করে যা (ধর্মগুলো) শেখায় যে স্রষ্টা ঐশ্বরিক বাণীর মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ করেন। এছাড়াও তারা পরকালে ঐশ্বরিক বিচারের ধারণাকেও প্রত্যাখান করে। Cambridge Dictionary মতে, অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ হলো, একক ঈশ্বরে বিশ্বাস যিনি বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন কিন্তু ঘটনাকে (মহাবিশ্বের) প্রভাবিত করার জন্য কাজ করেন না।[1] DEISM | English meaning – Cambridge Dictionary

অতিবর্তী ঈশ্বরবাদের সমালোচনা

অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ মোটেও যুক্তিযুক্ত কোনো অবস্থান নয়। অনেকগুলো কারণে এই মতবাদটি বোধগম্য নয়। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি; ১) স্রষ্টার জ্ঞানের ভিত্তিতে দেবতাবাদ অসংগত ২) স্রষ্টার নৈতিক চরিত্রের কারণে দেবতাবাদ অসংগত ৩) ঐশ্বরিক বানী সম্ভব এবং তাৎপর্যপূর্ণ।

স্রষ্টার জ্ঞানের ভিত্তিতে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অসংগত

‘স্রষ্টার প্রকৃতি’ এবং ‘স্রষ্টা কি ইচ্ছাশক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা’ অংশে ইতিমধ্যে আমরা স্রষ্টার প্রজ্ঞা ও জ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করেছি। স্রষ্টার জ্ঞান সম্পর্কিত আলোচনা শেষে আমরা যুক্তিযুক্তভাবে এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, ঈশ্বর নিখুঁত বা সবচেয়ে জ্ঞানী। তাহলে আমরা একটি ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের মাধ্যমে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদের অসারতা প্রমাণ করতে পারি।

  • P1: যে কোন অর্থপূর্ণ জিনিসকে সৃষ্টি বা চালিত করতে প্রজ্ঞার প্রয়োজন এবং তা পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য করা হয়।
  • P2: স্রষ্টা হচ্ছে নিখুঁতভাবে বা সবচেয়ে জ্ঞানী।
  • P3: ঈশ্বরবাদ পৃথিবীতে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপকে বাতিল করে।
  • P4: ঈশ্বরের জ্ঞান জগতে তাঁর অ-হস্তক্ষেপের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
  • Conclusion: সুতরাং, অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ অযৌক্তিক।

ব্যাখ্যা;

  • P1: যে কোন অর্থপূর্ণ জিনিসকে সৃষ্টি বা চালিত করতে প্রজ্ঞার প্রয়োজন এবং তা পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য করা হয়।

আমরা সহজাতভাবেই এটা জানি যে, কোন কিছু সৃষ্টি করতে হলে বা কোন সৃষ্ট জিনিসকে পরিচালিত করতে হলে অবশ্যই প্রজ্ঞার প্রয়োজন রয়েছে। উপরে আমরা একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম যে আপনি একটি খেলনার গাড়ি তৈরি করেছেন। উদাহরণটিতে আবার স্মরণ করুন। আপনি একটি খেলনা গড়ি তৈরি করলে এবং গাড়িটি পরিচালনা করলেন। এই কাজগুলো করতে অবশ্যই আপনার প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের প্রয়োজন হয়েছে এবং গাড়িটি আপনি আপনার পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্যই তৈরি করেছেন। প্রকৃতিতে আমরা এমন কিছু দেখি না যা কোন প্রজ্ঞা ছাড়াই তৈরি হয়েছে বা উদ্দেশ্যহীন ভাবেই তৈরি হয়েছে।

  • P2: স্রষ্টা হচ্ছে নিখুঁতভাবে বা সবচেয়ে জ্ঞানী।

স্রষ্টা কীভাবে প্রজ্ঞাবান তা নিয়ে উপরে আমরা আলোচনা করেছি। একজন স্রষ্টা যিনি সর্বশক্তিমান, সুনিপুণ, তিনি কখনোই প্রজ্ঞাহীন হতে পারে না। স্রষ্টা আবশ্যিকভাবে সবচেয়ে জ্ঞানী এবং তার প্রজ্ঞার মধ্যে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। যদি সীমাবদ্ধতা থাকে তাহলে স্রষ্টার সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টা হতে পারে না। তাই স্রষ্টা অবশ্যই নিখুঁতভাবে বা সবচেয়ে জ্ঞানী।

  • P3: ঈশ্বরবাদ পৃথিবীতে ঈশ্বরের হস্তক্ষেপকে বাতিল করে।

অতিবর্তী ঈশ্বরবাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্রষ্টা পৃথিবীতে হস্তক্ষেপ করে না।

  • P4: ঈশ্বরের জ্ঞান জগতে তাঁর অ-হস্তক্ষেপের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

P4 হচ্ছে আমাদের এই যুক্তির মূল পয়েন্ট। আমাদের যুক্তি হলো ঈশ্বরের জ্ঞান জগতে তাঁর অ-হস্তক্ষেপের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হবে। অর্থাৎ, স্রষ্টা যদি জগতে হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে তা তার প্রজ্ঞার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হবে। কি কারণে, কোন উদ্দেশ্য স্রষ্টা এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে এনেছেন? যদি স্রষ্টা কোন কারণ ছাড়াই এই মহাবিশ্ব অস্তিত্বে নিয়ে আসে তবে এই কাজটি উদ্দেশ্যহীন। কিন্তু একজন বুদ্ধিমান সত্তা কি অনর্থক, অকারণে, উদ্দেশ্যহীনভাবে কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে? মহাবিশ্ব পরিচালনার জন্য যাবতীয় আইন প্রয়োগ করে স্রষ্টা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বে-খেয়ালি হয়ে কোন উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাই? যদি স্রষ্টা এই জগতে হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে এই জগৎ তিনি সৃষ্টি করেছেন অকারণে, উদ্দেশ্যহীনভাবে এবং পৃথিবীতে মানুষও অকারণে এবং উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রেরণ করেছেন। যেহেতু, স্রষ্টা সবচেয়ে জ্ঞানী এবং এই বিষয়টি ঈশ্বরবাদের অনুসারীরাও মানতে বাধ্য তাই তিনি মহাবিশ্বের বিষয় সম্বন্ধে অবশ্যই অবগত এবং তিনি মহাবিশ্বকে ভুলে যান নি। মহাবিশ্ব সম্পর্কে তিনি অবগত থাকার পরেও যদি তিনি হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে কি স্রষ্টার প্রজ্ঞা তার নিজের সৃষ্টিকে উপেক্ষা করার মধ্যে নিহিত?

নিঃসন্দেহে, ঈশ্বরবাদ এমন যে একজন স্রষ্টার কথা বলে যে স্রষ্টা প্রজ্ঞাবান কিন্তু সে উদ্দেশ্যহীনভাবে কাজ করে এবং যার ফলাফলে সে আগ্রহী নয়। কিন্তু আমাদের দাবি হলো, একজন সর্বোচ্চ জ্ঞানী স্রষ্টা তার জ্ঞানের ঐশ্বরিক গুণের সাথে কোনও বিরোধ ছাড়াই কোনও উদ্দেশ্য ছাড়াই একটি জটিল পরিকল্পিত মহাবিশ্ব তৈরি করলে তা তার প্রজ্ঞার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। তবে অনেক ঈশ্বরবাদী বলতে পারে যে, ঠিক আছে স্রষ্টা একটি কারণ বা উদ্দেশ্যেই এই মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন। তবুও তিনি এই জগতের কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না। কিন্তু এই দাবিটি আমাদের দাবি ‘ঈশ্বরের জ্ঞান জগতে তাঁর অ-হস্তক্ষেপের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ’ খণ্ডন করে না। স্রষ্টা যদি উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের সৃষ্টি করেন, আবার তিনি যদি আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে একজন প্রজ্ঞাবান স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে উপেক্ষা করে কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাই? মহাবিশ্ব সম্পর্কে তিনি অবগত থাকার পরেও, মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত কারণ বা উদ্দেশ্য থাকার পরেও যদি তিনি হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে কি স্রষ্টার প্রজ্ঞা তার নিজের সৃষ্টিকে উপেক্ষা করার মধ্যে নিহিত? স্রষ্টা কি আত্ম বিনোদনের জন্য একঘেয়েমি থেকে আমাদের সৃষ্টি করেছেন? ‘স্রষ্টা একটি কারণ বা উদ্দেশ্যেই এই মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন’ তবুও তিনি এই জগতের কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন না’ এই দাবিটি নৈতিক ভিত্তিতেও সমালোচনা করা যায়, যেটা আমি পরের অংশে ব্যাখ্যা করবো। স্রষ্টার কাজের পেছনে উদ্দেশ্য থাকলেই তাকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করা যায় না। স্রষ্টা যদি এই মহাবিশ্বের জন্য মানুষকে সৃষ্টি করে থাকেন তবে কেন তিনি মানুষ সম্পর্কে আগ্রহী হবেনা?

  • Conclusion: সুতরাং, ইশ্বরবাদ অযৌক্তিক।

যেহেতু, স্রষ্টার জগতের অ-হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্রষ্টার প্রজ্ঞার সাথে বেশকিছু সমস্যা তৌরি করে তাই ঈশ্বরবাদ একটি অযৌক্তিক মতবাদ।

ঈশ্বরের নৈতিক চরিত্রের সাথে অতিবর্তী ঈশ্বরবাদের সংঘাত

ইসলাম ধর্মে আল্লাহর প্রকৃতি অর্ধায়ে ইতিমধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি যে, স্রষ্টা (আল্লাহ) সর্বোচ্চ ভালো। তাই আমাদের যুক্তি হলো,

  • P1: নৈতিকতায় পরোপকারিতা এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজন।
  • P2: অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ স্রষ্টার নৈতিকগুন স্বীকার করে কিন্তু জগতে স্রষ্টার হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে।
  • P3: স্রষ্টা যদি জগতে হস্তক্ষেপ না করে তবে তার নৈতিকতা স্রষ্টার নৈতিকগুণ তার জগতে অ-সম্পৃক্ততার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
  • Conclusion: সুতরাং, অতিবর্তী ইশ্বরবাদ অযৌক্তিক।

ব্যাখ্যা;

  • P1: নৈতিকতায় পরোপকারিতা এবং ন্যায়বিচারের প্রয়োজন।

P1 সত্য কারণ পরোপকারিতা অবশ্যই নৈতিকতার বৈশিষ্ট্য এবং ন্যায়বিচার না থাকলে নৈতিকতার কোন অর্থ থাকে না।

  • P2: অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ স্রষ্টার নৈতিক গুণ স্বীকার করে কিন্তু জগতে স্রষ্টার হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে।

অতিবর্তী ইশ্বরবাদ অনুযায়ী P2 সত্য।

  • P3: স্রষ্টা যদি জগতে হস্তক্ষেপ না করে তবে তার নৈতিকতা স্রষ্টার নৈতিক গুণ তার জগতে অ-সম্পৃক্ততার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

P3 এই আর্গুমেন্টের মূল পয়েন্ট। আমাদের দাবি হচ্ছে যদি একজন সর্বোচ্চ নৈতিক স্রষ্টা তার সৃষ্ট জগতে হস্তক্ষেপ না করে বা সম্পৃক্ততা না রাখে তবে তা স্রষ্টার নৈতিক গুণ বা বৈশিষ্ট্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। মনে করুন, আপনার বন্ধু সামিন ৫ বছর আগে বিয়ে করেছে। বর্তমানে তার দুটি সন্তান রয়েছে। এখন আপনার বন্ধু যদি কোন কারণ ছাড়াই তার পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ করে তাহলে নিশ্চয়ই তাকে ভালো স্বামী বা ভালো পিতা বলা যায় না। একজন মেষপালকের কথা চিন্তা করুন। যে প্রতিদিন মেষপাল নিয়ে সমুদ্রের তীরে যায় মেষদের ঘাস খাওয়ানোর জন্য। সে জানে মাঠের পাশের জঙ্গলে বেশ কিছু নেকড়ে রয়েছে এবং সে সেখান থেকে চলে গেলেই নেকড়েগুলো মেষপালের উপর আক্রমণ করবে। এমতাবস্থায় যদি মেষপালক সেই স্থান ত্যাগ করে তাহলে নিশ্চয়ই আমরা এটা বলবো না যে মেষপালকটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান বা ভালো। একজন পুলিশ অফিসার যিনি একজন অসহায় লোককে চিনতাই এবং মারধর করতে দেখে নির্বিকারভাবে তাকিয়ে থাকেন তাহলে তাকে নিশ্চয়ই আমরা একজন দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার বলি না। একজন শিক্ষক যিনি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের না পড়িয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন তাকে নিশ্চয়ই আমরা একজন দায়িত্ববান শিক্ষক, নৈতিক শিক্ষক বা বুদ্ধিমান শিক্ষক বলি না। এমন আচরণের জন্য যদি আমরা একজন পিতাকে আদর্শবান, নৈতিক পিতা বলতে না পারি, একজন স্বামীকে আদর্শবান ও নৈতিক বলতে না পারি, একজন মেষপালককে যদি বুদ্ধিমান ও আদর্শ মেষপালক বলতে না পারি, একজন শিক্ষককে যদি আদর্শবান, নৈতিক ও দায়িত্ববান বলতে না পারি, তাহলে একজন স্রষ্টা যে তার সৃষ্ট সংবেদনশীল প্রাণীদের ব্যাপারে উদাসীন, বেখেয়াল, তাকে কি বলবেন? উপরে আমরা যে উদাহরণগুলো দিয়েছে তা এটাই প্রমাণ করে যে, একজন পিতা কিংবা স্বামী যে পরিবারের সদস্যদের পরিত্যাগ করে অহেতুক কষ্ট দিচ্ছে, যে মেষপালক তার তার মেষপাল গুলিকে ছেড়ে চলে যায়, যে পুলিশ অফিসার অন্যায় দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করে, যা শিক্ষক তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করে না, তাদের এমন কাজ নেতিবাচক, অনৈতিকতা, নির্বুদ্ধিতা, দায়িত্বহীনতার অন্তর্ভুক্ত। এ দৃষ্টান্তগুলো যদি একজন স্রষ্টার উপর আরোপ করা হয় তাহলে নিশ্চয়ই সেই স্রষ্টাকে কি আর নিখুঁত, সবচেয়ে ভালো, প্রজ্ঞাবান বলা যায় না। এমন নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো কোনোভাবেই একজন স্রষ্টার সাথে সংগতিপূর্ণ হতে পারে না।

এটা সুস্পষ্ট যে অতিবর্তী ইশ্বরবাদ অনুযায়ী স্রষ্টা শুধু মানুষকে  উপেক্ষা করে না বরং মানুষকে আশা দেওয়ার জন্য, নীতি-নৈতিকতা প্রদানের ব্যাপারে এবং পৃথিবীতে ব্যাপক মন্দের অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারেও উদাসীন। ঈশ্বরবাদীদের স্রষ্টা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং কোনো স্পষ্ট নৈতিক দিকনির্দেশনা, উৎসাহ ও আশার বাণী, এবং সমবেদনা ও ভালোবাসা প্রদর্শন না করেই তাদের পরিত্যাগ করেছে। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত নানা-রকম অন্যায়, অত্যাচার ঘটে যাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজের চোখের সামনে তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা হতে দেখেছে! কিন্তু সামর্থ্য না থাকার কারণে সে প্রতিবাদ করতে পারেনি। ক্ষমতাবলে হত্যাকারী দুনিয়াতে কোনো শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক শাসক রয়েছে, যারা জনগণের উপর চালিয়েছে অত্যাচারের স্টিম রোলার। কিন্তু ক্ষমতাবলে দুনিয়াতে ঐ শাসকদের কোন বিচার হয়নি। অনেক বড় বড় গ্যাংস্টার রয়েছে যারা অর্থের বিনিময়ে অন্যায়ভাবে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু দুনিয়ার আদালতে বিচার হওয়ার পূর্বেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। যেহেতু স্রষ্টা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর এখানে আর হস্তক্ষেপ করেন না, কোন প্রকার নৈতিক নিয়মও দেয়নি, তাই পরকাল বলতেও আসলে কিছুর অস্তিত্ব থাকে না। কেননা, কোন নৈতিক নিয়মই যদি না থাকে তাহলে কীসের ভিত্তিতে পরকালে মানুষ বিচার হবে? যদি পরকাল বলতে কিছু নাই থাকে তাহলে এই যে দুনিয়াতে যারা অন্যায়, অত্যাচার করেও বেঁচে গিয়েছে তাদের আর কোন বিচার হওয়ার সুযোগ নেই! আবার পৃথিবীতে অন্যায়, অত্যাচারিত হওয়া দুর্বল মানুষেরা সব সময় আশা করে পরকালে এই অন্যায়, অত্যাচারের সুবিচার তারা পাবে। কিন্তু ঈশ্বরবাদে যেহেতু পরকাল অস্বীকার করতে বাধ্য তাই এই মতবাদ সত্য হলে মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার আশার ফলাফল কেবল শূন্য। সুতরাং, ঈশ্বরবাদের স্রষ্টার সৃষ্টিতে অসমতা বিরাজমান এবং এখানে ন্যায় বিচার বলতে কিছু নেই যা স্রষ্টার নিখুঁত ও নৈতিক গুণের সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে।

  • Conclusion: সুতরাং, অতিবর্তী ইশ্বরবাদ অযৌক্তিক।

যেহেতু, অতিবর্তী ঈশ্বরবাদ যে স্রষ্টার কথা বলে তা স্রষ্টার বৈশিষ্ট্যের সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে তাই ঈশ্বরবাদ একটি অযৌক্তিক মতবাদ।

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button