নাস্তিকতা কেন অযৌক্তিক ?
নাস্তিকতা কেন অযৌক্তিক ?
নাস্তিকতা কেন অযৌক্তিক তা জানতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে যুক্তিবিদ্যা বা যুক্তি সম্পর্কে। তাই শুরুতে যুক্তি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
যুক্তি কি?
যুক্তিবিদ্যায় যুক্তি বলতে বুঝানো হয়- যুক্তি হচ্ছে এমন এক বাক্যের সমষ্টি যেখানে একটি বাক্য অন্য বাক্য থেকে নিঃসৃত হয় এবং ঐ বাক্যগুলোই নিঃসৃত বাক্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। যেমন,
প্রেমিসঃ সকল দার্শনিক হলো জ্ঞানী। প্রেমিসঃ ইমাম গাজালি একজন দার্শনিক। সিদ্ধান্তঃ সুতরাং ইমাম গাজালি একজন জ্ঞানী। এখানে সিদ্ধান্তটি উপরের দুটি বাক্য থেকে নিঃসৃত হয়েছে।
তবে নিছক কতগুলো বাক্য মিলে কিন্তু যুক্তি যুক্তি গঠিত হয়না। যুক্তির কিছু নিজস্ব নিয়ম রয়েছে। এক্ষেত্রে আশ্রয় বাক্য (Premises) ও সিদ্ধান্ত (Conclusion) সম্পর্কে জানতে হবে। আশ্রয় বচন হলো একটি বাক্য যুক্তিতে ব্যাবহার হয়ে সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে তখনই তাকে আশ্রয় বাক্য বলে। অন্যদিকে, সিদ্ধান্ত হচ্ছে একটা বাক্য যখন আশ্র্যয় বাক্য অনিবার্যভাবে থেকে নিঃসৃত হয় তখন তাকে সিদ্ধান্ত বলে।
অনিবার্য সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যে থাকা শব্দের উপর ভিত্তী করে আসেনা বরং আশ্রয়বাক্যগুলোর মধ্যকার সম্বন্ধের কারণে এসেছে এবং তা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখে নয় বরং অনুমানের মাধমে আসে। আপনি যখন কোনো জিনিস সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন তখন তা আপনার মানসিক অবস্থায় বিরাজমান থাকে। সে ধারণা যখন ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় তখনই যুক্তি গঠিত হয়। সুতরাং যুক্তি গঠনের জন্য মানুষের মানসিক বিচারশক্তি বা যৌক্তিক বিচারশক্তি থাকা অপরিহার্য। যুক্তি প্রয়োগ করার প্রথম শর্ত হলো যৌক্তিক বিচার শক্তি থাকা।
উপরে যে উদাহারণটি আমরা দিয়েছিলাম তা আবার লক্ষ্য করুন।
আশ্রয় বাক্যঃ সকল দার্শনিক হলো জ্ঞানী। আশ্রয় বাক্যঃ ইমাম গাজালি একজন দার্শনিক। সিদ্ধান্তঃ সুতরাং ইমাম গাজালি একজন জ্ঞানী।
এখানে আশ্রয়বাক্যগুলো থেকেই সিদ্ধান্ত এসেছে। অর্থাৎ এই বাক্যগুলো সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। অন্যদিকে, সিদ্ধান্ত বাক্যটি অনিবার্যভাবেই নিঃসৃত হয়েছে। কারণ এখানে ‘ইমাম গাজালি একজন জ্ঞানী’ এটার পরিবর্তে ‘পাখিরা আকাশের উড়ে’ এটা বলা যাবেনা।
যুক্তিবিদ্যা নিয়ে আমাদের আরো একটি লিখা ” যুক্তিবিদ্যা কি?”
নাস্তিকতা কেন অযৌক্তিক ?
আপনি যখন কোনো জিনিস সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন তখন তা আপনার মানসিক অবস্থায় বিরাজমান থাকে। সে ধারণা যখন ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় তখনই যুক্তি গঠিত হয়। সুতরাং যুক্তি গঠনের জন্য মানুষের মানসিক বিচারশক্তি বা যৌক্তিক বিচারশক্তি থাকা অপরিহার্য। যুক্তি প্রয়োগ করার প্রথম শর্ত হলো যৌক্তিক বিচার শক্তি থাকা। আশ্রয় বাক্যের পারস্পরিক সম্বন্ধ থেকে অনিবার্যভাবে যে সিদ্ধান্তটি আসে তা চর্মচক্ষু দিয়ে দেখে নয় বরং অনুমানের মাধমে আসে।
একজন নাস্তিক যখন দাবী করে স্রষ্টা বলতে কিছু নেই তখন সে যুক্তি-বুদ্ধি প্রয়োগ করেই এহেন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কিন্তু একজন নাস্তিক আবার এটাও বিশ্বাস করে আমাদের এই জগতের সবকিছু জড়পর্দার্থ দিয়ে ব্যাখা করা সম্ভব। তারা বিশ্বাস করে অতিপ্রাকৃতিক সত্তা বলতে কিছু নেই, থাকতে পারেনা। সব কিছু টিকে আছে উদ্দেশ্যহীন জড় প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার উপর।
কিন্তু জড় বস্তু হচ্ছে উদ্দেশ্যহীন, বিচারবুদ্ধিহীন, বিচারশক্তিহীন। এরকম বিচারবুদ্ধিহীন, বিচারশক্তিহীন জড় পদার্থ থেকে কি যুক্তি উপস্থাপন হতে পারে? অবশ্যই পারেনা! কারণ, যুক্তির সাথে মানসিক চিন্তার সম্পর্ক অপরিহার্য এবং নাস্তিকরা বিশ্বাস করে মানসিক বিচারশক্তি বলতে আসলে কিছু নেই, সবকিছুই জড়।
কোনো বস্তুর মাঝে যে জিনিসটি নেই সেটা সে কখনোই অন্যকে দিতে পারেনা। যেমন, আমার কাছে যদি টাকা না থাকে তাহলে আমি কখনোই অন্যকে টাকা ধার দিতে পারবোনা। সুতরাং জড় প্রক্রিয়া যদি যুক্তিহীন, বুদ্ধিহীন, বিচারশক্তিহীন হয় তাহলে সে কিভাবে যুক্তির বিকাশ ঘটাতে পারে। জড় প্রক্রিয়াগুলো এমন যে, যার নিজস্ব কোনো বুদ্ধিমত্তা নেই, উদ্দেশ্য নেই, বিচারশক্তি নেই, যুক্তির গতিধারা বুঝার ক্ষমতা নেই। সুতরাং জড় থেকে যুক্তি উৎপন্ন হওয়া, আর একজন অবিবাহিত মানুষের স্ত্রী থাকে একই রকম ফাঁপা বুলি। সুতরাং নাস্তিকতা কখনোই যৌক্তিক হতে পারেনা। নাস্তিকতা এবং যুক্তি দুটোই সাংঘর্ষিক ।
নাস্তিকতা অযৌক্তিক হওয়ার অন্যতম আরো একটি কারণ হলো, নাস্তিকতা সহজাত নয় বরং অর্জিত অবস্থা। অর্থাৎ, নাস্তিকতা হলো নিজের সহজাত প্রবৃত্তির বিপক্ষে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া অবস্থান। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে “নাস্তিকতা কি স্বভাবজাত?’ আর্টিকেলে।
যুক্তি এবং ইসলাম
মানসিক বিচার শক্তির বিষয়টা ইসলামি বিশ্বাসের পুরোপুরো খাপ খায়। কারণ মুসলিমরা বিশ্বাস করে একজন তাদের মানসিক বিচারশক্তির সামর্থ্য এমন একজন সত্তা থেকে এসেছে, যিনি মহাজ্ঞানী, মহাবিচারক, সর্বশক্তিমান, যিন সব জানেন এবং দেখেন। একজন সর্বজ্ঞানী স্রষ্টাই কেবল হতে পারে বিচারশক্তি বা চিন্তাশক্তির উৎস।
সৃষ্টির শুরুতে যদি জড়বস্তুর পুনবিন্যস থাকতো বা এই জগতের সবকিছুই যদি জড় হতো তাহলে তা শতকোটিবার পুনবির্ন্যাস্ত হলেও চিন্তা শক্তির জন্ম দিতে পারবেনা। যদি শুরুতে একজন সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান, সবচেয়ে জ্ঞানী, সর্বদ্রষ্টা সত্তা থাকে, তাহলেই কেবল যুক্তিক্ষমতাবান সচেতন জীবের আবির্ভাব হতে পারে।
মানসিক বিচারশক্তি, যৌক্তিক বিচারশক্তি, ভাবনাচিন্তা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা বলেন,
তারা কি কুরআনের মর্ম বিষয়ে চিন্তে-ভাবনা করেনা? যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে আসত, তবে তাতে তারা অবশ্যই বহু অসঙ্গতি পেত। [1]সূরা আন-নিসা; ৪ঃ৮২
হে আমার সম্রাদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো তাঁরা জিম্মায় যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তবুও কি তোমরা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটাবে না? [2]সূরা হুদ; ১১ঃ৫১
উক্ত আয়াতগুলোতে থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের বুঝার ক্ষমতা, চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রয়েছে আর সেগুলো আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। এগুলোর সাহায্যে আমরা বুঝতে পারি জগতের সত্যকে, এই জগতের রুপকে।
References
↑1 | সূরা আন-নিসা; ৪ঃ৮২ |
---|---|
↑2 | সূরা হুদ; ১১ঃ৫১ |