নারী নেতৃত্ব কি ইসলামে হারাম ?
নারী নেতৃত্ব কি ইসলামে হারাম ?
সময় বদলায়, বদলায় দৃষ্টিভঙ্গি । আর তার সাথে চিন্তাধারা, বদলায় প্রশ্ন। অমুসলিমদের খুব পছন্দের প্রসঙ্গ হলো নারী নেতৃত্ব। ইসলাম কে পশ্চাৎপদ, নারীবিদ্বেষী, অযৌক্তিক ও নানান অভিযোগে অভিযুক্ত করতে ইসলামের শত্রুদের একটা জনপ্রিয় “যুক্তি” বলা যায় এটি। আর বর্তমানে অনেকেই এই নিয়ে সংশয়, হীনমন্যতায় ভুগে। মুসলিমরা হয়তো আল্লাহর কাছে নিজের ইচ্ছাকে আত্মসমর্পণ করে। তবে যখন প্রশ্নের সম্মুখীন হয় তখন সঠিক উত্তরের অভাবে তারাও বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে। বর্তমানে লিবারেল সেকুলার আইডোলজির ফাঁদে পরে অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না কিভাবে ইসলামে এমন আইন থাকতে পারে। অনেকে তো মুসলিম হবার পরেও ধরেই নেয় যে, ১৪০০ বছর আগের ধর্ম, তখনকার সময়তো এই আধুনিক যুগ ছিল না, সেই অনুযায়ী এমন আইন থাকাই স্বাভাবিক। অর্থাৎ তারা ইসলামকে “পুরোনো”, বর্তমান সময়ে আংশিক অকার্যকর হিসেবে মেনে নেয় অথবা ইসলামের বাইরে গিয়ে চিন্তা করা শুরু করে। এবং যারা মডারেট, তারা নব্য নব্য ব্যাখা আনে।
প্রশ্ন হলো আসলেই কি ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম? নিশ্চিতভাবেই হ্যাঁ, কোনো নারীর জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া, খালিফা বা আমির হওয়া ইসলামে হারাম, তবে এই আর্টিকেল এ আমরা সেই বিষয়ে বিস্তারিত ফিকিহ আলোচনা করব না যে কোথায় কোন দলিল এর জন্য এটা হারাম সাব্যস্ত হয়, বরং আমরা যেই পদ্ধতিতে আগাবো সেটা হলো,
১) প্রথমেই আমরা চলে যাব সালাফুস সালেহীনদের কাছে, বিশেষ করে ইজমা ( সর্বসম্মতিক্রমে ঐক্যমত) এর দিকে । আমাদের পূর্ববর্তি আলেমগন এই বিষয়ে কি অবস্থানে ছিল ? এবং তাদের মধ্যে কি এই নিয়ে কোনো ইজমা বা ঐক্যমত ছিল কিনা? যদি ইজমা থাকে তাহলে সেটার উপর নিজেদের শক্ত করে বেঁধে নিব। কারন হাজার বছরের ইতিহাসে আমাদের সকল আলেমগন যেই বিষয়ে একমত, সেটা একটা প্রমান যে এটাই সত্য। ইজমা বলতে কি বুঝাচ্ছি, সেটার একটা উদাহরন হলো, সমকামিতা কি হারাম নাকি হালাল? এটা নিয়ে আমাদের সালাফগন কখনোই দ্বিমত করেননি। তবে আজকে বিভিন্ন মডারেট “বক্তা” ইনিয়ে বিনিয়ে কুরআনের অপব্যাখা করছে, কওমে লুত (আ) এর ঘটনাকে অপব্যাখা করে এই বিধান বদলাতে চাচ্ছে। তবে যেই বিষয়ে আমাদের আলেমগন কোনো দ্বিমত করে নি, আমাদের সালাফুস সালেহীন কোনো দ্বিমত করেনি, সেখানে আমাদের নব্য নব্য ব্যাখার কাছে হাত পাতা জাহেলিয়াত ছাড়া কিছুই নয়।
২) আমাদের সালাফুস সালেহিনদের অবস্থানের সাথে যা কিছু সংঘর্ষ করে, সেই বিষয়ে সন্দিহান হওয়া, সংশয় প্রকাশ করা।
৩) এবং সেই সংঘর্ষপূর্ণ বিষয়কে দলিল প্রমান যুক্তির আলোকে পুনরায় চিন্তাভাবনা করে সমাধান বের করা।
আমরা এই ৩ ধাপে আগাবো।
১. সালাফে সালেহীনদের অবস্থান
আগে দেখি যে আলেমদের অবস্থান কি? ইসলামের হাজার বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সালাফগন, আলেমগন দ্বিমতের কোনো অবকাশ রাখেনি যে, নারীদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধান, শাসক হওয়া হারাম। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে পুরুষ হওয়া শর্ত। ইসলামের প্রথম যুগের সাহাবা, তাবিঈ সবাই এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। যার কারণে খুলাফায়ে রাশেদা হিসাবে কোনো নারী সাহাবী ছিলেন না। সাহাবা-তাবেয়ীদেরই অনুসরণ করেছেন সব মাজহাবের ইমামগণ, ফুকাহায়ে কেরাম, উলামায়ে কেরাম, মুহাদ্দিসগণ ও মুফাসসিরগণ। সবাই ইজমা (ঐকমত্য পোষণ) করেছেন যে, নারীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আরোহণের যোগ্য নয়, কোনো ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধান নেতা (খলিফা) হিসেবে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া জায়েজ নেই। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ অর্থ: পুরুষরা নারীদের কর্তা ,কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং …..।[1]সূরা আন-নিসা; ৪ঃ৩৪
উপরন্তু, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন,
হযরত আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বাণীর দ্বারা আল্লাহ জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন আমার মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শারীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরাহ (রাঃ) বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কক্ষণো সফল হবে না স্ত্রীলোক যাদের প্রশাসক হয়। [2]সহিহ বুখারী;হাদিস নং- ৪৪২৫ [3]ইবনে হিব্বান; হাদিস নং- ৪৫১৬ [4]ইবনে হিব্বান;হাদিস নং- ৪৫১৬ [5]মুসনাদে আহমাদ ২০৪০২
সালাফগনদের মধ্যে,
ইবনে হাযম তার ‘মারতিব আল-ইজমা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে এই বিষয়ে পণ্ডিতদের ঐক্যমত ছিল। অধ্যায়ে তিনি বলেছেন:,
“কিবলার লোকদের, সকল দলের মধ্যে [অর্থাৎ, সমস্ত মুসলিম সম্প্রদায়ের] মধ্যে এমন একটিও দলও নেই যা মহিলাদের নেতৃত্বের অনুমতি দেয়।” আল-কুরতুবি অনুরূপ কিছু বর্ণনা করেছেন এবং আল-আল্লামাহ আল-শানকিতি বলেছেন, “এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই।” [6]মারতিব আল-ইজমা;(ইবনে হাযাম রহঃ)
এছাড়াও,
ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন, ওলামায়ে কেরাম এই ব্যপারে একমত যে, কোনো নারীর জন্য ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হওয়া জায়েয নয়’। [7]মারাতিবুল ইজমা (ইবনে হাযাম রহঃ) পৃ: ১২৬
এই বিষয়ে কোনো দ্বিমতের সুযোগ নেই যে নারীদের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া ইসলামে হারাম। মূলত পরিবারের কর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কর্তা হবে পুরুষ, এই নিয়ে উপনিবেশিক যুগের আগে ইসলামের ইতিহাসে কোনো আলেমই কখনো সন্দেহ করেননি।
এখন সাধারনত মডার্নিস্ট রিফর্মিস্ট লিবারেল সেকুলাররা বলতে পারে!
– এটা সম্পূর্ণ অসমতা,
– এটা নারীবিদ্বেষ,
– এটা অন্যায়, এটা নারীদের ঘরের মধ্যে দাবিয়ে রাখা, ওপ্রেশন!
– নারী পুরুষ সম্পূর্ণ সমান, হ্যাঁ কিছু অ্যানাটোমিকাল পার্থক্য থাকলেও দিন শেষে নারী পুরুষের তেমন কোনো পার্থক্য নাই। বরং যার যোগ্যতা বেশি, সেই তার ফলাফল পাবে। নারী পুরুষ একই ভাবে চিন্তা করে, নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা উভয়ই রাখে। আর এখন নারীরা কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই, তাই ইসলামের এই আইন একদমই অযৌক্তিক। পশ্চাৎপদ!
– ইসলাম তো সেই ১৪শ বছর আগের মধ্যযুগের ধর্ম, সেটার ছাপ তো বিধানে থাকবেই, আগের ইতিহাস অনুযায়ী এটা ঠিক আছে, তবে এখন সময় বদলেছে। এখন আর নারীদের এতো প্রতিবন্ধকতা এর উপর নির্ভর করতে হয় না। এখন আর কায়িক শ্রম ও পেশির দরকার হয়না বেশি । এখন মানুষ তার মেধা দিয়েই দুনিয়া জয় করতে পারে। আর এখন জন্ম নিয়ন্ত্রন আসার ফলে মহিলাদের অর্ধেক জীবন সন্তান জন্মদানে চলে যায় না। এখন নারীরা চাইলেই জন্ম নিয়ন্ত্রন করতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে অধিক সময় দিতে পারে।
– হ্যাঁ মানলাম ইসলামে এটা হারাম, তবে এখন আর নেতৃত্বের বিষয়টা আগের মতো নেই। পরিস্থিতি বদলেছে। তাই পরিস্থিতি আর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিধান পরিবর্তন আমরা করতেই পারি……।
ইত্যাদি। আমাদের আসলে প্রয়োজন নেই গুনে গুনে সকল প্রশ্নের উত্তর দেবার বরং সামনে আগালে সেগুলো এমনিই উত্তর হয়ে যাবে।
২. উন্নতির মানদণ্ড
এখন আমরা আসি আমাদের দ্বিতীয় ধাপে। আমরা জানি আলেমদের ইজমা সম্পর্কে। এখন আমরা আলেমদের এই মতের সাথে বৈপরীত্য হয় এমন মত এর প্রতি সংশয় প্রকাশ করবো।
আমরা কেন মেনে নিতেই হবে নারী পুরুষ সমান? নারী পুরুষ কি আসলেই সমান? আসলেই কি এগুলা নারী বিদ্বেষ? কিসের ভিত্তিতে ঠিক করা হচ্ছে এগুলা বিদ্বেষ? নারীদের ঘরে থাকা মানেই কি অসম্মান বা দাবিয়ে রাখা? বাহিরে কাজ করা কেন ভালো? কিসের ভিত্তিতে বাহিরে কাজ করা সম্মানের ? কোন স্ট্যান্ডার্ডে জব না করা মানে পিছিয়ে থাকা? আগানো পিছানো কিসের ভিত্তিতে সেট করা হচ্ছে? অধিক সন্তান জন্মদান ,মাতৃত্ব কেন জব করার থেকে বেশি মর্যাদার না? আমরা তো এসব প্রশ্ন করতেই পারি। আমরা কেন এই লিবারেল সেকুলার মতাদর্শকে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই মেনে নিব? বস্তুত আমরা দুনিয়ার চোখে ইসলামকে না দেখে ইসলামের চোখে দুনিয়াকে দেখব।
এখন আমাদের কাজ হলো আবার চিন্তা করা, যুক্তি দেয়া, সন্ধান করা। উত্তর খোঁজা। তবে আসুন, আমরা ৩য় ধাপে পা দিই।
৩. যৌক্তিকতার সন্ধানে
আমরা প্রথমে দেখি যে সমঅধিকারের এর দাবি কতুটুকু যৌক্তিক ? দেখার বিষয় হল সমতা মানে কি বুঝানো হয়। আমার কাছে সমতার ধারনা হলো একটা খালি কলসির মতো। বাজে বেশি, তবে ভিতরে যতক্ষণ না ধরে বাইরের পানি ভরা হচ্ছে, সেটা পূর্ণতা লাভ করে না।
সমতার ধারনা আসলে কন্টেক্সট এর উপর নির্ভরশীল হয়, যদি সেটা যৌক্তিকতা বজায় রাখতে চায়। যেমনঃ ধরুন মিস্টার ১ আর মিস্টার ২ দুইজনে মিলে একজন মুফতির কাছে গেল জিজ্ঞেস করতে যে তাদের জন্য অমুক সফট ড্রিংক খাওয়া কি হালাল কিনা। প্রথমে ১ জিজ্ঞেস করলে মুফতি সাহেব ফাতওয়া দিল যে হ্যাঁ, এতে কোনো সমস্যা নাই, এটা তোমার জন্য সম্পূর্ণ হালাল। কিন্তু, ২ যখন জিজ্ঞেস করল, তখন মুফতি সাহেব ফাতওয়া দিল যে না, তুমি এটা খেতে পারবা না, এটা হারাম। পরে যখন ১ ও ২ দেখা করল তারা আবার মুফতি সাহেব এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো যে কেন আপনি তাকে হালাল বললেন আর আপনি আমাকে (২) হারাম বললেন ?
এখন যদি মুফতি সাহেব উত্তর দেয়, “ কারন আমার ২ এর চেহারা ভালো লাগে নাই” অথবা “আমার মন চেয়েছে” তাহলে এটা কি ন্যায় হতো? বরং এখানে সমতার লঙ্ঘন হতো।
তবে যদিমুফতি সাহেব বলতো, “আমি যাকে হারাম ফাতওয়া দিয়েছি আসলে তার এমন এক উপাদানে এলারজি আছে যেটা ওই খাবারে উপস্থিত, আমি জানতাম আগে থেকে, তাই হারাম বলেছি, কারনে নিজের ক্ষতি করা যাবে না, আর যাকে হালাল ফাতওয়া দিয়েছি, সে সম্পূর্ণ সুস্থ”।
এখন প্রশ্ন হলো, কেউ কি দাবি করবে যে এখানে সমতার লঙ্ঘন হয়েছে? কেউ কি বলবে যে সমতা চাই, সমতা দাও? না।
বরং এটা আসলে কন্টেক্সট এর উপর নির্ভরশীল। Equality এর ধারনাকে আমরা দুইভাবে ভাগ করতে পারি।
- Absolute Equality: অর্থাৎ সকলখানে সর্বাবস্থায় সমান সমান বন্টন। তবে এটা আসলে যৌক্তিক নয়। কারন সমতা মানেই যে সুষমতা, সাম্য মানেই যে ভারসাম্য, জরুরি নয়।
- General Equality: এর সংজ্ঞায় বলতে পারি, Treat similar cases similarly, different cases differently. অর্থাৎ যে যেমন, সেইরকম ভাবে বণ্টন করা যদি সমতার সংজ্ঞা হয়, তাহলে সেটা যৌক্তিক।
এখন দুটি জিনিস যদি একই বা সমান হয়, তখনই সেখানে সমতা, সমঅধিকার যৌক্তিক হবে, সুষমতা হবে, ভারসাম্য হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে নারী পুরুষের সমান অধিকার যৌক্তিক হতে হলে আগে প্রমান করতে হবে যে নারী পুরুষ সমান। বাস্তবে নারী পুরুষ যদি সমান না হয়, তাহলে কেন নারী পুরুষের সমান অধিকার যৌক্তিক হবে? এখন অনেকেই বলতে পারে তাই বলে সমান সুযোগ দেয়া উচিত। এই “সুযোগ এর সমতা” এর দাবি কতটা যৌক্তিক, এটা এই আর্টিকেল শেষ হলেই আমরা বুঝতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমরা এই দাবিতে বেশি সময় নষ্ট করবো না। তবে সরাসরি তথ্য ছাড়া আরগুমেন্ট স্বাভাবিক ভাবেই মানুষকে সন্তুষ্ট করবে না। তাই আমরা এখন নারী পুরুষ এবং নেতৃত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় চলে যাব।
অতীতের আয়নায়
এই বিষয়ে কেউই দ্বিমত করবে না যে অতীতের প্রায় সকল সভ্যতা ছিল পুরুষতান্ত্রিক এবং পুরুষ শাসক দ্বারা শাসন হতো। যদিও কিছু নারী শাসকের উদাহরন পাওয়া যায়, তবে সেটা সংখ্যায় খুবই নগন্য। এমনকি যত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ দেখা যায়, তাদের আসলে কোনো সভ্যতা বলা যায় না, বরং তারা শুধুমাত্র সমাজ হিসেবেই থাকতো, যদিও তারা দেখা যায় কোনো দেশের বা সমাজের একদম কোণার অংশে বসবাস করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের একদম কোণায় পাহাড়ি অঞ্চলে এর প্রমান দেখা যায়। তাদেরকে কোনোভাবে সভ্যতা বলা যায় না, বরং পৃথিবীর ইতিহাসের ৯৯% সমাজ ছিল পুরুষতান্ত্রিক এবং সকল প্রভাবশালী সভ্যতা ছিল পুরুষতান্ত্রিক এবং তাদের শুরু থেকে সভ্যতার উন্নতির এক নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সেটা পুরুষদের হাত ধরেই গিয়েছে। প্রাচীন গ্রিসে মানুষদের মধ্যেও এমন ধারণা দেখা যায় যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন স্বভাব রয়েছে। তাদের পুরুষ ঈশ্বরেরা যুক্তির দেবতা, আলোর দেবতা, আইন বা হুকুমের দেবতা ইত্যাদি। আর নারী ঈশ্বর হলো মমতা বা অনুভুতির দেবতা, মহানন্দ এর দেবতা, উর্বরতার দেবতা, সন্তানদের দেবতা ইত্যাদি। এবং অনুরূপ প্রাচীন চাইনিজ সংস্কৃতিতেও পাওয়া যায়। তাদের স্বভাব এবং কাজ ভিন্ন। তবে যে যার কাজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে একটা ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ তৈরি করতো। আর সেখানে ছিল হাইয়ারারকি (hierarchy) অর্থাৎ এমন একটি সিস্টেম যেখানে মানুষ বা গোষ্ঠীগুলিকে স্থিতি বা কর্তৃত্ব অনুসারে একে অপরের উপরে স্থান দেওয়া হয়। এবং প্রায় সকল কালচারে পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বের অবস্থানে থাকতো। রাষ্ট্রে ও পরিবারের কর্তা হলো পুরুষ। এটা নিয়ে এন্থ্রোপোলজিস্টদের মধ্যে অনেক কাজ দেখা যায়, তেমনি একজন হলো Steven Goldberg। তিনি তার বই, “Why men rule”[5] বই এ এই প্রশ্নের উত্তর খুজে যে, কেন ইতিহাসের প্রায় সব সভ্যতায় পুরুষেরা নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে থাকে? যদিও একদম স্বল্প সংখ্যক কিছু নারী দেখা যায়, তবে তাও তারা মূলত পুরুষতন্ত্রকেই ওপারেট করছিল। আর যা মাতৃতন্ত্র পাওয়া যায়, তা খুবই নগণ্য ও উল্লেখযোগ্য সভ্যতা নয়, এর কারন কি? গোল্ডবার্গ এর জন্য দায়ী করে বায়োলজিকে। শারীরবৃত্তীয় পার্থক্যকে, হরমনাল পার্থক্য, জ্ঞান সম্বন্ধীয় ও আচরনভিত্তিক (cognitive) পার্থক্যকে। তিনি এই সকল সভ্যতায় সার্বজনীন ভাবে ৩ টি বিশিষ্ট লক্ষ্য করেন।
- Male Hierarchy or Patriarchy
- Male Attainment (গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ স্থানীয় দায়িত্বে পুরুষেরা)
- Male Dominance ( এমন এক সামাজিক প্রত্যাশা যে সামাজিক নিয়ন্ত্রন ও কর্তৃত্ব হবে পুরুষ দ্বারা)
পুরুষদের মধ্যে এমন এক প্রবনতা দেখা যায় যে তারা প্রতিযোগিতা করে সমাজকাঠামোর উচ্চ অবস্থানে পৌছাতে চায়। এবং এটা কেন, Anthropologist, Sociologists, Phycologist তারা প্রায় সকলেই একমত যে পুরুষদের মধ্যে এমন প্রবণতা কাজ করে, নারীদের পছন্দের জন্য। এবং এখানেই তারা একটা ধারণা নিয়ে আসে, হাইপারগ্যামি (hypergamy) এর।
Hypergamy – হাইপারগ্যামি
হাইপারগ্যামি হলো নারীদের মধ্যে এমন এক বৈশিষ্ট্য যে, নারীরা তার থেকে সমাজে উচ্চ স্থানীয় বা মর্যাদার পুরুষ (Higher status male) এর প্রতি বেশি দুর্বল হয়, সেটা বেশি ক্ষমতাবান বা জ্ঞানি বা সম্পদবান, অথবা শারীরিক শক্তির ভিত্তিতেও হতে পারে।
অর্থাৎ নারীরা উচ্চ মর্যাদার পুরুষের প্রতি দুর্বল হয় এবং পুরুষেরা নারীদের থেকে উচ্চ মর্যাদায় থাকতে চায়। এবং এই প্রবণতা প্রশ্নাতীতভাবে বর্তমানে প্রমাণিত এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকেই এর প্রমান পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে এক নারীবাদী তার একটা পোস্ট এ তার পারাবারিক সমস্যা এর কথা লিখছিল যা অনেকটা এমন,
“সে আর তার স্বামী চাকরী করে, তবে তার (স্ত্রী) প্রমোশন হতে হতে সে অনেক উপরের পর্যায়ে চলে গিয়েছে, এরপর থেকেই তাদের দাম্পত্যকলহ বেড়ে যায়, সে এখন এমন অনুভব করে যে তার স্বামী তাকে ডিজার্ভ করে না, তার স্বামী হয়তো তার যোগ্য না, সে আরো উত্তম কাউকে কাম্য করে”
এছাড়াও আমরা অনেক সময় শুনতে পারি যে চারকি করা স্বাধীন নারী হলো সবচেয়ে ডিভোর্সি হয়। এবং সেটা স্বাভাবিক কারণ গুলোর মধ্যে একটা এই হাইপারগ্যামি। নারী পুরুষ সমান সমান চিন্তাধারার না মোটেও। “তুমি আমি দুইজনে সমান সমান জব করে দুইজনে মিলে এক সাথে সংসার চালাবো” এই কথা কিছু কিছু পরিবারে খাটলেও সামগ্রিকভাবে এর ফলাফল হলো পরিবারগুলো আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যাওয়া। কারণ নারীরা পছন্দ করে উচ্চ মর্যাদার পুরুষ, এবং পুরুষ পছন্দ করে উচ্চ মর্যাদায় থাকতে। এবং অনুগত হবার প্রবণতা নারী ও পুরুষের মধ্যে নারীদের বেশি যা বিস্তারিত আমরা পরবর্তীতে দেখব।
তো স্বাভাবিকভাবেই যেই পরিবারে পুরুষকর্তা ও উচ্চ মর্যাদায় সেই পরিবার বেশি টিকে থাকবে, যেখান পার্টনারশিপ ব্যবস্থায় যখন দুইজনই স্বাবলম্বী, একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা কমে যায়,দুইজনেই সমান পর্যায়ে অবস্থান করে, ও সেই নারীর সামনে আরেক উচ্চ মর্যাদার (higher status) পুরুষ আসবে বা সেই নারী তার স্বামীকে ছাড়িয়ে যাবে, তার ফলাফল কি হবার সম্ভাবনা রাখে, তা অনুমেয়। এবং এর প্রমাণ আমরা বর্তমান সমাজের ভঙ্গুর পরিবার ব্যবস্থার দিকে তাকালেই পাই।
এছাড়াও হাইপারগ্যামি এর উদাহরণ আমরা রাসুল (স) ও তার স্ত্রী এর জীবনী থেকেই পাই। যারা রাসুল (স) ও উম্মুল মুমিনিন জয়নাব এর বিবাহের ঘটনা যারা জানেন, তারা নিশ্চয়ই জানবেন যে জয়নাব (রা) ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। তবে তার বিয়ে আজাদকৃত দাস ও রাসুল (স) এক সময়ের পালকপুত্র জায়েদ বিন হারেসার সাথে হয়েছিল। তবে তাদের তালাক হয়ে যায় এবং সকল আলেমগন এই বিষয়ে একমত যে এর কারণ হলো জয়নাব (রা) সম্ভ্রান্ত পরিবারের এবং জায়েদ একজন আজাদকৃত দাস হওয়ায় তাদের মধ্যে বনিবনা হয়নি এবং সে জয়নাব এর দৃষ্টিতে হীন রয়ে গেল। যায়েদ (রাঃ) বারবার রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট যায়নাব (রাঃ)-এর বেপরোয়া ভাবভঙ্গী এবং যায়েদকে উপেক্ষা করার অভিযোগ করতে লাগলেন। পরবর্তীতে তাদের তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে আল্লাহর হুকুমে রাসুল (স) এর সাথে তার বিবাহ হয়। এখানে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে মা জয়নাব (রা) এর সামাজিক মর্যাদা ও জায়েদ এর মর্যাদার কারণে বনিবনা হয় না। যা হাইপারগ্যামী এর সুস্পষ্ট প্রমান।
তো গোল্ডবার্গ ব্যাখার করেন যে পুরুষেরা উচ্চ স্থানীয় অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য প্রতিযোগিতা করার অন্যতম কারণ হলো এই হাইপ্যারগ্যামি। পুরুষেরা নারীর সেই পছন্দনীয় মর্যাদা অর্জনের জন্য ও অবস্থান ধরে রাখার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এবং এই হাইপারগ্যামি এমন এক প্রমাণিত বিষয় যা পুরুষদের কর্তৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে থাকার একটি যৌক্তিকতা প্রদান করে। এখানে অবশ্যই অন্যান্য শারীরিক ক্ষমতা এর বিষয় আনা যায়, তবে আধুনিক সমাজের দোহাই দিয়ে বর্তমান আধুনিকবাদি ও নারীবাদীরা পেশি ও কায়িক শ্রমের বিষয় এড়িয়ে গেলেও তারা কোনোভাবেই হাইপারগ্যামি অস্বীকার করতে পারে না।
নারী আর পুরুষ কি সমান?
নিঃসন্দেহে, না। যা বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে পারে এমন বর্তমান অসংখ্য গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত।
Scientific American এর আর্টিকেল এ Scott Barry Kaufman দেখায় যে একটা সময় এমন এক ধারণা ছিল যে নারী পুরুষ এর মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নাই কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া। তারা একই ভাবে চিন্তা করতে পারে, সমান যোগ্যতা, সমান দক্ষতা ইত্যাদি। তবে লেখক এখানে তর্ক করেন যে আমাদের এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে, আসলে বাস্তবে তাদের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায়।
তিনি লেখেন,
“when you look at the specific facets of each of these broad factors, you realize that there are some traits that males score higher on (on average), and some traits that females score higher on (on average), so the differences cancel each other out. This canceling out gives the appearance that sex differences in personality don’t exist when in reality theyvery much do exist.
“ On average, males tend to be more dominant, assertive, risk-prone, thrill-seeking, tough-minded, emotionally stable, utilitarian, and open to abstract ideas. Males also tend to score higher on self-estimates of intelligence, even though sex differences in general intelligence measured as an ability are negligible. Men also tend to form larger, competitive groups in which hierarchies tend to be stable and in which individual relationships tend to require little emotional investment. In terms of communication style, males tend to use more assertive speech and are more likely to interrupt people (both men and women) more often– especially intrusive interruptions– which can be interpreted as a form of dominant behavior. Of course, there are many men who don’t display high levels of all of these traits. But that fact doesn’t contradict the broader pattern.”
“In contrast, females,on average, tend to be more sociable, sensitive, warm, compassionate, polite, anxious, self-doubting, and more open to aesthetics. On average, women are more interested in intimate, cooperative dyadic relationships that are more emotion-focused and characterized by unstable hierarchies and strong egalitarian norms. Where aggression does arise, it tends to be more indirect and less openly confrontational. Femalesalso tend to display better communication skills, displaying higher verbal ability and the ability to decode other people’s nonverbal behavior. Women also tend to use more affiliative and tentative speech in their language, and tend to be more expressive in both their facial expressions and bodily language (although men tend to adopt a more expansive, open posture). On average, women also tend to smile and cry more frequently than men, although these effects are very contextual and the differences are substantially larger when males and females believe they are being observed than when they believe they are alone.” [8]Scott Barry Kaufman
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি যে নারী ও পুরুষের ব্যক্তিত্বের মধ্যেই পার্থক্য দেখা যায়, এবং এই পার্থক্য আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লক্ষ্য করলেই পাই। এখান থেকে আমরা পাই যে পুরুষেরা সাধারণ ভাবে গড়ে নারীদের থেকে বেশি emotionally stable (মানসিকভাবে স্থিতিশীল) , risk prone (ঝুঁকি প্রবন) , tough minded (শক্ত মানসিকতার) , dominant (প্রভাবশালী মানসিকতার), thrill-seeking (রোমাঞ্চ সন্ধানী) , বিমূর্ত চিন্তাধারার প্রতি উন্মুক্ত থাকে বেশি, ইত্যাদি।
তার বিপরীতে ,মহিলারা, গড়ে, আরও বেশি মিশুক, সংবেদনশীল (sensitive),সহানুভূতিশীল, ভদ্র, উদ্বিগ্ন, আত্ম-সন্দেহকারী এবং নান্দনিকতার জন্য আরও উন্মুক্ত মানসিকতার হয়ে থাকে। একজন নারীর চিন্তাকাঠামো ও পুরুষের চিন্তার কাঠামো মোটেই এক না। আর পুরুষদের এই সাধারন বিশিষ্টগুলো কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব, রাষ্ট্র সমাজ পরিবার পরিচালনার জন্য যেমন উপকারি তেমন অপরিহার্য। একটা রাষ্ট্রে পরিচালনার জন্য অবশ্যই আপনাকে হাইয়াররাকি ঠিক রাখতে হবে, কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিধান্ত নিতে হবে, অনেক চাপের মধ্যে মানসিকভাবে স্থিতিশীল হতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। শত্রুর প্রতি ও নিজেদের প্রতি কোঠর হতে হবে।
এছাড়াও আমরা অনেক সময় শুনে থাকি যে নারীরা নাকি বেশি আবেগপ্রবণ বা ইমোশনাল। এটা কি সত্য বা প্রমাণিত ?
উত্তর হলো; হ্যাঁ। শুধু তাই না, গবেষণায় পাওয়া গেছে যে মহিলারা নেতিবাচক উদ্দীপনার (Negative Stimuli) প্রতি বেশি সংবেদনশীল (sensitive) । এবং এই নেতিবাচক উদ্দীপনা সেখানে চিন্তার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে / করে। এবং এটা National Center of Biotechnology Information ( NCBI) থেকে B Gohier , C Senior, P J Brittain, N Lounes, W El-Hage, V Law, M L Phillips, S A Surguladze এর পেশ করা একটা রিসার্চ, “Gender differences in the sensitivity to negative stimuli: cross-modal affective priming study” থেকে উঠে আসে। যার উপসংহার বলা হয়,
“Reduced priming in negative conditions in women may reflect interference processes due to greater sensitivity to negative valence of stimuli. This in turn could underlie the gender-related differences in susceptibility to emotional disorders.” [9]Gender differences in the sensitivity to negative stimuli: cross-modal affective priming study
এই বৈশিষ্ট্য এমন একটা জিনিস যা বিভিন্ন সময়ে একজন নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তির জন্য অনেক সমস্যার হয়ে দাড়াতে পারে। কারণ একজন রাষ্ট্র পরিচালক বা পরিবার পরিচালককে অনেক সময় অনেক চাপের কঠিন ঝুঁকিপূর্ণ সাহসী সিধান্ত নিতেই হয়। এবং এটাও আসলে প্রমান করে ইসলামে পুরুষকে নারীদের উপর কর্তৃত্ব দেবার পেছনের হিকমা এবং যৌক্তিকতা।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন,
…পুরুষরা নারীদের কর্তা….। [10]সুরা নিসা, আয়াত ৩৪
এখন আমরা আরো কিছু বিষয়ে আলোকপাত করব।
In group vs Out group
প্রথমেই ব্যাখা করা যাক in group বলতে কি বুঝাচ্ছি ও out group বলতে কি বুঝাচ্ছি। মানুষ সামাজিক জীব এবং মানুষ স্বভাবগতভাবেই নিজের মানসিকতা ও চিন্তাধারার অথবা অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য এর সাথে মিলে, এমন মানুষদের সাথে একটা অদৃশ্য বন্ধন গঠন করে, দলগত হয়। সেটা হতে পারে ভাষার ভিত্তিতে বা জাতীয়তা, ধর্ম , সমাজ, মতাদর্শের ভিত্তিতে। মানুষের তার সেই দলের বা মতের মানুষকে ভালোবাসে, সাহায্য করে, রক্ষা করে, একসাথে থাকে এবং নানা বন্ধনে নিজেদের টিকিয়ে রাখে। একে বলে in group । এবং এর বাইরে যারা আছে, তারা হলো out group। এবং in group এর প্রতি মানুষের আচরন ও out group এর প্রতি মানুষের আচরন এক না।
উদাহরন দেয়া যায় একটা রাষ্ট্রের সকল মানুষ মিলে একটা in group। এবং বাইরের শক্তি out group। অথবা একই বিশ্বাসের দল, অথবা খেলার দল, সেই ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হতে পারে।
লক্ষ্য করার বিষয় হল এই in group ও out group এর প্রতি নারী ও পুরুষের মানসিকতা ও ব্যবহার সমান না।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়,
পুরুষেরা সাধারনত নারীদের তুলনায় out group এর প্রতি বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতা পোষণ করে। মহিলারা out group এর প্রতি পুরুষদের মতো তেমন আক্রমণাত্মক এবং স্ট্রেস্ফুল নয়। সুতরাং এটা নারী এবং পুরুষের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য।
সাইকোলজিস্ট Melissa M. McDonald, Carlos David Navarrete ও Mark Van Vugt তাদের একটা গবেষণা “The male warrior hypothesis” এ বলেন,
“Research on discrimination against outgroups using a punitive allocation task shows that men are willing to endure greater sacrifices by their own group in order to exact a greater punishment on an outgroup, but as predicted by the male warrior hypothesis, only when the outgroup is composed of men. By contrast, women tend to equalize punishment across the ingroup and outgroup and do not show evidence of discrimination based on gender. This provides further evidence that men tend to be more discriminating against outgroups than do women, but also suggests that intergroup bias is primarily directed at men, particularly when it is framed as a competitive enterprise.” [11]Evolution and the psychology of intergroup conflict: the male warrior hypothesis
এখান থেকে দেখা যাচ্ছে, পুরুষেরা সাধারণত মহিলাদের থেকে বেশি ও বড় উৎসর্গ করে নিজের দলের জন্য এবং out group এর জন্য বেশি কঠোর, আগ্রাসী, কঠিন শাস্থি আরোপ করে। যার বিপরীতে নারীরা in group ও out group প্রতি শাস্থি ও পদক্ষেপ অনেকটা সমান করতে চায় এবং কোনো পক্ষপাতিত্ব করতে চায় না (সাধারনত)। এটাও অনেক বড় একটা ভাবনার বিষয়। যদি মুসলিম রাষ্ট্রের নেতা হয়ে ন্যাটো অথবা ক্রুসেইডারদের প্রতি কঠোর না হয়, তাদেরকে প্রতি কঠোর না হয়ে সমতার কথা ভাবে, সেটা খুবই ভয়ানক বিষয়। এছাড়াও একই আর্টিকেল এ বলা হয়,
“men’s voluntary cooperative contributions to their group increase when the group is faced with an external threat”
“যখন গ্রুপটি বাহ্যিক হুমকির সম্মুখীন হয় তখন তাদের গোষ্ঠীতে পুরুষেরা স্বেচ্ছায় সহযোগিতামূলক অবদান বৃদ্ধি পায়।”
তবে তার মানে এই না যে নারীরা কোনো উৎসর্গ তার দলের জন্য করে না বা করতে পারে না, সেটা সাধারনভাবে তুলনামূলক কম হয়।
এছাড়াও প্রমান পাওয়া যায় নারীদের out group প্রতি কম বিদ্বেষ বা পক্ষপাতিত্বমূলক মনোভাব (prejudice) দেখা যায় এবং তাদের প্রতি অনুরাগ (affinity) থাকার সম্ভাবনা দেখা যায়। যেটা কিছু ক্ষেত্রে বেশ ভয়ানক হতে পারে।
তবে নারীদের এই বৈশিষ্ট্য গুলো আবার in group এর জন্য উপকারী। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই চাইবো আমাদের in group এমন মানুষ থাকুক যারা নিজেদের দলের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করবে, যারা নিজেদের মধ্যে হানাহানি, প্রতিযোগিতা কম ও কমাতে সাহায্য করবে, যাদের থাকবে মততা, যারা কম আগ্রাসী হবে। এগুলা in group এর জন্য খুবই জরুরি এবং অপরিহার্য। একটা পরিবার, সমাজ, সংগঠন ধরে রাখতে এগুলো খুবই জরুরী। এবং এই জন্য ইসলাম নারীকে তার সহজাত অনুযায়ী যথার্থ দায়িত্বই দেয়। তবে যখন in group বনাম out group গ্রুপ হচ্ছে, যখন interrelations, foreign relations এর বিষয় আসে, তখন পরিস্থিতি ও প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন, এবং এই ধরনের প্রবণতা বড় ধরনের সমস্যা।
এছাড়াও একটা বিশেষ রিসার্চ পাওয়া যায় যে নারীরা বীরত্ব ও পরাক্রমশালিতা দ্বারা দুর্বল ও আকর্ষিত হয় বিশেষ করে যুদ্ধের ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে। এবং এই ক্ষেত্রে নারীরা যার তার ক্ষেত্রে দুর্বল হয় না, নির্দিষ্ট ভাবে যারা বীর বা হিরো। যারা নেতৃত্ব স্থানীয় অবস্থানে বীরত্ব দেখায়, যারা অপর পক্ষকে ডমিনেট করতে পারে, যারা সামনে এগিয়ে এসে প্রমান করে যে তারা নিজেদের কে উৎসর্গ করতে যানে। সাইনস ডিরেক্ট এর Historical and experimental evidence of sexual selection for war heroism টাইটেল এর আর্টিকেল এ বলা হচ্ছে
“ We find evidence that female participants specifically regard men more sexually attractive if they are war heroes. This effect is absent for male participants judging female war heroes, suggesting that bravery in war is a gender specific signal. Finally, we discuss possible implications of our results”. [12] Historical and experimental evidence of sexual selection for war heroism
অর্থাৎ নারীরা পুরুষ বীরদের প্রতি আকৃষ্ট হলেও একই ঘটনা পুরুষদের ক্ষেত্রে নারী বীর বা যোদ্ধাদের প্রতি ঘটে না। লক্ষ্য করার বিষয় আমরা এখানেও হাইপারগ্যামি এর প্রমান দেখতে পাই। আর নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রবণতাও খুব ভয়ানক হতে পারে কারণ যুদ্ধে দুই পক্ষের বীর থাকে ও কোনো নারীরা যদি কোনো বীর দ্বারা আকৃষ্ট হয় এবং প্রতিপক্ষের প্রতি কম আগ্রাসী ও বিরাগী হয় সেটা বিশাল একটা হুমকি। এবং প্রতিনিয়ত একটা রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত আক্রমণের স্বীকার হতে পারে যার সাক্ষী ইতিহাস। এবং শত্রু পক্ষও এর দ্বারা নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে লাভবান হবার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে।
শুধু তাইই না, Shalom H Schwartz এর একটা কাজে পাওয়া যায় যে নারীরা সার্বজনীনতার (universalism)জন্য পুরুষদের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে বেশি গুরুত্ব দেয়। Shalom H Schwartz তার “Cross-National Variation in the Size of Sex Differences in Values: Effects of Gender Equality” এই বিষয়ে আলোচনা করেন। [13]Cross-National Variation in the Size of Sex Differences in Values: Effects of Gender Equality
এবার শুধু চিন্তা করে দেখি,
Hypergamy এর বৈশিষ্ট্য + Sociable, sensitive, warm, compassionate, polite, anxious, self-doubting, and more open to aesthetics প্রভৃতি মনোভাব + Sensitivity to negative stimuli + out group এর প্রতি কম aggression , prejudice, and punishment equalize করার সম্ভাব্য হলো সকলের মধ্যে সমঝোতা ও বোঝাপড়া করে, সহিষ্ণুতার মাধ্যমে সকলে মিলেমিশে থাকার ধারণা। সহজ ভাষায় “কম ঝামেলায় জড়ানোর মানসিকতা”
এটাও শত্রু পক্ষের জন্য উপকারী এবং নিজের গ্রুপের জন্য ভয়ানক হবার সম্ভাবনা রাখে। বরং এই প্রবণতা শত্রু পক্ষকে সুবিধা করে দিতে পারে।
এবং ইসলামের জন্য এই প্রবণতা আরো বড় সমস্যা কারণ ইসলামের একটা জরুরী বিষয় হলো “আল ওয়ারা ওয়াল বারা” অর্থাৎ মুমিনদের সাথে বন্ধুত্ব ও কাফেরদের শাথে শত্রুতা পোষণ। এবং একটা আদর্শভিত্তিক কমিউনিটি এর আদর্শ ও ক্ষমতার সংরক্ষণ ও প্রসারের জন্য এটি খুবই যৌক্তিক এবং জরুরী। এবং এর প্রয়োজনীয়তা আমরা ইতিহাসে বার বার দেখেছি কিভাবে কাফেররা আমাদের উপর আক্রমণ নির্যাতন ও প্রতারনা করেছে এবং করে যাচ্ছে। পার্থক্য হলো আগে আক্রমণ করতো নাসারা হয়ে, এখন আক্রমণ করে সেই নাসারাদের বংশধরেরা সেকুলার হয়ে। আগে চালানো হতো ক্রুসেইড, এখন চালানো হয় ওয়ার অন টেরর। উম্মতকে কাফেরদের থেকে পৃথক এবং সুরক্ষিত রাখা, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন হওয়া, তাদের মোকাবেলা করা, এর জন্য পুরুষেরাই অধিক উপযোগী। সুতরাং এই সার্বজনীনতার প্রবণতাও মুসলিম উম্মাহ সহ যেকোনো সাম্রাজ্যের জন্য নেতিবাচক হয়ে ওঠতে পারে।
মনোভাব ও out group এর প্রতি অনুরাগ (affinity) থাকার সম্ভাবনা ) + (Attraction to heroism) + (Giving more importance to UNIVERSALISM) = VERY DANGEROUS FOR LEADERSHIP
এখান থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায় আল্লাহর এই আইনের পেছনে হিকমা। তবে এখানেই শেষ নয়। আমরা আলোচনা আরেকটু দীর্ঘ করব। শুধু মাত্র in group vs out group nature এই না, বরং আরো কিছু বিষয়ে আমরা আলোকপাত করবো।
চীন এ কিছু স্কুল ছাত্রের উপর একটা পরীক্ষা করে হয়। এমন পরীক্ষকরা দেখতে চেয়েছিল যে কিভাবে এই ছেলে মেয়েরা ক্যান্ডি আর নাস্তা বিতরণ করে। তাই শিক্ষকরা প্রথমে ক্লাসে খাবার আনে এবং মেয়েদের প্রথমে সেটা গ্রহন করতে বলে তাদের ইচ্ছা মতো, এবং ছেলেদের নিতে দেয়া হলো না। সুতরাং মেয়েরা সেই ক্যান্ডি নিল এবং যারা আগে নিল তারা তুলনামূলক ভালো আর জনপ্রিয় ক্যান্ডিগুলো পেল এবং যারা পরে নিল, তারা তুলনামূলক সাধারন ক্যান্ডি পেল। এরপর শিক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করতে থাকল যে কি হয়। দেখা গেল যে মেয়েরা ক্লাসের একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক অল্প কিছু ছেলেদের সাথে সেই ক্যান্ডি ও নাস্তা ভাগ বা শেয়ার করল, এবং তারা ছিল ক্লাসের পপুলার, জনপ্রিয়, সুদর্শন, ব্রিলিয়েন্ট ছেলেরা। মেয়েরা শুধু মাত্র ক্লাসের high status ছেলেদের সাথেই শেয়ার করল, এবং তারা এই বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিল। তবে ক্লাসের low status ছেলেরা, যারা দেখতে তেমন আকর্ষণীয় না, পিছিয়ে থাকা ছেলেরা তারা কিছুই পেল না, শুধু তাইই না, মেয়েদের কাছে যখন তারা চাইতে গেল, তাদের বেশিরভাগ কে তাচ্ছিল্যের ভাব করে খারাপ ব্যাবহার করে সরিয়ে দেয়া হলো। তারা কিছুই পেল না।
সুতরাং ক্লাসের জনপ্রিয় ছেলেদের সাথে খাবার শেয়ার করা হলো এবং ক্লাসের এক অংশ কিছুই পেল না। তবে পরের দিন সেই একই ভাবে খাবার আনা হলো এবং এই বার ছেলেদের বলা হলো ক্যান্ডি নিতে। তবে এটা দৈব্য ভাবে। যারা আগে গেল তারা ভালো ক্যান্ডি নিল, যে পরে গেল সে একটু কম ভালো ক্যান্ডি পেল। তবে যেহুতু র্যান্ডমি বা দৈব্যভাবে ছেলেদের পাঠানো হল, তাই ক্লাসের কিছু অজনপ্রিয় পেছানো ছেলেরা, যাদের আগেরদিন হাত খালি ছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সেরা ক্যান্ডি গুলো পেল। এবং আবার শিক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করল যে কি হয়, তবে এইবার দেখা গেল যে ছেলেরা প্রায় সকল মেয়ের সাথেই খাবার শেয়ার করল, ক্লাসের জনপ্রিয় মেয়েরাও ক্যান্ডি পেল এবং অজনপ্রিয় মেয়েরাও ক্যান্ডি পেল, বরং আগের দিন যেই মেয়েরা কিছু ছেলেদের ফিরিয়ে দিয়েছিল, সেই ছেলেরাও ক্যান্ডি শেয়ার করল সেই মেয়েদের সাথে। বরং সেই মেয়েরা এবার নিজেদের আকর্ষণীয়তাকে ব্যবহার করল সেই ছেলেদের সাথে মেশার জন্য ও ক্যান্ডি নেওয়ার জন্য। এবং সেই ছেলেরাও এইবার খুব বন্ধুসুলভ আচরন করল তাদের সাথে। তারাও ক্যান্ডি পেল। এবং কারো হাত খালি থাকল না। সুতরাং যখন ছেলেদের কে সুযোগ দেয়া হলো ক্যান্ডি নেয়ার জন্য, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পেলই।
এমন আরো কিছু গবেষণা নিয়ে ২০১৭ সালে Henry Markovits তার টিমের সাথে প্যাপার পাবলিশ করে যার নাম, “High status males invest more than high status females in lower status same-sex collaborators” [14]High status males invest more than high status females in lower status same-sex collaborators
যেখানে দেখানো হয় যে, উচ্চ মর্যাদার (high status) নারীরা নিম্ন মর্যাদার (low status) পুরুষদের সাথে রিসোর্স বিতরণ বা শেয়ার করতে কম আগ্রহী। তবে তার বদলে উচ্চ মর্যাদার (high status) পুরুষেরা নিম্ন মর্যাদা low status ও উচ্চ মর্যাদার (high status) নারীদের সাথে রিসোর্স বিতরণ ও শেয়ার করতে কম আগ্রহী নয় বরং তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো আগ্রহী।
এর মধ্যে আবার প্রমান হয় যে নারী পুরুষ এই দিক দিয়েও সমান না। একটা সমাজে সবসময়ে শ্রেণিবিন্যাস বা হায়ারারকি থাকবে এবং সেখানে সকলেই হক রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই ফিচার হয়তো পরিবারে সন্তানদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলবে না, তবে নারী যদি নেতৃত্ব বা এর সাথে জড়িত জরুরী পদে আসে, তাহলে কি সেটা ভাবনার বিষয় নয় ? স্বাভাবিকভাবেই মানুষ এমন একজন নেতা চাইবে যে স্বাভাবিক ও সহজাতভাবেই সকলকে রক্ষার জন্য স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আগ্রহী হবে, সকলের জন্য সুবিধা প্রদান করবে তাদের যেই অবস্থানই হক না কেন, তবে এটা সাধারণ পুরুষেরা নারীদের তুলনায় বেশি স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে করে থাকে।
এবং এই ধরনের পার্থক্য Academic Context এও পাওয়া যায়। এমনও গবেষণা আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে,
যখন নারীরা অ্যাকাডিমিয়াতে উচ্চতর পদ অর্জন করে তখন, এবং উচ্চতর দায়িত্ব গ্রহন করে, তারা পুরুষদের তুলনায় কম আগ্রহী কম-মর্যাদার নারীদের সাহায্য করতে, যার বদলে পুরুষেরা নিম্ন বা কম মর্যাদার নারী ও পুরুষদের তুলনামূলক বেশি আগ্রহের সাথে সাহায্য করে। এবং বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এটা বার বার প্রমাণিত হয়ছে। এবং এটা ছোটদের মধ্যেও পাওয়া যায়, যা প্রমান করে এটা সামাজিকভাবে প্রভাবিত কোনো বৈশিষ্ট্য না, বরং এটা নারী পুরুষের বায়োলজির সাথে জড়িত।
এবং আরেকটি খুব ইন্ট্রেস্টিং ব্যাপার দেখা যায়, যাকে বলা হয় “Queen Bee syndrome“ যা সর্বপ্রথম গবেষক G.L. Staines আবিষ্কার করে। (যদিও অনেকেই এই বিষয়েও দ্বিমত করেন) এটি মূলত হলো,
“women in a position of authority who views or treats subordinates more critically if they are female” অর্থ “কর্তৃত্বের অবস্থানে (বস, ম্যানেজার, নেতা) থাকা নারীরা তাদের নারী অধস্তনদের আরও সমালোচনামূলকভাবে (critically) দেখেন বা আচরণ করেন” [15]Queen Bee syndrome
এবং গবেষনায় দেখা যায়, বস বা ম্যানেজার হিসেবে কর্তৃত্ব স্থানীয় পুরুষদের তুলনায় কর্তৃত্ব স্থানীয় নারীরা বিশেষ করে করপোরেট ও ব্যবসা জগতে, তাদের অধিনস্ত বা কর্মচারীদের বেশি রুঢ় এবং জটিল আচরন করে। এবং তারা একে যেভাবে ব্যাখ্যা করে, তাহলে নারীরা যখন উচ্চ অবস্থানে যায় তখন তাদের অধিনস্ত ও কর্মচারীদের সাহায্য করার প্রবণতা তুলনামূলক কম দেখা যায়। এবং বিভিন্ন সার্ভেয় তে যখন নারী ও পুরুষদের জিজ্ঞেস করা হয় যে তারা নারী ম্যানেজার এর সাথে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে নাকি পুরুষ ম্যানেজারদের সাথে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, বেশিরভাগ নারী ও পুরুষ উভয়েই বলে যে তারা পুরুষ ম্যানেজার এর সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এর কারনে তাদের অতীতের অভিজ্ঞতা।
এবং আরেকটা বিষয় এখানে আসে সেটা হলো Conformity,
“Sex Differences in Conformity: Status and Gender Role Interpretations“ গবেষণা পত্রে Alice H. Eagly দেখায় যে
“The experiment examines status and gender role explanations of the tendency for women to conform more than men in group pressure settings” [16]Sex Differences in Conformity: Status and Gender Role Interpretations
অর্থাৎ চাপের মুখে পুরুষদের তুলনায়, নারীদেরকে উচ্চ মর্যাদার পুরুষদের মেনে নেওয়ার/অনুগত হওয়ার/বাধ্য হবার ( conform) প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এবং গবেষণায় আরো দেখা যায় পুরুষদের মধ্যে অবাধ্য (stubborn) হবার প্রবণতা নারীদের তুলনায় বেশি এবং তারা অন্যদের দ্বারা পছন্দ ও আকর্ষিত হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়েও খেয়াল কম।
এবং এই Conformity এর প্রবণতা পরিবার ব্যবস্থা এর জন্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেশ ভালো, এবং একটি চেইন অফ কমান্ড তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তবে যখন বিষয়টা ওয়িলায়া বা নেতৃত্বের বিষয়ে আসবে, স্বাভাবিকভাবেই Conformity কেউ চাইবে না।
এবং একটা স্টাডিতে দেখা যায়,
“Female participants had a stronger tendency than male participants to view the female candidates as less qualified than the male candidate . . . they also thought that the female candidate would fare worse in the future in her job than the male candidate.”
যার অর্থ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী পুরুষদের তুলনায় নারীদের অধিক প্রবণতা দেখা যায় নারীদের কম যোগ্য হিসেবে দেখতে এবং নারীদের মধ্যে এই চিন্তাও দেখা যায় যে তারা মনে করতো নারীরা হয়তো পুরুষদের থেকে ভবিষ্যতে কম ভালো করবে। [17]Office queen bees hold back women’s careers
এর থেকেও বঝা যায় যে নারীদের মধ্যে স্বভাবজাতভাবেই পুরুষদের অনুগত হবার প্রবণতা বেশি এবং পুরুষদের কর্তৃত্ব করার প্রবণতা বেশি, যা হাইপারগ্যামি এর সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। এবং এই পর্যন্ত আমরা যতগুলো বৈশিষ্ট্য দেখলাম, এর একটা উদাহরন আমরা এখন কুরআন থেকে দেখব। সেটা হলো রানী বিলকিসের ঘটনা।
রাণী বিলকিস ও সুলাইমান (আঃ)
বর্তমানে অনেক হিজাবী ফেমিনিস্ট, মডারেট, রিফরমিস্টরা নারী নেতৃত্ব ইসলামে জায়েজ দেখানোর জন্য সকল হাদিস অস্বীকার করে। ও রানী বিলকিস এর ঘটনা দেখায়। তবে মজার বিষয় হয় এই ঘটনা উল্টো তাদের বিপরীতে প্রমাণ দেয়, কেন নারী নেতৃত্ব গ্রহণযোগ্য না, সেটার প্রমাণ দেয়।
কুরানের সুরা নামল এর অংশের অনুবার উল্লেখ করি,
“অতঃপর হুদহুদ অবিলম্বে এসে বলল- ‘আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে নিশ্চিত খবর নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। আমি দেখলাম এক নারী তাদের উপর রাজত্ব করছে আর তাকে সব কিছুই দেয়া হয়েছে আর তার আছে এক বিরাট সিংহাসন । ‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহ্র পরিবর্তে সূর্যকে সাজদা করছে । আর শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের কাছে সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে বাধাগ্রস্থ করেছে, ফলে তারা হেদায়েত পাচ্ছেনা ; তারা নিবৃত্ত রয়েছে আল্লাহকে সাজদাহ করা হতে, যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর লুকায়িত বস্তুকে প্রকাশ করেন, এবং যিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা প্রকাশ কর। আল্লাহ্, তিনি ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি মহা‘আরশের রব। সুলাইমান বললেন, ‘আমরা দেখব তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যুকদের অন্তর্ভুক্ত ? আমার এই পত্র নিয়ে যাও আর এটা তাদের কাছে অর্পণ কর। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় তারপর দেখ, তারা কী জবাব দেয় । সেই নারী বললঃ হে পরিষদবর্গ! আমাকে এক সম্মানিত পত্র দেয়া হয়েছে। এটা সুলাইমানের পক্ষ হতে আর তা এই : অসীম দাতা, অতীব দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু। ‘যাতে তোমরা আমার বিরোধিতার ঔদ্ধত্য প্রকাশ না করো এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও’। সেই নারী বললঃ হে পরিষদবর্গ ! আমার এই সমস্যায় তোমাদের অভিমত দাও; আমি যা সিদ্ধান্ত নিই তাতো তোমাদের উপস্থিতিতেই নিই। তারা বলল– ‘আমরা শক্তির অধিকারী ও কঠোর যোদ্ধা, কিন্তু সিন্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী আপনিই, কাজেই চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী আদেশ করবেন।’ সে বলল- ‘রাজারা যখন কোন জনপদে ঢুকে তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং তথাকার সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অপমানিত করে ছাড়ে আর এরাও তাই করবে। আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, দেখি দূতেরা কি বার্তা নিয়ে ফিরে আসে! অতঃপর যখন দূত সুলাইমানের নিকট এলো তখন সুলাইমান বললঃ তোমরা আমাকে ধন-সম্পদ দিয়ে কি সাহায্য করবে? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে উৎকৃষ্ট। অথচ তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে আনন্দ বোধ করছ। তাদের কাছে ফিরে যাও, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবালা করার শক্তি তাদের নেই, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদেরকে অপমানিত করে সেখানে থেকে বের করে দেব আর তারা হবে অপদস্থ।’ সুলাইমান বলল- ‘হে সভাসদবর্গ! তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে ? এক শক্তিশালী জিন বললঃ আপনি আপনার স্থান হতে উঠার পূর্বে আমি ওটা আপনার নিকট এনে দিব এবং এ ব্যাপারে আমি অবশ্যই ক্ষমতাবান, বিশ্বস্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল সে বললঃ আপনি চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি ওটা আপনাকে এনে দিব। সুলাইমান যখন ওটা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখল তখন সে বললঃ এটা আমার রবের অনুগ্রহ যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, আমি কৃতজ্ঞ না অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তা করে তার নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ হয় সে জেনে রাখুক যে, আমার রাব্ব অভাবমুক্ত, মহানুভব। সুলাইমান বললঃ তার সিংহাসনের আকৃতি বদলে দাও; দেখি সে সঠিক দিশা পায়, না কি সে বিভ্রান্তের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐ নারী যখন এলো, তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলঃ তোমার সিংহাসন কি এইরূপই? সে বললঃ এটাতো যেন ওটাই; আমাদেরকে ইতোপূর্বেই প্রকৃত জ্ঞান দান করা হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পনও করেছি। আল্লাহর পরিবর্তে সে যার পূজা করত তাই তাকে সত্য পথে চলা থেকে বাধা দিয়ে রেখেছিল, সে নারী ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হল, ‘প্রাসাদটিতে প্রবেশ কর।’ অতঃপর যখন সে সেটা দেখল তখন সে সেটাকে এক গভীর জলাশয় মনে করল এবং সে তার পায়ের গোছা দুটো অনাবৃত করল। সুলাইমান বললেন, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক মণ্ডিত প্রাসাদ। সেই নারী বলল, ‘হে আমার রব! আমি তো নিজের প্রতি যুলুম করেছিলাম , আর আমি সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্র কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’ [18]সুরা নামল, ২৭ঃ২২-৪৪
এখানে বিল্কিস যখন সুলাইমান (আ) এর বার্তা পায়, তখন বিল্কিস সবার প্রথমে কি করে? সবার প্রথমে নিজে কিছু না করে তার পরিষদের কাছে পরামর্শ চায়। এবং পরিষদের লোকেরা কি বলল? দেখুন তারা প্রথমের আক্রমণাত্মক কথা বলে, তারা বলে যে , “আমরা শক্তির অধিকারী ও কঠোর যোদ্ধা”। এখানেই কিন্তু নারী পুরুষের মাঝের মানসিকতার যেই পার্থক্য সেটা সুস্পষ্ট। কিন্তু বিল্কিস ডিফেন্সিফ সিধান্তই নেয়। বিল্কিস বলে, “রাজারা যখন কোন জনপদে ঢুকে তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং তথাকার সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে অপমানিত করে ছাড়ে আর এরাও তাই করবে। আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি”। অর্থাৎ বিল্কিস এখানে সমস্যায় না জড়িয়ে সমঝতার জন্য আগায়। আমরা উপরে এতক্ষণ নারীর যেইসব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করলাম, সেগুলোর প্রতিফলন সরাসরি বিল্কিসের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সে সুলাইমান এর কাছে উপঢৌকন পাঠায়। তবে সেটার বদলে সুলাইমান (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করে। দেখুন সুলাইমান (আঃ) এর জ্ঞান, তিনি জানে যে তিনি একজন নারীর সাথে ডিল করছে, তিনি কি করলেন? তিনি এক জীনের মাধমে বিল্কিসের সিংহাসন নিয়ে এসে আসে, তার নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করে। তিনি দেখালেন তিনি কতো উচ্চ মর্যাদার, কতো ক্ষমতা ও পরাক্রমশালী, কতো সম্পদশালী। এবং বিল্কিস যখন পানির মত দেখতে স্বচ্ছ কাঁচের উপর হাঁটে, সুলাইমান (আঃ) এর এতো ক্ষমতা দেখে সাথে সাথেই সুলাইমান (আঃ) এর আনুগত্য স্বীকার করে নেয়, আত্মসমর্পণ করে। শুধু তাইই না, বিল্কিস সবার আগের ভুলের আঙ্গুল নিজের দিকেই তাক করে, সে নিজের ভুলদের কথা স্বীকার করে।
তবে এখানে বিল্কিসের বদলে যদি একজন পুরুষ থাকতো সে কি করতো? সে হয়তো অপমানবোধ করতো, আগ্রাসী সিধান্তের দিকে আগে যেত, বিকল্প না পেলে হয়তো অন্য সিধান্তে যেত, হিংসা কাজ করতো, ইত্যাদি।
আপনিই বলুন, আপনি কি এমন একজন নেতা চাইবেন যে আগে সাহসিকতা না দেখিয়েই সমঝোতার জন্য আগাবে?, যে শত্রুর ক্ষমতা দেখে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে দিবে? বরং এমন নারী নেতৃত্ব কাফেরদের জন্য উপকারী। এটা শত্রুর জন্য একটা বেশি সুবিধা যে তার প্রতিপক্ষে একজন নারী রয়েছে যার এমন প্রবণতা কাজ করে।
বরং কুরআনের এই ঘটনা আসলে নারী নেতৃত্বের বিপক্ষেই প্রমাণ দেয়।
এবং নারী নেতৃত্ব যে শত্রুর জন্য উপকারী তার এক ঝলক আমরা এখনি দেখব।
একটু তাকিয়ে দেখা
আমরা যদি উপনিবেশবাদ এর দিকে তাকাই, তাহলে দেখব যে উপনিবেশবাদীরা নারী ক্ষমতায়ন এর খুবই পক্ষে ছিল। তারা নারীদেরকে নেতৃত্বে আনতে চাইতো, নারীদেকে সামনের কাতারে আনতে চাইতো, তারা সিধান্ত নেবার বিষয়গুলো নারীদের সাথে পরামর্শ করতে চাইতো অনেক সময়। কেন? খুবই সহজ। এর কারনে তারা যত না সহজে পুরুষদের প্রভাবিত করতে পারবে তার থেকে বেশি নারীদের প্রভাবিত করতে পারবে। পুরুষদের আউট গ্রুপের প্রতি বেশি আগ্রাসী মনোভাব থাকে, আল ওয়ারা ওয়াল বারা এর মানসিকতা বেশি থাকে।
এবং এর সবচেয়ে বাস্তব সাম্প্রতিক প্রমাণ পাওয়া যায় ট্র্যাম্প এর ওয়াইট হাউসের একটা ফাস হওয়া মেমো থেকে। সেখানে State Department বলে,
“Focusing on female-empowerment as the primary information messaging goal within the Islamic-influenced world will allow the United States to maintain a moral component for American power and its liberation narrative,” [19]LEAKED STATE DEPARTMENT MEMO ADVISED TRUMP ADMINISTRATION TO PUSH FOR “ISLAMIC REFORMATION”
দেখুন, এটাকি অসাধারণ না? তারা নির্দিষ্ট ভাবে মুসলিম বিশ্বে নারীদের ক্ষমতায়ন চায়, ইসলামকে পুনরজাগরণ করতে চায়, তাদের আধিপত্য এবং প্রভাব বিস্তারের সুবিধার্থে। এটা কি যথেষ্ট লক্ষণীয় বিষয় না? আমাদের শত্রুরা আমাদের নারীদের ঘর থেকে বের করতে চাচ্ছে তাদের সুবিধার্থে, তবে আমাদের আলেমগন নারীদের ঘরে থাকতে বললে তারা “কাঠমোল্লা” হয়ে যায়। আমেরিকানরা চায় যে মুসলিম বিশ্বে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নারীরা থাকুক এবং তাদের মাধ্যমে তাদের আদর্শ ছড়িয়ে দিতে, এবং আধিপত্য বিস্তার করতে। এবং আমেরিকা অনেক আগেই তাদের প্রকল্প গ্রহন করেছে কিভাবে মডারেট মুসলিম নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়, এবং এই বাস্তবায়ন এ তারা বেশ সফল। সেই মডারেট মুসলিম তৈরি করা যারা আমেরিকার জন্য উপকারী, যারা মেনে নিবে আমেরিকার লিবারেল সেকুলার আদর্শ। যারা গনতন্ত্র মেনে নিবে, নারীক্ষমতায়ন মেনে নিবে, যারা বাহিরে হবে বাদামি, তবে ভিতরে হবে সাদা, অর্থাৎ তারা বাদামি চামড়ার হলেও, ভিতরে সাদা চামড়ার মানুষদের মতো হতে চাইবে। মানে আধুনিক(কথিত) হতে চাইবে।
RAND থেকে প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপার
এই ষড়যন্ত্রের দুনিয়ায় আমাদের উম্মাহর বিরাট অংশ বড্ড বিভ্রান্ত!
একটি হাদিসে পাওয়া যায়,
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমাদের শাসক হবে তোমাদের ভালো লোকেরা, তোমাদের বিত্তবান ব্যক্তিরা হবে দানশীল এবং তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদিত হবে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন জমিনের পেট অপেক্ষা তার পিঠ হবে তোমাদের জন্য শ্রেয়। পক্ষান্তরে যখন তোমাদের খারাপ লোকেরা হবে তোমাদের শাসক, বিত্তবান লোকেরা হবে কৃপণ এবং তোমাদের কাজকর্ম অর্পণ করা হবে নারীদের ওপর তখন জমিনের পিঠ অপেক্ষা তার পেট হবে তোমাদের জন্য শ্রেয়। [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন, হাদীসটি গরীব। [20]মিশকাত শরীফ; ৫৩৬৮ [21]তিরমিযী ; ২২৬৬
যদিও হাদিসটি অনেক আলেমদের মতেই যইফ, তবুও এটি যুক্তিসঙ্গত। প্রতিটি সভ্যতার একটা উত্থান, অবক্ষয় ও পতনের পর্যায় থাকে, এবং সেই অবক্ষয় কালের মধ্যে যৌন বিকৃতি এর মতন অনেক বিষয়ও দেখা যায়। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়া ও অর্থনৈতিক অবস্থার আভাস দেখে অনেকেই এখন ধারণা করছে যে পশ্চিমা সভ্যতা বিশেষ করে আমেরিকার একাধীপত্যের কাল ঘনিয়ে আসছে এবং হয়তো আবার অন্য কোনো শক্তি মাথাচারা দিয়ে বসবে। আজ যদি আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট নারীও হয়, এটা আমেরিকার শত্রুদের মোটেও কোনো কষ্টের ব্যাপার না।
যদিও ২০১৯ সালে একটা গবেষণা অনুযায়ী এখনো আমেরিকার অর্ধেক পুরুষ ও অর্ধেকের বেশি নারীরাই একজন নারী রাষ্ট্রপতি এর বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। forbes এর একটি আর্টিকেল এ বলা হচ্ছে,
49% of men and 59% of women in the U.S. would feel “very comfortable” with a woman as the head of government. [22]Almost Half Of Men In The U.S. Are Uncomfortable With A Female President (forbes.com)
আমরা কি বলছিনা
আমরা বলছিনা যে একজন নারীর পক্ষে ভালো নেতা হওয়া অসম্ভব বা সকল নারীর মধ্যেই একই স্বভাব থাকে। না, বরং এখানে সাধারন অবস্থার কথা বলা হচ্ছে এবং আইন সর্বদা সাধারন অবস্থা এই উপর ভিত্তি করে হয়। উদাহরনস্বরূপ ড্রাইভিং এর জন্য লাইন্সেন্স এর নুন্যতম বয়স হলো ১৮, তার মানে কি এই যে একজন ১৫ বছরের ছেলে কখনোই নিরাপদভাবে মহাসড়কে গাড়ি বা বাইক চালাতে পারবে না? না, হতেও পারে সে একজন ৩০ বছরের লোকের থেকে ভালো চালায়। তবে আইন সাধারন অবস্থার উপর নির্ভর করে হয়, এবং যারা এর বাইরে পরে, তাদের স্যাক্রিফাইস করতে হয় অনেক সময়। এখানে সুযোগের সমতা (equal opportunity) এর কথাও অযৌক্তিক। আমি যখন বর্তমান সাধারন অবস্থা জানি, তখন কি আমি বলবো যে ১৫ বছরের ও ৩০ বছরের লোককে সমানভাবে ড্রাইভিং এর সুযোগ দেয়া উচিত? মোটেও না।
আমরা বলছিনা যে নারীদের এই বৈশিষ্ট্য গুলো তাদের দুর্বলতা, মোটেও না। তাদের যে দায়িত্ব আল্লাহ দিয়েছে, সেখানে তাদের জন্য এটা তাদের শক্তি। তবে কেউ যদি পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় গীতাঞ্জলী পড়ে যায়, সেটা তো হবে না। যেখানে যেই প্রয়োজন, সেখানে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আল্লাহ নারীদের যেই সহজাত বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, সেই অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, পুরুষদের যেই সহজাত, সেই অনুযায়ী দায়িত্ব দিয়েছে, এবং তাদের নিজেদের ক্ষেত্রে তাদের বৈশিষ্ট্য তাদের জন্য শক্তি। বরং ইসলাম নারী ও পুরুষকে সুষমভাবে, তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন করে এবং কার কি দায়িত্ব তা বলে দেয়, এবং সেটা তার, তার পরিবার তার সমাজ ও উম্মতের জন্য উপকারী। সেটা তার ভালো লাগুক বা না লাগুক। যৌক্তিক লাগুক বা না লাগুক। এবং আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছি আল্লাহর এই আইনের পেছনে যেই গভীর জ্ঞান, তা কতো বাস্তবসম্মত!
কখনোই সফলকাম হতে পারবে না?
আমরা একটা হাদিস দেখতে পারি যে, রাসুল (স) বলেন যে,
সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে। [23]সহিহ বুখারী ৭০৯৯ ,৪৪২৫
নিঃসন্দেহে এটা সহিহ হাদিস।
তবে প্রশ্ন হলো এখানে সফলতা বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? কিসের মানদণ্ডে সফলতা?
নিশ্চয়ই রাসুল (স) এখানে পুঁজিবাদী স্ট্যান্ডার্ড এর এ বস্তুবাদি স্ট্যান্ডার্ড এ সফলতার কথা বলেনি। নিশ্চয়ই পদ্মা সেতু কোনো সফলতা না তার কাছে। তাহলে সফলতা কি?
সফলতার সংজ্ঞায় কুরআন সুন্নাহ একদম স্পষ্ট।
এটা ঐ (মহান) কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ। যারা গায়বের প্রতি ঈমান আনে, নামায কায়িম করে এবং আমি যে জীবনোপকরণ তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর তোমার প্রতি যা নাযিল হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে তারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতিও তারা নিশ্চিত বিশ্বাসী। তারাই তাদের প্রতিপালকের হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, আর তারাই সফলকাম। [24]কুরআন, সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ৫
অর্থাৎ ইসলামী স্ট্যান্ডার্ড এ সফলতা হচ্ছে হেদায়েত লাভ এবং ঈমান ও আমলে উন্নতি সাধনের মাধ্যমে চিরস্থায়ী আযাব থেকে বেঁচে যাওয়া। আমরা একটা সফল শাসকের সাথে তুলনা করতে গেলে ওমর বিন খাত্তাব (রা) অথবা উমর বিন আব্দুল আজিজ (রা) এর সাথে তুলনা করতে পারি। তাদের সময় ছিল তওহীদের জ্বলন্ত আগুন এর যুগ। সেটাই ছিল সেরা সময় যখন মানুষ সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর দাসত্বে নিয়োজিত হয় এবং আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসিত হয়। মানুষ আল্লাহর বিধানের যত কাছাকাছি, তাকওয়া ,ইনসাফ, ইহসান, আদল এর যতো কাছাকাছি সে ততই সফল।
অতঃপর আমরা আমাদের ৩টি ধাপ পার করে এভাবেই আনএপলজেটিকভাবে জবাব দিতে পারি। নিশ্চয়ই আমরা যতদিন কুরআন সুন্নাহ ও সালাফুস সালেহীনদের বুঝকে আকড়ে ধরে থাকবো, আমরা ততদিন হাজারো ফিতনার মোকাবেলা করতে পারবো। আমাদের প্রয়োজন হবে না নব্য নব্য ব্যাখ্যার, লাগবেনা ডাবল পি এইচ ডির মডারেট শায়েখা অথবা lgbt compationate ইমামদের। বরং আমাদের রয়েছে আমাদের সালাফুস সালেহীনেরা, ইমাম আবু হানিফা থেকে শুরু করে ইমাম আহমাদ, ইমাম বুখারী থেকে শুরু করে ইবন তাইমিয়া, ইবন কাসির থেকে শুরু করে এই শতাব্দীর বিন বায (রহি.)। আমাদের প্রয়োজন নেই ইসলামকে বোঝার নতুন উপায় খোঁজার। মুসলিমরা ভাঙ্গতে পারে, মচকাতে পারে, ইসলাম বদলাবে না।
সবশেষে সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি আমাদের ড্যানিয়েল হাকিকাতজু এর লেকচারের এর মাধ্যমে বেশ কিছু রিসোর্স ও গবেষণা পত্র দ্বারা উপকৃত করেছেন, এবং এই ছোট্ট কাজটা সম্পন্ন করার তৌফিক দিয়েছেন।
আল্লাহই ভালো জানেন।
Home – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
References