সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট ; মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ,প্রকৃতি বনাম আল্লাহ!
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট ; মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য ,প্রকৃতি বনাম আল্লাহ!
মানব মনের স্বাভাবিক একটি প্রশ্ন হলো এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছে। মহাবিশ্বের উৎপত্তির পিছনে কি কোনো বুদ্ধিমান সত্তা বা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কি রয়েছে? সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কি সত্যিই আছে? দুনিয়ার এই জীবনই কি একমাত্র জীবন, নাকি এরপরেও কোন জীবন আছে? মৃত্যুর সাথে সাথেই কি এই জীবনের সমাপ্তি, নাকি এর পরেও পরকালের জীবনের জের টানতে হবে? মানব মনের স্বাভাবিক এসব প্রশ্নের জের ধরে যুগে যুগে মানুষের মধ্যে নানারকম মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে যা এখনো চলমান। এসব প্রশ্নের ভিত্তিতে প্রধানত দুটি বিপরীতমুখী মতবাদের একটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে এবং অন্যটি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের বিপক্ষে। এই লিখাতে আমরা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে একটি যুক্তি নিয়ে আলোচনা করবো। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে বেশকিছু আর্গুমেন্ট রয়েছে তবে এক লিখাতে সবগুলো আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। তাই এখানে আমরা কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট নিয়ে আলোচনা করবো। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের পক্ষে যেসব যুক্তি রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট।
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট (KCA) বর্তমানে ন্যাচারাল থিওলজিতে ব্যাপকভাবে আলোচিত একটি বিষয়। জগৎ বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক ইমাম আল-গাজালি ছাড়াও অনেক দার্শনিকগণ কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের পক্ষে কথা বলেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, প্লেটো, এরিস্টটল, রেনে ডেকার্ট, ইবনে সিনা, সেন্ট এন্সেলম, সেন্ট থমাস একুইনাস, স্পিনোজা, লাইবনিজ সহ আরো অনেকে। মুসলিম দার্শনিক ইমাম আল-গাজালি কসমোজিক্যাল আর্গুমেন্টকে আধুনিক রূপে (The Kalam Cosmological Argument) সহজভাবেই উপস্থাপন করেছেন। গাজ্জালীর যুক্তি অনুযায়ী, অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার অস্তিত্বের জন্য কারণ (Cause) আছে। আমাদের এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু রয়েছে তাই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য কারণ (Cause) রয়েছে। অর্থাৎ, অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে হলে তার পিছনে আবশ্যই একটা কারণ থাকতে হবে। সৃষ্ট হওয়া সবকিছুর যদি কারণ থাকে তাহলে কারণেরও কারণ আছে। তবে এই কার্য থেকে কারণ সম্পর্ক হিসেব করতে করতে আমাদের চিন্তাধারা ক্রমান্বয়ে পিছনের দিকে যেতে পারেনা। কেননা তখন “অনবস্থা দোষ”( infinite regress) দেখা দিবে। যদি “অনবস্থা দোষ”( infinite regress) দেখা যায় তাহলে কখনোই বর্তমানে আসা সম্ভব না।
প্রেমিস আকারে;
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট প্রেমিসঃ
- Whatever begins to exist has a cause. ( যা কিছুর অস্তিত্বের শুরু আছে তার একটি কারণ আছে।)
- The universe began to exist. ( মহাবিশ্বের অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল )
- Therefore, the universe has a cause. ( এতএব, মহাবিশ্বের একটি কারণ আছে )
আমেরিকান বিখ্যাত দার্শনিক উইলিয়াম লেন ক্রেগ প্রথমে ইমাম আল-গাজালির এই সূত্র গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে ইমাম আল-গাজালির সূত্রের প্রথম প্রেমিসে পরিবর্তন এনে নতুন মডেলে প্রকাশ করেছেন। ক্রেগের প্রকাশিত মডেলের প্রথম প্রেমিস,
- If the universe began to exist, the universe has a cause of its beginning.
কালাম কসমোলজির আর্গুমেন্ট সত্য হবে যদি প্রেমিস ১ এবং প্রেমিস ২ সত্য হয় এবং উপসংহার যদি প্রেমিসগুলো যৌক্তিকভাবে অনুসরণ করে। নিন্মে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের প্রেমিসগুলোর স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং Deductive (অবরোহী) আর্গুমেন্ট দেওয়া হলো। কালাম কসলোমজিক্যাল আর্গুমেন্টের প্রথম প্রেমিস,
-
P1: Whatever begins to exist has a cause of its beginning. (অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুর আছে তার শুরুর কারণ আছে।)
P1 হচ্ছে ‘Principle of sufficient reason’ এর সংস্করণ। এটি দার্শনিক লাইবনিজ তার কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলো। এটি সজ্ঞাতভাবে সুস্পষ্ট যে অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার কারণ আছে। আমরা আমাদের চারপাশে যে-সব জিনিস দেখি যেমন, চেয়ার, টেবিল, গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি। এগুলো কোনো কিছুই চিরকাল অস্তিত্বে ছিল না। বরং একটা সময়ে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। এবং কোনো কারণ ছাড়াই এগুলো এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে এমন দাবিও যৌক্তিক নয়। তাহলে অবশ্যই অস্তিত্বের জন্য কোনো কারণ প্রয়োজন।
P1 ইন্ডাক্টিভ মেথড দিয়েও প্রমাণ করা যায়। মানব জাতির ইতিহাসে আমরা অসংখ্য জিনিসের সম্মুখীন হয়েছি। তবে আমরা কখনোই এমন কোন জিনিসের সম্মুখীন হয়নি যা কোনও কারণ ছাড়াই এমনি এমনি অস্তিত্বে এসেছে। এই পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা ইন্ডাক্টিভ মেথডের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে, অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার শুরুর কারণ আছে। ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন আপনার ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম গুলো কে তৈরি করেছে? জবাবে আপনার বন্ধু বললো, এগুলো কেউ তৈরি করেনি, এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে। এমন উত্তর শুনে নিশ্চয় তাকে হেমায়েতপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। কারণ এটা সম্ভব নয় যে কোনো কিছু এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে চলে এসেছে। বরং অস্তিত্বের জন্য সবকিছুর একটা কারণ (Cause) থাকা অনিবার্য। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, কোনো কিছু এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে পারেনা।
কোনো কিছুই শূন্য থেকে অস্তিত্বে আসতে পারে না। প্রচলিত অর্থে শূন্য বলতে বোঝায় যাবতীয় সবকিছুর অনুপস্থিতি। অর্থাৎ, পদার্থ, শক্তি, সম্ভাব্য সকল বিষয়ের অনুপস্থিতি। অথবা শূন্য মানে কোনো কারণজনিত পরিবেশের অনুপস্থিতিকেও বোঝায়। কোনো কিছুই এমনি এমনি অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসতে পারে না। কেননা অস্তিত্বহীন কিছু থেকে কিভাবে একটা কিছু অস্তিত্বে আসতে পারে!? শূন্য থেকে কিছুই আসেনা। ০+০+০+=০ই হবে! কখনো ৩ হবেনা। একটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন। ইউনিভার্সিটিতে আপনার কোন এক বন্ধু আপনাকে বললো আমাদের ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুম গুলো শূন্য থেকে এমনি এমনি অস্তিত্বে চলে এসেছে। আপনার বন্ধুর এই দাবিটি নিছক বিনোদনের খোরাক যোগাবে। সুতরাং, ‘অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুর আছে তার শুরুর কারণ আছে’ এই যুক্তিটি একটি বৈধ যুক্তি বলে বিবেচিত হবে। নাস্তিকরা দাবি করতে পারে কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতায় কোনো কণিকা শূন্য থেকে অস্তিত্বশীল হতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা কোনো খালি জায়গা নয়। সেখানে পদার্থের নিয়ম চলে। কোয়ান্টাম শূন্যতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী শক্তির অবস্থা। আর সেই শক্তি থেকেই প্রতিনিয়ত জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় কণা ও প্রতিকণা। যারা পুনরায় ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। সুতরাং কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা মানে ভৌত কিছু।[1]Physics – The Force of Empty Space (aps.org)
-
P2: The universe began to exist. (মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু আছে)
P2 অনুযায়ী অস্তিত্বের জন্য মহাবিশ্বের শুরু আছে। অধিকাংশ নাস্তিক P2 কে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করে। কারণ তারা মনে করে মহাবিশ্ব অসীম। তবে তাদের এ ধারণাটি সঠিক নয়। অস্তিত্বের জন্য মহাবিশ্বের একটা শুরু রয়েছে এমন দাবির স্বপক্ষে যুক্তি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো;
Deductive argument 1:
প্রকৃত অসীমের অসম্ভবতার (প্রকৃত অসীম বাস্তবে এক্সিস্ট করে না) উপর ভিত্তি করে এই আর্গুমেন্টটি গড়ে উঠেছে। প্রেমিস আকারে,
- P2. 1.1: An actual infinite cannot exist. (প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না।)
- P2. 1.2: An infinite temporal regress of events is an actual infinite. (কোনো ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে)
- P2. 1.3: Therefore, an infinite temporal regress cannot exist. (সুতরাং, অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারে না।)
- P2. 1.4: Therefore, The Univers began to exist. (সুতরাং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু রয়েছে)
ব্যাখ্যা;
- P2. 1.1: An actual infinite cannot exist. (প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না।)
এই প্রেমিস অনুযায়ী প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না। অসীম বলতে, সীমাহীন, অন্তহীন বা যে কোনো সংখ্যার চেয়ে বড় কিছুকে বুঝায়। ফিলোসফিতে দুই ধরণের অসীম পাওয়া যায়। ১. সম্ভাব্য অসীম (Potential Infinity). ২. প্রকৃত অসীম (Actual Infinity).
সম্ভাব্য অসীম
সম্ভাব্য অসীম (Potential Infinity) বলতে বুঝায়, যা শেষ না করেই চলতে থাকে। অর্থাৎ, ভবিষ্যৎ এর দিকে চলতেই থাকবেই। কখনোই শেষ হবেনা। উদাহরণস্বরূপ, ভবিষ্যতে অসীম সংখ্যক দিন রয়েছে। কিন্তু অসীম যদি নাই থাকে তাহলে আমরা কেন বলি অসীম সংখ্যক দিন? কারণ, আমরা চাইলে একটা দিনের পর আরেকটা দিন যোগ করতে পারি। এভাবে হয়ত এক হাজার, দুই হাজার বা লক্ষ-কোটি দিন পর্যন্ত যোগ করতে পারবো। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা আর গণনা করতে পারবো না বিধায় বলি অসীম সংখ্যক দিন। কিন্তু তা আসলে প্রকৃত অসীম না। আমরা গণনা করতে শেষ করতে পারবো না বিধায় বলি অসীম।
প্রকৃত অসীম
প্রকৃত অসীম (Actual Infinity) বা প্রকৃত অসীম বলতে বুঝায়, যার শুরু কি-বা শেষ নেই। মনে করুন আপনার কাছে অসীম সংখ্যক বল রয়েছে। এটার মানে এই না যে আপনার কাছে অনেক অনেক বল আছে, বরং আপনার কাছে অসীম বল রয়েছে। কোনো ধরনের অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না। প্রমাণ হিসেবে এখানে আমরা ল-অফ ভায়োলেশন যুক্তি ব্যবহার করতে পারি। ইনফিনিটি বা প্রকৃত অসীম ল-অফ ভায়োলেশন ধারণ করে এটা প্রমাণ করার জন্য আমরা Hilbert’s Infinite Grand Hotel Paradox কে ব্যবহার করতে পারি।
Hilbert’s infinite grand hotel paradox
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, ১ থেকে ৫ এর মধ্যে কয়টি সংখ্যা রয়েছে? সাবলীল ভাবেই আপনি উত্তর দিবেন ৫টি। কিন্তু যদি বলি আপনার উত্তর ভুল, তখন আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? আসলেই আপনার উত্তর পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ সংখ্যা রেখার দিকে তাকালে দেখবেন এই ১ থেকে ৫ এর মাঝে আরো অগণিত সংখ্যা রয়েছে, যা আপনি গুণে শেষ করতে পারবেন না। এই অসীমত্বকে কাজে লাগিয়ে জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্ট একটি প্যারাডক্স তৈরি করেন যা, Hilbert’s Infinite Grand Hotel Paradox নামে পরিচিত।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ২০০৮ এর তথ্যমতে, কক্ষের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হোটেল হলো মালয়েশিয়ার ‘ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেল’। মালয়েশিয়ার লাস ভেগাস নামে পরিচিত এই হোটেলটির কক্ষ সংখ্যা ৬,১১৮টি। ধরুন, হোটেলের প্রতিটি কক্ষে ১জন করে গেস্ট থাকতে পারে। এর মানে যদি হোটেলের ৬,১১৮টি কক্ষ গেস্ট দ্বারা পূর্ণ থাকে, তাহলে হোটেলে ম্যানেজার চাইলে নতুন কোনো গেস্টকে চেক ইন করতে পারবেনা; যদিনা কোনো গেস্ট চেক আউট করে ৬,১১৭ বা তার চেয়ে কম হয়। কিন্তু হিলবার্ট হোটেল পুরোপুরি আলাদা। এটি মালয়েশিয়ার ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড হোটেল বা মালয়েশিয়ার লাস ভেগাস নামে পরিচিত হোটেলটির চাইতে অসীমভাবে বড়। বিষয়টি এমন নয় যে এটি অনেক অনেক বড় অথবা এখানে ১হাজার, ১মিলিয়ন, ১ট্রিলিয়ন রুম রয়েছে। বরং এটি অসীমভাবে বড় এবং এখানে অসীম সংখ্যক রুম রয়েছে।
একদিন হোটেলে নতুন একজন গেস্ট এসে হোটেল ম্যানেজারকে বললো তার একটা রুমের প্রয়োজন। এমতো অবস্থায় আপনি হলে কি করতেন? নিশ্চয় নতুন আসা গেস্টকে হোটেলে রুম খালি নেই বলে বিদায় করে দিতেন! কিন্তু হিলবার্ট হোটেলের ম্যানেজার ছিল একজন গণিতবিদ। তিনি চিন্তা করলেন, রুম-১ এর গেস্টকে রুম-২এ শিফট করলে, রুম-২এর গেস্টকে রুম-৩এ শিফট করলে, এভাবে nতম রুমের গেস্টকে n+1তম রুমে শিফট করলে এবং এই প্রক্রিয়া অসীম সংখ্যকবার চলতে থাকলে একটি রুম ফাঁকা হয়ে যাবে। কারণ হিলবার্ট হোটেলের রুম সংখ্যা যেহেতু অসীম সেহেতু গেস্টদের এই মুভমেন্টও অসীম সংখ্যকবার চলতে থাকবে। এভাবে হোটেল ম্যানেজার নতুন আসা গেস্টকে চেক-ইন করিয়ে নিলেন। নতুন গেস্ট চেক-ইন করার আগেও হোটেলের গেস্ট সংখ্যা ছিল অসীম। বর্তমানেও হোটেলের গেস্ট সংখ্যা হচ্ছে অসীম। কারণ, অসীমের সাথে অসীম যোগ করলেই ফলাফল অসীমই হবে।
পরদিন সকালে হোটেলে অসীম সংখ্যক অতিথি নিয়ে একটি বাস আসলো। এবং অসীম সংখ্যক অতিথির জন্যও অসীম সংখ্যক রুমের প্রয়োজন। হোটেল ম্যানেজার যেহেতু একজন তুখোড় গণিতবিদ, তাকে তো অতিথিদের জায়গা করে দিতেই হবে। তিনি চিন্তা করলেন যেকোনো সংখ্যাকে ২ দিয়ে গুণ করা হলে সবসময়ই জোড় সংখ্যা পাওয়া যাবে। তাহলে nকে যদি ২দিয়ে গুণ করা হয় তাহলে ফলাফল হবে 2n, তাহলে প্রতিটা রুমের পর্যটক তাদের রুমের সাথে ২গুণ করে যে সংখ্যাটি পাওয়া যাবে সেই রুমে শিফট করলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে যাবে। তাই হোটেল ম্যানেজের ১নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-২এ, ২নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-৪এ, ৩নং রুমে থাকা অতিথিকে রুম-৬এ, এভাবে nতম রুমের অতিথিকে 2nতম রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ফলে হোটেলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে গেল। কারণ, হোটেলে রুম সংখ্যা যেহেতু অসীম, তাই হোটেলের জোড় সংখ্যক রুমও অসীম এবং বিজোড় সংখ্যক রুমও অসীম। এভাবে হোটেল ম্যানেজার নতুন আসা অসীম সংখ্যক অতিথিকে হোটেলের খালি হওয়া বিজোড় সংখ্যার রুমগুলোতে যেতে বলেন। ব্যাস, ঝামেলা শেষ!
কিন্তু এবার পরের দিন সকালে অসীম সংখ্যক বাস এবং অসীম সংখ্যক বাসের প্রত্যেকটিতে অসীম সংখ্যক যাত্রী রয়েছে। হোটেল ম্যানেজার দুশ্চিন্তায় পরে গেলেন! কীভাবে এতো অতিথিকে হোটেলে রুমের ব্যবস্থা করে দিবেন! এমন সময় হোটেল ম্যানেজারের চোখ পরলো তার টেবিলে রাখা গণিতবিদ ইউক্লিডের ছবির দিকে। ইউক্লিড প্রমাণ করেছিলেন যে, মৌলিক সংখ্যার (যে সংখ্যাকে কেবল ১ ও সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন, ১, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩…. অসীম সেট। তাই হোটেল ম্যানেজার চিন্তা করলেন যদি, প্রথমে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা করা যায়, তাহলে সেখানে একটা বাসের অসীম সংখ্যক অতিথিকে জায়গা করে দেওয়া যাবে। এরপর আরেকবার অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা করে সেখানে আরেকটি বাসের অসীম সংখ্যক অতিথিদের জায়গা দেওয়া যাবে। এবং এভাবে অসীম সংখ্যকবার করে গেলে তাহলে অসীম সংখক বাসের অসীম সংখ্যক যাত্রীকে হোটেলে জায়গা করে দেওয়া যাবে। এবং এই কাজটা অসীম সংখ্যকবার করতে হবে। তাই হোটেল ম্যানেজার বর্তমানে হোটেলে থাকা সব অতিথিদের প্রথম মৌলিক সংখ্যা ২এর ঘাত অনুযায়ী শিফট হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন। অর্থাৎ, ২নং রুমের অতিথিকে 2^2=4 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৩নং রুমের অতিথিকে 2^3=8 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৪নং রুমের অতিথিকে 2^4=16 নং রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং nতম রুমের অতিথি যাবেন 2^nতম রুমে। এভাবে হোটেলে অসীম সংখ্যক রুম ফাঁকা হয়ে গেল। সুতরাং, হোটেলে অবস্থানরত সব অতিথি চলে যাবে প্রথম মৌলিক বা প্রাইম নাম্বার ২এর ঘাত অনুযায়ী রুমে।
তাহলে নতুন করে আসা অসীম সংখ্যক বাসের অসীম অতিথিরা কোথায় যাবে? প্রথম বাসের অতিথিদের বললেন দ্বিতীয় মৌলিক পূর্ণ সংখ্যা ৩এর ঘাত অনুযায়ী রুমে যাবে। অর্থাৎ, বাসের প্রথম সিটের অতিথি যাবে 3^1=3 নং রুমে। দ্বিতীয় সিটের অতিথি যাবে 3^2=9 নং রুমে। তৃতীয় সিটের অতিথি যাবে 3^3=27 নং রুমে। চতুর্থ সিটের অতিথি যাবে 3^4=81 নং রুমে। nতম রুমের অতিথি যাবে 3^nতম রুমে। এভাবে তিনের ঘাত আমরা অসীম সংখ্যকবার করতে পারবো। একইভাবে, ২য় বাসের অতিথিদের ৫এর ঘাত অনুযায়ী হোটেল রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ৩য় বাসের অতিথিদের ৭এর ঘাত, ৪র্থ বাসের অতিথিদের ১১এর ঘাত ৫নং বাসের অতিথিদের ১৩এর ঘাত অনুযায়ী হোটেল রুমে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন……..। এভাবেই হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক বাসের অসীম সংখ্যক অতিথিদের হোটেলে জায়গা করে দিলেন। যদিও এই অসীম সংখ্যক অতিথিকে হোটেলে জায়গা করে দেওয়ার আগেই হোটেলের অতিথি সংখ্যা ছিল অসীম।
এবার প্রথম সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন। হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক রুম পূর্ণ হোটেলে একজন নতুন অতিথিকে জায়গা করে দিয়েছিলো। যদি সেখান থেকে অসীম সংখ্যক অতিথিকে বিয়োগ করা হয় তাহলে ফলাফল হবে ১জন। ধরুন, অসীম সংখ্যক অতিথি হচ্ছে x। এখন নতুন ১জন অতিথি আসার পরে হোটেলের বর্তমান অতিথি সংখ্যাও অসীম। তাহলে এখন অসীম সমানও ধরুন X। তাহলে এখন যদি x থেকে x বিয়োগ করেন তাহলে ফলাফল হবে x-x= 1.
এবার দ্বিতীয় সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন, হোটেল ম্যানেরজার অসীম বিজোড় সংখ্যক রুম ফাঁকা করে অসীম সংখ্যক অতিথিকে জায়গা করে দিয়েছিল। তার মানে তখনো হোটেলে অসীম জোড় সংখ্যক অতিথি ছিল। যদি হোটেল থেকে জোড় সংখ্যক অতিথি চেকআউট করে তাহলে কি হবে? ধরুন জোড় সংখ্যক অসীম = x এবং বিজোড় সংখ্যক অসীম = x. তাহলে, x-x=x. কারণ জোড় সংখ্যক অসীম থেকে বিজোড় সংখ্যক অসীম বাদ দেওয়ার পরেও জোড় সংখ্যক অসীম থেকেই যাচ্ছে। যদিও অসীম সংখ্যক অতিথি চেকআউট করেছে।
এবার তৃতীয় সিচুয়েশনটি কল্পনা করুন। মৌলিক সংখ্যা আছে যেহেতু অসীম সেহেতু হোটেলটি পূর্ণ অবস্থায় হোটেল ম্যানেজার অসীম সংখ্যক নতুন গেস্টকে হোটেলে জায়গা করে দিয়েছেন। সুতরাং আবারো অসীম থেকে অসীম বিয়োগ করলে ফলাফল হবে অসীম। x-x=x.
এই অ্যানালজিতে দেখা যাচ্ছে যে, Identical Quantity – Identical Quantity = Different Result! কারণ, আপনি যদি দুই থেকে দুই বিয়োগ করেন তাহলে প্রতিবারই ফলাফল আসবে শূন্য। কখনোই ফলাফল শূন্য ছাড়া অন্য কিছু হবেনা। কিন্তু অসীমের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি অসীম থেকে বিয়োগ করলে একেকবার একেক ফল আসে। অর্থাৎ, এটা সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে এবং মেটাফিজিক্যালি নেসেসারি ট্রুথ কে ভায়োলেট করে। অসীম হোটেল পূর্ণ থাকার পরেও হোটেলে নতুন মানুষকে জায়গায় করে দেওয়া যাচ্ছে, যা পুরোপুরিই অযৌক্তিক। কেননা রুম আগে থেকেই পূর্ণ ছিল। অর্থাৎ একই সাথে একই সময়ে খালি আবার পূর্ণ যা যুক্তি বিদ্যার মৌলক নিয়মের বিরোধী। আবার আইডেন্টিক্যাল কোয়ান্টিটি বাদ দিলে আমরা ভিন্নভিন্ন ফলাফল পাচ্ছি যা সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে। সুতরাং, যা কিছু মেটাফিজিক্যালি নেসেসারি ট্রুথকে ভায়োলেশন করে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। অসীম মেটাফিজিক্যাল নেসেসিটিকে (metaphysical necessity) ভায়োলেশন করে, তাই অসীম অস্তিত্বে থাকতে পারে না। হিলবার্ট হোটেলের এই অযৌক্তিকতা আমাদের এটাই দেখায় যে অসীম কেবল মাত্র গাণিতিক ধারণা এবং এটাকে আমরা বাস্তবজীবনে উপলব্ধি করতে পারি না। অতএব, এই পর্যবেক্ষণ থেকে এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে, ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম প্রেমিস (প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না) সত্য। সুতরাং আমরা এখন এই আর্গুমেন্টে উপনীত হতে পারি যে,
A- যা কিছু মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথ ধারণ করে তা অস্তিত্বে থাকতে পারেনা।
B- ইনফিনিটি বা প্রকৃত অসীম ল-অফ ভায়োলেশন ধারণ করে।
C- সুতরাং, বাস্তবে ইনফিনিটি থাকতে পারেনা।
- P2. 1.2: An infinite temporal regress of events is an actual infinite. (কোনো ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে)
এই প্রেমিস অনুযায়ী, কোনো ঘটনার পেছনে যদি অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস ঘটে তাহলে তা প্রকৃত অসীম। উদাহরণ, আপনার হাতে থাকা একটি মোবাইল ফোনের কথাই চিন্তা করুন। এই মোবাইলটি অসীম কাল থেকে আপনার হাতে ছিল না। বরং আপনার হাতে আসার জন্য কোনো কারণ বা ঘটনা রয়েছে এবং সেই ঘটনার পেছনেও আরো কারণ বা ঘটনা ছিল এবং তা অসীম পর্যন্ত। তাই তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে। যদি আমাদের এই মহাবিশ্ব অসীম হয়, তাহলে অসীম টেম্পোরাল ঘটনা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে। কারণ এর পেছনে অসীম সংখ্যক ঘটনা ঘটেছে। এর মানে এই যে, মহাবিশ্বের পেছনের এই অসীম সংখ্যক ঘটনা প্রকৃত অসীমকে অনুসরণ করে।
- P2. 1.3: Therefore, an infinite temporal regress cannot exist. (সুতরাং, অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারেনা।
P2. 1.1 (An actual infinite cannot exist) থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, “প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারেনা।” এবং প্রেমিস P2. 1.2 থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, ‘কোন ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে”। যেহেতু প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারেনা সেহেতু কোন ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস ঘটলে সেটাও অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তা বাস্তবে থাকতে পারে না। তাই P2. 1.3 সত্য হতে বাধ্য। সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, ‘অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারে না’।
- P2. 1.4: Therefore, The Univers began to exist. (সুতরাং মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু রয়েছে)
যেহেতু, P2. 1.1 অনুযায়ী ‘প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না’। P2. 1.2 অনুযায়ী ‘কোনো ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে’। P2.3 অনুযায়ী ‘অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারেনা’। এই প্রেমিস গুলো থেকে আমরা যে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, ‘প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারেনা’, ‘অতীত ঘটনা অসীম হতে পারেনা’, এবং ‘অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে বলে অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারে না’, তাই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য অবশ্যই শুরু রয়েছে। অন্যথায়, বর্তমান সময়ে আসা সম্ভবই হতো না।
Diductive Argument-2
এই আর্গুমেন্টে আমরা প্রমাণ করবো অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার (কার্যকারণ) ধারাবাহিকতা অসীম হতে পারেনা। যুক্তিটির গঠন নিন্মরুপ;
- P2. 2.1: A collection formed by successive addition cannot be actually infinite. (ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ আসলে হতে পারে না অসীম)
- P2. 2.2: The temporal series of past events is a collection formed by Successive addition. (অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক সিরিজের দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ ধারাবাহিক সংযোজন)
- P2. 2.3: Therefore, the temporal series of past events cannot be actually infinite. (অতএব, অতীত ঘটনার সাময়িক সিরিজ আসলে অসীম হতে পারে না)
- P2. 2.4: Therefore, the universe began to exist. (অতএব, মহাবিশ্বের অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল)
ব্যাখ্যা;
- P2. 2.1: A collection formed by successive addition cannot be actually infinite. (ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ আসলে হতে পারে না অসীম)
একটি দৃশ্যপট কল্পনা করুন যে, আপনার কাছে একটি ব্যাগ যেখানে অসীম সংখ্যক মার্বেল রাখা আছে। আপনার বন্ধু সীমান্ত অসীম অতীত কাল থেকে মার্বেলগুলো গুণতে শুরু করেছে এবং ঘণ্টাখানেক পরে সে বললো আমি অসীম সংখ্যক মার্বেল গুণে শেষ করতে পেরেছি! কিন্তু এমনটা কি আদৌ সম্ভব? এখানে অসীম বলতে বুঝানো হচ্ছে শুরুহীন এবং শেষহীন। যদি সে অসীম অতীত থেকে মার্বেল গণনা করা শুরু করে তাহলে কেন একটা নির্দিষ্ট সময়ে এসে সে বললো গণনা শেষ করেছি! যেখানে অসীম মানে যার শুরু নেই, শেষ নেই!? যদি অসীমের শেষ না থাকে তাহলে কীভাবে সীমান্ত অসীম অতীত সময় থেকে অসীম সংখ্যক মার্বেল গণণা করে শেষ করতে পারলো? এটা কিছুতেই সম্ভব না। একের পর এক সসীম বস্তু যোগ করে আমরা কখনোই অসীম তৈরি করতে পারি না। এই উদাহরণের অযৌক্তিকতা আমাদের দেখায় যে ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ আসলে অসীম হতে পারে না; একের পর এক বা ধারাবাহিকভাবে মার্বেল যোগ বা সংযোজন করে আমরা আসলে অসীম সিরিজ পেতে পারি না।
- P2. 2.2: The temporal series of past events is a collection formed by Successive addition. (অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক সিরিজের দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ ধারাবাহিক সংযোজন)
P2. 2.2: অনুযায়ী অতীতের ঘটনাগুলির সাময়িক সিরিজটি ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ। অর্থাৎ, আমরা যদি অতীত কাল থেকে শুরু করে একের পর এক মার্বেল যোগ করে একটি সংগ্রহ তৈরি করে তাহলে তা একটি ধারাবাহিক সংযোজন।
- P2. 2.3: Therefore, the temporal series of past events cannot be actually infinite. (অতএব, অতীত ঘটনার সাময়িক সিরিজ আসলে অসীম হতে পারে না)
যেহেতু, ধারাবাহিক সংযোজন দ্বারা গঠিত একটি সংগ্রহ আসলে অসীম হতে পারেনা এবং অতীতের ঘটনাগুলোর সাময়িক সিরিজের দ্বারা গঠিত সংগ্রহ বা যে কোন কিছু ধারাবাহিক সংযোজন তাই অতীতের ঘটনার সাময়িক সিরিজ অসীম নয়। অর্থাৎ, প্রকৃত অসীম অস্তিত্বে থাকলেও অতীতের ঘটনার সাময়িক সিরিজ অসীম হতে পারেনা। সহজ করে বললে, অসীম অতীত সময়ে অসীম মার্বেল একটা নির্দিষ্ট সময়ে গণনা শেষ করা যাবেনা। কারণ অসীম সংখ্যক মার্বেল গুণতে সময় লাগবে অসীম এবং অসীম সময় কখনোই শেষ হবেনা। তাই অসীম সময় শেষ করে কখনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো সম্ভব না।
- P2. 2.4: Therefore, the universe began to exist. (অতএব, মহাবিশ্বের অস্তিত্ব শুরু হয়েছিল)
আমাদের মহাবিশ্ব যদি অসীম ঘটনার সিরিজের দ্বারা গঠিত কোন ধারাবাহিক সংযোজন হতো তাহলে আমরা বর্তমানে আসতে পারতাম না। অর্থাৎ, আমাদের মহাবিশ্ব অসীম অতীত থেকে একটার পর একটা অসীম কার্যকারণ সম্বন্ধের পর অস্তিত্বে আসতো তাহলে বর্তমানে আসা সম্ভব হতো না। কারণ অসীম কার্যকারণ শেষ হতে সময় লাগতো অসীম। আর অসীম সময় পার করতে সময়ও লাগতো অসীম। যেহেতু অসীম সময় শেষ করা সম্ভব না সেহেতু অতীতে অসীম কার্য-কারণ ঘটার পরে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসতে পারতো না। সুতরাং, মহাবিশ্বের শুরু থাকা অনিবার্য। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টেফেন হকিং তার ওয়েবসাইটে লিখেছেন,
সমস্ত প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে, মহাবিশ্ব চিরকালের জন্য বিদ্যমান ছিল না, এটি প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল। এটি সম্ভবত আধুনিক কসমোলজির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। ……..’এই বক্তৃতার উপসংহার হল মহাবিশ্ব চিরকালের জন্য বিদ্যমান ছিল না। বরং, প্রায় ১৫ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিস্ফোরণে মহাবিশ্ব এবং সময়ের শুরু হয়েছিল[2]https://www.hawking.org.uk/in-words/lectures/the-beginning-of-time
বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
প্রকৃত অসীম অস্তিত্বে থাকার পক্ষে আমরা উপরে একটি ধারণাগত প্রমাণ উপস্থাপন করেছিলাম ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের মাধ্যমে। তবে এখন আমরা অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের উত্তর ভিত্তি করে যুক্তি প্রয়োগ করবো।
বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের এই মহাবিশ্ব প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসেছে। এই তত্ত্ব অনুসারে আজ থেকে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর পূর্বে মহাবিশ্বের বর্তমান ও অতীত সকল স্থান-কাল-শক্তি-পদার্থ-পদার্থের নিয়ম সবকিছুই একই সময়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটি বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের শুরু আছে। বিগ ব্যাং তত্ত্ব P2 (অস্তিত্বের জন্য মহাবিশ্বের শুরু আছে) এর জন্য মহাজাগতিক ভিত্তি প্রদান করে বা এটি P2 কে সমর্থন করে। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো যেহেতু পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে তাই তাই আমরা ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণ বা তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিগ ব্যাং থিওরিকে ভুল প্রমাণ করতে পারবে না এমন নিশ্চয়তা দিতে পারি না। তবে এই মুহূর্তে বিগ ব্যাং তত্ত্বের বিকল্প কোন তত্ত্ব আমাদের কাছে নেই। বর্তমানে এটি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সবচেয়ে সফল এবং সর্বাধিক গৃহীত তত্ত্ব। সুতরাং, কসমোলজি আমাদের P2 এর জন্য শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক সমর্থন প্রদান করে। বিগ ব্যাং তত্ত্ব সম্পর্কে আরো বিস্তারিত পড়ুন এখানেঃ বিগ ব্যাং তত্ত্ব[3]/বিগ ব্যাং তত্ত্ব – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
-
P3: Therefore, the universe has a cause of its beginning. (অতএব, মহাবিশ্বের শুরুর জন্য একটি কারণ রয়েছ।)
যেহেতু আমরা P1 & P2 সত্য প্রমাণ করেছি তাই ডিডাক্টিভ আর্গুমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের কনক্লুশন P3 সত্য হতে বাধ্য। সুতরাং, “মহাবিশ্বের শুরুর জন্য একটি কারণ (স্রষ্টা) রয়েছে” এটা সত্য। উপরে আমরা প্রমাণ করেছি, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু আছে। আরো প্রমাণ করেছি যা কিছুর অস্তিত্বের জন্য শুরু আছে তার অস্তিত্বের জন্য কারণ আছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে কারণ থাকলে তা স্রষ্টার সাথে প্রাসঙ্গিক কীভাবে? প্রথমত, কারণটিকে অবশ্যই স্ব-নির্ভর বা স্বাধীন হতে হবে। অন্যথায় অসীম রিগ্রেসে পতিত হবে। যেহেতু অসীম বাস্তবে অস্তিত্বশীল না সেহেতু কার্যকারণ সম্বন্ধ অসীম হতে পারেনা। তাই শুরুতে এমন একটি কারণ থাকা যা কারণহীন কারণ, স্ব-নির্ভর, অনন্তকাল থেকে বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, কারণহীন কারণটি হবে বুদ্ধিমান, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, ইত্যাদি। আদি কারণের এই বৈশিষ্ট্য গুলো আস্তিকদের স্রষ্টার সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং, আদি কারণ বা কারণহীন কারণ, স্ব-নির্ভর, অনন্তকাল থেকেই অস্তিত্বশীল সেই কারণ অবশ্যই স্রষ্টা।
অধ্যাপক অ্যান্থনি ফ্লিউয়ের দেয়ার ইজ গড বইতের পরিশিষ্টে অধ্যাপক আব্রাহাম ভার্গেস জোরালোভাবে বলেছেন,
আস্তিক-নাস্তিক একটি বিষয়ে একমত হতে পারে; যদি কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তা হলে এর আগে অবশ্যই এমন কিছু থাকতে হবে যা সব সময় অস্তিত্বশীল। চিরকালীন অস্তিত্ববান এই সত্তা কিভাবে এসেছে? এর উত্তর হলো, এটা কোনোভাবেই আসেনি। এটা সবসময় অস্তিত্ববান। এখন পছন্দ আপনার, হয় সৃষ্টিকর্তা নয় মহাজগৎ। কিছু একটা সব সময় ছিলো।[4]ফ্লিউ দেয়ার আ গডঃ হাউ দা ওয়ার্ল্ড’স মস্ট নটসিয়াস এথিস্ট চেইনজড হিজ … Continue reading
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট নিয়ে আপত্তি ও তার জবাব
নাস্তিকরা বিভিন্ন উপায়ে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের উপর আপত্তি আরোপ করে। P1 ‘অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার কারণ আছে’ বা PSR’কে নাস্তিকরা অস্বীকার করে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের উপর প্রথম আপত্তি করে থাকে। যদিও আমরা দাবি করি PSR স্বজ্ঞাতভাবে (intuitively), স্বতঃস্ফূর্তভাবে (self-evidently) বা সহজাতভাবে প্রমাণিত। তবে নাস্তিকরা দাবি করেন, কোয়ান্টাম ফিল্ডে কোন পার্টিকেল (কণা) কারণ ছাড়া অস্তিত্বে আসতে পারে। কারণ কোয়ান্টাম ফিল্ডে কোন কণিকা বা পার্টিকেল কারণ ছাড়া অস্তিত্বে আসা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব নয় যেমনটা অসম্ভব একজন মানুষ একই সাথে বিবাহিত আবার অবিবাহিত। যেহেতু, কোয়ান্টাম ফিল্ডে কারণ ছাড়া পার্টিকেল অস্তিত্বে আসাতে পারে সেহেতু P1 সঠিক নয়। এছাড়াও কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, সাবএটমিক পর্যায়ে যে কোন কিছু কোন কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে আসতে পারে। সুতরাং, P1 কোনোভাবেই সঠিক নয়।
P1 নিয়ে আপত্তির জবাব
দার্শনিক উইলিয়াম লেন ক্রেইগ নাস্তিকদের এই অভিযোগের জবাবে বলেন, P1 এমন কিছু নয় যে যার জন্য প্রমাণের প্রমাণের প্রয়োজন আছে কারণ এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে (self-evidently) প্রমাণিত।[5] Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:139 ‘নাস্তিকতা কি সহজাত’[6]নাস্তিকতা কি স্বভাবজাত ? – Faith and Theology (faith-and-theology.com) এই লিখাতে য়ে আমরা কিছু বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম তার অন্যতম একটি বিষয় ছিল যে জগতকে আমরা বাস্তব মনে করে দিন নিপাত করি সেই জগৎ কি আসলেই বাস্তব নাকি নিছক বিভ্রম? আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো কি আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম? এই জগৎ বাস্তব কি-না তা আমরা প্রমাণ করতে পারি না তবে আমরা বাস্তব বলে মনে করি। কারণ এটাই আমাদের প্রকৃতি। সহজাতভাবে বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমরা জানতে পারি যে এই জগৎ বাস্তব। তবে এই জগৎ নিছক বিভ্রম হওয়াতে কোন ধরনের যৌক্তিক অসম্ভাব্যতা নেই। অর্থাৎ, যৌক্তিকভাবে এটা সম্ভব যে এই জগৎ নিছক বিভ্রম হতেই পারে। একইভাবে, যৌক্তিকভাবে এটাও সম্ভব যে আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে সক্ষম নয়।
‘যুক্তিবিদ্যা কি’[7] যুক্তিবিদ্যা কি ? – Faith and Theology (faith-and-theology.com) এই লিখাতে আমরা দেখিয়েছি যে যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মের সাথে যদি কোন কিছু সাংঘর্ষিক না হয় তবে তার অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। এই জীবন নিছক বিভ্রম হওয়াটা, আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদানে ব্যর্থ, এই ব্যাপারগুলো যুক্তিবিদ্যার মৌলিক নিয়মের সাথে সাংঘর্ষিকতা তৈরি করে না যেমনটা তৈরি করে একজন লোক একই সাথে বিবাহিত আবার অবিবাহিত, একটা বৃত্তের চারটি কোণ থাকার মতো ব্যাপার গুলিতে। তাহলে আমাদের চারপাশের সব কিছু বিভ্রম হওয়াটা যেহেতু যৌক্তিকভাবে সম্ভব, আমাদের যৌক্তিক অনুষদ গুলো আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে অক্ষম হওয়াটা যৌক্তিকভাবে সম্ভব বলে কি আমরা এটা মনে করি যে, আমাদের চারপাশের সবকিছুই আসলেই বিভ্রম? এবং আমাদের যৌক্তিক অনুষদ আসলে সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে পারে না?
আমরা কি এমন কিছু মনে করি যে, আমরা কেবল দূরের কোন অজানা গ্রহের পাত্রের মধ্যে ভেসে বেড়ানো নিছক এক মস্তিষ্ক, আর তাতে কলকাঠি নাড়িয়ে আমাদের হৃদয়ে অনুভূতির সৃষ্টি করেছে কোন এলিয়েন? অবশ্যই আমরা এমনটা মনে করিনা। বরং, এই জগৎ বাস্তবে অস্তিত্বশীল তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে না পারলেও এই জীবন বাস্তবে অস্তিত্বশীল এমন বিশ্বাস এবং আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে পারে, এই বিশ্বাসও মানবমনের স্বজ্ঞাত বা স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস। স্বতঃসিদ্ধ মানে, যা কিছু নিজেই নিজের প্রমাণ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা সত্য। এ ধরনের বিশ্বাসের জন্য আমরা কোনো যুক্তি, প্রমাণ, খুঁজি না। কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি। দর্শনের ভাষায় এ ধরনের বিশ্বাসগুলোকে Self-evident truth বলে।
এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্য যে আমাদের যৌক্তিক অনুষদগুলো আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে পারে এবং আমরা একটি দূরের কোন অজানা গ্রহের পাত্রের মধ্যে ভেসে বেড়ানো নিছক এক মস্তিষ্ক নয়। একইভাবে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের P1 (অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার কারণ আছে/ PSR) স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্য।
যেহেতু যৌক্তিকভাবে সম্ভব যে একটি কণা কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে আসতে পারে, ঠিক একইভাবে যৌক্তিকভাবে এটাও সম্ভব যে আমাদের যৌক্তিক অনুষদ আমাদের সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে পারেনা এবং আমরা একটা পরাবাস্তব জগৎ বা বিভ্রমে আছি। কিন্তু আমাদের যৌক্তিক অনুষদ সুনিশ্চিত জ্ঞান প্রদান করতে পারে এবং এই জগৎ নিছক বিভ্রম নয়, তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্য হওয়ার কারণে আমরা যৌক্তিকভাবে সম্ভব হলেও এমন বিশ্বাস লালন করি না যে আমাদের যৌক্তিক অনুষদ সত্য বা সুনিশ্চিত জ্ঞান জানাতে সক্ষম নয় এবং আমাদের এই জগত নিছক বিভ্রম। একইভাবে, এটাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্য যে অস্তিত্বের জন্য যা কিছুর শুরু আছে তার কারণ আছে (P1)। সুতরাং, নিছক যৌক্তিক সম্ভাবনার অজুহাত দেখিয়ে একথা দাবি করা যায় না যে, বাস্তব জগতে কোন কারণ ছাড়াই কোন জিনিস অস্তিত্বে আসতে পারে। তাই কোন কারণ ছাড়াই কণিকা অস্তিত্বে আসতে এমনটা মনে করাটাই বরং অযৌক্তিক।
দার্শনিক ডেবিট হিউম ১৭৫৪ সালে লিখিত এক চিঠিতে লিখেন, “তবে আমাকে আপনার উদ্দেশ্যে বলতে দিন যে আমি কখনই এতটা অযৌক্তিক প্রস্তাব দৃঢ় করিনি যে কারণ ছাড়াই কিছু হতে পারে”। [8]Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:140
প্রেমিস-১ নিয়ে আরো একটি অভিযোগ হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, সাব অ্যাটমিক পর্যায়ে যে কোন কিছু কোন কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে আসতে পারে। এই ধারণাটি মূলত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের তথাকথিত কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যাখ্যাগুলো অনিশ্চয়তাবাদী (indeterministic)। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান এর মতে, “আমি মনে করি আমি নিরাপদে বলতে পারি যে কেউ সত্যিই কোয়ান্টাম মেকানিক্স বোঝে না”।[9] Opinion | Even Physicists Don’t Understand Quantum Mechanics – The New York Times (nytimes.com)
দার্শনিক উইলিয়াম লেন ক্রেইগ এর মতে, কোপেনহেগেনের ব্যাখ্যা সঠিক হলেও, এটি অনুসরণ করে না যে কোন কিছুই শূন্য থেকে অস্তিত্বে আসতে পারে। কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম পরম শূন্যতা নয় বরং ‘অস্থির শক্তির একটি সমুদ্র, হিংসাত্মক কার্যকলাপের একটি ক্ষেত্র যার একটি সমৃদ্ধ শারীরিক গঠন রয়েছে এবং শারীরিক আইন দ্বারা বর্ণনা করা যেতে পারে’ [10]Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:140
ক্রেইগ তার লিখিত ‘The Kalam Cosmological Argument; Scientific Evidence for the Beginning of the Universe’ বইতে উল্লেখ করেন, “একটি ভ্যাকুয়ামকে সাধারণত খালি স্থান বলে মনে করা হয়, কিন্তু আধুনিক কণা পদার্থবিদ্যা অনুসারে ভ্যাকুয়াম হল একটি ভৌত বস্তু, যা শক্তির ঘনত্ব এবং চাপ দিয়ে সমৃদ্ধ”।[11] William Lane Craig Paul Copan; The Kalām Cosmological Argument; Scientific Evidence for the Beginning of the Universe; Page: 151
কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা কোনো প্রকৃত অর্থে শূন্য স্থান নয়। সেখানে পদার্থের নিয়ম চলে। কোয়ান্টাম শূন্যতা হচ্ছে ক্ষণস্থায়ী শক্তির অবস্থা। আর সেই শক্তি থেকেই প্রতিনিয়ত জোড়ায় জোড়ায় তৈরি হয় কণা ও প্রতিকণা। যারা পুনরায় ধ্বংস হয়ে আবার শক্তিতে পরিণত হয়ে যায়। সুতরাং, কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা শূন্যতা মানে ভৌত কিছু।[12] Physics – The Force of Empty Space (aps.org)
উইকিপিডায়ার তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকুয়াম স্টেট বা কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম যাকে বলা হয় তার বর্তমান সময়ের উপলব্ধি অনুসারে, এটি ‘কোনোভাবেই একটি সাধারণ খালি স্থান’ নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মতে, ভ্যাকুয়াম অবস্থা সত্যিকার অর্থে খালি নয় বরং এতে ক্ষণস্থায়ী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ এবং কণা রয়েছে যা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের মধ্যে আসে এবং বিলীন হয়ে যায়। [13]Quantum vacuum state – Wikipedia
কোয়ান্টাম পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি পদার্থের মৌলিক এককগুলির বৈশিষ্ট্যগুলি জানতে পারেনা। উদাহরণস্বরূপ, কেউ একই সময়ে একটি কণার অবস্থান এবং গতিবেগ পুরোপুরি জানতে পারে না। এই অনিশ্চয়তার একটি উদ্ভট পরিণতি হল যে একটি ভ্যাকুয়াম কখনই সম্পূর্ণ খালি থাকে না, বরং এর পরিবর্তে তথাকথিত ‘ভার্চুয়াল কণা’ দ্বারা গুঞ্জন হয় যা ক্রমাগত অস্তিত্বের মধ্যে এবং বাইরে চলে যায়।[14] Something from Nothing? A Vacuum Can Yield Flashes of Light – Scientific American হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতির মাধ্যমেও আমরা জানতে পারি যে, একটি বস্তুর অবস্থান এবং বেগ উভয়ই সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় না, একই সময়ে, এমনকি তত্ত্বেও। [15] Uncertainty principle | Definition & Equation | Britannica
সুতরাং, কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম কোন খালি স্থান নয়, সেখানে শূন্য থেকে কোন কিছু অস্তিত্বে আসতে পারেনা। তাই কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স অনুযায়ী ‘সাব অ্যাটমিক পর্যায়ে যে কোন কিছু কোন কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে আসতে পারে’ এই দাবিটি মোটেও সঠিক নয়। ‘নির্ভরশীলতার যুক্তি’ অর্ধ্যায়ের ‘Pricniple of Sufficient Reason (PSR)’ অংশেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে যে, কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনে ভার্চুয়াল পার্টিকেল কোনো কারণ ছাড়াই অস্তিত্বে চলে আসতে পারে না।
P2 নিয়ে আপত্তির জবাব
কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টের P2 অনুযায়ী ‘The universe began to exist.’ (মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু আছে)। এর স্বপক্ষে আমরা নিম্নে দেওয়া উপ যুক্তিটি (Sub Argument) ব্যবহার করেছি। এই উপ যুক্তিটি মূলত বাস্তব অসীমের অসম্ভবতার উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে।
- 1.1 An actual infinite cannot exist. (প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারেনা।)
- 1.2 An infinite temporal regress of events is an actual infinite. (কোনো ঘটনার জন্য অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস হলে তা প্রকৃত অসীমকে প্রতিনিধিত্ব করে)
- 1.3 Therefore, an infinite temporal regress cannot exist. (সুতরাং, অসীম টেম্পোরাল রিগ্রেস থাকতে পারে না।)
- 1.4 Therefore, the Univers began to exist. (সুতরাং, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের জন্য শুরু রয়েছে)
নাস্তিকরা উপ যুক্তির P2. 1.1 প্রত্যাখ্যান করেন। P2. 1.1 অনুযায়ী বাস্তবে প্রকৃত অসীম থাকতে পারেনা। কিন্তু তাদের মতে প্রকৃত অসীম থাকতে পারে কারণ অসীম একটি সুসংগত ধারণা। একটি চারকোনা বিশিষ্ট ত্রিভুজ, বিবাহিত ব্যাচেলর এর ধারণাগুলো স্ববিরোধী বা যৌক্তিকভাবে অসম্ভব। তাই এগুলোর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, একটা গোলাপি রং এর হাতি, কোন প্রকার প্রযুক্তি ছাড়াই আকাশে উড়তে পারা মানুষের অস্তিত্ব থাকাটা যৌক্তিকভাবে সম্ভব। নাস্তিকদের মতে, কান্টরের সেট তত্ত্ব অনুযায়ী প্রকৃত অসীমকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। যেহেতু প্রকৃত অসীমের ধারণাটি সুসংগত এবং যৌক্তিকভাবেও অসম্ভব কিছু না তাই বাস্তবে প্রকৃত অসীম থাকতে পারে। সুতরাং, P2. 1.1 ‘প্রকৃত অসীম বাস্তবে থাকতে পারে না’ সঠিক নয়।
P1 নিয়ে আপত্তির জগতে ইতোমধ্যেই আমরা প্রমাণ করেছি যে যৌক্তিকভাবে কোন কিছুর সম্ভব হলেই তার অস্তিত্ব থাকবে এমন নয়। কান্টরের সেট তত্ত্ব দিয়ে অসীমকে সুসংগতভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব এবং অসীমের অস্তিত্ব যৌক্তিকভাবেও সম্ভব হলেও অনটোলজিক্যালি বা আধিভৌতিকভাবে (metaphysically) বাস্তব অসীমের অস্তিত্বের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং, অসীমের ধারণাটি সুসংগত তার মানে এই নয় যে বাস্তবে প্রকৃত অসীম থাকতে পারে।
কান্টরের সেট থিওরির ভিত্তি হলো ম্যাথমেটিক্স বা গাণিতিক নাম্বার। ম্যাথমেটিক্স হলো বিমূর্ত সত্তা (Abstract Entity). বিমূর্ত সত্তা বলতে বুঝানো হয় যা কিছু কেবল ধারণাতে অস্তিত্বশীল। অন্যদিকে যা কিছু ফিজিক্যালি অস্তিত্বশীল তাদেরকে বলা হয় কংক্রিট সত্তা (Concrete Entity). বিমূর্ত সত্তাগুলোর Causal Power বা কোন কিছু তৈরি করার ক্ষমতা নেই। তাই অসীমের অস্তিত্ব গাণিতিক জগতে থাকা সম্ভব হলেও কংক্রিট ওয়ার্ল্ডে (আমাদের এই ফিজিক্যাল জগতে) থাকা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমরা যদি আমাদের এই কংক্রিট ওয়ার্ল্ডে সেট থিওরি প্রয়োগ করি তাহলে মেটাফিজিক্যাল কন্ট্রাডিকশন বা মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথকে ভায়োলেট করবে। যেমন, আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে যাবেন। এখানে যৌক্তিকভাবে কোন সাংঘর্ষিকতা না থাকলেও এই কংক্রিট জগতে স্ত্রীর সাথে হানিমুন করতে হলে আপনাকে বিবাহিত হতে হবে। অন্যথায়, আপনি হানিমুন করতে পারবেন না। তার মানে শুধু মাত্র যৌক্তিক অসম্ভাব্যতা না থাকলেই যে কোন কিছু ঘটবে বা অস্তিত্বে থাকতে হবে বিষয়টি এমন নয়। এছাড়াও, গাণিতিকভাবে এটাও সম্ভব যে -২জন লোক আমার বাসায় এসেছে। কিন্তু বাস্তব জগতে -২ জন কখনো কারো বাসায় আসতে পারেবেনা। কারণ -২ জন লোক মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথকে ভায়োলেট করে।
তাই গাণিতিকভাবে অসীমকে সুসঙ্গতভাবে সংজ্ঞায়িত করা গেলেও, অসীমের ধারণা আমাদের এই কংক্রিট ওয়ার্ল্ডে মেটাফিজিক্যাল নেসেসারি ট্রুথকে ভায়োলেট করে। সুতরাং, এই জগতে অসীমের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়।
সৃষ্টিকর্তা কি ইচ্ছা শক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা?
ইতিমধ্যে আমরা কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্টে প্রমাণ করেছি যে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসার জন্য একজন সৃষ্টিকর্তা বা এমন একটি কারণের প্রয়োজন যা অনাদিকাল ধরে অস্তিত্বশীল ছিলো । কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে, সেই কারণ বা সৃষ্টিকর্তা ইচ্ছাশক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা? অথবা অনেকেই দাবী করেই বসতে পারে যে সেই সৃষ্টিকর্তা কোনো বুদ্ধিমান সত্তা নয় বরং তা হচ্ছে বস্তু!
বেশ কিছু কারণে অসৃষ্ট এই স্রষ্টার ইচ্ছাশক্তি থাকা লাগবে বা তিনি বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে।
প্রথমত, সেই অসৃষ্ট স্রষ্টা চেয়েছেন যে মহাবিশ্ব অস্তিত্বে আসুক। তিনি না চাইলে এটি কোনোভাবেই অস্তিত্বে আসতে পারতোনা। কারণ এই মহাবিশ্বের এমন অনেক সত্তা বিরাজমান যাদের ইচ্ছা এবং ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। তাই এদের সৃষ্টিকর্তারও ইচ্ছাশক্তি থাকা আবশ্যক। কেননা, একটা বুদ্ধিহীন সত্তা কখনোই বুদ্ধিমান সত্তা তৌরি করতে পারবেনা।
দ্বিতীয়ত, (এই অংশটুকু লিখতে সহযোগিতা করেছেন মিছবাউল হক) মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা কি ইচ্ছাশক্তিহীন জড় পদার্থ নাকি বুদ্ধিমান সত্তা এটি বুঝার জন্য ফিলোসফার উইলিয়াম লেইন ক্রেইগ একটি সুন্দর আর্গুমেন্ট ব্যাবহার করে থাকেন।
ব্যাপারটা বুঝতে গেলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে, “কিভাবে একটা পার্মানেন্ট (এটারনাল) কজ বা কারণ (গড) থেকে আমারা টেম্পোরাল ইফেক্ট (ইউনিভার্স) পেতে পারি?” সাধারনভাবে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাবো, একটি ইচ্ছাশক্তিহীন, বিবেকবুদ্ধি বিবর্জিত অপরনির্ভরশীল কার্যকারণ কখনোই তার ইফেক্ট ছাড়া অস্তিত্বে থাকে না। একটা উদাহরন দিলে বুঝতে সুবিধা হবে।
ধরুন, একটা ফাঁকা ঘরে কিছু বল রাখা আছে , কিন্তু, সেখানে কোন অভিকর্ষ বল বা গ্রাভিটি নেই। ফলশ্রুতিতে বলগুলো শূন্যে ভাসতে থাকবে। কিন্তু, এখন কোন প্রক্রিয়ায় যদি ঘরটিতে অভিকর্ষ বল ফিরে আসে, তৎক্ষণাৎ বলগুলো মাটিতে পড়ে যাবে। অর্থাৎ বুঝা গেল, এখানে বলগুলোর মাটিতে পড়ার কারন অভিকর্ষ বল যখনই ঘরটাতে অস্তিত্বসম্পন্ন হবে তখনই তার ইফেক্ট বা প্রভাব বিস্তার করা শুরু করবে অর্থাৎ বলগুলোকে মাটিতে ফেলে দিবে।
আরও একটি উদাহরন দেওয়া যায়, যেমনঃ আমরা জানি, পানি বরফ হওয়া বা জমার কারন 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এখন কোথাও যদি 0 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সৃষ্টি হয় তবেই, সেখানে থাকা যেকোনো পানি তৎক্ষণাৎ জমাট হতে শুরু করবে, এক সেকেন্ড আগেও নয়, এক সেকেন্ড পরেও নয়। এখন কোন জায়গার তাপমাত্রা যদি ইনফিনিট সময় থেকে 0ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তবে সেখানে থাকা পানি একটি সসীম সময় আগে জমাট বাধা শুরু হওয়া অসম্ভব। এটা “principle of sufficient reason” বা সংক্ষেপে (PSR) ভঙ্গ করে। তাই সেখানে পানিও ইনফিনিট সময় ধরে বরফ থাকবে।
উপরিউক্ত উদাহরণ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, ইচ্ছাশক্তিহীন, বুদ্ধিহীন কোন কার্যকারণ এবং তার ইফেক্ট বা প্রভাব একই সাথে অস্তিত্বশীল হয়। এবং একটির অস্তিত্ব থাকলে অপরটির অস্তিত্ব থাকেই।
কিন্তু কোন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন কোনো সত্তা চাইলেই কোন পূর্বকার্যকারণ সাপেক্ষ ছাড়াই নতুন কোন ইফেক্ট বা প্রভাব বা ঘটনা ঘটাতে সক্ষম। যেমনঃ ধরুন এমন একজন ব্যক্তি যিনি অসীম সময় ধরে বসে আছেন, তিনি তার ইচ্ছা সাপেক্ষে একটি সসীম সময় আগে উঠে দাড়াতে পারেন। অর্থাৎ, তার উঠে দাঁড়ানোর মাধ্যমে একটি টেম্পোরাল ইফেক্ট সৃষ্টি হয়। ফিলসফির ভাষায় এরকম ঘটনাকে এজেন্ট কজেশনও বলা হয়ে থাকে।
আমরা আগেই জেনেছি ইউনিভার্সের কারণ বা সৃষ্টিকর্তাকে অবশ্যই এটারনাল বা চিরন্তন হতে হবে। সুতরাং সৃষ্টিকর্তা যদি ইচ্ছাশক্তিহীন বা বুদ্ধিহীন হয় তাহলে ইউনিভার্সকেও হতে হবে চিরন্তন বা অসীম। কারণ, ইচ্ছাশক্তিহীন বা বুদ্ধিহীন কোনো কিছু তার কজ এন্ড ইফেক্ট একই সময়ে অস্তিত্বশীল হয়। যার উদাহারণ আমরা উপরে দেখেছি যে, কোনো স্থানে যখনই ০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকবে তখনই সেই স্থানে থাকা পানি বরফে পরিণত হবে। অথবা যখনই ফাঁকা ঘরে অভিকর্ষ বলের উপস্থিতি হবে তখনই বল মাটিতে পরে যাবে।
কিন্ত আমরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছি যে মহাবিশ্ব অসীম বা চিরন্তন নয়। তাই এই মহাবিশ্বের সত্তাকে অবশ্যই ইচ্ছাশক্তিসম্পূর্ণ বা বুদ্ধিমান সত্তা হতে হবে। আবার আমারা উপরের আলোচনা থেকে এটাও বুঝতে পারলাম, কোন চিরন্তন ইচ্ছাশক্তিহীন, বুদ্ধিহীন কজ বা কারন তার ইফেক্ট বা প্রভাব ছাড়া অস্তিত্বশীল থাকে না। তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ইউনিভার্সের কজ বা সোজা বাংলায় সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই একজন ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন এজেন্ট বা বুদ্ধিমান সত্তা। [16]Blackwell companion to Natural theology by W.L Craig & J.P Moreland (page 193,194)
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে অন্যান্য লিখাগুলো পড়ুনঃ সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
References
↑1 | Physics – The Force of Empty Space (aps.org) |
---|---|
↑2 | https://www.hawking.org.uk/in-words/lectures/the-beginning-of-time |
↑3 | /বিগ ব্যাং তত্ত্ব – Faith and Theology (faith-and-theology.com) |
↑4 | ফ্লিউ দেয়ার আ গডঃ হাউ দা ওয়ার্ল্ড’স মস্ট নটসিয়াস এথিস্ট চেইনজড হিজ মাইন্ড। নিউ ইয়র্ক; হার্পারওয়ান। ২০০৭, পৃষ্ঠা ১৬৫। |
↑5 | Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:139 |
↑6 | নাস্তিকতা কি স্বভাবজাত ? – Faith and Theology (faith-and-theology.com) |
↑7 | যুক্তিবিদ্যা কি ? – Faith and Theology (faith-and-theology.com) |
↑8 | Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:140 |
↑9 | Opinion | Even Physicists Don’t Understand Quantum Mechanics – The New York Times (nytimes.com) |
↑10 | Yujin Nagasawa (2011), The Existence of God: A philosophical Introduction. Page:140 |
↑11 | William Lane Craig Paul Copan; The Kalām Cosmological Argument; Scientific Evidence for the Beginning of the Universe; Page: 151 |
↑12 | Physics – The Force of Empty Space (aps.org) |
↑13 | Quantum vacuum state – Wikipedia |
↑14 | Something from Nothing? A Vacuum Can Yield Flashes of Light – Scientific American |
↑15 | Uncertainty principle | Definition & Equation | Britannica |
↑16 | Blackwell companion to Natural theology by W.L Craig & J.P Moreland (page 193,194) |
Osadharon Masha Allah
মাশা-আল্লাহ
স্রস্টা ছাড়া সৃষ্টি অসম্ভব
মাশ আল্লাহ
এইভাবে সকল ধর্মের সৃষ্টিকর্তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
ফালতু প্যাচাল, পড়ে সময় নষ্ট করলাম।
প্রথমত, সৃষ্টিকর্তা একাধিক হওয়া পসিবল না। তাই একাধিক ধর্ম থাকার মানে এই না যে একাধিক ধর্মের জন্য একাধিক সৃর্ষ্টিকর্তা থাকা লাগবে। মূলত, একাধিক ধর্মের লোকেরা একাধিক উপায়ে সৃষ্টিকর্তাকে উপসনা করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি একাধিক ধর্মের অযুহাত দেখিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করেন তবে তা হবে খুবই হাস্যকর বিষয়। একাধিক ধর্ম থাকা কখনোই প্রমাণ করেনা মহাবিশ্ব এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে । মনেকরুন, সদ্য জন্ম নেওয়া এক শিশুর মাতৃত্বের দাবি একই সাথে দশ জন মহিলা দাবী করলো। যেহেতু দশজন মহিলা একই সাথে নিজেকে এক সন্তানের মা বলে দাবী করেছে তার মানে কি ওই শিশুর কোনো মা নেই ? ওই শিশু কি মা ছাড়াই জন্ম নিয়েছে? অবশ্যই না। কেউ যদি এমন দাবী করে আপনি নিশ্চয় তাকে পাবনা পাঠানোর ব্যাবস্থা করবেন। তাই কেউ যদি একাধিক ধর্মের অযুহাতে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করে তাকেও কি পাবনায় পাঠানো উচিত না?
আপনি প্রশ্নটি এভাবে করতে পারতেন যে ঠিক আছে সৃষ্টিকর্তা তো একজন আছে তার প্রমাণ পেয়েছি, এখন আমি কিভাবে বুঝবো যে এতো এতো ধর্মের মাঝে কোন ধর্মটি আসলেই সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ধর্ম? এর উত্তরও একেবারেই সহজ। উপরের উদাহারণটি লক্ষ্য করুন, একজন শিশুর মাতৃত্বের দাবি একই সাথে দশ জন মহিলা করেছে বলেতো এমন নয় যে শিশুটির মা নেই। মা অবশ্যই আছে। কিন্তু আমরা কিভাবে আইডেন্টিফাই করতে পারি কোন মহিলা শিশুটির আসল মা ? পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে তাই তো ? তো আপনিও বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা করেন, পরিক্ষা নিরিক্ষা করেন তাহলেই সঠিক ধর্মের খোঁজ পেয়ে যাবেন। ইনশা-আল্লাহ।
Masha-Allah
Masha-Allah