ইসলাম কি সর্বাবস্থায় ‘কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর’ এমন নির্দেশ দেয়?
ইসলাম কি সর্বাবস্থায় ‘কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর’ এমন নির্দেশ দেয়?
নাস্তিক ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের ইসলাম সম্পর্কে অন্যতম একটি অভিযোগ হলো ইসলাম মুসলিম ব্যতীত অন্য সকল মানুষকে হয় ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে অন্যথায় হত্যা করে। এ ধরনের অভিযোগের ফলে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে থাকে সত্য না জানার কারণে। নাস্তিকরাও এমনভাবে কাটপিছ করে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করে থাকে যা দেখে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই এই বিষয়গুলো নিয়ে সকল মুসলিমের স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এই দাবির পক্ষে অমুসলিমরা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে রেফারেন্স দিয়ে থাকে। যেমন,
তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক।[1] (9:5) At-Tawba | (৯:৫) আত-তাওবা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদেরকে পাও এবং তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করেছিল। আর ফিতনা হত্যার চেয়ে কঠিনতর এবং তোমরা মাসজিদুল হারামের নিকট তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সেখানে লড়াই করে। অতঃপর তারা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তবে তাদেরকে হত্যা কর। এটাই কাফিরদের প্রতিদান।[2] (2:191) Al-Baqara | (২:১৯১) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
এই আয়াতগুলো দেখার পর আপাতদৃষ্টিতে যে কারোই মনে হতে পারে নাস্তিকদের অভিযোগগুলো সত্য। তবে এই আয়াতগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপট এবং পূর্বের আয়াত পরের আয়াতগুলো পড়লে সত্যটা উন্মোচিত হবে। নাস্তিকরা যখন এই আয়তগুলো উল্লেখ করে তখন নাযিলের প্রেক্ষাপট এবং পূর্বের আয়াত ও পরের আয়াতগুলো গোপন করে যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই বিভ্রান্ত হয়। তবে আয়াতের শানে নুযুল, পূর্বের আয়াত এবং পরের আয়াত মিলিয়ে পড়লে মানুষের বিভ্রান্তি একেবারেই দূর হয়ে যাবে। তাই এই আর্টিকেলে আমরা নাস্তিকদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অভিযোগ‘ইসলাম কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলে’খণ্ডন করবো। প্রথমে সূরা তাওবা দিয়ে শুরু করা যাক।
সূরা তাওবায় ‘কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর’ আয়াতের ব্যাখ্যা
তারপর (এই) নিষিদ্ধ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, তাদের অপেক্ষায় প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসে থাক।[3] (9:5) At-Tawba | (৯:৫) আত-তাওবা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
এই আয়াতটি সূরা তাওবার ৫ নং আয়াত। কি কারণে মুশরিকদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলা হয়েছে তা বুজতে হলে আমাদের প্রথম আয়াত থেকে পড়ে আসতে হবে।
মুশরিকদের মধ্যেকার যাদের সঙ্গে তোমরা সন্ধিচুক্তি করেছিলে তাদের সাথে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হল।
অতঃপর (হে কাফিরগণ!) চার মাস তোমরা যমীনে (ইচ্ছে মত) চলাফেরা করে নাও; আর জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে নত করতে পারবে না, আল্লাহ্ই সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ হতে বড় হাজ্জের দিনে মানুষদের কাছে ঘোষণা দেয়া হল যে আল্লাহ মুশরিকদের সাথে সম্পর্কহীন এবং তাঁর রসূলও। কাজেই এখন যদি তোমরা তাওবাহ কর, তাতে তোমাদেরই ভাল হবে, আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রেখ যে, তোমরা আল্লাহকে হীন-দুর্বল করতে পারবে না, আর যারা কুফরী করে চলেছে তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি, আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন।
অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনে, অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে। তা এই জন্য যে, তারা এমন এক কওম, যারা জানে না।[4]সূরা তাওবা; ৯ঃ১-৬
এখানে প্রথম আয়াত থেকে রেফারেন্স নিয়ে নাস্তিকরা দাবি করেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই কাফেরদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তাই কাফেরদের কোনো দোষ নেই, বরং আল্লাহ তা’আলা তাদের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে আবার তাদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলা হয়েছে। তবে নাস্তিকদের এই অভিযোগটি সত্য নয়, কারণ চুক্তি কাফেররাই ভঙ্গ করেছে। এই বিষয়টি ৪ নং আয়াত থেকেই প্রমাণিত হয়। ৪নং আয়াতে বলা হয়েছে,
কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করেনি, আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর। অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন।[5] সূরা তাওবা; ৯ঃ৪
দেখুন এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, যারা চুক্তির ব্যাপারে ত্রুটি করেনি, মুসলিমদের বিপক্ষে কাউকে সাহায্য করেনি, তাদের সাথে চুক্তি পূর্ণ করতে। কাজেই এখান থেকেই প্রমাণিত হয় যে, যাদের সাথে প্রথম আয়াতে চুক্তি ভঙ্গ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো তারা চুক্তি রক্ষা করতে পারেনি বিধায় চুক্তি ভঙ্গ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই আয়াতগুলো নাযিলের সময় বা প্রেক্ষাপট থেকে এটা আরো সুস্পষ্ট হয় যে কাফেররাই চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
হুদায়বিয়ার সন্ধি
হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রেক্ষাপটটি হলো,রাসুল (সাঃ) ষষ্ঠ হিজরিতে উমরা পালনের নিয়ত করেন। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা রাসুল (সাঃ) কে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দেয়। পরবর্তীতে মক্কার কুরাইশ ও মুসলিমদের মধ্যে একটি সন্ধি চুক্তি সম্পাদিত হয় যা হুদাইবিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। এই চুক্তির মেয়াদকাল হলো দশ বছর। কুরাইশরা সুহাইল বিন আমরকে সন্ধি চুক্তি করার জন্য রাসুল (সাঃ) এর নিকট প্রেরণ করেন। অনেক আলাপ-আলোচনা শেষে কুরাইশদের সাথে মুসলিমদের চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির দফাগুলো নিম্নরূপ;
- রাসূলুল্লাহ (স:) এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই সঙ্গী সাথীগণসহ মদীনায় ফিরে যাবেন। মুসলিমগণ আগামী বছর মক্কায় আগমন করবেন এবং সেখানে তিন দিন অবস্থান করবেন। তাঁদের সঙ্গে সফরের প্রয়োজনীয় অস্ত্র থাকবে এবং তরবারী কোষবদ্ধ থাকবে। তাঁদের আগমনে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে না।
- দশ বছর পর্যন্ত দু’ পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এ সময় লোকজন নিরাপদ থাকবে, কেউ কারো উপর হাত উত্তোলন করবে না।
- যে সকল গোত্র কিংবা জনগোষ্ঠী মুহাম্মদ (স)-এর অঙ্গীকারাঙ্গনে প্রবেশ লাভ করতে চাইবে, প্রবেশ লাভ করতে পারবে। যে গোত্র যে দলে অংশ গ্রহণ করবে তাকে এ দলের অংশ গণ্য করা হবে। এরূপ ক্ষেত্রে কোন গোত্রের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হলে সংশ্লিষ্ট দলের উপর অন্যায় করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
- কুরাইশদের কোন লোক অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া অর্থাৎ পলায়ন করে মুহাম্মদ (স)-এর দলে যোগদান করলে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে। কিন্তু মুহাম্মদ (স)-এর দলভুক্ত কোন লোক আশ্ৰয় লাভের উদ্দেশ্যে পলায়ন করে কুরাইশদের নিকট গেলে কুরাইশগণ তাকে ফেরত দেবে না।[6] আর রাহীকুল মাখতুম; পৃষ্ঠা নংঃ ৩৯২, তাওহীন প্রকাশনি
এই চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সন্ধি হলো, দশ বছর পর্যন্ত দু’ পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এ সময় লোকজন নিরাপদ থাকবে, কেউ কারো উপর হাত উত্তোলন করবে না। কিন্তু মক্কার কুরাইশগণ এই চুক্তিটি ভঙ্গ করেন।
কুরাইশ কর্তৃক হুদায়বিয়ার সন্ধি বা চুক্তি ভঙ্গ
মক্কার কুরইশগণই হুদায়বিয়ার চুক্তি ভঙ্গ করেছিলো তা বিভিন্ন তাফসীর এবং সিরাত গ্রন্থ হতে প্রমাণিত। কুরাইশগণ নিজেরাই চুক্তি ভঙ্গের কারণে মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করার জন্যও আবু সুফিয়ানকে মদিনায় প্রেরণ করেন। যেমন,তাফসীরে মা’আরেফুলে উল্লিখিত রয়েছে,[7] তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন খন্ড ৪ পৃষ্ঠা ৩০৫-৬,
বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ আর রাহিকুল মাখতুম থেকেও মক্কার কুরাইশদের চুক্তি ভঙ্গের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।[8] আর রাহীকুল মাখতুম; পৃষ্ঠা নংঃ ৪৫২, তাওহীন প্রকাশনি
কুরাইশগণ নিজেরাই চুক্তি ভঙ্গের কারণে মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় চুক্তি নবায়ন করার জন্য আবু সুফিয়ানকে মদিনায় প্রেরণ করার ঘটনাটিও সিরাত গ্রন্থ থেকে প্রমাণিত হয়।[9] আর রাহিকুল মাখতুম; পৃষ্ঠা; ৪৫৩-৪৫৪; তাওহীদ প্রকাশনি
কুরাইশ কর্তৃক সুস্পষ্ট চুক্তি ভঙ্গ করা নাস্তিকের কাছে হয়ে যায় কথিত চুক্তি ভঙ্গ! এ যেন বিচার মানি তবে তালগাছ আমার প্রবাদের আরেক রুপ।
অনলাইনে বেশকিছু নাস্তিকদের দেখা যায় তারা হুদাইবিয়ার এই সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করাকে ‘কথিত চুক্তি ভঙ্গ বা চুক্তি ভঙ্গের অজুহাত’ বলে অভিহিত করে থাকেন। অথচ, সুস্পষ্টভাবে হুহাইবিয়ার সন্ধির ২ ও ৩ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, দশ বছর পর্যন্ত দু’ পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ থাকবে। এ সময় লোকজন নিরাপদ থাকবে, কেউ কারো উপর হাত উত্তোলন করবে না। যে সকল গোত্র মুহাম্মদ (স)-এর আশ্রয়ে প্রবেশ লাভ করতে চাইবে, প্রবেশ লাভ করতে পারবে। যে গোত্র যে দলে অংশ গ্রহণ করবে তাকে সেই দলের অংশ হিসেবে গণ্য করা হবে। এরূপ ক্ষেত্রে কোন গোত্রের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হলে সংশ্লিষ্ট দলের উপর অন্যায় করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া হবে।
অর্থাৎ, আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে কেউ চাইলে মুসলিমদের আশ্রয়ে থাকতে পারবে এবং কেউ চাইলে মুশরিকদের আশ্রয়েও থাকতে পারবে। তাই কোনো গোত্র যদি মুসলিমদের দলে অংশগ্রহণ করে তবে তারা মুসলিমদেরই অংশ বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো গোত্র মুশরিকদের দলে অংশগ্রহণ করলে তারা মুশরিকদেরই অংশ বলে বিবেচিত হবে। আর মুসলিমদের দলে অংশ নেওয়া কোনো গোত্রের উপর যদি মুশরিকরা হামলা করে তাহলে তা মুসলিমদের উপর হামলা করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে এবং মুশরিকদের দলে অংশ নেওয়া কোনো দলের উপর যদি মুসলিমরা হামলা করে তাহলে তা মুশরিকদের উপরই হামলা করা হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। এই শর্তগুলো সুস্পষ্টভাবে চুক্তি পত্রে উল্লেখিত ছিলো যা আমরা ইতোমধ্যেই দেখে এসেছি। কাজেই মক্কার মুশরিকরা যখন মুসলিমদের আশ্রয়ে থাকা মক্কার বনু খোযা‘আহ গোত্রের উপর হামলা করে তা সুস্পষ্ট চুক্তি ভঙ্গের সামিল। এটাকে অজুহাত বা কথিত চুক্তি বলে নাস্তিকরা নিজেদের মনকে সান্ত্বনা দিলেও যুক্তির খাতায় তারা এহেন যুক্তির জন্য শূন্য নাম্বার পাবে।
কিছু নাস্তিক আবার এমন যুক্তিও দেয় যে, ইসলামপূর্ব জাহেলিয়াতের সময় থেকেই বনু খোযা‘আহ ও বনু বকরের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের সূচনা হয় যখন বনু খোযা‘আহ ও বনু বকরের সাথে নিরাপত্তার চুক্তিবদ্ধ মালিক বিন আব্বাদ নামের এক ব্যাবসায়ীকে তার বাণিজ্য পথে আক্রমন করে হত্যা করে। এর প্রতিশোধে বনু বকর, বনু খোযা‘আহর একজনকে হত্যা করে এবং এই হত্যার বদলায় বনু খোযা‘আহ, বনু বকরের দিল উপগোত্রের দলপতির তিন পুত্র সালমা, কুলথুম ও ধুয়াইবকে আরাফার হত্যা নিষিদ্ধ পবিত্রভুমিতে হত্যা করে। এই তিন সন্তান তাদের গোত্রের মান্যগণ্য বলে বিবেচিত ছিলেন। এই হত্যার বিচার বা রক্তপন ইসলাম আসার পর অমীমাংসিত ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে, বানু বকরের আলদিল উপগোত্রের নেতা নাওফাল বিন মুয়াওয়িয়া আল দিলি, বানু খুযায়াকে রাতের বেলা আক্রমন করে। তাই এই হামলা চুক্তির কারণে চুক্তি ভঙ্গ করা নাকি অজুহাত!
চুক্তির পূর্ব উভয় গোত্রের মধ্যে যত বিরোধই থাকুক না কেন, নতুন করে তারা যখন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে এর মানে পূর্বের সকল বিরোধ ভুলে গিয়েই তারা নতুন করে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। তাই নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার পর যারাই হামলা করবে প্রথমে তারাই চুক্তি ভঙ্গকারী বলে গণ্য হবে। এছাড়াও, চুক্তিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিলো মুসলিমদের আশ্রয়ে থাকা কোনো গোত্রকে হামলা করা মানে মুসলিমদেরই হামলা করা এবং মুশরিকদের আশ্রয়ে থাকা কোনো গোত্রকে হামলা করার মানে মুশরিকদের উপরই হামলা করা। তাই বনু বকর কর্তৃক বনু খুযা’আ কে হামলা করা, এবং সেখানে কুরাইশগণ বনু বকর অস্ত্র ও জনবল দিয়ে সাহায্য করার মাধ্যমে হুদাইবিয়ার ২নং সন্ধি (১০ বছর কেউ কারো সাথে যুদ্ধ করবে না) এবং ৩ নং সন্ধি (মুসলিমদের আশ্রয়ে থাকা কোনো গোত্রকে হামলা করা মানে মুসলিমদেরই হামলা করা এবং মুশরিকদের আশ্রয়ে থাকা কোনো গোত্রকে হামলা করার মানে মুশরিকদের উপরই হামলা করা) ভঙ্গ করা হয়েছে মুশরিকদের পক্ষ হতে। তাই পূর্বে কি ঘটেছিলো বা কি হয়েছে এমন যুক্তি দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ হয়নি দাবি করা নিশ্চয়ই নির্বুদ্ধিতার সামিল।
কিছু নাস্তিকতো আবার এই চুক্তি ভঙ্গের ঘটনাকে ক্লাসে দেরি করে আসার উদাহরণের সাথে তুলনা করে বলে, এই চুক্তি ভঙ্গের ফলে দেওয়া শাস্তি আর ক্লাসে দেরি করে আসলে ছাত্রদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া নাকি একই রকম! এ ধরণের কথা নাস্তিকদের মুখে শুনে বেশ বিনোদন পাওয়া যায়। আপনারাই একটু চিন্তা করে দেখুন, মনে করুন রাশিয়া আর আমেরিকার মধ্যে কোনো একটা চুক্তি সম্পাদিত হলো। দুই রাষ্ট্রের কোনো একটি রাষ্ট্র সেই চুক্তিটি ভঙ্গ করলো। এই চুক্তি ভঙ্গ করা কি ক্লাসে দেরি করে আসার মতো কোনো সাধারণ ঘটনা?! কোনো বিবেকবান সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ রাষ্ট্রীয়, বা রাজনৈতিক চুক্তি ভঙ্গকে এহেন সাধারণ ঘটনার সাথে তুলনা করবে বলে কি মনে হয় আপনাদের?
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি প্রথমে হুদাইহবিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করেছিলো?
হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তির অন্যতম একটি ছিলো কুরাইশদের মধ্য থেকে যদি কেউ তার অভিবাবকের অনুমতি না নিয়ে মুসলিমদের কাছে চলে আসে তাহলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মুসলিমদের মধ্য হতে কেউ যদি মদিনায় চলে আসে তাহলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। কিন্তু চুক্তির কিছুদিন পর মক্কা থেকে কিছু মহিলা মদিয়ায় হিজরত করেন। চুক্তি অনুযায়ী মক্কার কুরাইশরা রাসুল (সাঃ) এসে মহিলাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে এই মহিলাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাই।
নাস্তিকরা এ কারণে দাবি করে যে, মুসলিমরাই প্রথমে হুদাইবিয়ার চুক্তি ভঙ্গ করেছিলো। আপাতত দৃষ্টিতে ঘটনাটি কেবল এতটুকু পড়লে আপনার কাছেও মনে হবে যে চুক্তি প্রথমে মুসলিমরাই ভঙ্গ করেছে। তবে সত্য এটাই যে মুসলিমরা চুক্তি ভঙ্গ করেনি। কারণ হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তিতে বলা হয়েছে মক্কার কুরাইশদের মধ্য থেকে কেউ যদি মদিনায় চলে আসে তবে তাদের ফেরত দিতে হবে এই শর্তটি কেবল পুরুষের জন্য ছিলো। এ কারণে আল্লাহ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে হিজরতকারী মহিলাদের ফিরিতে দিয়ে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে এই বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার পর মক্কার মুশরিকগণ এই বিষয়ে চুপ হয়ে গিয়েছিলো।[10] সীরাতুল মুস্তফা (সাঃ); খন্ড নংঃ ২; পৃষ্ঠা নং; ৩১৩-৩১৪
মক্কার মহিলাদের মতো অনেক পুরুষও মদিনায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিকট হিজরত করে চলে আসতেন। চুক্তি অনুযায়ী রাসুল (সাঃ) তাদের ফিরিয়েও দিতেন। যেমন, হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তির পর হযরত আবূ বাসির (রাঃ) মুশরিকদের বন্দীখানা থেকে পালিয়ে মদিনায় চলে আসেন। তাই কুরাইশগণ দুজন লোক পাঠিয়েছেন আবূ বাসির (রাঃ) কে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) চুক্তি মোতাকেব তাকে কুশরিকদের হাতে সোপর্দ করে দেন।[11]সীরাতুল মুস্তফা (সাঃ); খন্ড নংঃ২; পৃষ্ঠা নং; ৩১২
কাজেই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ই প্রথমে চুক্তি ভঙ্গ করেছিলো এই দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচার।
মক্কা বিজয়ের অভিজান
কুরাইশ কর্তৃক হুদাইবিয়ার চুক্তি ভঙ্গ করার পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ১০ রমজান ৮ম হিজরি মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন দশ হাজার সাহাবীর এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে। মক্কায় যাত্রা শুরু করার পর কুরাইশদের সর্বোচ্চ নেতা আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং আবু সুফিয়ান মক্কায় ফিরে গিয়ে কুরাইশগনদের সতর্ক করেন যে মুহাম্মদ (সাঃ) বিশাল বাহিনী নিয়ে মক্কায় আগমন করছে। যারা সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নিবে, যারা নিজ নিজ ঘরে ও মসজিদুল হারামে আশ্রয় গ্রহণ করবে তারা রক্ষা পাবে। তাই মক্কার কুরাইশগণ আবু সুফিয়ানের ঘর, নিজ নিজ ঘর এবং মসজিদুল হারামে আশ্রয় গ্রহণ করে। তবে তারা কিছু লম্পটকে মুসলিমদের বিপক্ষে লেলিয়ে দেয় এবং বললো যদি তারা মুসলিমদের বিপক্ষে কৃতকার্য হয় তবে আমরা তাদের সাথে যোগ দিবো।
মুসলিম বাহিনী রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশনামতে অগ্রসর হতে থাকেন। খালিদ বিন ওয়ালিদের সাথে কুরাইশ সংঘর্ষ হয় এবং সেখানে ১২ জন মুশরিক নিহত হয় এবং ২জন মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন। যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে কুরাইশগণ যুদ্ধের ময়দান হতে ফলায়ন করেন। এরপর মুহাম্মদ (সাঃ) মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং সেখানে থাকা মূর্তিগুলো অপসারণ করেন। অতঃপর হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সকল কুরাইশদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন,
ওগো কুরাইশ জনগণ! তোমাদের কী ধারনা, তোমাদের সঙ্ঘে আমি কিরুপ ব্যবহার করব বলে মনে করছ?
সকলে বললো খুব ভালো। আপনি সদয় ভাই এবং সদয় ভাইয়ের পুত্র।
অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) বললেন, তাহলে তোমরা জেনে রেখ যে, আমি তোমাদের সঙ্ঘে ঠিক সেরুপ কথাই বলছি যেমনটি ইউসূফ (আঃ) তার ভাইদের সাথে বলেছিলেন, আজ তোমাদের জন্য কোনো নিন্দা নেই। যাও, আজ তোমাদের সকলকে মুক্তি দেওয়া হলো।[12] আর রাহিকুল মাখতুম; পৃষ্ঠা; ৪৬৫; তাওহীদ প্রকাশনি
মক্কা বিজয়কালীন মুশরিকদের চার শ্রেণী ও তাদের ব্যাপারে হুকুম আহকাম। (যে কারণে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে এবং যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।)
মক্কা ছিল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও মুহাজির সাহাবিদের জন্মভূমি। কিন্তু মক্কার কাফেরগণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সহ মুসলিমদের মক্কা থেকে বিতাড়িত করে দেয়। সময়ের পালা বদলে যখন মক্কা পুনরায় মুসলিমদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে (মক্কা বিজয়ের পর) তখন মক্কার কুরাইশগণ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। এদের মধ্যে প্রথম শ্রেণি হলো যাদের সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিলো এবং পরবর্তীতে তারা (মুশরিকগণ) সেই চুক্তি ভঙ্গ করেন। এই ব্যাপারে ইতোমধ্যেই একাধিক দলিল উপস্থাপন করা হয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় দলটি হলো, যাদের সাথে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি সম্পাদিত করেছিলো। এই গোত্রগুলো হলো, বনু কিনানার দুটি গোত্র বনু যমারা ও বনু মূদলাজ। সূরা তাওবা নাযিলের সময় তাদের চুক্তির মেয়াদ আরো নয় মাস বাকি শ্রেণি। আর তৃতীয় শ্রেণী হলো যাদের সাথে চুক্তি হয়েছিলো মেয়াদকাল নির্দিষ্ট করা ব্যতীত। অর্থাৎ, এই শ্রেণীর সাথে চুক্তির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ছিলো না। আর চতুর্থ শ্রেণির সাথে কোনো রকম চুক্তি করা হয়নি।
মক্কা বিজয়ের পূর্বে মুসলিমরা যতবারাই অমুসলিমদের সাথে চুক্তি করেছিলো ততবারই অমুসলিমরা চুক্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা গোপনে বা প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করেছে। তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এবং আল্লাহর ইঙ্গিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি মক্কার মুশরিক কর্তৃক ভঙ্গ হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন যে অমুসলিমদের সাথে নতুন করে আর কোনো চুক্তি সম্পাদন করবে না। তাই মক্কা নগরী তথা আরব ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার জন্য থেকে মুরশিকদের নির্দেশ প্রধান করেন এবং আরব উপদ্বীপকে মুসলিমদের দুর্গ ও আবাসভূতিতে রুপান্তর করার পরিকল্পনা করেন।
চার শ্রেণীর প্রথম শ্রেণি যারা হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করেছিলো। কাজেই তাদের ব্যাপারে সূরা তাওবার ৫নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হওয়ার মধ্যেই যেন তারা আরব ভূখণ্ড ত্যাগ করে অথবা ইসলাম গ্রহণ করে। নতুবা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে।
দ্বিতীয় শ্রেণি যাদের সাথে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি করা হয়েছিলো এবং তারা তাদের চুক্তি লঙ্গন করেনি, ফলে তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি পালন করতে বলা হয়েছে সূরা তাওবার ৪নং আয়াতে।
আর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি সম্পর্কে সূরা তাওবার ১নং ও ২নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ ও রাসুলের পক্ষ থেকে তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে সেই সব মুশরিকদের সাথে যাদের মেয়াদকাল নির্দিষ্ট করা ব্যতীত চুক্তি করা হয়েছে এবং যাদের সাথে কোনো প্রকার চুক্তিই করা হয়নি। তাই তাদেরকে আরব ভূখণ্ডে বসবাসের সময়সীমা চারমাস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।[13] তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন; খণ্ড; ৪ পৃষ্ঠা;৩০৫-৬
মুশরিকদের হয় ইসলাম গ্রহণ করতে হবে অথবা ৪ মাসের মধ্যে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে হতে, অন্যথায় তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা হবে। এহেন আল্টিমেটাম কি অমানবিক?
মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ সূরা তাওবা দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে ইতোমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। মুশরিকদের (যারা চুক্তি ভঙ্গ করেছে, যাদের সাথে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি ছিল, যাদের সাথে কোনো চুক্তিই ছিল না) জন্য ৪ মাস সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো। এই সময়ের মধ্যে তারা হয়ত ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা আরব উপদ্বীপ থেকে চলে যাবে। তবে এই আয়াতগুলো যে প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছিলো তখন কোনো অমুসলিমকে আরব উপদ্বীপ হতে বের করে দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। কারণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মক্কার সকল মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করে নেয়, আলহামদুলিল্লাহ। এছাড়া হাদিস থেকেও মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ থেকে বের করে নির্দেশ প্রমাণিত হয়।
পরিচ্ছেদঃ ৫৮/৬. আরব উপদ্বীপ হতে ইয়াহুদীদের বহিষ্করণ।
৩১৬৮. সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর (রহ.) হতে বর্ণিত যে, তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ বৃহস্পতিবার! তুমি জান কি বৃহস্পতিবার কেমন দিন? এ বলে তিনি এমনভাবে কাঁদলেন যে, তাঁর অশ্রুতে কঙ্কর ভিজে গেল। আমি বললাম, হে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)! বৃহস্পতিবার দিন কী হয়েছিল? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগকষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, আমার নিকট গর্দানের হাড় নিয়ে এস, আমি তোমাদের জন্য এমন একটি লিপি লিখে দিব অতঃপর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তখন উপস্থিত সাহাবীগণের বাদানুবাদ হল। অথচ নবীর সামনে বাদানুবাদ করা শোভনীয় নয়। সাহাবীগণ বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কী হয়েছে? তিনি কি বলতে ভুলে গেলেন? তোমরা আবার জিজ্ঞেস করে দেখ। তখন তিনি বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি যে অবস্থায় আছি, তা তোমরা আমাকে যেদিকে ডাকছ তার চেয়ে উত্তম। অতঃপর তিনি তাঁদের তিনটি বিষয়ে আদেশ দিলেন। (১) মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হতে বের করে দিবে, (২) বহিরাগত প্রতিনিধিদের সেভাবে উপঢৌকন দিবে যেভাবে আমি তাদের দিতাম। তৃতীয়টি উত্তম ছিল হয়ত তিনি সে ব্যাপারে নীরব থেকেছেন, নতুবা তিনি বলেছিলেন, আমি ভুলে গিয়েছি। সুফ্ইয়ান (রহ.) বলেন, এই উক্তিটি বর্ণনাকারী সুলাইমান (রহ.)-এর। (১১৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৪১)[14] সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)| হাদিস:৩১৬৮ | Sahih al-Bukhari, Hadith No. 3168 (hadithbd.com)
একটা বিষয় জানা থাকতে হবে যে, আরব উপদ্বীপ থেকে মুশরিকদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ কেবল মাত্র আরব উপদ্বীপের জন্য সীমাবদ্ধ। পৃথিবীর অন্য কোথাও ইসলাম কায়েম হলে সেখান থেকে অমুসলিমদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া যাবে না। কারণ যত জায়গায় মুশরিকদের বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ এর কথা এসেছে তার প্রতিটি জায়গায় কেবল মাত্র আরব উপদ্বীপের কথাই এসেছে। এছাড়াও, সাহাবাদের যুগে, ও ইসলামী খিলাফত চলাকালীন সময়গুলোতে ইসলামী রাষ্ট্রে ইহুদি খ্রিষ্টানরা বসবাস করতো। আর ইসলামী ফিকহ শাস্ত্রের অন্যতম একটি বিষয় হলো ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের হুকুম’। যদি ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের বসবাস করার সুযোগ নাই থাকতো তবে তাদের ব্যাপারের হুকুম নিয়ে আলোচনা থাকারও কোনো সুযোগ থাকতো না। এতেই প্রমাণ হয় যে, ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের বসবাস করার সুযোগ রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার নিয়ে সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদির লিখিত বই ‘ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার’ বইটি পড়তে পারেন।[15] ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের অধিকার; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি (রহ)
যখন মুশরিকদের হয় ইসলাম গ্রহণ অথবা আরব উপদ্বীপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তখন মক্কা পুরোপুরি বিজয় হয়ে যায়। অর্থাৎ, মক্কা পুরোপুরি ইসলামের নিয়ন্ত্রণে বা ইসলামের ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আরব উপদ্বীপ হলো ইসলামের প্রাণ কেন্দ্র। আমরা বর্তমান পৃথিবীতে বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখতে পাবো সকল দেশেই এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ। যেমন, সংসদ ভবন, বিভিন্ন সামরিক এলাকা, ইত্যাদি। তাই বলে আমরা কেউ এমনটা বলিনা যে, অমুক রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের সরকার খুবই অমানবিক, কারণ তারা তাদের সংসদ ভবন বা বিভিন্ন সামরিক জায়গাগুলোতে সাধারণ মানুষদের প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে। বরং, একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
ইসলামের দুর্গ হলো আরব উপদ্বীপ। এখানে রাসুল (সাঃ) এর উপর ওহি এসেছে, এখানে রয়েছে পবিত্র ঘর কাবা। তাই এই ভূমিকে রাসুল (সাঃ) শুধু মাত্র মুসলিমদের আবাসভূমি হিসেবে পরিণত করেন। যেমনটি প্রতিটা দেশের সরকার তার দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কেবল মাত্র গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের জন্য নির্ধারণ করে রাখেন। এছাড়াও আমরা জানি যে, মক্কার মুশরিকগণ উলঙ্গ হয়ে পবিত্র ঘর কাবা’তে হজ করতে আসতো, তারা কাবা’তে মূর্তি পূজা করতো। ঠিক একই রকম একটি ঘটনা আপনি বর্তমানে কোনো একটি দেশের সাথে তুলনা করে দেখুন। মনে করুন, বাংলাদেশের সংসদ ভবনে প্রতিনিয়ত কিছু লোক এসে দেশের সংবিধান পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে, বাংলাদেশের শিল্প, সংস্কৃতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে, উলঙ্গ হয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশ করে, এমতাবস্থায় বাংলাদেশের সরকার কি পদক্ষেপ নিবে? তিনি কি তার দেশের এসব লোকদের বিনা বাধায় নিজ দেশের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এহেন দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড (যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল) পরিচালনা করার অনুমতি দিবেন? বা দেওয়াটা কি যৌক্তিক? ব্যাপারটি নিশ্চয়ই খুবই হাস্যকর একটি বিষয় হবে যে কোনো এক দেশের সরকার তার দেশের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ স্থান এমনভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন যেখানে মানুষ এসে দেশের সংবিধান পরিপন্থি কর্মকাণ্ড করে থাকে, দেশকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা, রসিকতায় লিপ্ত হয়। বরং, বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে তাৎক্ষণিক এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে করে কেউ এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হতে পারে।
১৯৭১ সালে ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা সবাই জানি যে এই স্বাধীনতা যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) কিছু লোক পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) পক্ষ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে কাজ করেছে যাদেরকে আমরা রাজাকার হিসেবে চিনি। এই রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এদেশে। আমরা কি কিছুতেই বলতে পারি, রাজাকারদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া একটি অন্যায়, অমানবিক কাজ? রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে এদেশের অনেক নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আমরা কি বলতে পারি যে ফাঁসি দেওয়া বা শাস্তি দেওয়া অমানবিক? মোটেও এমনটি বলা যুক্তিযুক্ত হবে না। এই আলোচনা থেকে আমরা এটাই বুঝাতে চাচ্ছি যে, কোনো একটি দেশের নাগরিক যদি তার রাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থি কোনো কাজ করে থাকে, রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব খুন হয় বা মান-মর্যাদার হানি হয় এমন কোনো কাজ করে থাকে তবে সেই রাষ্ট্রের সরকার উক্ত নাগরিককে সংবিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রধান করতে পারেন। এই শাস্তি প্রধান করাকে আমরা অমানবিক বলতে পারিনা। কারণ, সংবিধান পরিপন্থি কোনো কাজ করা, রাষ্ট্রে সার্বভৌমত্ব খুন হয় বা মান-মর্যাদার হানি হয় এমন কোনো কাজ করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল যা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। আর অপরাধের জন্য শাস্তি পাওয়াটাই যৌক্তিক।
রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলতে বুঝানো হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী,
(১) কোন ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোন অসাংবিধানিক পন্থায় – (ক) এই সংবিধান বা ইহার কোন অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে ; কিংবা (খ) এই সংবিধান বা ইহার কোন বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করিলে কিংবা উহা করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করিলে- তাহার এই কার্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা হইবে এবং ঐ ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হইবে।
(২) কোন ব্যক্তি (১) দফায় বর্ণিত– (ক) কোন কার্য করিতে সহযোগিতা বা উস্কানি প্রদান করিলে; কিংবা (খ) কার্য অনুমোদন, মার্জনা, সমর্থন বা অনুসমর্থন করিলে- তাহার এইরূপ কার্যও একই অপরাধ হইবে।
(৩) এই অনুচ্ছেদে বর্ণিত অপরাধে দোষী ব্যক্তি প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।[16]গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান | ৭ক। সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ, ইত্যাদি … Continue reading
সুতরাং, কোনো দেশের সংবিধান পরিপন্থি কাজ করা, বা সংবিধান রহিত, স্থগিত বা রদ করা, অথবা করার জন্য চেষ্টা করা এবং সংবিধানের প্রতি নাগরিকদের যে আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় রয়েছে তা পরাহত বা বাধাগ্রস্ত করলে বা করার চেষ্টা করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য হবে। এবং অসাংবিধানিক কার্য করতে কাউকে সহযোগিতা করা কিংবা উসকানি প্রদান করিলে বা অসাংবিধানিক কার্য করাকে সমর্থন করাকেও রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে গণ্য করা হবে।
এবার মক্কার কুরাইশদের কর্মকাণ্ডের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। মক্কার কুরাইশগণ রাসুল (সাঃ) এর সাথে যতবারই সন্ধি চুক্তি করেছে ততবারই চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে মুসলিমদের বিপক্ষে কাজ করেছে। তারা শিরকের মতো গুনাহতে লিপ্ত থাকে যা অত্যন্ত বড় একটি গুনাহ এবং এটি ইসলামী শরিয়ত বা সংবিধানের পরিপন্থি। তারা মুসলিমদের পবিত্র ঘর মক্কায় উলঙ্গ হয়ে প্রবেশ করে, সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ করতো। এই কাজগুলো সুস্পষ্ট মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থি কাজ যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এছাড়া, যেহেতু আরব উপদ্বীপ মুসলিমদের প্রাণকেন্দ্র, সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাই এই ভূমিতে মুসলিমরাই বসবাস করবে এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। কাজেই শুধু মাত্র আরব উপদ্বীপের মুশরিকদের হয় ইসলাম গ্রহণ করতে হবে না হয় ৪ মাসের মধ্যে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া মোটেও অমানবিক বা অযৌক্তিক নয়। বরং, বিচক্ষণ শাসকের বৈশিষ্ট্য এটি।
সূরা বাকারায় ‘কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্য কর’ আয়াতের ব্যাখ্যা
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-বাকারায় মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন,
তাদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে। বস্তুতঃ ফিতনা হত্যার চেয়েও গুরুতর। তোমরা মাসজিদে হারামের নিকট তাদের সাথে যুদ্ধ করো না, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের সাথে সেখানে যুদ্ধ না করে, কিন্তু যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরাও তাদের হত্যা কর, এটাই কাফিরদের প্রতিদান।[17] (2:191) Al-Baqara | (২:১৯১) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
সূরা বাকারা’র এই আয়াত দেখিয়েও নাস্তিকরা দাবি করে ইসলাম নাকি বিনা কারণে কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলে। আপাতদৃষ্টিতে যে কারোই কেবল মাত্র এই আয়াতটি দেখলে এমনটি মনে হতেই পারে যে, কুরআন আসলেই বিনা কারণে কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলে। কিন্তু আমরা যদি এই আয়াতের প্রেক্ষাপট, আগের আয়াত, পূর্বের আয়াতসমূহ দেখি তাহলে আমাদের ধারণা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর এই কারণেই নাস্তিকরা কখনোই আমাদের পূর্বের আয়াত, পরের আয়াতের কথা বলে না। তারা কেবল মাত্র নিজেদের সুবিধামতো একটা আয়াত দেখাবে অথবা একটি আয়াতের খণ্ডিত কোনো অংশ, অথবা একটি হাদিসের কোনো খণ্ডিত অংশ দেখিয়ে ইসলামের উপর মিথ্যা দাবি আরোপ করবে যাতে করে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
কিন্তু সত্য এটাই যে, উক্ত আয়াতে “তাদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে” এখানে ‘তাদেরকে’ বলতে ঐ সমস্ত কাফেরদের বুঝানো হয়েছে যাদের কথা পূর্বের আয়াত এবং পরের আয়াতে রয়েছে। আর পূর্বের আয়াত এবং পরের আয়াতে ঐ সমস্ত কাফেরদের কথা বলা হয়েছে যারা স্বয়ং মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে আসবে। যেমন, সূরা বাকারা ১৯০ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে,
তোমরা আল্লাহর পথে সেই লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, কিন্তু সীমা অতিক্রম করো না। আল্লাহ নিশ্চয়ই সীমা অতিক্রমকারীকে ভালবাসেন না।[18] (2:190) Al-Baqara | (২:১৯০) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com)
১৯০ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ রয়েছে যে কেবল মাত্র ঐসকল কাফেরদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা করতে বলা হয়েছে যারা মুসলিমদের বিপক্ষে যুদ্ধ করবে। আর আপনার সাথে কেউ যুদ্ধ করতে আসলে আপনি যদি তাকে কিছু না করে বসে থাকেন তা হবে বোকাদের মতো কাজ। কাজেই কেউ যদি আপনার সাথে যুদ্ধ করতে আসে আর আপনি তাকে যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করেন তবে এ কাজকে পৃথিবীর কোনো আইনেই অমানবিক বলার সুযোগ নেই।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে উল্লেখ রয়েছে,[19] তাফসীরে জালালাইন; খন্ড নং;১ পৃষ্ঠা ৪২৭
এই আয়াতের মাধ্যমে ইসলাম যে মানবতার ধর্ম তা আরো সুস্পষ্টভাবে ফুঁটে উঠেছে। কারণ এই আয়াতে সুস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে যুদ্ধের মধ্যেও সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। আর সীমালঙ্ঘন না করার অর্থ হলো, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, অন্ধ, পঙ্গু লোকদের যুদ্ধের ময়দানে হত্যা করা যাবে না। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীতে চলমান বা পৃথিবীর ইতিহাসে অমুসলিমদের দ্বারা সংগঠিত যুদ্ধগুলোর দিকে দৃষ্টি নিলে আমরা দেখতে পায় সেখানে নির্বিচারে বেসামরিক মানুষের উপর বোমা বর্ষণ করা হয়, নারী-শিশুদের হত্যা করা হয় নির্বিচারে, নারীদের ধর্ষণ করা হয়, চালানো হয় অমানবিক, অবর্ণনীয় নির্যাতন। কাজেই পশ্চিমা সংস্কৃতি যেখানে মানবতাকে ধ্বংস করেছে সেখানে ইসলাম মানবতাকে রক্ষার জন্য এক আলোর মশাল নিয়ে হাজির হয়েছে মানুষের কাছে।
References