কাদিয়ানিরা অমুসলিম কেন ?
কাদিয়ানিরা অমুসলিম কেন ?
এই লিখার শুরুতে একটা বিষয় পরিষ্কার করা প্রয়োজন তা হলো আমি কোনো আলেম, মুফতি, মুহাদ্দিস কিছুই নয়। তাই কাউকে অমুসলিম ফতোয়া দেওয়াও আমার কাজ নয়। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করাটা ঈমানি দায়িত্ব। সেকারণে কাদিয়ানি সম্প্রাদয় সম্পর্কে কিছু পড়াশুনা করেছি যার মধ্যে অন্যতম একটি বই হলো উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলামি ব্যক্তিত্ব সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদির রচিত [1]’কাদিয়ানি সমস্যার' বইটি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সোর্স থেকেও কাদিয়ানি মতবাদ সম্পর্কে পড়াশুনা করেছি। আমি যতটুকু পড়েছি ঠিক ততটুকুই আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি ইনশা আল্লাহ। মূল বিষয়ে ফিরা যাক।
সাধারণ মুসলমানদের সাথে কাদিয়ানি সম্প্রদায় এর বিরোধের অন্যতম একটি কারণ হলো ‘খতমে নবুওয়ত’ নিয়ে নতুন ব্যাখ্যা। সাড়ে চৌদ্দশত বছর যাতব সারা পৃথিবীর সমগ্র মুসলিমগণ ‘খতমে নবুওয়ত’ সম্পর্কে যে বিশ্বাস লালন করে আসছে তার ঠিক বিপরিত নতুন একটি ব্যাখ্যা প্রধান করে কাদায়ানিগণ। সাধারণ মুসলিমদের মতে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর অর্থ এই যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী এবং রাসুল।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের মধ্যেকার কোন পুরুষের পিতা নয়, কিন্তু (সে) আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞাতা। [2]সূরা আল-আহযাব; ৩৩ঃ৪০
‘খতমে নবুওয়ত’ সম্পর্কে কাদিয়ানিদের মত
কাদিয়ানি সম্প্রদায় এর মতে ‘খাতিমুন্নাবিয়্যিন’ এর অর্থ হলো নবীদের মোহর, শেষ নবী নয়। তাদের মতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরেও নবী আসতে পারে এবং যে কোন নবী আসিবে তাহার নবুয়ত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট হতে সমর্থিত হতে হবে।
‘খাতিমুন্নাবিয়্যিন’ সম্পর্কে মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী বলেছেন,
‘খাতিমুন্নাবিয়্যিন’ এর অর্থ তাহার (হযরত মুহাম্মদ সাঃ) মোহর ব্যতিত কাহারো নবুয়ত সত্য বলিয়া স্বীকৃত হইতে পারেনা। যখন মোহার লাগিয়া যায় তখনই তাহা প্রমাণ্য হয় এবং সত্যরূপে স্বীকৃত বলিয়া বিবেচিত হয়। তদ্রূপ হযরতের মোহর এবং সত্য বলিয়া যে নবুয়ত স্বীকৃতি লাভ করে নাই তাহা খাটি এবং সত্য নহে। [3]রেফারেন্সঃ মুহাম্মদ মনজুর এলাহী রচিত ‘মলফুজাতে আহমাদিয়া’ ৫ম খন্ড, ২৯০ … Continue reading
আমরা ইহা অস্বীকার করি না যে রসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম খাতিমুন্নাবিয়্যিন। কিন্তু খতমের যে অর্থ ইহসানের অধিকাংশ লোক গ্রহণ করিয়াছে এবং যাহা রসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর মহান মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাহা এই যে, তিনি নবুওয়তের ন্যায় বিরাট নেয়ামত হতে নিজ উম্মতকে মাহরুম করিয়া গিয়েছেন, ইহা ঠিক নহে। বরং ইহার অর্থ এই যে তিনি নবীদের মোহর ছিলেন। এখন তিনি যাহাকে নবী রূপে স্বীকার করিবেন সেই নবী হিসেবে গণ্য হইবে। আমরা এই অর্থে তাকে (হযরত মুহাম্মাদ সাঃ) কে খাতিমুন্নাবিয়্যিন বলে বিশ্বাস করি। [4]রেফারেন্সঃ আল-ফজল পত্রিকা, কাদিয়ান ;২২ মে ১৯২২।রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, … Continue reading
এই কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ঠরুপে প্রমাণতি হইয়াছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরেও নবুওতের দরজা খোলা রহিয়াছে। রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ প্রণীত হাকিকতুন্নবুওয়াত, ২২৮ পৃষ্ঠা। [5]রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, ‘কাদিয়ানি সমস্যা’; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি, পৃষ্ঠা … Continue reading
মুসলমানরা মনে করিয়াছে যে, আল্লাহর ভান্ডার শেষ হইয়া গিয়েছে। তাহাদের এই কথা মূলে আল্লাহ তায়ালার মর্যাদা উপলব্ধি না করাই একমাত্র কারণ। নতুবা মাত্র একজন নবী কেন, আমি বলিব হাজার হাজার নবী আসিবে। [6]রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ, আনওয়ারে খেলাফত, … Continue reading
মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানির নিজেকে নবী দাবী
খতমে নবুওয়তের এই নতুন ব্যখ্যা দিয়ে মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি নিজেকে নবী দাবী করেন। এবং তার অনুসারীগণ তাকে নবী হিসেবে গ্রহণ করেন।
মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি তার লিখিত পুস্তুকে লিখেছেন,
আমি নবী এবং রাসুল- এই আমার দাবী। অন্য আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, আমি খোদার হুকুম অনুসারে একজন নবী। সুতরাং এখন যদি আমি তাহা অস্বীকার করি, তবে আমার গুণাহ হবে। খোদা যখন আমার নাম নবী রাখিয়াছেন, তখন আমি কীরূপে তাহা অস্বীকার করিতে পারি। [7]রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ, কালেমাতুল ফছল এবং রিভিউ অব রিলিজিয়াস … Continue reading
ইসলামী শরিয়তে নবীর যে অর্থ ব্যাবহার করা হয় মির্জা গোলাম আহমেদ সেই অর্থে প্রকৃত নবী। [8]রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ প্রণিত, হাকিকতুন্নবুওয়ত, ১৪৭ পৃষ্ঠা।
কাদিয়ানিদের মতে যারা মির্জা গোলাম আহমেদের উপর ঈমান আনেনি, যারা তাকে নবী হিসেবে মেনে নেয়নি তারা কাফের।
যেসকল মুসলমান মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানির উপর আস্থা জ্ঞাপন করেনি, এমনকি যারা নামও শুনেনি তারা কাফের, ইসলামের বাহিরে। [9]রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন প্রণিত আইনায়ে ছাদাকত পুস্তিকা; পৃষ্ঠা; ৩৫
যে ব্যক্তি মুসাকে মানে অথচ ঈসাকে মানেনা, অথবা ঈসাকে মানে কিন্ত মুহাম্মদ কে মানেনা, কিংবা মুহাম্মদকে মানে কিন্তু মির্জা গোলাম আহমেদকে মানেনা সে ব্যক্তি শুধু কাফেরই নয় বরং পাক্কা কাফের। [10]রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ, কালেমাতুল ফছল; রিভিউ অব রিলিজিয়াস … Continue reading
নবুওয়তের দরজা খোলা রয়েছে এমন দাবীর স্বপক্ষে যে দলিল কাদিয়ানি সম্প্রদায় উপস্থাপন করে।
নবুওয়ের দরজা খোলা রয়েছে এমন দাবীর পক্ষে কাদিয়ানিদের একটি দলিল হলো সূরা নিসার ৬৯ নং।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলনে,
আর যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে তারা তাদের সাথে থাকবে, আল্লাহ যাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। আর সাথী হিসেবে তারা হবে উত্তম। [11]রেফারেন্সঃ সূরা নিসা; ৪ঃ৬৯
উক্ত আয়াতকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে কাদিয়ানিগণ দাবী করেন যে, আল্লাহ এখানে ৪টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন যে গুণগুলো যাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ থাকিবে। আর এইগুণ গুলো হলো নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল। কাদিয়ানিদের মতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর লোকেরা তিনটি মর্যাদা লাভ করেছে। একটিমাত্র মর্যাদা লাভ করা বাকি রয়েছে আর সেটি হলো নবুওয়ত। আর সেই মর্যাদা লাভ করেছে মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি।
পবিত্র কুরআনের আরো একটি আয়াতকে দলিল স্বরূপ উপস্থাপন করে কাদিয়ানিরা নবুওয়তের দরজা খোলা রয়েছে এই দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে আদাম সন্তান! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্যে থেকে যখন রসূলগণ আসে যারা তোমাদের কাছে আমার আয়াতগুলোকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে আর নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিত হবে না। [12]রেফারেন্সঃ সূরা আরাফ; ৭-৩৫
এই আয়াতকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে কদিয়ানিরা দাবী করে যে, নবী আগমণের দরজা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর এই আয়াত কেন অবতীর্ণ হবে? যেহেতু আল্লাহ তায়ালা এই আয়তে বলেছেন তোমাদের মধ্য থেকেই নবী আসবে, সেহেতু এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে মুহাম্মদ (সাঃ) এর আনুগত্যের অধীনে নবী আসবে।
নবুওয়তের দাবী নিয়ে কাদিয়ানিদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যার জবাব।
সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদি কাদিয়ানিদের ভ্রান্ত ব্যখ্যার জবাব দিতে গিয়ে বলেন,
সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ও রাসুলের আন্যগত্যকারীরা নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সালেহীনদের সহযোগি হবে। এখানে আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করলে কেউ নবী হয়ে, বা সিদ্দিক বা সালেহীন হয়ে যাবে এমন কথা বলা হয়নি।
সূরা হাদিদের ১৯নং আয়াতে বলা হয়েছে,আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনে তারাই তাদের প্রতিপালকের নিকট সিদ্দীক ও শহীদ। তাদের জন্য আছে তাদের প্রতিদান ও তাদের নূর। আর যারা কুফুরী করে আর আমার নিদর্শনকে অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের বাসিন্দা। [13]সূরা আল-হাদিদ; ৫৭ঃ১৯
এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে ঈমান আনার পর একজন ব্যক্তি কেবল শহীদ ও সিদ্দিক হতে পারে। আর নবীদের ব্যাপারে বলা হয়েছে নবীদের সহযোগি হওয়ার ঈমানদারের জন্য যথেস্ট। তাই সূরার নিসার যে আয়তকে দলিল রুপে উপস্থাপন করে কাদিয়ানি সম্প্রদায় নবুওয়তের দরজা খোলা রয়েছে বলে দাবী করেন সেই আয়াতে মূলত বলা হয়েছে যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করবে তারা নবী সিদ্দিক ও শহীদদের সাথে অবস্থান করবে। আর সূরা হাদিদে আল্লাহ তায়ালা বলে যারা নবী ও রাসুলের অনুগত্য করবেন কেবল তারাই শহীদ ও শহীদ হতে পারবেন।
সূরা আরাফের ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
সূরা আরাফের ১১ নং আয়াত থেক ৩৬ নং আয়াত পর্যন্ত একই বর্ণনাধারার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই এই বর্ণনার পূর্বাপর বিষয়বস্তুর মধ্যে রেখে একে বিচার করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে এখানে মানব জাতির সৃষ্টির প্রথম পর্যাবে বনী আদমকে সম্বোধন করা হয়েছে। এই আয়াতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে নবী আগমনের কথা মোটেও উল্লেখ করা হয়নি. [14]সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদি; কাদিয়ানি সমস্যার সমাধান; পৃষ্ঠা নং- ৬৩-৬৫
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলে সর্বশেষ নবী ও রাসুল, এই দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণ
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবীর আগমণ ঘটবেনা। এটি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কিন্তু কিয়ামতের পূর্বে অনেক মিথ্যুক মিথ্যা নবুওয়াতের দাবী করে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মাতকে যথাসময়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
‘‘ত্রিশজন মিথ্যুক আগমণের পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। তারা সকলেই দাবী করবে যে, সে আল্লাহর রাসূল’’।[15]বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব।
‘‘আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হওয়ার পূর্বে এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। আর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমণ ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোন নবী আসবেনা’’। [16]আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল … Continue reading
তাফসিরের আহসানুল বায়ানে ‘খাতিমুন্নাবিয়্যিন’ শব্দের অর্থ করেছে ‘সর্বশেষ নবী।’
خَاتَمٌ (খাতামান )মোহরকে বলা হয়। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা হয়। (যেমন পত্রের শেষে মোহর মারা হয়।) অর্থাৎ নবী (সাঃ) থেকে নবুঅত ও রিসালাতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। [17]রেফারেন্স; তফসিরে আহসানুল বায়ান, সূরা আল-আহযাব; ৪০-৩৩
হযরত কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ
নবীদের মধ্যে আমার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত যে একটি বাড়ী তৈরী করলো এবং ওটা পূর্ণরূপে ও উত্তমভাবে নির্মাণ করলো, কিন্তু তাতে একটা ইট পরিমাণ জায়গা ছেড়ে দিলো। সেখানে কিছুই করলো না। লোকেরা চারদিক থেকে তা দেখতে লাগলো এবং ওর নির্মাণকার্যে সবাই বিস্ময় প্রকাশ করলো। কিন্তু তারা বলতে লাগলো: ‘যদি এ স্থানটি খালি না থাকতো তবে আরো কত সুন্দর হতো!’ সুতরাং নবীদের মধ্যে আমি ঐ নবী যিনি ঐ স্থানটি পূর্ণ করে দিয়েছেন। [18]তাফসিরে ইবনে কাসির
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
রিসালাত ও নবুওয়াত শেষ হয়ে গেছে। আমার পরে আর কোন রাসূল বা নবী আসবে না।” সাহাবীদের কাছে তাঁর “একথাটি খুবই কঠিন বোধ হলো। তখন তিনি বললেনঃ “কিন্তু সুসংবাদ দানকারীরা থাকবে।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সুসংবাদদাতা কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “মুসলমানদের স্বপ্ন, যা নবুওয়াতের একটি অংশ বিশেষ। [19]তাফসিরে ইবনে কাসির
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
আমাকে ছয়টি জিনিসের মাধ্যমে সমস্ত নবীর উপর ফযীলত দান করা হয়েছে। প্রথমঃ আমাকে জামে’ কালিমাত বা ব্যাপক ও সার্বজনীন কথা প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রভাব বা গাম্ভীর্য দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। তৃতীয়ঃ আমার জন্যে গানীমাত বা যুদ্ধলব্ধ মাল হালাল করা হয়েছে। চতুর্থঃ আমার জন্যে সারা দুনিয়াকে মসজিদ ও অযুর স্থানরূপে নির্ধারণ করা হয়েছে। পঞ্চমঃ সমস্ত সৃষ্টির নিকট আমাকে নবী করে পাঠানো হয়েছে। ষষ্ঠঃ আমার দ্বারা নবী আগমনের ধারাবাহিকতা শেষ করা হয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান সহীহ বলেছেন) [20]তাফসিরে ইবনে কাসির
হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, নবী (সঃ) তাকে বলেছেনঃ
আল্লাহর নিকট আমি নবীদেরকে শেষকারীরূপে ছিলাম ঐ সময় যখন হযরত আদম (আঃ) পূর্ণরূপে সৃষ্ট হননি। ref]তাফসিরে ইবনে কাসির[/ref]
জনপ্রিয় আরবি ডিকশনারি, আলমানি ‘খাতামান’ শব্দের ব্যাখ্যা বলেছে,
Here is no prophet after him until the Hour is resurrected. অর্থাৎ,কিয়ামত না পওয়া পর্যন্ত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত আর কোনো নবী নেই। [21]Meanings – Surah Al-Ahzab – Verse 40 – Analysis, Meanings and Conclusion in the Holy Quran, Meaning of and Ring in Holy Quran (almaany.com)
কাদিয়ানিদের চোখে সাধারণ মুসলিমরা যেমন
কাদিয়ানিরা যে শুধু খতমে নবুওত সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে তা নয়। বরং তারা মনে করে সাধারণ মুসলিমদের সাথে তাদের সকল বিষয়ে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
কাদিয়ানিরা মনে করেন তাদের ইসলাম আর আমাদের ইসলাম পুরোপুরি আলাদা, আমাদের আল্লাহ এবং তাদের আল্লাহ আলাদা, আমাদের হজ তাদের হজ আলাদা। [22]আল ফজল পত্রিকা; ১৯১৭ সালের ২১ আগস্ট।
মির্জা গোলাম আহমেদ কাদিয়ানি তার অনুসারিদের সতর্ক করে বলেছে, সাধারণ মুসলিমদের পিছনে নামাজ পড়া যাবেনা। [23]মির্জা বশীরুদ্দিন মাহমুদ আহমাদ খলিফায়ে কাদিয়ানী রচিত আনওয়ারে খেলাফত; … Continue reading
কাদিয়ানিদের মতে মুসলমাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবেনা। মির্জা গোলাম আহমদের মৃত্যুর পর তাদের এক অনুসারী অ-কাদিয়ানিদের সাথে তার মেয়ের বিবাহ দেয়। যার ফলে তাদের প্রথম খলিফা তাকে ইমামের পদ হতে বাতিল করে এবং তার তাওবাও কবুল করেনি। [24]আনওয়ারে খেলাফত; পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪
প্রিয় পাঠক, পবিত্র কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ঠভাবে বর্ণনা রয়েছে যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হলেন শেষ নবী এবং তারপরে আর কোনো নবী আসবেনা। এরপরেও যারা কুরআন হাদিস অস্বীকার করে, অমান্য করে নিজেকে বা নিজ সম্প্রাদয়ের কাউকে নবী হিসেবে মান্য করে, যারা নিজেদের মুসলিমদের থেকে আদালা একটা সম্প্রাদয় মনে করে, মুসলিমদের কাফের মনে করে, আলাদা হজ করে, যারা মনে করে মুসলিমদের পিছনে নামাজ আদায় করা যাবেনা, মুসলিমদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করা যাবেনা , তারা কি মুসলিম হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর আপনার বিবেকের উপরই ছেড়ে দিলাম।
ইসলাম সম্পর্কিত – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
References
↑1 | ’কাদিয়ানি সমস্যার' |
---|---|
↑2 | সূরা আল-আহযাব; ৩৩ঃ৪০ |
↑3 | রেফারেন্সঃ মুহাম্মদ মনজুর এলাহী রচিত ‘মলফুজাতে আহমাদিয়া’ ৫ম খন্ড, ২৯০ পৃষ্ঠা। রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, ‘কাদিয়ানি সমস্যা’; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি, পৃষ্ঠা নং, ১১ |
↑4 | রেফারেন্সঃ আল-ফজল পত্রিকা, কাদিয়ান ;২২ মে ১৯২২।রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, ‘কাদিয়ানি সমস্যা; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি, পৃষ্ঠা নং, ১১-১২ |
↑5 | রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, ‘কাদিয়ানি সমস্যা’; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি, পৃষ্ঠা নং, ১৩ |
↑6 | রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ, আনওয়ারে খেলাফত, পৃষ্ঠা-৬২।রেফারেন্সটি নেওয়া হয়েছে, ‘কাদিয়ানি সমস্যা’; সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদি, পৃষ্ঠা নং, ১৩ |
↑7 | রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ, কালেমাতুল ফছল এবং রিভিউ অব রিলিজিয়াস পত্রিকা, ৩য় বর্ষ, ১৪ খন্ড, ১১ পৃষ্ঠা। |
↑8 | রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ প্রণিত, হাকিকতুন্নবুওয়ত, ১৪৭ পৃষ্ঠা। |
↑9 | রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন প্রণিত আইনায়ে ছাদাকত পুস্তিকা; পৃষ্ঠা; ৩৫ |
↑10 | রেফারেন্সঃ মির্জা বশিরউদ্দীন আহমদ, কালেমাতুল ফছল; রিভিউ অব রিলিজিয়াস পত্রিকা, ১১০ পৃষ্ঠা। |
↑11 | রেফারেন্সঃ সূরা নিসা; ৪ঃ৬৯ |
↑12 | রেফারেন্সঃ সূরা আরাফ; ৭-৩৫ |
↑13 | সূরা আল-হাদিদ; ৫৭ঃ১৯ |
↑14 | সাঈয়েদ আবুল আলা মওদূদি; কাদিয়ানি সমস্যার সমাধান; পৃষ্ঠা নং- ৬৩-৬৫ |
↑15 | বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মানাকিব। |
↑16 | আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীছ নং- ৫৪০৬। |
↑17 | রেফারেন্স; তফসিরে আহসানুল বায়ান, সূরা আল-আহযাব; ৪০-৩৩ |
↑18, ↑19, ↑20 | তাফসিরে ইবনে কাসির |
↑21 | Meanings – Surah Al-Ahzab – Verse 40 – Analysis, Meanings and Conclusion in the Holy Quran, Meaning of and Ring in Holy Quran (almaany.com) |
↑22 | আল ফজল পত্রিকা; ১৯১৭ সালের ২১ আগস্ট। |
↑23 | মির্জা বশীরুদ্দিন মাহমুদ আহমাদ খলিফায়ে কাদিয়ানী রচিত আনওয়ারে খেলাফত; পৃষ্ঠা ৮৯ |
↑24 | আনওয়ারে খেলাফত; পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪ |