ইসলামে দাসীদের পর্দার বিধান; উমার (রাঃ) কি পর্দা করলে দাসীদের প্রহার করেতেন?

ইসলামে দাসীদের পর্দার বিধান; উমার (রাঃ) কি পর্দা করলে দাসীদের প্রহার করেতেন?

ইসলাম সম্পর্কে নাস্তিকদের খুবই মুখরোচক একটি অভিযোগ একটি দাস দাসী প্রথা। কুরআন,হাদিসে কাট-ছিট করে তারা প্রমাণ করতে চাই ইসলামে দাসপ্রথা খুবই অমানবিক একটি সিস্টেম। যদিও নাস্তিকরা তাদের এই কাজে সফল হতে পারেনি, আমাদের অনেক মুসলিম ভাইয়েরা নাস্তিকদের এসম ভন্ডামির যথাযথ জবাব দিয়ে ইসলামকে ডিফেন্ড করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি নাস্তিকদের বেশ কিছু লাইভে প্রচার করা হচ্ছে ইসলামে দাসীদের পর্দার বিধান স্বাধীন নারীর পর্দার বিধানের মতো নয়। বরং দাসীরা নাকি তাদের বুকের স্তন, মুখ এগুলো খোলা রাখতে হবে। অর্থাৎ, দাসীদের পর্দার বিধান নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ডেকে রাখা। এই অভিযোগের দলিল হিসেবে তারা মুসান্নাফ ইববে আবি শায়বা থেকে এই অংশটি উপস্থাপন করে।

উমর (রাঃ) ঘোমটা দেওয়া একজন দাসীকে দেখতে পেয়ে তাকে প্রহার করলেন। এবং বললেন, স্বাধীন নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা।[1]মুসান্নাফ ইবন আবি শায়বা; ৬/২৩৬

মুক্তমণা নাস্তিকরা যে অভিযোগটি করে থাকে তা সত্য নয়। অধিকাংশ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসদের মতে এই হাদিস সহীহ নয়। বরং এই হাদিসের বিপক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদিসে অসংখ্য দলিল রয়েছে। 

দাসপ্রথার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় দাসপ্রথার প্রচলন ইসলাম থেকে আসেনি এবং ইসলাম ছাড়া বাকি সকল ধর্মে ও মতবাদে দাস দাসীদের সাথে নির্মম আচরণ করা হতো এবং পাশবিক নির্যাতন চালানো হতো। এমনকি দাসীদের মানুষ হিসেবেও গণ্য করা হতোনা। ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে দাস দাসীদের সাথে ভালো আচরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে এবং অন্য সকল স্বাধীন মানুষের মতো সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

দাসীদের পর্দার বিধান

পরিচ্ছেদঃ ১৩৪. দাস-দাসীর হক

৫১৬১। আবূ যার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের দাস-দাসীর মধ্যে যারা তোমাদের খুশি করে তাদেরকে তোমরা যা খাও তা-ই খেতে দাও এবং তোমরা যা পরিধান করো তা-ই পরতে দাও। আর যেসব দাস তোমাদের খুশি করে না তাদেরকে বিক্রি করো। তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিজীবকে শাস্তি দিও না।[2]সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৫১৬১ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 5161 (hadithbd.com) 

এই হাদিসে স্পষ্ট বলা হচ্ছে স্বাধীন ব্যক্তি যা খাবে, যা পরবে তাই দাস-দাসীদের খাওয়াতে হবে এবং পরাতে হবে।  

ইমাম আল হাফিজ ইবনুল কাত্তান আল ফাসি (র.) বলেছেন,

সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সকল নারীর জন্য। স্বাধীন হোক বা দাসী, সমস্ত সাজ-সজ্জা প্রদর্শন করা পুরুষ বা মহিলা,নন-মাহরাম,আত্মীয় বা শ্বশুরবাড়ির সকলের জন্য।[3]شبهات حول مسائل في الحجاب ، والإجابة عنها . – الإسلام سؤال وجواب (islamqa.info)

শাইখ নাসিরুদ্দিন আলবানির (র.) এর মতে, 

যেসব আলেমগণ স্বাধীন নারী ও দাসীদের পর্দার বিধান আলাদা মত দিয়েছে তাদের কারো মতামত সহীহ নয়। আশ্চার্যের বিষয় যে কোনো কোনো মুফাসসির যঈফ হাদিস দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। যার ফলে তাদের মতামত হলো (সূরা আহযাবের-৩৩ঃ৫৯) আয়াতে মু’মিনা নারী বলে স্বাধীন নারীদেরকে দাসীদের থেকে আলাদা করা হয়েছে। এবং তারা উল্লেখ করেছে যে দাসীদের পর্দার বিধান পুরুষের ন্যায় নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। কিন্তু এই ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহতে কোনো দলিল নেই।[4]شبهات حول مسائل في الحجاب ، والإجابة عنها . – الإسلام سؤال وجواب (islamqa.info)

ইমাম ইবন তাইমিয়া(র.) এর মতে, 

প্রতিষ্ঠিত অভিমত হলো দাসীর আওরাহ স্বাধীনা নারীর আওরাহর ন্যায়। ঠিক যেমনি একজন পুরুষ দাসের আওরাহ স্বাধীন পুরুষের আওরাহর ন্যায়। তবে দায়িত্ব ও কাজকর্মের জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু প্রদর্শন করতে পারবে। তার বুক ও পিঠের বিধান হলো, সেগুলো থাকবে প্রতিষ্ঠিত অভিমত অনুসারে।[5]শারহুল উমদাহ – ইমাম ইবন তাইমিয়া ২/২৭৫ 

কাতার ভিত্তিক জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ একটি ফতোয়ার ওয়েভসাইটে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ফতোয়া হেডিং ও ফতোয়া নং,Fatwa No: 355954. [6]No authentic evidence that slave women used to walk around bare-breasted এই ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়ছে, দাসী নারীদের বুক বা স্তন খোলা রেখে চলাফেরা করার পক্ষে বিশুদ্ধ কোনো প্রমাণ নেই। 

ইমাম ইবন তাইমিয়া হতে বর্ণিত, আলী (রা.) বলেন,

দাসী নারীরা সালাতের সময় যে ধরণের পোশাক পরিধান করে বাহিরে বের হওয়ার সময়ও সে ধরণের পোশাক পরিধান করবে এবং এটা ভালো করেই জানা যে, দাসী নারীরা বুক ও স্তন খোলা রেখে বাহিরে যেত না।[7]Sharh Al-‘Umdah

ইমাম মালিক (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো,

কোনো দাসী নারী যদি বুক খোলা রেখে বাহিরে যায়, আপনি কি তাকে ঘৃণা করবেন ? তিনি বললেন “হ্যা। এবং এটা করলে আমি তাকে শাস্তি দেবো।[8]মাওয়াহিব আল জালিল, মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আল মাগরিবি ১/১০৫

দাস দাসীকে প্রহার করলে তাকে মুক্ত করে দেওয়া অপরিহার্য

পরিচ্ছেদঃ ১৩৪. দাস-দাসীর হক

৫১৬৭। মু’আবিয়াহ ইবনু সুয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমাদের এক দাসকে চড় মারলাম। আমার পিতা তাকে ও আমাকে ডেকে বললেন, তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নাও। আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মুকাররিন গোত্রের সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একটি খাদেম ছিলো। আমাদের মধ্যকার একজন তাকে চড় মারলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ একে মুক্ত করে দাও। তারা বললো, এছাড়া আমাদের কোনো খাদেম নেই। তিনি বললেনঃ এরা স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত সে তাদের সেবা করবে। তারা স্বাবলম্বী হলে তাকে যেন মুক্ত করে দেয়া হয়।[9]সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৫১৬৭ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 5167 (hadithbd.com)https://sunnah.com/urn/240810 

পরিচ্ছেদঃ ১৩৪. দাস-দাসীর হক

৫১৫৯। আবূ মাস’ঊদ আল-আনসারী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। এ সময় আমার পিছন থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, হে আবূ মাস’ঊদ! জেনে রেখো, আল্লাহ তোমার উপর এর চেয়ে বেশী ক্ষমতাবান যতটুকু তুমি তার উপর ক্ষমতাবান। আমি পিছন থেকে তার এরূপ ডাক দু’ বার শুনতে পেলাম। আমি পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বাধীন (আমি তাকে মুক্ত করে দিলাম)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি যদি তাকে মুক্ত করে না দিতে তাহলে জাহান্নামের আগুন তোমাকে গ্রাস করতো।[10]সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৫১৫৯ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 5159 (hadithbd.com) 

পরিচ্ছেদঃ ১৩৪. দাস-দাসীর হক

৫১৬৬। হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা সুয়াইদ ইবনু মুকাররিন (রাঃ)-এর বাড়িতে থাকতাম। আমাদের সঙ্গে একজন কড়া মেজাজী বৃদ্ধ ছিলেন এবং তার সঙ্গে একটি দাসী ছিলো। তিনি তার চেহারায় চড় মারলেন। এ কারণে সুয়াইদ (রাঃ) এতটা উত্তেজিত হয়েছিলেন যে, আমরা তাকে এমন উত্তেজিত হতে আর দেখিনি। তিনি বলেন, একে আযাদ করা ব্যতীত তোমার জন্য অন্য কোনো পথ নেই। তুমি দেখছো যে, আমাদেরকে মুকাররিনের সাতটি সন্তান। আমাদের মাত্র একজন খাদেম ছিলো। আমাদের কনিষ্ঠ জন তার মুখে চড় মেরেছিল বিধায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তাকে আযাদ করার নির্দেশ দিলেন।[11]সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৫১৬৬ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 5166 (hadithbd.com)

ইসলামে কোনো অবস্থাতে দাসীদের প্রহার করার অনুমোধন নেই। দাস প্রথা আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ দাস প্রথা কি? দাস প্রথা ও ইসলাম – Faith and Theology (faith-and-theology.com)

Sazzatul Mowla Shanto

As-salamu alaykum. I'm Sazzatul mowla Shanto. Try to learn and write about theology and philosophy.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button