আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণতি
আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিণিত
আত্মহত্যা অত্যন্ত ঘৃণ্য একটি কাজ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই জীবনের কঠিন দুঃখ-দুর্দশা, চরম হতাশা, ব্যর্থতার গ্লানি থেকে পরিত্রাণের জন্য অথবা জেদের বশে নানা কলহে আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত ও জগন্যতম অপরাধের পথ বেছে নেয়। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা;র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা থাকলে আত্মহননের মতো ক্লেশকর পথে পা বাড়াতে হয় না।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘বল- হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি অতি ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।’ (সুরা : জুমার, ৩৯ঃ৫৩)
যাবতীয় সমস্যায় আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীর কোনো সংকটই স্থায়ী নয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, সুতরাং কষ্টের সাথেই রয়েছে সুখ। নিঃসন্দেহে কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে। ’ (সুরা : ইনশিরাহ, ৯৪ঃ৫– ৬)
চাকচিক্যময় জীবনের বিলিসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা , যশ-খ্যাতি ইত্যাদিকে মানুষ সফলতা মনে করে। তাই মানুষ তার পুরো জীবটাই অর্থ-সম্পদ উপার্যনের পিছনে চলে যায়। অডেল ধন সম্পদ উপার্যনের পরেও মানুষের চাহিদার কোনো কমতি নেই। যার ফলে মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম হতাশা,কঠিন দুঃখ-দুর্দশা এবং মানুষ আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকে পরে। এসব চাহিদা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা।
আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিযিক দান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৩৮)
আত্মহত্যা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,
হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।
যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন ক’রে অন্যায়ভাবে এটা করবে, তাকে আমি অতিসত্বর অগ্নিতে দগ্ধ করব, এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯– ৩০)
তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমা লঙ্ঘন করে অন্যায়ভাবে তা (আত্মহত্যা) করবে, তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদেরকে ভালবাসেন। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৯৫)
দুঃখ-দুর্দশা, গ্লানি আর যত সংকটই আসুক না কেন, সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :
‘যে কেউ আল্লাহর উপর ভরসা করে, তবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট। (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)।
‘হে মু’মিনগণ! ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
একবার রাসুল (সা.) আনসার সাহাবিদের কিছু লোককে বলেন,
আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একবার আনসারদের কিছু সংখ্যক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সাহায্য চাইলেন। তাদের যে যা চাইলেন, তিনি তা-ই দিলেন, এমন কি তাঁর কাছে যা কিছু ছিল নিঃশেষ হয়ে গেল। যখন তাঁর দু’হাতে দান করার পর সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে যা কিছু থাকে, তা থেকে আমি কিছুই সঞ্চয় করি না। অবশ্য যে নিজেকে চাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আল্লাহ্ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখেন; আর যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ্ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবরের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কক্ষনো তোমাদের দান করা হবে না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭০)
আত্মহত্যাকারীর শাস্তি
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আত্মহত্যাকারীর জন্য আখিরাতে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে।
‘হে মু’মিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের ধন-সম্পদ গ্রাস করনা; কেবলমাত্র পরস্পর সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা কর তা বৈধ এবং তোমরা নিজেদের হত্যা করনা; নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল। ’
‘যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন ক’রে অন্যায়ভাবে এটা করবে, তাকে আমি অতিসত্বর অগ্নিতে দগ্ধ করব, এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯, ৩০)
জুন্দুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হয়ে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম। ’ (বুখারি, হাদিস : ১২৭৫)
দুনিয়াতে যে ব্যক্তি যেভাবে আত্মহত্যা করতে আখিরাতে সে ঠিক একইভাবে নিজেকে নিজেকে হত্যা করবে।
আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে (পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে) আত্মহত্যা করতে থাকবে। এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সারাক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সেই লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢোকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৩৩)
কোনো আলেম আত্মহত্যাকারীর নামাজে জানাজা পড়াবেনা। রাসুল (সঃ)ও এমন ব্যক্তির জানাজা পড়েননি।
জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬২৪)
কখনো আত্মহত্যার কথা মনে এলে ফেতনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও সাহায্য কামনা করা উচিত। এই মহাপাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সমাধান আছে একমাত্র ইসলামি বিধিবিধান ও ধর্মীয় অনুশাসনে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা একজন ঘোষণাকারীকে ঈমানের ঘোষণা করতে শুনেছি যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনো’। সে অনুযায়ী আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের গুনাহ্গুলো ক্ষমা কর এবং আমাদের থেকে আমাদের মন্দ কাজগুলো বিদূরিত কর আর নেক বান্দাদের সঙ্গে শামিল করে আমাদের মৃত্যু ঘটাও।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯১-১৯৩)
আত্মহত্যাকারী কি চিরস্থায়ী জাহান্নামি?
এই বিষয়ে মুফতি কাজী ইব্রাহিম হাফিজাহুল্লাহ’র আলোচনাটি দেখুন।
ফিকহ (বিধি-বিধান) – Faith and Theology (faith-and-theology.com)