শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার?
শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার?
শরীর আমার, সিধান্ত আমার? চলুন বিবেচনা করে দেখি ছোট্ট একটি গল্পের মাধ্যমে।
লেখনিঃ ।। আগন্তুক ।।
স্কুল শেষে সবাই হাপিয়ে দাপিয়ে গেট দিয়ে বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড খেটে কাশিমপুর কারাগার থেকে সব বের হচ্ছে। করো মুখে হাসি, করো মুখে ক্লান্তি। তবে মিনার এর মুখটা একটু বিষন্ন। ভ্রু টা কুচকানো। কাকে জানি খুঁজছে। দ্রুত পা চালিয়ে পীর জঙ্গিমাজার এর দিকে হাটা দিল। নাহ্, আজ সিগারেট খাওয়ার জন্য না। নতুন নতুন হুজুর হয়েছে। একমাস ধরে সিগারেট ধরায় না। “এইবার লাস্ট এইবার লাস্ট” করার স্বভাবটা অবশেষে গিয়েছে। পৌঁছেই যেন বিষন্নতার চাপ একটু কুমে এসেছে। কারণ ,যাকে খুঁজছে, তাকে জায়গা মতোই পেয়েছে।
– আদনান ভাই, আসসালামুয়ালাইকুম
– আহারে –
আহারে কেন?
– আমি জানি, তোর কোনো বোন এর সাথে তর্কে হেরে এসেছিস।
আদনান কে অনেকে “এন্সার” নামেও ডাকে। ধর্মের বিরুদ্ধে সব ism এর উত্তর নাকি তার কাছে থাকে। তবে তার একটা অসাধারন গুন হলো সেকু , ফেমি সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। স্কুলের অনেককেই দ্বীনের পথে এনেছে। তবে সে এমন একজন মানুষ, তার সাথে কোনো মা বাবা তার ছেলেকে মিশতে দেখলে নিশ্চিত স্কুলের একমাত্র সেলিব্রেটি হুজুর মনে হয় সেই। পিরজঙ্গী মাজারের পিছে সে অবশ্য পুরি আর সমুচা খেতে খেতে আড্ডা দিতেই আসে স্কুল শেষে।
– তুমি কেমনে জানো?
– একটু আগে নাফিজ বলে গেল।
– ওকে বলাই উচিত হয় নাই। আচ্ছা যাই হোক, এখন কি করবো?
– সমুচা খাবি?
– না থাক, তুমি আগে উত্তর দাও
– খেলেও দিতাম না, টাকা নাই পকেটে। আর কিসের উত্তর দিব? প্রশ্নই তো জানি না।
– নাফিজ বলে নাই?
– না ও শুধু অতুটুকুই বলসে, তুই কাহিনী বল
– কালকে বাসায় আসছিল খালাতো বোন হয়। এমনি খুব ব্রিলিয়েন্ট মেয়ে, খালার সাথে…
– উফফ, এতো টাইম নাই, সংক্ষেপে বল
– আচ্ছা আচ্ছা। শুনো। সিম্পল কথা হলো আমি ওকে হিজাব পড়ার কথা বলসিলাম। এরপরে তর্ক শুরু করলো। ওর শরীর, ও যা খুশি করবে। আমরা কেন বাধা দিব। এই সেই হেন তেন।
– তুই কি বুদ্ধি হাঁটু তে রাখিস?
– কেনো? দাওয়াত দিব না?
-নতুন নতুন ধর্ম পালন করলে এই হয়। আসছে আমার জাকির নায়ক। শোন, ধর ১০ জন মাঠে ফুটবল খেলতেসে, হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলতেছে, এখন যদি তাবলিগের লোকগুলা খেলা থামায় বলে এই হারাম কাজ না করে মসজিদে চলো, সামনে কবরের জীবন। এখন মরে গেলে কি হবে? তখন কি সেই কথা তোর কানে ঢুকবে? কেমন লাগবে? মনে হবে পালায় বাঁচি। বিরক্তিকর লাগবে। টক্সিক লাগবে। তখন তোর কথার কোনো দাম থাকবে না। দাওয়াত সব ভাবেই হয়। তবে সবভাবে কাজে দেয় না। দাওয়াত দিতে গেলে প্রশ্নের বীজ ও অন্তরে বুনে দিতে হয়। বাকিটা আল্লাহর কাজ। তোর অ্যাপ্রোচ টা ভুল ছিল। মানুষের প্যারাডাইম থেকে ভেবে দেখ। সব সময় সত্য না বলে কখনো চুপ থাকলে বেশি কাজে দেয়। এরপর জায়গা মত হিট করলেই হইসে।
– তুমি আমাকে সংক্ষেপে বলতে বলে নিজে এতো লম্বা কথা বললা কেন?
– কারণ প্রশ্ন করতে তুই আসছস। আমি না।
– আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আসে। কিন্তু তর্কে যে হারলাম, এর উত্তর টা তো জানতে হবে
– তোর বোনের কথাটা অনেকটাই যৌক্তিক। শরীর আমার,সিদ্ধান্ত আমার। শরীর আমার হলে তো সিদ্ধান্ত আমার হওয়ারই কথা।
মিনার আবার ভ্রু কুচকালো। এটাতো এক্সপেক্ট করে নি! কি বলে কি। তাইলে কি ইসলাম ভুল? আদনান আবার বলা শুরু করল
– তবে প্রশ্নটা হলো “শরীর আমার” কথাটা কতটা ঠিক?
– মানে?
– আগে বল, তোর ওই বোন কি নাস্তিক?
– নাহ্, নাস্তিক কেন হবে।
– তাইলে তো সহজ হয়ে গেলো বিষয়টা। কেন জিজ্ঞেস করলাম পরে বুঝবি, ফান্টামেন্টাল বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে গেলো। আচ্ছা বলতো, তোর ওই বোনের জন্মসাল কবে?
– আমি জানি না, আর মেয়েদের জন্মসাল জিজ্ঞেস করতে নেই।
আদনান হেসে দিয়ে বলল,
– আচ্ছা আচ্ছা, আমি তোর মাধ্যমেই উদাহরণ দিচ্ছি তোর জন্মসাল কবে?
– ২০০৫ , সার্টিফিকেট এ ২০০৬।
– তুই কেনো ১৯০৫ সালে ব্রাজিলে জন্মানো কালো লম্বা কোকড়া চুল ওয়ালা একজন মোটা মহিলা হইলি না?
মিনার একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। এরকম প্রশ্ন কেন। তাও বেশি কথা না বলে বলল
– বুঝলাম না
– তুই যে জন্মের সময় বাংলাদেশে জন্মাবি, এটা তুই সেট করসস?
– না
– তুই যে জন্মের পর ফর্সা হবি এটা তুই সেট করসস?
– না – তুই তোর মা বাবা সেট করসস?
– না
– তুই পঙ্গু হেয়ে জন্মাবি নাকি সুস্থ হয়ে,তা সেট করসস?
– না
– তুই মানুষ হবি নাকি জানোয়ার, এটা তুই সেট করসস?
– হুহ, না না না
– ভেরি গুড, যাহ, আর একবার “নাহ্” বল, তাইলেই হবে। তুই অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসবি নাকি এটা তুই সেট করসস?
– উত্তরটা তুমি জানো
– হেহে। এখন আমার প্রশ্ন হলো এতো কিছু “না”। তাহলে শরীরটা কিভাবে তোর হলো?
– এভাবে তো ভেবে দেখিনি বস (অবাক হয়ে মিনার, মনে হলো যেন হুট করে বুদ্ধি খুলল)
– দাড়াও, এখনি শেষ হয় নাই। একটা প্রেক্ষাপট চিন্তা কর। ধর আমি আমার একটা জিনিস আমার ফ্রেন্ড কে আমানত হিসাবে দিলাম। তবে তাকে কিছু নির্দেশনা বা শর্ত দিয়ে দিলাম, এই এই নিয়ম না ভেঙ্গে যেভাবে খুশি ব্যবহার করতে পারবে। তবে এটা এটা করা যাবে না। এখন বল, সে যদি ঐ নিয়ম ভাঙ্গে, তাইলে এটা অপরাধ না? তার কি সেই অধিকার আছে?
– নাহ্, বরং সে তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করলো
– exactly, শরীর আসলে আমার না, এটা আমাকে দেওয়া আমানত। আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। তাই সিদ্ধান্তটা আমার না, আল্লাহর। শরীর টা আমানত, মালিক আল্লাহ, আর সেই নির্দেশনা হলো আমাদের শরীয়াহ। আমার অধিকার বা সিদ্ধান্ত ঠিক ততটুকুই, যতটুকু মালিকের বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।আর তা ছাড়াও, যদি তুই ফিলোসফি নিয়ে ঘাটাঘাটি করিস,তবে বুঝবি যে, মানুষের পক্ষে ১০০% স্বাধীন হওয়া অযৌক্তিক, ১০০% পরাধিন হওয়া অযৌক্তিক। মানুষ একটা গণ্ডির মধ্যে স্বাধীন। বাউন্ডারির মধ্যে স্বাধীন। ঠিক করে চিন্তা করলে দেখ,একটা পাখিও স্বাধীন না। আর আমরা তো মানুষ। এক নিসৃত তরল থেকে আসা জীব। যার শুরুটা নুৎফা এবং শেষটা মৃতদেহ । এবং প্রত্যাবর্তন সেই রবের কাছেই।
মিনার এখন বুঝতে পারছে কেন এন্সার ভাই সেলিব্রেটি হুজুর, কেন সে ম্যাজিকাল।
সেই আদনান কে মনে হচ্ছে নতুন কেউ সামনে দাড়িয়ে। নিজের অজান্তেই বিস্মিত চোখ ও মুখে একটা মুচকি হাসি নিয়ে মিনার বলল
– তুমি এমন কেন?
– কেমন? (গুরুগম্ভীর হয়ে)
– কিছু না। যাই হোক। বুঝলাম বিষয়টা। যাক হিজাবের একটা যৌক্তিকতা পেয়ে গেলাম। আচ্ছা ভাই, আমি তো ওকে এভাবে এতো সুন্দর করে বোঝাতে পারবোনা, তোমার সাথে কথা বলায় দেই?
– নাহ্
– কেন
– আমার গণ্ডির মধ্যে থেকেই বলছি, #সিদ্ধান্ত_আমার দুইজন হো হো করে হেসে দিল। যাক মিনারের তর্কে হেরে ভালই হয়েছে, নাহলে এই দিনটা আসতো না। failure is the potential pillar of success.
নারীবাদ – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
আলহামদুলিল্লাহ।
জাঝাকাল্লাহ।
আসসালামুয়ালাইকুম
Walaikumus salam
অসাধারণ
মাশা-আল্লাহ, অসাধারণ লেখা।
নারীবাদ সমাজের জন্য ক্ষতিকর
জাজাকাল্লাহু খাইরান ফা-ইন্নাল্লাহা শাকিরুণ
Etto funny. ha ha ha